Ajker Patrika

‘৫০ লাখ লইয়া ঘুরছি, প্যাঁচ লাগাইছে কাদের’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫৮
‘৫০ লাখ লইয়া ঘুরছি, প্যাঁচ লাগাইছে কাদের’

‘৫০ লাখ টাকা লইয়া এক সপ্তাহ ঘুরছি। চাইলে আরও দিমু। আমারে সভাপতি দেওন লাগব। পরে আওয়ামী লীগের নেতারা মানা করছে। ওবায়দুল কাদের প্যাঁচটা লাগাইছে।’

কথাগুলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক শান্ত কুমার রায়ের। তিনি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সম্প্রতি তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্নজনের থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে নবীনগর থানায় ১২টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।

এক লাখ টাকা দিলেই এক সপ্তাহ পর সেই টাকার সঙ্গে দিতেন ১০ হাজার টাকা লাভ। ২ লাখে ২০ হাজার টাকা। যে যত বেশি টাকা দিতেন তিনি তত বেশি লাভ পেতেন। কাউকে বলতেন স্বর্ণ, কাউকে বলতেন জমির ব্যবসা, আবার কাউকে বলতেন সিগারেটের ব্যবসায় লগ্নি করে মেলে এই টাকার লাভ। এই ফাঁদে পড়েন নবীনগরের দুটি গ্রামের অন্তত ১৫ জন মানুষ।

শান্তর কাছে যাঁরা টাকা পাবেন, তাঁদের একজন নবীনগরের বাড়াইল গ্রামের ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন। তিনিও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি শান্তকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এর প্রমাণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের একটি ভয়েস রেকর্ড রয়েছে তাঁর কাছে।

আব্বাস উদ্দিনের হাতে থাকা ভয়েস রেকর্ডে শান্তকে বলতে শোনা যায়, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। তিনি ‘জয় ভাই (ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি) গেলেগা প্যাঁচ। এই কারণে সেন্ট্রালে এখন পদ নিব। জেলা কমিটি করতে শেখ হাসিনা নিষেধ করছে। নাইলে জেলা কমিটির প্রেসিডেন্ট হয়ে যাইতাম, একটুর লাইগা। ৫০ লাখ লইয়া ঘুরছি ঢাকায়। টাকা রুমে দিয়া আমি বাইরে আইসা পড়ছি। ইতা খরচপাতি দেওয়া লাগে। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশ, কমিটি না দিতে।’

এ কথার পর রেকর্ডিংয়ে এরপর আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে শান্তর টাকা লেনদেনের কথা আছে। তাঁর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা গুনে বুঝে নেন শান্ত। তারপর তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আব্বাস উদ্দিনকে লেনদেনের কাগজ করে দিবেন। সঙ্গে থাকা সুজন ও শ্যামল নামের দুজনকে কাগজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’

একপর্যায়ে শান্ত কুমার বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে একটা ছাপাখানার ব্যবসা কয়েকজন মিলে শুরু করতেছি। আস্তে আস্তে ব্যবসা না বাড়ালে চলমু কীভাবে! টাকা না থাকলে রাজনীতি করমু কেমনে, বড় লোক হমু, হতেও পারমু না।’

আব্বাস উদ্দিন তখন বলছেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতিটা হয়ে গেলেই আস্তে আস্তে সব লাইনঘাট হয়ে যেত আপনার।’

উত্তরে শান্ত বলেন, ‘আরে ভাই কয়েন না, দোয়া করবেন। সভাপতি হতে পারলে তো মাসে ১ কোটি টাকা আসত এমনিতেই। কোনো কামাই করা লাগত না। এই বিয়েশাদিও ছাত্রলীগের লাইজ্ঞা আটকায়া আছে।’

লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্বাস উদ্দিন আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘আমি সরল বিশ্বাসে টাকাগুলো তাঁকে দিছিলাম। এই রেকর্ড ছাড়া আমার কোনো প্রমাণ নাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘কারও অপকর্মের দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না। ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি শান্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই ব্যাপারে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ পর্যন্ত ১২ জন শান্তর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টাও চলছে। 

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত