Ajker Patrika

মানুষই খাচ্ছে পৃথিবীটাকে

মানুষই খাচ্ছে পৃথিবীটাকে

বিশ্বের তাপমাত্রা ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে, যা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরেই দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়বে পৃথিবীর। আর এই পুরো পরিস্থিতির জন্য একমাত্র দায়ী হলো মানুষ। জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) আজ সোমবার এ কথা বলেছে। 

আজ সোমবার আইপিসিসির বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা এতটাই হয়েছে যে, আগামী এক শতক না হলেও কয়েক দশক অন্তত জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাটি অক্ষুণ্ন থাকবে। অর্থাৎ, দেশে দেশে যে দাবানল, তাপপ্রবাহ, ঝড়–জলোচ্ছ্বাস বা অতিবৃষ্টি–অনাবৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি হচ্ছে, তা আরও কয়েক দশক অন্তত চলবে। শুধু চলবেই না, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ক্রমে আরও তীব্র হয়ে হাজির হবে। 

আইপিসিসির এই প্রতিবেদনকে ‘মানবতার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যে সতর্ক সংকেত বাজছে, তা বধির করে দেওয়ার মতো। এই গ্রহ ধ্বংস করে দেওয়ার আগেই কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য এই প্রতিবেদনকে মৃত্যুঘণ্টা হিসেবে আমাদের বিবেচনা করা উচিত। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী তিন মাসের মধ্যে জাতিসংঘের কপ ২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে দেশগুলোকে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিতে হবে, যাতে বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়। 

আইপিসিসির এই জলবায়ু প্রতিবেদনকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হওয়া ১৪ হাজারের বেশি গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত হওয়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাবতীয় গবেষণেরা মধ্যে এতেই রয়েছে এ সম্পর্কিত সবচেয়ে বিস্তারিত চিত্র। নানা দিক পর্যালোচনা করে গবেষণাটি করায় এতে রয়েছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষয় ও এর প্রভাব সম্পর্কিত এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে সঠিক তথ্য। একই সঙ্গে এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কী করা উচিত, তা নিয়েও দিয়েছেন পরামর্শ। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুত, কার্যকর ও বড় পরিসরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস, এমনকি তারও বেশি বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা কমাতে কোনো কাজেই আসছে না। 

একদিকে দাবানল, অন্যদিকে বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়াআইপিসিসির এই প্রতিবেদনে দেওয়া সতর্কবার্তাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার। এরই মধ্যে প্রতিবেদনটিকে ‘জেগে ওঠার ডাক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গ্লাসগোতে আলোচনায় বসার আগে গোটা বিশ্বকে জেগে ওঠার ডাক এটি।’ 

প্রতিবেদনে বলা হয়, যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ গোটা বিশ্বকে বিপদে ফেলেছে, তার জন্য মূল দায় মানুষের। মানুষের নানা কাজের কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা এরই মধ্যে শিল্পযুগের আগের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ যথাযথভাবে নেওয়া হলেও এটি আরও দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। অর্থাৎ আজকে যদি সত্যি সত্যিই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসে বিশ্বের দেশগুলো, তার পরও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বন্ধ হবে না সহসা। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। 

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন চলতি শতকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে বিশ্বের দেশগুলো একমত হলেও এটি বাস্তবে রূপ দিতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া দরকার, তা অনেকেই নিচ্ছে না। শিল্প যুগের আগের গড় তাপমাত্রার চেয়ে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের আছে। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যতই আসুক না কেন, মানুষ বিলুপ্তি ঠেকাতে পারবে। কিন্তু এটি ছাড়িয়ে গেলে পৃথিবীই ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। ফলে এই দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নই আসলে মানুষের শেষ সীমা বলা যায়। 

এরই মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়াতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে ক্রমবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তাতে এর গতি না থামালে সামনে সমূহ বিপদ এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর তাই বিশ্বনেতারা আইপিসিসির এই প্রতিবেদন বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। কতটা তা গ্লাসগোর কপ ২৬–এ বোঝা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা

সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, সেনা জালে ৩ সমন্বয়ক

‘উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার সময় আমার ছেলে হোস্টেলের দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’

১০ মিনিটের দেরি বাঁচিয়ে দিল ভূমিকে, অল্পের জন্য ধরতে পারেননি বিধ্বস্ত বিমানটি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত