Ajker Patrika

মাঘের শীতে কাঁপছে মানুষ

এম মেহেদী হাসিন, রংপুর ও শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৩৯
Thumbnail image

মাঘের শীতে বাঘ পালানোর প্রবাদের সঙ্গে মিলে গেছে রংপুরের নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবন। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। তিন দিন ধরে কমছে তাপমাত্রা। গতকাল শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।

গতকাল ছুটির দিন হলেও হাটবাজারে মানুষের সমাগম ছিল খুবই কম। লোকজন কাজে বের হলেও শীতের তীব্রতার কারণে অনেকে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক দিয়ে সকাল ৯টার দিকে তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন কয়েকজন দিনমজুর। তাঁদের সঙ্গে ছিল কোদাল, ডালি ও কীটনাশক ছিটানোর যন্ত্র। কথা হলে তাঁরা জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আলুখেতে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাতাস আর ঠান্ডা বেশি হওয়ায় টিকতে পারছিলেন না। তাই কাজ বন্ধ রেখে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।

দলে থাকা মোমিন মিয়া বলেন, ‘জীবন বাঁচলে কামাই অনেক করির পাইম। যে ঠান্ডা, হাত-পাও কোঁকড়া নোগোছে। পুড়িয়া বাতাস গাওত ফোঁড়ে সোন্দাওছে। দেখেন না হামার গাও বরফ হয়া গেইছে। ওই জন্যে বাড়িত যাওছি। কাঁথার তলোত নুকি থাকমো।’

একই সময়ে কথা হয় বাছুবান্দা গ্রামের গিরিশ চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি জানান, তিন দিন ধরে খুব ঠান্ডা। মোটা কাপড় পরে বাইরে বের হলেও ঠান্ডা লাগে। সকাল আর সন্ধ্যায় কুয়াশার জন্য কিছু দেখা যায় না। ঠান্ডার জন্য তাঁরা খেতে কাজ করতে পারছেন না।

এদিকে হিমেল হাওয়ার কারণে গতকাল নগরীর বিভিন্ন মোড়ে রিকশাচালকদের জড়ো হয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে ও চায়ের দোকানের চুলার আগুনে তাপ নিতে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় রিকশাচালক রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচাবাড়ি গ্রামে। রেজাউল বলেন, ‘ভাড়ায় রিকশা চালায়। আজ খুব ঠান্ডা। শহরে লোকজন নেই। ঠান্ডা বাতাসে প্যাডেল মারতে পারছি না। যা কামাইছি গ্যারেজ মালিকে দিতেই শ্যাষ। শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। আজ মনে হয় বাড়ি যাওয়ার ভাড়া জোগাতে পারব না। এই শীত খুব বিপদে ফেলাইছে আমাকে।’

জেলায় শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ঠিকমতো পথ দেখতে না পাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। তিন দিন ধরে শীতের তীব্রতা এত বেশি যে রাতে ঘরের বাইরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু মানুষ নয়, এই শীতে পশু-পাখিও কাহিল হয়ে পড়েছে বলে জানান ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার রংপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী তিন থেকে চার দিন এ তাপমাত্রা উঠানামা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত