Ajker Patrika

বজ্রপাত বৃদ্ধিতে জটিল হচ্ছে হাঁপানি ও অ্যালার্জির সমস্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ৫০
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশেও বজ্রপাতের হার ক্রমাগত বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশেও বজ্রপাতের হার ক্রমাগত বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে গরম, বজ্রঝড় ও অস্বাভাবিক আবহাওয়ার প্রবণতা। সেই সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে পরাগ রেণু নির্গমনের মৌসুম। ফলে নতুন করে দেখা দিচ্ছে ‘থান্ডারস্টর্ম অ্যাজমা’ নামের একধরনের বিপজ্জনক শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। একই সঙ্গে মৌসুমি অ্যালার্জিও হচ্ছে আরও তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি।

২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর, এমনই এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে আকাশ কালো হয়ে আসে, শুরু হয় বজ্রপাতসহ ঝড়। তবে সেই ঝড়ের ভেতর লুকিয়ে ছিল অদৃশ্য এক ‘মরণফাঁদ’। মিলিয়ন মিলিয়ন পরাগ রেণুর কণা ঝড়ের সঙ্গে ওপরে উঠে গিয়ে সেখান থেকে বৃষ্টি, বজ্রপাত ও আর্দ্রতার প্রভাবে ভেঙে গিয়ে আরও সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয় এবং এরপর সেগুলো আবার বাতাসে মিশে মানুষের নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে পড়ে।

মেলবোর্নে জরুরি ফোন লাইনগুলো একেবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, হাসপাতালে দলে দলে ভিড় করেন শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীরা। অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর মতো যথেষ্ট গাড়ি ছিল না, ফলে অনেকেই বাসায় অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় আট গুণ বেশি রোগী আসে, আর হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১০ গুণ বেশি মানুষ।

এ ঘটনার ফলে মারা যায় ১০ জন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মাত্র ২০ বছরের এক আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি নিজ বাড়ির উঠানে পড়ে ছিলেন, অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই তাঁর পরিবার তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একজন বেঁচে ফেরা রোগী বলেন, ‘৩০ মিনিট আগেও আমি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছিলাম, হঠাৎ করেই মনে হলো দম বন্ধ হয়ে আসছে। এটা ছিল ভয়াবহ।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশেও বজ্রপাতের হার ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে দেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা। একদিকে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে উঠে আসা উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু, আর অন্যদিকে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা ঠান্ডা ও শুষ্ক বায়ুর সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে বজ্রপাতের জন্য আদর্শ পরিবেশ।

এই দুই ধরনের বায়ুর মুখোমুখি সংঘর্ষে বায়ুমণ্ডলে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা, যা ঘন মেঘ ও বজ্রঝড়ের জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন দেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তখন এই সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ফলাফল হিসেবে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় অতিরিক্ত গরম পড়ে, সেসব অঞ্চলে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ মেঘপুঞ্জ তৈরি করে, যা পরে বজ্রপাতের দিকে গড়ায়। অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের ঝুঁকি গড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতের হার ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে দেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা। একদিকে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে উঠে আসা উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু, আর অন্যদিকে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা ঠান্ডা ও শুষ্ক বায়ুর সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে বজ্রপাতের জন্য আদর্শ পরিবেশ।

এই দুই ধরনের বায়ুর মুখোমুখি সংঘর্ষে বায়ুমণ্ডলে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা, যা ঘন মেঘ ও বজ্রঝড়ের জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন দেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তখন এই সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ফলাফল হিসেবে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় অতিরিক্ত গরম পড়ে, সেসব অঞ্চলে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ মেঘপুঞ্জ তৈরি করে, যা পরে বজ্রপাতের দিকে গড়ায়। অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের ঝুঁকি গড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

এই বাড়তি বজ্রঝড় শুধু প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির কারণ নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরেকটি আশঙ্কাজনক স্বাস্থ্যঝুঁকি: থান্ডারস্টর্ম অ্যাজমা।

পরাগ রেণু প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই অতি সূক্ষ্ম কণাগুলো গাছের এক অংশ থেকে অন্য অংশে গিয়ে তাদের প্রজননে সহায়তা করে। কিছু গাছপালা পরাগ রেণু ছড়াতে পোকামাকড়ের সাহায্য নেয়। তবে অনেক গাছ, ঘাস ও আগাছা বাতাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে পরাগ রেণু ছড়িয়ে দেয়। এ ধরনের গাছপালা থেকেই সাধারণত মৌসুমি অ্যালার্জি বা হে ফিভার হয়ে থাকে।

এটি তখনই ঘটে যখন আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভুল করে পরাগ রেণুকে ক্ষতিকর কিছু হিসেবে চিনে ফেলে এবং এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এর ফলে সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকানো এবং হাঁচি। অনেক সময় পরাগ রেণু অ্যালার্জি শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি করে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা শ্বাস নিতে বাধা দেয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

‘থান্ডারস্টর্ম অ্যাজমা’ নামে পরিচিত নতুন বিপদ

এ ঘটনাটিকে পরে চিহ্নিত করা হয় ‘থান্ডারস্টর্ম অ্যাজমা’ বা বজ্রপাত অ্যাজমা হিসেবে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ঝড়ের সময় পরাগ রেণুগুলো ভেঙে গিয়ে অত্যন্ত ছোট আকারে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা নাক ও ফুসফুসে প্রবেশ করে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এমনকি যাদের আগে কখনো হাঁপানি হয়নি, তারাও আক্রান্ত হন।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক পল বেগস বলেন, ‘এটি ছিল একেবারেই নজিরবিহীন এবং ভয়ানক। চিকিৎসক, নার্স, এমনকি ফার্মেসিগুলোর কর্মীরা বুঝতেই পারছিলেন না কী ঘটছে।’

২০২৪ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনার সুস্পষ্ট যোগ রয়েছে। তাঁর মতে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাতাসে পরাগের মাত্রা বাড়ছে, মৌসুমি বৈচিত্র্য বদলাচ্ছে এবং আমাদের সংস্পর্শে আসা পরাগের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে।’

দীর্ঘতর মৌসুম, তীব্রতর অ্যালার্জি

বিজ্ঞানীদের মতে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক অঞ্চলে মৌসুমি অ্যালার্জিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, এই মৌসুমও দীর্ঘ হচ্ছে, আর উপসর্গগুলোও আগের চেয়ে তীব্র হচ্ছে।

গবেষকদের মতে, ২০২৫ সালের এই মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯টি রাজ্যে পরাগ রেণুর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় পৌঁছাবে।

যুক্তরাজ্যের ইম্পিরিয়াল কলেজের ন্যাশনাল হার্ট অ্যান্ড লাং ইনস্টিটিউটের গবেষক এলেইন ফুয়ের্টেস বলেন, ‘এই পরিবর্তনের ফলে অনেক মানুষ আগেই উপসর্গ অনুভব করতে শুরু করবেন এবং সেটা দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে।’

বিশেষত ‘র‍্যাগউইড’ নামের একধরনের আগাছা উদ্ভিদ মারাত্মক ভূমিকা রাখছে। এটি বছরে এক বিলিয়ন পর্যন্ত পরাগ রেণু নির্গত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ এই উদ্ভিদের পরাগে অ্যালার্জিতে ভোগেন। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে এই উদ্ভিদের পরাগ রেণু মৌসুম ১৮ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়লে পরাগও বাড়ে

গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়লে অনেক গাছের পরাগ রেণু উৎপাদনও বেড়ে যায়। ৮০০ পিপিএম কার্বন ডাই-অক্সাইড মাত্রায় ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ ৫০ শতাংশ বেশি পরাগ রেণু উৎপাদন করে। ওক জাতীয় গাছ ১৩ গুণ পর্যন্ত বেশি পরাগ রেণু তৈরি করে।

র‍্যাগউইড নিয়ে গবেষণা করা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুইস জিস্কা বলেন, ‘প্রতিবার কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়ালে র‍্যাগউইডগাছ আরও বড় হয়, আরও বেশি পরাগ রেণু তৈরি করে এবং আরও বেশি “অ্যালার্জিক” ধরনের পরাগ উৎপাদন করে।’

বিশ্বজুড়ে ছড়াচ্ছে নতুন নতুন অ্যালার্জি

মূলত উত্তর আমেরিকার উদ্ভিদ হলেও র‍্যাগউইড এখন ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায়ও ছড়িয়েছে। হাঙ্গেরিতে ৬০ শতাংশ, ডেনমার্কে ২০ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডসে ১৫ শতাংশে মানুষ পরাগ রেণুর প্রতি সংবেদনশীল।

২০৫০ সালের মধ্যে র‍্যাগউইড পরাগের মাত্রা বর্তমানের চেয়ে চার গুণ বাড়তে পারে। এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধির পেছনে দায়ী উদ্ভিদের বিস্তার, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

শহর পরিকল্পনায় পরিবর্তন দরকার

অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহর র‍্যাগউইড নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছিল। ১৯৩২ সালে শিকাগো শহরে ১ হাজার ৩৫০ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছিল পরাগ রেণু উৎপাদনকারী উদ্ভিদ পরিষ্কার করতে। নিউইয়র্ক শহরের ১৯৫৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এভাবে র‍্যাগউইড কেটে ফেলার মাধ্যমে পরাগের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছিল।

বর্তমানে ইউরোপে এই ধরনের উদ্যোগ আবার দেখা যাচ্ছে। বার্লিনে র‍্যাগউইড নির্মূলকারী দল গঠন করা হয়েছে, সুইজারল্যান্ড ২০২৪ সালে এই উদ্ভিদ আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

গবেষক ফুয়ের্টেস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই শহরগুলোকে সবুজ করতে হবে, তবে সেটা চিন্তাভাবনা করে করতে হবে।’ কোন গাছ লাগানো হবে, কীভাবে লাগানো হবে, এসব বিষয় এখন অ্যালার্জির মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে করতে হবে।

নজরদারি ও সতর্কতা জরুরি

পরাগ মাত্রা ও প্রকৃত অ্যালার্জেনের উপস্থিতি নজরদারির ওপর জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আজও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তাপমাত্রা ও বৃষ্টির মতো বিষয় নিয়মিতভাবে পরিমাপ করা হয়, তবে কতটুকু পরাগ রেণু বা অ্যালার্জেন বাতাসে রয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট ও রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া যায় না।

ফুয়ের্টেস বলেন, ‘নিয়মিতভাবে অ্যালার্জেন পরিমাপ করা শুরু করা উচিত। কারণ, একই পরাগ রেণু কণাও ভিন্ন আবহাওয়ায় ভিন্ন পরিমাণে অ্যালার্জেন ছাড়তে পারে।’

ভবিষ্যতে যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায়, তাহলে আরও বেশি মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে অ্যালার্জিতে ভুগবেন। কেউ কেউ ছোটখাটো উপসর্গে, কেউ কেউ প্রাণঘাতী অ্যাজমায়।

অধ্যাপক বেগস বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন যথেষ্ট গবেষণা আছে, যা প্রমাণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এটা কেবল শুরু।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী। এর মধ্যে আজ বুধবার তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে শহরটি।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৯৭। যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

আজ বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির বায়ুমান ২৪৮, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো ভারতের কলকাতা (২৪৭), ভিয়েতনামের হ্যানয় (২৩৬), পাকিস্তানের করাচি (২২৮) ও ভারতের দিল্লি (২১০)।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি—ইস্টার্ন হাউজিং, দক্ষিণ পল্লবী, বেচারাম দেউরি, গোড়ান, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, কল্যাণপুর, পেয়ারাবাগ রেললাইন, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, শান্তা ফোরাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলা এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজ ১৬ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ সোমবার সকালে ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বেচারাম দেউরির বাতাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যে অবস্থান করছে শহরটি। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকায় আছে দ্বিতীয় স্থানে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ২৫০, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি—বেচারাম দেউরি, গোড়ান, কল্যাণপুর, পল্লবী দক্ষিণ, ইস্টার্ন হাউজিং, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, শান্তা ফোরাম, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, পেয়ারাবাগ রেল লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতের কলকাতার বায়ুমান আজ ২৬২, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো মিসরের কায়রো (২৩৯), ভারতের দিল্লি (২৩২) ও কুয়েতের কুয়েত সিটি (১৯৮)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ ঢাকায় শীত কিছুটা বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় আজ মঙ্গলবার শীত কিছুটা বেশি পড়েছে। আগের দিন সোমবার সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেটি কমে হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত