Ajker Patrika

মাঠ নেই, তবু দেশসেরা

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১৩: ০৪
Thumbnail image

ক্রিকেট খেলার মতো উপযোগী মাঠ নেই। বিদ্যালয় ছুটির পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুশীলনে যেতে হয় অন্য মাঠে। সেখানেও মাঝেমধ্যে জায়গা না মিললে ফেরে আসতে হয়। তবু দেশসেরা হয়েছে সেই বিদ্যালয়।

বলছি রংপুর শিশু নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের কথা। গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে জয়ী হয়েছে বিদ্যালয়টি।

১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে ৩৫ শিক্ষক, ১৪ কর্মচারী ও দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত পাঁচবার জেলা ও তিনবার বিভাগ পর্যায়ে ক্রিকেট, ফুটবল ও হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, মাঠে জায়গা না থাকায় ছুটির পর কখনো রংপুর জেলা স্কুল মাঠে বা কখনো কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করানো হয়। ক্রিকেট গার্ডেনে তাদের অনুশীলনের অনুমতি নেই। ২০১৯ সালে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সেমিফাইনালে বিদ্যালয়টি পরাজিত হলেও এবার শিরোপা জিতেছে।

গতকাল মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিজয় দলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্যাম সুন্দর বর্মণ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের শিক্ষার্থীরা আগামীতে অনেক ভালো পর্যায়ে যাবে। শিহাব (ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট সেরা) অনেক পরিশ্রমী। সে একদিন দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। আমাদের এখন একটা ভালো মানের খেলার মাঠ খুব প্রয়োজন। তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালোমতো অনুশীলন করতে পারবে।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল কুমার রায় বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা মাড়িয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। এটা গর্বের। এর আগেও বিভিন্ন খেলায় জেলা পর্যায়ে পাঁচবার ও বিভাগ পর্যায়ে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘আজকের সাফল্যের পেছনে ক্রীড়া শিক্ষক আনোয়ারুচ্ছাদিক সুমন ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাসির খান আকাশের অনেক অবদান। আমরা এই সাফল্য ধরে রাখার চেষ্টা করব। তবে মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অনুশীলনে সমস্যা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কাছে মাঠের বিষয়ে বলেছি।’

এ বিষয়ে ক্রীড়া শিক্ষক আনোয়ারুচ্ছাদিক সুমন বলেন, ‘আমি ২০০৩ সালে স্কুলে যোগদানের পর থেকেই বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে আসছি। আমরা এ পর্যন্ত ক্রিকেটে জেলায় পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে এইবার নিয়ে দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ। ২০১৯ সালে সেমিফাইনালে পরাজিত হই। এর আগেও আমাদের স্কুলের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন অনূর্ধ্ব-১৯, শিহাব নামের আরেক ছাত্র অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলেছেন। আমাদের আরেক ছাত্র হকিতে জাতীয় দলে অনূর্ধ্ব-২১ খেলেছেন। ফুটবলেও বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী শেখ জামালের হয়ে খেলছেন। আমাদের চাওয়া শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ জাতীয় টিমে খেলবে। বাংলাদেশকে, রংপুরকে সারা পৃথিবীর কাছে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলবে।’

উল্লেখ্য, রংপুরের শিশু নিকেতন উচ্চবিদ্যালয় সোমবারের ফাইনালে মেহেরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিপক্ষে যে ৫৯ রানের দাপুটে জয় পেয়েছে তাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল স্পিনারদের।

টস হেরে আগে ব্যাটিং করা রংপুরকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেয় আহমেদ তেজান (২৮) ও তৌহিদ জাহান (২৪)। মেহেরপুরকে ১০৩ রানের লক্ষ্য দিতে পারে তারা। জবাব দিতে নেমে রংপুর অধিনায়ক সাইখ ইমতিয়াজ শিহাবের লেগ স্পিনে দিশেহারা হয়ে পড়ে মেহেরপুরের ব্যাটাররা। শিহাবের সঙ্গে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে বাকি দুই লেগ স্পিনারও। এতে ২০.২ ওভারে ৪৩ রানে গুটিয়ে যায় মেহেরপুর। সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট সেরা হয় শিহাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত