Ajker Patrika

গঙ্গাধরে মহাবিপন্ন মহাশোল

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৮
গঙ্গাধরে মহাবিপন্ন মহাশোল

চেহারা আর নাম শুনলে বোকা বনে যাবেন অনেকেই। মুখটা পাঙাশের মুখের মতো চোখা। শরীর রুই মাছের মতো। কিন্তু নাম মহাশোল। প্রতিটা মাছের ওজন ৩-৬ কেজি পর্যন্ত হয়। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের পুরোটা সময় গঙ্গাধর নদে ধরা পড়ে মিঠাপানির এই মাছ। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের শৌলমারী এলাকায় নদীতে মাছটি ধরা পড়ে বেশি। স্থানীয়ভাবে মাছটি ঘড়েয়া নামে পরিচিত।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, পাহাড়ি খরস্রোতা স্বচ্ছ পানির নদীতে ১৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ১৫ মিটার গভীরতায় মহাশোলের বিচরণ। মাছটি দুই প্রজাতির হয়ে থাকে। একটির গায়ের রং কালচে, আরেকটি সোনালি। বৈজ্ঞানিক নাম Tor putitora। মৎস্যবিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, হিমালয় অঞ্চল এই মাছের আদি নিবাস। বিপদাপন্ন মাছের প্রজাতির তালিকায় এটিও রয়েছে। এ মাছের প্রধান খাবার পাথরের ফাঁকে জন্মানো পেরিফাইটন শৈবাল। কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসের পুরো সময় খরস্রোতা নদ গঙ্গাধরে অবস্থান করে মাছটি। একসময় বাংলাদেশের নেত্রকোনার কংস নদ সুনামগঞ্জের পেরা নদী ও দিনাজপুরের মহানন্দা নদীতে এই মাছ যেত। তবে দেশের বেশির ভাগ এলাকায়ই এখন মাছটি বিলুপ্ত।

নাগেশ্বরীতে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক থেকে দুই মাস মহাশোল মাছ গঙ্গাধর নদে অবস্থান করে। গঙ্গাধরের শৌলমারী এলাকার গভীরতা কম। সুতোয় বোনা একপ্রকার টানা জাল ফেলে তাঁরা মাছটি ধরেন। ভরা মৌসুমে দিনে ৩-৪টি করে ঘড়েয়া মাছ ধরা পড়ে। কেজিপ্রতি দাম পাওয়া যায় ৭০০-৮০০ টাকা। আকারভেদে ২-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রতিটি মাছ।

মহাশোল বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হলেও এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। এলাকার লোকজন জানান, মহাশোল ব্যাপক সুস্বাদু। এলাকার মানুষ সারা বছর মহাশোলের মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। অনেকে জেলেদের আগাম চাহিদাও দিয়ে থাকেন। মহাশোল সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে শৌলমারী এলাকায়ই। এখান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই মাছ পাঠানো হয়। অনেকে আবার প্রিয়জনকে উপহার হিসেবেও পাঠান।

শৌলমারী এলাকার ইউপি সদস্য মিরজা মিয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি মহাশোল মাছের সঙ্গে পরিচিত। মাছটি স্থানীয় মাছ নয়, পাথুরে নদীর মাছ। পাথরের ময়লা খেয়ে বেঁচে থাকে। শীতের কারণে বছরের এ সময়টায় কুড়িগ্রামের দিকে চলে আসে।

কচাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, স্থানীয়ভাবে পরিচিত ঘড়েয়া মাছ খুবই সুস্বাদু। এ মাছের চাহিদা ব্যাপক। একবার হলেও সবাই এ মাছটা চেখে দেখতে চায়।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মহাশোল মাছটি খরস্রোতা নদীর মাছ। মাছটি মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে। গঙ্গাধর নদে এই মাছটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায়। তবে পরিমাণে একেবারে কম। এই মাছটি রক্ষা করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত