Ajker Patrika

সালমান-শাহরুখ বন্ধু থেকে শত্রু, শত্রু থেকে বন্ধু

সালমান-শাহরুখ বন্ধু থেকে শত্রু, শত্রু থেকে বন্ধু

দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্কের পর সালমান-শাহরুখকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন যিনি, সেই বাবা সিদ্দিকি আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারালেন গত শনিবার। মহারাষ্ট্রের এই জনপ্রিয় রাজনীতিকের প্রস্থানের পর আবার আলোচিত হচ্ছে সালমান-শাহরুখের সম্পর্ক।

কী ঘটেছিল সেই রাতে
ঐশ্বরিয়া অধ্যায় পেরিয়ে তত দিনে ক্যাটরিনা কাইফে মজেছেন সালমান খান। ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই ক্যাটরিনার জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি থ্রো করেছিলেন বলিউড ভাইজান। সালমানের কাছের মানুষেরা আমন্ত্রিত ছিলেন তাতে। এসেছিলেন শাহরুখ খানও। আনন্দঘন সেই রাত মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়। ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক নিয়ে শাহরুখের একটি মন্তব্যে খেপে যান ভাইজান। শাহরুখকে চড়ও মারেন! ওই পার্টিতে শাহরুখের স্ত্রী গৌরীও ছিলেন। গৌরীর হস্তক্ষেপে সেদিন বড় কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেনি। তবে এ রাতের পর থেকে উল্টো পথে হাঁটতে থাকে বলিউডের দুই খানের সম্পর্ক। এর আগে প্রায় ২০ বছর দারুণ সম্পর্ক ছিল তাঁদের।

ভালো বন্ধু ছিলেন তাঁরা
শাহরুখের বেশ আগেই বলিউডে প্রতিষ্ঠা পান সালমান খান। শাহরুখ তাঁকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। সালমানও তাঁকে আপন ভাইয়ের মতোই ভালোবাসতেন। সালমানের বাড়িতে প্রায় সময় আড্ডা বসত দুজনের। শাহরুখ যখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন, তখন তাঁর তারকাখ্যাতি আরও বেড়ে যায় ‘করণ অর্জুন’ (১৯৯৫) সিনেমার কল্যাণে। প্রথমবারের মতো এ সিনেমায় একসঙ্গে হাজির হন দুজন। কয়েক বছর পর শাহরুখের ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ (১৯৯৮) সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান। মূলত সালমানের উপস্থিতির খবর প্রাথমিকভাবে সিনেমাটির প্রতি দর্শকদের আকৃষ্ট করেছিল।

পরে ‘হার দিল জো পেয়ার করেগা’ (২০০০) সিনেমায় সালমানকে সঙ্গ দেন শাহরুখ। পরস্পরের সিনেমায় তাঁদের ক্যামিও একদিকে যেমন ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করছিল, তেমনি দুজনের এমন বন্ধুত্ব বিরল উদাহরণ তৈরি করেছিল বলিউডে। দুজনের সম্পর্ক যখন তিক্ত, তখন এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ প্রসঙ্গে সালমান বলেছিলেন, ‘আমি ওকে ভাইয়ের মতোই দেখতাম। সোহেল ও আরবাজের মতোই ছিল সে আমার কাছে। আমাদের বাসায় সব সময় এসে আড্ডা দিত। তবে যা কিছু আমাকে কষ্ট দেয়, সেটা ছেড়ে দিতে একমুহূর্ত ভাবি না। কারণ, আমি ভান করি না।’

সালমান খান ও শাহরুখ খানঘটনার পেছনে ছিল আরও ঘটনা
ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে মন্তব্যের সূত্র ধরে সালমান-শাহরুখের বন্ধুত্ব বৈরিতায় পরিণত হলেও এ ঘটনার পেছনে ছিল আরও ঘটনা। ২০০৮ সালে ‘কেয়া আপ পাঁচভি পাস সে তেজ হ্যায়’ নামে একটি গেম শো উপস্থাপনা করতেন শাহরুখ। আর সালমান করতেন ‘১০ কা দম’ নামের আরেকটি গেম শো। শাহরুখের চেয়ে সালমানের শোটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। এ নিয়ে মজা করে শাহরুখের গেম শোকে কটাক্ষ করে একটি মন্তব্য করেছিলেন সালমান। তাতে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলেন শাহরুখ। তাই পরে যখন ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস খান্না’ সিনেমায় শাহরুখকে অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সালমান, সেটা ফিরিয়ে দেন বলিউড বাদশা। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি ভাইজান। এভাবে তাঁদের বন্ধুত্বে ধীরে ধীরে ফাটল ধরতে শুরু করে; যার চূড়ান্ত রূপ পায় ক্যাটরিনার জন্মদিনের পার্টিতে।

যেভাবে আবার বন্ধু হলেন তাঁরা
ওই ঘটনার পর দুজনই পরস্পরকে এড়িয়ে চলতেন। তবে এ দ্বন্দ্ব মেটাতে সব সময়ই আন্তরিক ছিলেন শাহরুখ। বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ২০১২ সালে লিডারশিপ সামিটে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কিছু ব্যক্তিগত ঝামেলা হয়েছিল। ২০ বছর ধরে আমরা কাছাকাছি ছিলাম। কিছু বিষয়ে আমাদের মিল ছিল, কিছু বিষয়ে অমিল। তবে একটা সময় এসে অমিলটাই বড় হয়ে ওঠে। এটা যেহেতু ব্যক্তিগত, তাই সমাধানটাও ব্যক্তিগতভাবেই হবে। আমরা নিজেরা না চাইলে এর সমাধান কখনোই হবে না। হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু সেটা হবে।’

বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরই এক ফ্রেমে দেখা যায় সালমান-শাহরুখকে। বৈরিতা ভুলে পুরোনো বন্ধুত্বেই ফিরে যান তাঁরা। এ রিইউনিয়নের নেপথ্য ভূমিকায় ছিলেন বাবা সিদ্দিকি। ২০১৩ সালে তাঁর ইফতার পার্টিতে রচিত হয় মনোমালিন্য ভুলে দুই বন্ধুর কাছে আসার ইতিহাস। এর পর থেকে সব সময় পরস্পরের পাশে থাকেন সালমান-শাহরুখ। ২০১৭ সালে সালমানের ‘টিউবলাইট’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ, পরের বছর শাহরুখের ‘জিরো’তে ক্ষণিকের জন্য দেখা দেন সালমান। এরপর ‘পাঠান’-এ শাহরুখকে রক্ষা করতে যেমন এগিয়ে এসেছেন সালমান, তেমনি ভাইজানের ‘টাইগার থ্রি’তে দেখা দিয়েছেন শাহরুখ। দুই সুপারস্টারের এ বন্ধুত্ব আজও অমলিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত