Ajker Patrika

দলে দলে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন

তরুণ চক্রবর্তী, কলকাতা
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১০: ১৭
Thumbnail image

বিরোধী দল হিসেবে ব্যর্থ কংগ্রেস। তাই তিনি এখন তৃণমূলে। মেঘালয়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা দলবদলের এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অথচ ওই রাজ্যে তিনিই ছিলেন বিরোধী দলনেতা। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই অন্য রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে।

মেঘালয়ের মতো খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত গোয়ায়ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরিও অথবা আসামের হিন্দুপ্রধান লোকসভা কেন্দ্রের সাবেক সাংসদ তথা মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সুস্মিতা দেবের দলবদল নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে তাঁরা হঠাৎ কী এমন দেখতে পেলেন যে, কংগ্রেস ভেঙে দলে দলে মমতা

বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দিচ্ছেন? অনেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় দল হয়ে ওঠার কথা বলছেন; কিন্তু সিপিএম ও কংগ্রেস এর পেছনে তৃণমূলের আপসের গন্ধ পাচ্ছে। সেই আপস বিজেপির সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস ভেঙে বিজেপিতে যোগদানের একটা হিড়িক নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে হারানোর পর এখন তৃণমূলে যোগদানেরও প্রবণতা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ছোট রাজ্যগুলোয় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল নিজেদের শক্তি বাড়ানোয় বিরোধী ভোট বিভাজনের সুবিধা পাবে বিজেপি। আর বড় রাজ্যগুলোয় অবশ্য কংগ্রেস নেতারা নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সরাসরি বিজেপিতেই যাচ্ছেন।

তবে আঞ্চলিক রাজনীতি আর জাতপাতের জটিল অঙ্ক মাথায় রেখে সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিতে সমস্যাও রয়েছে। যেমন, মেঘালয়ে মুকুল সাংমা বা গোয়ায় ফেলেইরিওকে খ্রিষ্টান ভোট-ব্যাংকের কথা মাথায় রাখতে হয়েছে। তাই বিজেপির বদলে তাঁদের ভরসা তৃণমূল। মমতার লাভ—শক্তি বাড়ছে, বিজেপির লাভ—বিরোধী ভোট ভাগ হচ্ছে। নিন্দুকেরা বলছেন, বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মমতার পরিবারের সদস্যদের সাময়িক স্বস্তি এর বাড়তি লাভ। মোদির লাভ—মমতার বিরোধীদের অনৈক্য।

লাভালাভের এই অঙ্ক উড়িয়ে দেওয়ার নয়, সেটা মমতাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথম দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশাপাশি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীরও সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি। মুখে ছিল বিরোধী ঐক্যের কথা। কিন্তু দ্বিতীয় সফরেই মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও সোনিয়া বাদ। তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই মেজাজ হারান তিনি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন: এলেই দেখা করতে হবে নাকি! মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যস্ত কংগ্রেসকে দুর্বল প্রমাণে। অথচ ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও কংগ্রেসই প্রধান বিরোধী শক্তি। তৃণমূল আটকে রয়েছে শুধু পশ্চিমবঙ্গে। কংগ্রেসকে ছাড়া বিকল্প সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরও। অথচ কংগ্রেসের সমালোচনাতেই আটকে আছে তৃণমূল।

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী সরাসরি বলেছেন, বিজেপিকে খুশি করাতেই ব্যস্ত তৃণমূল। কংগ্রেসকে দুর্বল করে মোদির হাত শক্ত করছেন মমতা। বিনিময়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা থেকে রক্ষা পাচ্ছে তৃণমূল পরিবার। একই বক্তব্য সিপিএমেরও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের পুরোনো বন্ধুত্বের কথা।

তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের মতে, কংগ্রেস যেখানে দুর্বল, শুধু সেখানেই বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁপাচ্ছেন তাঁরা। পাঞ্জাব, রাজস্থান, ছত্তিশগড় বা মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে তাঁরা তাই নিষ্ক্রিয়। বিজেপিকে হারানোই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু সুস্মিতার কথা মানতে নারাজ কংগ্রেস নেতা অধীর। তাঁর সাফ কথা, বিরোধী ঐক্য ধ্বংস করে ভোট বিভাজনের খেলায় মোদিকে খুশি করাই তৃণমূলের লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত