জাহাঙ্গীর আলম

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে দেওয়ার নীতির সঙ্গে তামিলদের আরেকটি কঠিন ও নিষ্ঠুর বেড়াও ভাঙতে হয়েছিল, সেটি ধর্মীয়। ভাষার অধিকার আদায়ে নানা ফ্রন্টে আন্দোলন করেছিল তামিলরা। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি হয়েছে সংগীতের মতো একটি বিশ্বশিল্পে।
দক্ষিণ ভারতে তখন কর্ণাটকি সংগীত বলতেই বোঝায় মূলত তেলেগু। সেই সংগীতে আবার ব্রাহ্মণ, তথা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আধিপত্য। আর নিম্নবর্ণের দ্রাবিড় তামিলরা তাদের কাছে অস্পৃশ্য। ফলে ভাষার ব্যাপারেও ব্রাহ্মণদের ছুতমার্গ ভয়ানক রকমের বৈষম্যমূলক ছিল। অবশ্য পণ্ডিতেরা মুখ ফুটে সে কথা কখনো বলেননি।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তামিল ভাষার মর্যাদা ও সংগীতে এ ভাষার উপযুক্ততা প্রমাণ হওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা আসলে এই অনার্য ভাষাকে জাতে তুলতে রাজি হননি। তাঁদের এই বর্ণবাদী জাত্যাভিমান একটি বৃহৎ সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠীকে মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
পণ্ডিতেরা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্তও মনে করতেন, তামিল ভাষায় গান হয় না। এ ভাষা তেলেগু মতো ছন্দময় নয়। বহু উচ্চবর্ণীয় কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ যুক্তি হিসেবে বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এমন ভাষা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তামিলকে কখনোই তেলেগু, সংস্কৃত ও কন্নড়ের সমকক্ষ ভাবতেন না তাঁরা।
পণ্ডিতদের খপ্পরে পড়েছিলেন অনেক তামিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞও। তাঁরা মাতৃভাষায় সংগীতচর্চা করতে সংকোচ বোধ করতেন। অবশ্য এখনো যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকে সংকোচ করেন না, এমন নয়।
এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতেই তামিলকে সংগীতের ভাষা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যে একটি সংগঠিত আন্দোলন দানা বাঁধে। অথচ এই তামিলনাড়ুই থিরুভাল্লুভার, ইলাঙ্গো আদিগাল এবং সুব্রাহ্মনিয়া ভারতীর মতো কিংবদন্তি কবির জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ভাষাভিত্তিক বর্ণবাদ এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৩৭ সালে। ওই সময় একজাতীয় আদেশে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু রাজ্য। তামিল ভাষা, সাহিত্য ও পরিচয় সংরক্ষণ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পাশাপাশি সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সংগীতে তামিল ভাষার স্থান করে নেওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে এ রকম—
থেভারাম, নালাইরা দিব্য প্রবান্ধামের মতো ভক্তিমূলক সংগীত এবং ভারতীর কবিতা বুঝে থাকলে মনে হতে পারে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষা এবং সাহিত্যের একটা উচ্চ মর্যাদা আছে।
প্রকৃতপক্ষে তামিল ইসাই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে, অধিকাংশ কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ এবং শ্রোতারা বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এটা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কনসার্টে তামিল গান খুব কমই গাওয়া হতো। এমনকি কর্ণাটকি সংগীত সংকলন ‘সংগীতা পারিজাতাম’ এবং ‘গায়াকা লোচনাম’-এর মতো বইয়ে শেষের দিকে তামিল গানগুলো রাখা হয়েছে। আবার সেই অধ্যায়ের নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিল্লারাই’। এটার তামিল অনুবাদ দাঁড়ায় ‘তুক্কাদা’, যার অর্থ বিবিধ, গৌণ বা তুচ্ছ।
তামিলরা মনে করেন, কর্ণাটকি গান রচনা ও গাওয়াতে তেলেগু ভাষার যে আভিজাত্য, সেটি বজায় রাখতেই সংকলনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। পনেরো শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেবরায় তেলেগু গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরে স্বাধীন শাসকেরা, যারা পূর্ববর্তী বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন, যেমন মাদুরাই, তাঞ্জোর এবং জিঞ্জির নায়েকরা কর্ণাটকি সংগীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষার তুলনায় তেলুগু গানকেই প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আঠারো শতকের কৃতি ত্রয়ী হিসেবে বিখ্যাত তিন সংগীতজ্ঞ—তিয়াগরাজা, মুথুস্বামী দীক্ষিতার এবং শ্যামা শাস্ত্রী; তাঁরা খ্যাতি পেয়েছেন মূলত তেলেগু সংগীতে। তাঁদের কিছু সংস্কৃত কম্পোজিশনও বেশ জনপ্রিয়। যদিও তামিল মহাকাব্য ‘সিলপ্পাদিকারম’, যেটি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়, সেখানে তামিল সংগীত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এরপরও কর্ণাটকি সংগীতের জগতে ভাষাটি অস্পৃশ্য থেকে যায়।
তামিল ইসাই আন্দোলন
তামিল ইসাই আন্দোলনের সূচনা ১৯৩৯ সালে। ১৯৩৭ সালের সরকারি আদেশের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়েছিল জাস্টিস পার্টি। এই সংগঠনকে দ্রাবিড় আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়। সি রাজাগোপালাচারীর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ভারতের জাতীয় সরকার ওই সময় সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেয়। এই পটভূমিতে তামিল ইসাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন রাজা স্যার আন্নামালাই চেত্তিয়ার। তিনি তৎকালীন তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত শিল্পপতি এবং জনহিতৈষী ছিলেন। আন্নামালাই বিশেষ করে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছিলেন।
পরের বছরগুলোতে চিদাম্বরমে প্রথম তামিল ইসাই সম্মেলন ডাকেন আন্নামালাই। এর পর আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কারাইকুডি এবং মাদুরাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য অর্থ সাহায্য করেন।
ভারতের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করেন আন্নামালাই চেট্টিয়ার। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগকে শুধু তামিল সংগীতের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নেন। বিভাগে শুধু তামিল কম্পোজারদের বই রাখার ব্যবস্থা করেন। আন্নামালাইয়ের এ উদ্যোগকে তামিল সংগীতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হয়।
১৯৪১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল ইসাই সম্মেলনের উদ্বোধনীতে আন্নামালাই চেত্তিয়ার বলেন, সংগীত পরিবেশনা শুরু হবে তামিল গান দিয়ে, শেষও হবে তামিল গানেই। কনসার্টের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিল ভাষায় হওয়া উচিত। ‘তামিল ইসাই অ্যাজ এ চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মানিক্যাল মিউজিক কালচার ইন সাউথ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এমনটিই বলেছেন গবেষক ইয়োশিতাকা তেরাদা। তিনি জাপানের ওসাকায় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এথনোলজির একাডেমিক এবং অধ্যাপক।
আন্নামালাই চেত্তিয়ারের জেদের কারণেই সম্মেলনে একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। সেটি কর্ণাটকি সংগীতজনদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগীতকারদের প্রতি এটি ছিল একটি শক্ত বার্তা।
তৎকালীন কর্ণাটকি সংগীতের হর্তাকর্তারা বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন এতে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এমন উদ্যোগে তামিল সংগীতের চাপে তেলেগু রচনাগুলোর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সাউথ ইন্ডিয়ান ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ফলে ইস্যুটি কর্ণাটকি সংগীত জগতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়।
এই আন্দোলনে পরে যুক্ত হন কল্কি কৃষ্ণমূর্তি, মুসিরি সুব্রাহ্মনিয়াম আইয়ার এবং সেমাংগুদি শ্রীনিবাস আইয়ারের মতো শিল্পীরা। এ ছাড়া কেবি সুন্দরম্বল, এনসি বসন্তকোকিলাম, এম এস সুব্বুলক্ষ্মী এবং ডি কে পাট্টম্মলের মতো গায়িকাদের ভূমিকা তামিল ইসাই আন্দোলনের প্রচারে সহায়ক ছিল।
মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সভাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংগীতজ্ঞদের সমালোচনার গভীরে গিয়ে ইয়োশিতাকা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের মান’ রক্ষার প্রতি কেন্দ্রীভূত ছিল। কোনো ভাষাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সেটির মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা সজাগ থাকার কথা বলতেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন, কনসার্টে যদি অন্য ভাষার সঙ্গে তামিল গান গাওয়ার আনুপাতিক সুযোগ থাকে, তাহলে তেলেগু এবং সংস্কৃতের ‘যোগ্য’ বা ‘প্রাচীন’ রচনাগুলোর মর্ম ও গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে।
তবে সংগীত একাডেমি এবং অন্যান্য সভা সমর্থনকারী সংগীতজ্ঞদের মধ্যে যে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রবলভাবে ছিল, সেটি উপেক্ষা করা যায় না। ইয়োশিতাকা তেরাদা সেনরি এথনোলজিক্যাল স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের অনেক সমর্থক কর্ণাটকি সংগীতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মক্কল কালাই ইল্লাকিয়া কালাহাম এবং তান্ডাই পেরিয়ার তামিল ইসাই মানরামের মতো সংগঠন, যারা তামিল ইসাই আন্দোলনের সমর্থক ছিল, তারা বলছিল, ‘তামিল ইসাই সঙ্গম’ বিদ্যমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট কাজ করছে না। অ-ব্রাহ্মণ শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার নন।
প্রথম তামিল ইসাই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালে। সেখানে গান পরিবেশন করেন এম এস সুব্বলক্ষ্মী। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন।
এম এস সুব্বলক্ষ্মীর সহশিল্পী রামনারায়ণ ২০১৬ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন। ১৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এমএস আম্মা ছিলেন (ইসাই) আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্য লাজুক এবং নিরীহ শিল্পী নিজের গুরু এবং জ্যেষ্ঠদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
১৯৪৯ সালে রাজা আন্নামালাই মান্দ্রামের কাজ শুরু হয়। এটিই পরে তামিল ইসাই সঙ্গমের সূতিকাগার হয়ে ওঠে। তত দিনে রাজা আন্নামালাই চেত্তিয়ার মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রাজা স্যার এম এ মুথিয়া চেত্তিয়ার এবং এম এ চিদাম্বরম আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কর্ণাটকি সংগীত সেশনের জন্য চেন্নাইয়ের এসপ্ল্যানেডের কোণে ২০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। তামিল ভাষায় মাসিক ও বার্ষিক কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি, তামিল ইসাই সঙ্গম কলেজকে সহযোগিতা এবং একটি বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর করা হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে তামিল ইসাই সঙ্গমের তরফে শিল্পীদের ‘ইসাই পেরারিগনার’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন। তামিল ইসাই সঙ্গমের সংগীত উৎসবের ৬০ তম আয়োজনে এ পি জে কালাম একটি তামিল কম্পোজিশন গেয়েছিলেন।
অবশ্য পরিস্থিতির যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অনেকে তো ইসাই আন্দোলনের খবরই জানেন না। তাঁদের জন্যই আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল সংগীতের ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
যেমনটি বলেন আন্নামালাই চেত্তিয়ারের নাতনি সীতা চিদাম্বরম—‘তামিল গানকে এখনো কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞরা নিকৃষ্ট বলে মনে করে। এখনো এমন গায়ক খুঁজে পাই, যারা তেলেগু গানের অর্থ না বুঝে গাইতে পারছেন। কিন্তু মাতৃভাষা তামিলে কম্পোজিশন শিখতে এবং গাইতে অনিচ্ছুক।’
তবুও, সীতা আশাবাদী যে তামিল ইসাই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা মানুষের ধারণা বদলে দেবে।
তথ্যসূত্র:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আরও পড়ুন

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে দেওয়ার নীতির সঙ্গে তামিলদের আরেকটি কঠিন ও নিষ্ঠুর বেড়াও ভাঙতে হয়েছিল, সেটি ধর্মীয়। ভাষার অধিকার আদায়ে নানা ফ্রন্টে আন্দোলন করেছিল তামিলরা। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি হয়েছে সংগীতের মতো একটি বিশ্বশিল্পে।
দক্ষিণ ভারতে তখন কর্ণাটকি সংগীত বলতেই বোঝায় মূলত তেলেগু। সেই সংগীতে আবার ব্রাহ্মণ, তথা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আধিপত্য। আর নিম্নবর্ণের দ্রাবিড় তামিলরা তাদের কাছে অস্পৃশ্য। ফলে ভাষার ব্যাপারেও ব্রাহ্মণদের ছুতমার্গ ভয়ানক রকমের বৈষম্যমূলক ছিল। অবশ্য পণ্ডিতেরা মুখ ফুটে সে কথা কখনো বলেননি।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তামিল ভাষার মর্যাদা ও সংগীতে এ ভাষার উপযুক্ততা প্রমাণ হওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা আসলে এই অনার্য ভাষাকে জাতে তুলতে রাজি হননি। তাঁদের এই বর্ণবাদী জাত্যাভিমান একটি বৃহৎ সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠীকে মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
পণ্ডিতেরা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্তও মনে করতেন, তামিল ভাষায় গান হয় না। এ ভাষা তেলেগু মতো ছন্দময় নয়। বহু উচ্চবর্ণীয় কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ যুক্তি হিসেবে বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এমন ভাষা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তামিলকে কখনোই তেলেগু, সংস্কৃত ও কন্নড়ের সমকক্ষ ভাবতেন না তাঁরা।
পণ্ডিতদের খপ্পরে পড়েছিলেন অনেক তামিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞও। তাঁরা মাতৃভাষায় সংগীতচর্চা করতে সংকোচ বোধ করতেন। অবশ্য এখনো যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকে সংকোচ করেন না, এমন নয়।
এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতেই তামিলকে সংগীতের ভাষা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যে একটি সংগঠিত আন্দোলন দানা বাঁধে। অথচ এই তামিলনাড়ুই থিরুভাল্লুভার, ইলাঙ্গো আদিগাল এবং সুব্রাহ্মনিয়া ভারতীর মতো কিংবদন্তি কবির জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ভাষাভিত্তিক বর্ণবাদ এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৩৭ সালে। ওই সময় একজাতীয় আদেশে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু রাজ্য। তামিল ভাষা, সাহিত্য ও পরিচয় সংরক্ষণ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পাশাপাশি সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সংগীতে তামিল ভাষার স্থান করে নেওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে এ রকম—
থেভারাম, নালাইরা দিব্য প্রবান্ধামের মতো ভক্তিমূলক সংগীত এবং ভারতীর কবিতা বুঝে থাকলে মনে হতে পারে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষা এবং সাহিত্যের একটা উচ্চ মর্যাদা আছে।
প্রকৃতপক্ষে তামিল ইসাই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে, অধিকাংশ কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ এবং শ্রোতারা বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এটা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কনসার্টে তামিল গান খুব কমই গাওয়া হতো। এমনকি কর্ণাটকি সংগীত সংকলন ‘সংগীতা পারিজাতাম’ এবং ‘গায়াকা লোচনাম’-এর মতো বইয়ে শেষের দিকে তামিল গানগুলো রাখা হয়েছে। আবার সেই অধ্যায়ের নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিল্লারাই’। এটার তামিল অনুবাদ দাঁড়ায় ‘তুক্কাদা’, যার অর্থ বিবিধ, গৌণ বা তুচ্ছ।
তামিলরা মনে করেন, কর্ণাটকি গান রচনা ও গাওয়াতে তেলেগু ভাষার যে আভিজাত্য, সেটি বজায় রাখতেই সংকলনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। পনেরো শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেবরায় তেলেগু গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরে স্বাধীন শাসকেরা, যারা পূর্ববর্তী বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন, যেমন মাদুরাই, তাঞ্জোর এবং জিঞ্জির নায়েকরা কর্ণাটকি সংগীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষার তুলনায় তেলুগু গানকেই প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আঠারো শতকের কৃতি ত্রয়ী হিসেবে বিখ্যাত তিন সংগীতজ্ঞ—তিয়াগরাজা, মুথুস্বামী দীক্ষিতার এবং শ্যামা শাস্ত্রী; তাঁরা খ্যাতি পেয়েছেন মূলত তেলেগু সংগীতে। তাঁদের কিছু সংস্কৃত কম্পোজিশনও বেশ জনপ্রিয়। যদিও তামিল মহাকাব্য ‘সিলপ্পাদিকারম’, যেটি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়, সেখানে তামিল সংগীত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এরপরও কর্ণাটকি সংগীতের জগতে ভাষাটি অস্পৃশ্য থেকে যায়।
তামিল ইসাই আন্দোলন
তামিল ইসাই আন্দোলনের সূচনা ১৯৩৯ সালে। ১৯৩৭ সালের সরকারি আদেশের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়েছিল জাস্টিস পার্টি। এই সংগঠনকে দ্রাবিড় আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়। সি রাজাগোপালাচারীর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ভারতের জাতীয় সরকার ওই সময় সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেয়। এই পটভূমিতে তামিল ইসাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন রাজা স্যার আন্নামালাই চেত্তিয়ার। তিনি তৎকালীন তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত শিল্পপতি এবং জনহিতৈষী ছিলেন। আন্নামালাই বিশেষ করে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছিলেন।
পরের বছরগুলোতে চিদাম্বরমে প্রথম তামিল ইসাই সম্মেলন ডাকেন আন্নামালাই। এর পর আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কারাইকুডি এবং মাদুরাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য অর্থ সাহায্য করেন।
ভারতের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করেন আন্নামালাই চেট্টিয়ার। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগকে শুধু তামিল সংগীতের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নেন। বিভাগে শুধু তামিল কম্পোজারদের বই রাখার ব্যবস্থা করেন। আন্নামালাইয়ের এ উদ্যোগকে তামিল সংগীতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হয়।
১৯৪১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল ইসাই সম্মেলনের উদ্বোধনীতে আন্নামালাই চেত্তিয়ার বলেন, সংগীত পরিবেশনা শুরু হবে তামিল গান দিয়ে, শেষও হবে তামিল গানেই। কনসার্টের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিল ভাষায় হওয়া উচিত। ‘তামিল ইসাই অ্যাজ এ চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মানিক্যাল মিউজিক কালচার ইন সাউথ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এমনটিই বলেছেন গবেষক ইয়োশিতাকা তেরাদা। তিনি জাপানের ওসাকায় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এথনোলজির একাডেমিক এবং অধ্যাপক।
আন্নামালাই চেত্তিয়ারের জেদের কারণেই সম্মেলনে একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। সেটি কর্ণাটকি সংগীতজনদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগীতকারদের প্রতি এটি ছিল একটি শক্ত বার্তা।
তৎকালীন কর্ণাটকি সংগীতের হর্তাকর্তারা বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন এতে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এমন উদ্যোগে তামিল সংগীতের চাপে তেলেগু রচনাগুলোর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সাউথ ইন্ডিয়ান ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ফলে ইস্যুটি কর্ণাটকি সংগীত জগতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়।
এই আন্দোলনে পরে যুক্ত হন কল্কি কৃষ্ণমূর্তি, মুসিরি সুব্রাহ্মনিয়াম আইয়ার এবং সেমাংগুদি শ্রীনিবাস আইয়ারের মতো শিল্পীরা। এ ছাড়া কেবি সুন্দরম্বল, এনসি বসন্তকোকিলাম, এম এস সুব্বুলক্ষ্মী এবং ডি কে পাট্টম্মলের মতো গায়িকাদের ভূমিকা তামিল ইসাই আন্দোলনের প্রচারে সহায়ক ছিল।
মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সভাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংগীতজ্ঞদের সমালোচনার গভীরে গিয়ে ইয়োশিতাকা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের মান’ রক্ষার প্রতি কেন্দ্রীভূত ছিল। কোনো ভাষাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সেটির মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা সজাগ থাকার কথা বলতেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন, কনসার্টে যদি অন্য ভাষার সঙ্গে তামিল গান গাওয়ার আনুপাতিক সুযোগ থাকে, তাহলে তেলেগু এবং সংস্কৃতের ‘যোগ্য’ বা ‘প্রাচীন’ রচনাগুলোর মর্ম ও গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে।
তবে সংগীত একাডেমি এবং অন্যান্য সভা সমর্থনকারী সংগীতজ্ঞদের মধ্যে যে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রবলভাবে ছিল, সেটি উপেক্ষা করা যায় না। ইয়োশিতাকা তেরাদা সেনরি এথনোলজিক্যাল স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের অনেক সমর্থক কর্ণাটকি সংগীতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মক্কল কালাই ইল্লাকিয়া কালাহাম এবং তান্ডাই পেরিয়ার তামিল ইসাই মানরামের মতো সংগঠন, যারা তামিল ইসাই আন্দোলনের সমর্থক ছিল, তারা বলছিল, ‘তামিল ইসাই সঙ্গম’ বিদ্যমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট কাজ করছে না। অ-ব্রাহ্মণ শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার নন।
প্রথম তামিল ইসাই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালে। সেখানে গান পরিবেশন করেন এম এস সুব্বলক্ষ্মী। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন।
এম এস সুব্বলক্ষ্মীর সহশিল্পী রামনারায়ণ ২০১৬ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন। ১৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এমএস আম্মা ছিলেন (ইসাই) আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্য লাজুক এবং নিরীহ শিল্পী নিজের গুরু এবং জ্যেষ্ঠদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
১৯৪৯ সালে রাজা আন্নামালাই মান্দ্রামের কাজ শুরু হয়। এটিই পরে তামিল ইসাই সঙ্গমের সূতিকাগার হয়ে ওঠে। তত দিনে রাজা আন্নামালাই চেত্তিয়ার মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রাজা স্যার এম এ মুথিয়া চেত্তিয়ার এবং এম এ চিদাম্বরম আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কর্ণাটকি সংগীত সেশনের জন্য চেন্নাইয়ের এসপ্ল্যানেডের কোণে ২০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। তামিল ভাষায় মাসিক ও বার্ষিক কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি, তামিল ইসাই সঙ্গম কলেজকে সহযোগিতা এবং একটি বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর করা হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে তামিল ইসাই সঙ্গমের তরফে শিল্পীদের ‘ইসাই পেরারিগনার’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন। তামিল ইসাই সঙ্গমের সংগীত উৎসবের ৬০ তম আয়োজনে এ পি জে কালাম একটি তামিল কম্পোজিশন গেয়েছিলেন।
অবশ্য পরিস্থিতির যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অনেকে তো ইসাই আন্দোলনের খবরই জানেন না। তাঁদের জন্যই আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল সংগীতের ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
যেমনটি বলেন আন্নামালাই চেত্তিয়ারের নাতনি সীতা চিদাম্বরম—‘তামিল গানকে এখনো কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞরা নিকৃষ্ট বলে মনে করে। এখনো এমন গায়ক খুঁজে পাই, যারা তেলেগু গানের অর্থ না বুঝে গাইতে পারছেন। কিন্তু মাতৃভাষা তামিলে কম্পোজিশন শিখতে এবং গাইতে অনিচ্ছুক।’
তবুও, সীতা আশাবাদী যে তামিল ইসাই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা মানুষের ধারণা বদলে দেবে।
তথ্যসূত্র:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আরও পড়ুন
জাহাঙ্গীর আলম

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে দেওয়ার নীতির সঙ্গে তামিলদের আরেকটি কঠিন ও নিষ্ঠুর বেড়াও ভাঙতে হয়েছিল, সেটি ধর্মীয়। ভাষার অধিকার আদায়ে নানা ফ্রন্টে আন্দোলন করেছিল তামিলরা। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি হয়েছে সংগীতের মতো একটি বিশ্বশিল্পে।
দক্ষিণ ভারতে তখন কর্ণাটকি সংগীত বলতেই বোঝায় মূলত তেলেগু। সেই সংগীতে আবার ব্রাহ্মণ, তথা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আধিপত্য। আর নিম্নবর্ণের দ্রাবিড় তামিলরা তাদের কাছে অস্পৃশ্য। ফলে ভাষার ব্যাপারেও ব্রাহ্মণদের ছুতমার্গ ভয়ানক রকমের বৈষম্যমূলক ছিল। অবশ্য পণ্ডিতেরা মুখ ফুটে সে কথা কখনো বলেননি।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তামিল ভাষার মর্যাদা ও সংগীতে এ ভাষার উপযুক্ততা প্রমাণ হওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা আসলে এই অনার্য ভাষাকে জাতে তুলতে রাজি হননি। তাঁদের এই বর্ণবাদী জাত্যাভিমান একটি বৃহৎ সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠীকে মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
পণ্ডিতেরা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্তও মনে করতেন, তামিল ভাষায় গান হয় না। এ ভাষা তেলেগু মতো ছন্দময় নয়। বহু উচ্চবর্ণীয় কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ যুক্তি হিসেবে বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এমন ভাষা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তামিলকে কখনোই তেলেগু, সংস্কৃত ও কন্নড়ের সমকক্ষ ভাবতেন না তাঁরা।
পণ্ডিতদের খপ্পরে পড়েছিলেন অনেক তামিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞও। তাঁরা মাতৃভাষায় সংগীতচর্চা করতে সংকোচ বোধ করতেন। অবশ্য এখনো যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকে সংকোচ করেন না, এমন নয়।
এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতেই তামিলকে সংগীতের ভাষা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যে একটি সংগঠিত আন্দোলন দানা বাঁধে। অথচ এই তামিলনাড়ুই থিরুভাল্লুভার, ইলাঙ্গো আদিগাল এবং সুব্রাহ্মনিয়া ভারতীর মতো কিংবদন্তি কবির জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ভাষাভিত্তিক বর্ণবাদ এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৩৭ সালে। ওই সময় একজাতীয় আদেশে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু রাজ্য। তামিল ভাষা, সাহিত্য ও পরিচয় সংরক্ষণ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পাশাপাশি সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সংগীতে তামিল ভাষার স্থান করে নেওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে এ রকম—
থেভারাম, নালাইরা দিব্য প্রবান্ধামের মতো ভক্তিমূলক সংগীত এবং ভারতীর কবিতা বুঝে থাকলে মনে হতে পারে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষা এবং সাহিত্যের একটা উচ্চ মর্যাদা আছে।
প্রকৃতপক্ষে তামিল ইসাই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে, অধিকাংশ কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ এবং শ্রোতারা বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এটা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কনসার্টে তামিল গান খুব কমই গাওয়া হতো। এমনকি কর্ণাটকি সংগীত সংকলন ‘সংগীতা পারিজাতাম’ এবং ‘গায়াকা লোচনাম’-এর মতো বইয়ে শেষের দিকে তামিল গানগুলো রাখা হয়েছে। আবার সেই অধ্যায়ের নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিল্লারাই’। এটার তামিল অনুবাদ দাঁড়ায় ‘তুক্কাদা’, যার অর্থ বিবিধ, গৌণ বা তুচ্ছ।
তামিলরা মনে করেন, কর্ণাটকি গান রচনা ও গাওয়াতে তেলেগু ভাষার যে আভিজাত্য, সেটি বজায় রাখতেই সংকলনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। পনেরো শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেবরায় তেলেগু গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরে স্বাধীন শাসকেরা, যারা পূর্ববর্তী বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন, যেমন মাদুরাই, তাঞ্জোর এবং জিঞ্জির নায়েকরা কর্ণাটকি সংগীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষার তুলনায় তেলুগু গানকেই প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আঠারো শতকের কৃতি ত্রয়ী হিসেবে বিখ্যাত তিন সংগীতজ্ঞ—তিয়াগরাজা, মুথুস্বামী দীক্ষিতার এবং শ্যামা শাস্ত্রী; তাঁরা খ্যাতি পেয়েছেন মূলত তেলেগু সংগীতে। তাঁদের কিছু সংস্কৃত কম্পোজিশনও বেশ জনপ্রিয়। যদিও তামিল মহাকাব্য ‘সিলপ্পাদিকারম’, যেটি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়, সেখানে তামিল সংগীত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এরপরও কর্ণাটকি সংগীতের জগতে ভাষাটি অস্পৃশ্য থেকে যায়।
তামিল ইসাই আন্দোলন
তামিল ইসাই আন্দোলনের সূচনা ১৯৩৯ সালে। ১৯৩৭ সালের সরকারি আদেশের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়েছিল জাস্টিস পার্টি। এই সংগঠনকে দ্রাবিড় আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়। সি রাজাগোপালাচারীর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ভারতের জাতীয় সরকার ওই সময় সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেয়। এই পটভূমিতে তামিল ইসাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন রাজা স্যার আন্নামালাই চেত্তিয়ার। তিনি তৎকালীন তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত শিল্পপতি এবং জনহিতৈষী ছিলেন। আন্নামালাই বিশেষ করে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছিলেন।
পরের বছরগুলোতে চিদাম্বরমে প্রথম তামিল ইসাই সম্মেলন ডাকেন আন্নামালাই। এর পর আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কারাইকুডি এবং মাদুরাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য অর্থ সাহায্য করেন।
ভারতের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করেন আন্নামালাই চেট্টিয়ার। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগকে শুধু তামিল সংগীতের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নেন। বিভাগে শুধু তামিল কম্পোজারদের বই রাখার ব্যবস্থা করেন। আন্নামালাইয়ের এ উদ্যোগকে তামিল সংগীতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হয়।
১৯৪১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল ইসাই সম্মেলনের উদ্বোধনীতে আন্নামালাই চেত্তিয়ার বলেন, সংগীত পরিবেশনা শুরু হবে তামিল গান দিয়ে, শেষও হবে তামিল গানেই। কনসার্টের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিল ভাষায় হওয়া উচিত। ‘তামিল ইসাই অ্যাজ এ চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মানিক্যাল মিউজিক কালচার ইন সাউথ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এমনটিই বলেছেন গবেষক ইয়োশিতাকা তেরাদা। তিনি জাপানের ওসাকায় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এথনোলজির একাডেমিক এবং অধ্যাপক।
আন্নামালাই চেত্তিয়ারের জেদের কারণেই সম্মেলনে একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। সেটি কর্ণাটকি সংগীতজনদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগীতকারদের প্রতি এটি ছিল একটি শক্ত বার্তা।
তৎকালীন কর্ণাটকি সংগীতের হর্তাকর্তারা বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন এতে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এমন উদ্যোগে তামিল সংগীতের চাপে তেলেগু রচনাগুলোর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সাউথ ইন্ডিয়ান ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ফলে ইস্যুটি কর্ণাটকি সংগীত জগতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়।
এই আন্দোলনে পরে যুক্ত হন কল্কি কৃষ্ণমূর্তি, মুসিরি সুব্রাহ্মনিয়াম আইয়ার এবং সেমাংগুদি শ্রীনিবাস আইয়ারের মতো শিল্পীরা। এ ছাড়া কেবি সুন্দরম্বল, এনসি বসন্তকোকিলাম, এম এস সুব্বুলক্ষ্মী এবং ডি কে পাট্টম্মলের মতো গায়িকাদের ভূমিকা তামিল ইসাই আন্দোলনের প্রচারে সহায়ক ছিল।
মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সভাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংগীতজ্ঞদের সমালোচনার গভীরে গিয়ে ইয়োশিতাকা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের মান’ রক্ষার প্রতি কেন্দ্রীভূত ছিল। কোনো ভাষাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সেটির মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা সজাগ থাকার কথা বলতেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন, কনসার্টে যদি অন্য ভাষার সঙ্গে তামিল গান গাওয়ার আনুপাতিক সুযোগ থাকে, তাহলে তেলেগু এবং সংস্কৃতের ‘যোগ্য’ বা ‘প্রাচীন’ রচনাগুলোর মর্ম ও গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে।
তবে সংগীত একাডেমি এবং অন্যান্য সভা সমর্থনকারী সংগীতজ্ঞদের মধ্যে যে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রবলভাবে ছিল, সেটি উপেক্ষা করা যায় না। ইয়োশিতাকা তেরাদা সেনরি এথনোলজিক্যাল স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের অনেক সমর্থক কর্ণাটকি সংগীতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মক্কল কালাই ইল্লাকিয়া কালাহাম এবং তান্ডাই পেরিয়ার তামিল ইসাই মানরামের মতো সংগঠন, যারা তামিল ইসাই আন্দোলনের সমর্থক ছিল, তারা বলছিল, ‘তামিল ইসাই সঙ্গম’ বিদ্যমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট কাজ করছে না। অ-ব্রাহ্মণ শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার নন।
প্রথম তামিল ইসাই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালে। সেখানে গান পরিবেশন করেন এম এস সুব্বলক্ষ্মী। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন।
এম এস সুব্বলক্ষ্মীর সহশিল্পী রামনারায়ণ ২০১৬ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন। ১৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এমএস আম্মা ছিলেন (ইসাই) আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্য লাজুক এবং নিরীহ শিল্পী নিজের গুরু এবং জ্যেষ্ঠদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
১৯৪৯ সালে রাজা আন্নামালাই মান্দ্রামের কাজ শুরু হয়। এটিই পরে তামিল ইসাই সঙ্গমের সূতিকাগার হয়ে ওঠে। তত দিনে রাজা আন্নামালাই চেত্তিয়ার মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রাজা স্যার এম এ মুথিয়া চেত্তিয়ার এবং এম এ চিদাম্বরম আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কর্ণাটকি সংগীত সেশনের জন্য চেন্নাইয়ের এসপ্ল্যানেডের কোণে ২০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। তামিল ভাষায় মাসিক ও বার্ষিক কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি, তামিল ইসাই সঙ্গম কলেজকে সহযোগিতা এবং একটি বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর করা হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে তামিল ইসাই সঙ্গমের তরফে শিল্পীদের ‘ইসাই পেরারিগনার’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন। তামিল ইসাই সঙ্গমের সংগীত উৎসবের ৬০ তম আয়োজনে এ পি জে কালাম একটি তামিল কম্পোজিশন গেয়েছিলেন।
অবশ্য পরিস্থিতির যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অনেকে তো ইসাই আন্দোলনের খবরই জানেন না। তাঁদের জন্যই আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল সংগীতের ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
যেমনটি বলেন আন্নামালাই চেত্তিয়ারের নাতনি সীতা চিদাম্বরম—‘তামিল গানকে এখনো কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞরা নিকৃষ্ট বলে মনে করে। এখনো এমন গায়ক খুঁজে পাই, যারা তেলেগু গানের অর্থ না বুঝে গাইতে পারছেন। কিন্তু মাতৃভাষা তামিলে কম্পোজিশন শিখতে এবং গাইতে অনিচ্ছুক।’
তবুও, সীতা আশাবাদী যে তামিল ইসাই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা মানুষের ধারণা বদলে দেবে।
তথ্যসূত্র:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আরও পড়ুন

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে দেওয়ার নীতির সঙ্গে তামিলদের আরেকটি কঠিন ও নিষ্ঠুর বেড়াও ভাঙতে হয়েছিল, সেটি ধর্মীয়। ভাষার অধিকার আদায়ে নানা ফ্রন্টে আন্দোলন করেছিল তামিলরা। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি হয়েছে সংগীতের মতো একটি বিশ্বশিল্পে।
দক্ষিণ ভারতে তখন কর্ণাটকি সংগীত বলতেই বোঝায় মূলত তেলেগু। সেই সংগীতে আবার ব্রাহ্মণ, তথা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আধিপত্য। আর নিম্নবর্ণের দ্রাবিড় তামিলরা তাদের কাছে অস্পৃশ্য। ফলে ভাষার ব্যাপারেও ব্রাহ্মণদের ছুতমার্গ ভয়ানক রকমের বৈষম্যমূলক ছিল। অবশ্য পণ্ডিতেরা মুখ ফুটে সে কথা কখনো বলেননি।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তামিল ভাষার মর্যাদা ও সংগীতে এ ভাষার উপযুক্ততা প্রমাণ হওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা আসলে এই অনার্য ভাষাকে জাতে তুলতে রাজি হননি। তাঁদের এই বর্ণবাদী জাত্যাভিমান একটি বৃহৎ সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠীকে মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
পণ্ডিতেরা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্তও মনে করতেন, তামিল ভাষায় গান হয় না। এ ভাষা তেলেগু মতো ছন্দময় নয়। বহু উচ্চবর্ণীয় কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ যুক্তি হিসেবে বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এমন ভাষা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তামিলকে কখনোই তেলেগু, সংস্কৃত ও কন্নড়ের সমকক্ষ ভাবতেন না তাঁরা।
পণ্ডিতদের খপ্পরে পড়েছিলেন অনেক তামিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞও। তাঁরা মাতৃভাষায় সংগীতচর্চা করতে সংকোচ বোধ করতেন। অবশ্য এখনো যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকে সংকোচ করেন না, এমন নয়।
এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতেই তামিলকে সংগীতের ভাষা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যে একটি সংগঠিত আন্দোলন দানা বাঁধে। অথচ এই তামিলনাড়ুই থিরুভাল্লুভার, ইলাঙ্গো আদিগাল এবং সুব্রাহ্মনিয়া ভারতীর মতো কিংবদন্তি কবির জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ভাষাভিত্তিক বর্ণবাদ এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৩৭ সালে। ওই সময় একজাতীয় আদেশে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু রাজ্য। তামিল ভাষা, সাহিত্য ও পরিচয় সংরক্ষণ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পাশাপাশি সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সংগীতে তামিল ভাষার স্থান করে নেওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে এ রকম—
থেভারাম, নালাইরা দিব্য প্রবান্ধামের মতো ভক্তিমূলক সংগীত এবং ভারতীর কবিতা বুঝে থাকলে মনে হতে পারে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষা এবং সাহিত্যের একটা উচ্চ মর্যাদা আছে।
প্রকৃতপক্ষে তামিল ইসাই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে, অধিকাংশ কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ এবং শ্রোতারা বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এটা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কনসার্টে তামিল গান খুব কমই গাওয়া হতো। এমনকি কর্ণাটকি সংগীত সংকলন ‘সংগীতা পারিজাতাম’ এবং ‘গায়াকা লোচনাম’-এর মতো বইয়ে শেষের দিকে তামিল গানগুলো রাখা হয়েছে। আবার সেই অধ্যায়ের নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিল্লারাই’। এটার তামিল অনুবাদ দাঁড়ায় ‘তুক্কাদা’, যার অর্থ বিবিধ, গৌণ বা তুচ্ছ।
তামিলরা মনে করেন, কর্ণাটকি গান রচনা ও গাওয়াতে তেলেগু ভাষার যে আভিজাত্য, সেটি বজায় রাখতেই সংকলনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। পনেরো শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেবরায় তেলেগু গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরে স্বাধীন শাসকেরা, যারা পূর্ববর্তী বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন, যেমন মাদুরাই, তাঞ্জোর এবং জিঞ্জির নায়েকরা কর্ণাটকি সংগীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষার তুলনায় তেলুগু গানকেই প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আঠারো শতকের কৃতি ত্রয়ী হিসেবে বিখ্যাত তিন সংগীতজ্ঞ—তিয়াগরাজা, মুথুস্বামী দীক্ষিতার এবং শ্যামা শাস্ত্রী; তাঁরা খ্যাতি পেয়েছেন মূলত তেলেগু সংগীতে। তাঁদের কিছু সংস্কৃত কম্পোজিশনও বেশ জনপ্রিয়। যদিও তামিল মহাকাব্য ‘সিলপ্পাদিকারম’, যেটি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়, সেখানে তামিল সংগীত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এরপরও কর্ণাটকি সংগীতের জগতে ভাষাটি অস্পৃশ্য থেকে যায়।
তামিল ইসাই আন্দোলন
তামিল ইসাই আন্দোলনের সূচনা ১৯৩৯ সালে। ১৯৩৭ সালের সরকারি আদেশের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়েছিল জাস্টিস পার্টি। এই সংগঠনকে দ্রাবিড় আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়। সি রাজাগোপালাচারীর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ভারতের জাতীয় সরকার ওই সময় সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেয়। এই পটভূমিতে তামিল ইসাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন রাজা স্যার আন্নামালাই চেত্তিয়ার। তিনি তৎকালীন তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত শিল্পপতি এবং জনহিতৈষী ছিলেন। আন্নামালাই বিশেষ করে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছিলেন।
পরের বছরগুলোতে চিদাম্বরমে প্রথম তামিল ইসাই সম্মেলন ডাকেন আন্নামালাই। এর পর আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কারাইকুডি এবং মাদুরাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য অর্থ সাহায্য করেন।
ভারতের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করেন আন্নামালাই চেট্টিয়ার। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগকে শুধু তামিল সংগীতের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নেন। বিভাগে শুধু তামিল কম্পোজারদের বই রাখার ব্যবস্থা করেন। আন্নামালাইয়ের এ উদ্যোগকে তামিল সংগীতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হয়।
১৯৪১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল ইসাই সম্মেলনের উদ্বোধনীতে আন্নামালাই চেত্তিয়ার বলেন, সংগীত পরিবেশনা শুরু হবে তামিল গান দিয়ে, শেষও হবে তামিল গানেই। কনসার্টের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিল ভাষায় হওয়া উচিত। ‘তামিল ইসাই অ্যাজ এ চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মানিক্যাল মিউজিক কালচার ইন সাউথ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এমনটিই বলেছেন গবেষক ইয়োশিতাকা তেরাদা। তিনি জাপানের ওসাকায় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এথনোলজির একাডেমিক এবং অধ্যাপক।
আন্নামালাই চেত্তিয়ারের জেদের কারণেই সম্মেলনে একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। সেটি কর্ণাটকি সংগীতজনদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগীতকারদের প্রতি এটি ছিল একটি শক্ত বার্তা।
তৎকালীন কর্ণাটকি সংগীতের হর্তাকর্তারা বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন এতে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এমন উদ্যোগে তামিল সংগীতের চাপে তেলেগু রচনাগুলোর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সাউথ ইন্ডিয়ান ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ফলে ইস্যুটি কর্ণাটকি সংগীত জগতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়।
এই আন্দোলনে পরে যুক্ত হন কল্কি কৃষ্ণমূর্তি, মুসিরি সুব্রাহ্মনিয়াম আইয়ার এবং সেমাংগুদি শ্রীনিবাস আইয়ারের মতো শিল্পীরা। এ ছাড়া কেবি সুন্দরম্বল, এনসি বসন্তকোকিলাম, এম এস সুব্বুলক্ষ্মী এবং ডি কে পাট্টম্মলের মতো গায়িকাদের ভূমিকা তামিল ইসাই আন্দোলনের প্রচারে সহায়ক ছিল।
মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সভাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংগীতজ্ঞদের সমালোচনার গভীরে গিয়ে ইয়োশিতাকা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের মান’ রক্ষার প্রতি কেন্দ্রীভূত ছিল। কোনো ভাষাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সেটির মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা সজাগ থাকার কথা বলতেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন, কনসার্টে যদি অন্য ভাষার সঙ্গে তামিল গান গাওয়ার আনুপাতিক সুযোগ থাকে, তাহলে তেলেগু এবং সংস্কৃতের ‘যোগ্য’ বা ‘প্রাচীন’ রচনাগুলোর মর্ম ও গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে।
তবে সংগীত একাডেমি এবং অন্যান্য সভা সমর্থনকারী সংগীতজ্ঞদের মধ্যে যে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রবলভাবে ছিল, সেটি উপেক্ষা করা যায় না। ইয়োশিতাকা তেরাদা সেনরি এথনোলজিক্যাল স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের অনেক সমর্থক কর্ণাটকি সংগীতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মক্কল কালাই ইল্লাকিয়া কালাহাম এবং তান্ডাই পেরিয়ার তামিল ইসাই মানরামের মতো সংগঠন, যারা তামিল ইসাই আন্দোলনের সমর্থক ছিল, তারা বলছিল, ‘তামিল ইসাই সঙ্গম’ বিদ্যমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট কাজ করছে না। অ-ব্রাহ্মণ শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার নন।
প্রথম তামিল ইসাই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালে। সেখানে গান পরিবেশন করেন এম এস সুব্বলক্ষ্মী। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন।
এম এস সুব্বলক্ষ্মীর সহশিল্পী রামনারায়ণ ২০১৬ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন। ১৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এমএস আম্মা ছিলেন (ইসাই) আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্য লাজুক এবং নিরীহ শিল্পী নিজের গুরু এবং জ্যেষ্ঠদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
১৯৪৯ সালে রাজা আন্নামালাই মান্দ্রামের কাজ শুরু হয়। এটিই পরে তামিল ইসাই সঙ্গমের সূতিকাগার হয়ে ওঠে। তত দিনে রাজা আন্নামালাই চেত্তিয়ার মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রাজা স্যার এম এ মুথিয়া চেত্তিয়ার এবং এম এ চিদাম্বরম আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কর্ণাটকি সংগীত সেশনের জন্য চেন্নাইয়ের এসপ্ল্যানেডের কোণে ২০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। তামিল ভাষায় মাসিক ও বার্ষিক কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি, তামিল ইসাই সঙ্গম কলেজকে সহযোগিতা এবং একটি বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর করা হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে তামিল ইসাই সঙ্গমের তরফে শিল্পীদের ‘ইসাই পেরারিগনার’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন। তামিল ইসাই সঙ্গমের সংগীত উৎসবের ৬০ তম আয়োজনে এ পি জে কালাম একটি তামিল কম্পোজিশন গেয়েছিলেন।
অবশ্য পরিস্থিতির যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অনেকে তো ইসাই আন্দোলনের খবরই জানেন না। তাঁদের জন্যই আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল সংগীতের ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
যেমনটি বলেন আন্নামালাই চেত্তিয়ারের নাতনি সীতা চিদাম্বরম—‘তামিল গানকে এখনো কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞরা নিকৃষ্ট বলে মনে করে। এখনো এমন গায়ক খুঁজে পাই, যারা তেলেগু গানের অর্থ না বুঝে গাইতে পারছেন। কিন্তু মাতৃভাষা তামিলে কম্পোজিশন শিখতে এবং গাইতে অনিচ্ছুক।’
তবুও, সীতা আশাবাদী যে তামিল ইসাই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা মানুষের ধারণা বদলে দেবে।
তথ্যসূত্র:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আরও পড়ুন

কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর অনেক দিনের। শায়ান চৌধুরী অর্ণব চাইছিলেন কবিতায় সুর দিয়ে তৈরি করবেন গান। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন বেশ আগে। সব গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগল। অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করছেন অর্ণব। ৩০ অক্টোবর আসবে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ভাল্লাগে না’।
৯ ঘণ্টা আগে
ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ সিনেমাটি করা হয়নি তাসনিয়া ফারিণের। সে সুযোগ হারিয়ে খানিকটা আশাহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সুযোগ আরেকটি এসেছে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে অনেক দিন ধরে। এতে চঞ্চল চৌধুরীরও থাকার কথা রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রস্তুতি অনেক দিনের। গান রেডি ছিল। মিউজিক ভিডিওর শুটিংও সম্পন্ন। তবে স্পনসরের অভাবে ‘এই অবেলায় ২’ মুক্তি দিতে পারছিল না শিরোনামহীন। গত বছরের অক্টোবরে ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্পনসর ছাড়া এত বিশাল আয়োজনের গান প্রকাশ করা কোনো ব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটে হুগলির ডন খ্যাত হুব্বা শ্যামল নামে এক গ্যাংস্টারের। হুগলি জেলার অপরাধ জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই শ্যামল। তাঁর জীবনকে বড় পর্দায় এনেছেন টালিউড নির্মাতা ব্রাত্য বসু। ‘হুব্বা’ নামের এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম।
৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর অনেক দিনের। শায়ান চৌধুরী অর্ণব চাইছিলেন কবিতায় সুর দিয়ে তৈরি করবেন গান। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন বেশ আগে। সব গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগল। অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করছেন অর্ণব। ৩০ অক্টোবর আসবে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ভাল্লাগে না’। প্রকাশ করছে আধখানা মিউজিক।
জানা গেছে, ৮টি গান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই অ্যালবাম। এর কিছু গান তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় কবিদের কবিতা থেকে, বাকিগুলো অর্ণব ও তাঁর বন্ধুরা লিখেছেন। জীবনানন্দ দাশ, শ্রীজাত, নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়সহ দুই বাংলার বিভিন্ন কবির কবিতা নিয়ে গান তৈরি করেছেন তিনি। সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ণব। ভাল্লাগে না অ্যালবামের গানগুলো প্রকাশ পাবে অর্ণবের অফিশিয়াল স্পটিফাই চ্যানেলে। পরবর্তী সময়ে গানগুলো ভিডিও আকারে প্রকাশের পরিকল্পনাও রয়েছে।
অ্যালবাম প্রসঙ্গে অর্ণব বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম আসছে আমার। ভীষণ উচ্ছ্বসিত এই কাজটা নিয়ে। কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের। আরও আছে আমার বন্ধু তৌফিকের লেখা গান, রাজীবের লেখা গান। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।’
পূর্ণাঙ্গ অ্যালবামের চেয়ে শিল্পীরা ইদানীং একক গানই প্রকাশ করেন বেশি। কারণ, অ্যালবামের তুলনায় সিঙ্গেল গানে এখন শ্রোতাদের আগ্রহ বেশি। অর্ণবও স্বীকার করেন সেটা। তবু অ্যালবামের দিকেই তাঁর আগ্রহ বেশি। কারণ হিসেবে অর্ণব বলেন, ‘আমার মনে হয় সিঙ্গেল গানে শিল্পীকে চেনা যায় না। শিল্পীর কাজ সময়কে তুলে ধরা। অ্যালবামে সেটা ভালো হয়। অনেকেই মনে করেন, মানুষ চায় না বলে অ্যালবাম বানিয়ে লাভ নেই। তবে স্পেশাল প্রজেক্ট ছাড়া সিঙ্গেল গানের মানে নেই। একটা ছবি দিয়ে যেমন এক্সিবিশন হয় না, তেমনি শিল্পীকেও চেনা যায় না। আমি ছবি আঁকার সঙ্গে গানকে মেলাই বারবার।’
২০০৫ সালে প্রকাশ পায় অর্ণবের প্রথম অ্যালবাম ‘চাই না ভাবিস’। এরপর প্রকাশ করেছেন ‘হোক কলরব’ (২০০৬), ‘ডুব’ (২০০৮), ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লাইভ’ (২০০৯), ‘রোদ বলেছে হবে’ (২০১০), ‘আধেক ঘুমে’ (২০১২), ‘খুব ডুব’ (২০১৫), ‘অন্ধ শহর’ (নতুন-পুরোনো মিলিয়ে, ২০১৭) এবং ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস ২’ (রিমেক, ২০২২)।

কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর অনেক দিনের। শায়ান চৌধুরী অর্ণব চাইছিলেন কবিতায় সুর দিয়ে তৈরি করবেন গান। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন বেশ আগে। সব গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগল। অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করছেন অর্ণব। ৩০ অক্টোবর আসবে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ভাল্লাগে না’। প্রকাশ করছে আধখানা মিউজিক।
জানা গেছে, ৮টি গান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই অ্যালবাম। এর কিছু গান তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় কবিদের কবিতা থেকে, বাকিগুলো অর্ণব ও তাঁর বন্ধুরা লিখেছেন। জীবনানন্দ দাশ, শ্রীজাত, নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়সহ দুই বাংলার বিভিন্ন কবির কবিতা নিয়ে গান তৈরি করেছেন তিনি। সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ণব। ভাল্লাগে না অ্যালবামের গানগুলো প্রকাশ পাবে অর্ণবের অফিশিয়াল স্পটিফাই চ্যানেলে। পরবর্তী সময়ে গানগুলো ভিডিও আকারে প্রকাশের পরিকল্পনাও রয়েছে।
অ্যালবাম প্রসঙ্গে অর্ণব বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম আসছে আমার। ভীষণ উচ্ছ্বসিত এই কাজটা নিয়ে। কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের। আরও আছে আমার বন্ধু তৌফিকের লেখা গান, রাজীবের লেখা গান। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।’
পূর্ণাঙ্গ অ্যালবামের চেয়ে শিল্পীরা ইদানীং একক গানই প্রকাশ করেন বেশি। কারণ, অ্যালবামের তুলনায় সিঙ্গেল গানে এখন শ্রোতাদের আগ্রহ বেশি। অর্ণবও স্বীকার করেন সেটা। তবু অ্যালবামের দিকেই তাঁর আগ্রহ বেশি। কারণ হিসেবে অর্ণব বলেন, ‘আমার মনে হয় সিঙ্গেল গানে শিল্পীকে চেনা যায় না। শিল্পীর কাজ সময়কে তুলে ধরা। অ্যালবামে সেটা ভালো হয়। অনেকেই মনে করেন, মানুষ চায় না বলে অ্যালবাম বানিয়ে লাভ নেই। তবে স্পেশাল প্রজেক্ট ছাড়া সিঙ্গেল গানের মানে নেই। একটা ছবি দিয়ে যেমন এক্সিবিশন হয় না, তেমনি শিল্পীকেও চেনা যায় না। আমি ছবি আঁকার সঙ্গে গানকে মেলাই বারবার।’
২০০৫ সালে প্রকাশ পায় অর্ণবের প্রথম অ্যালবাম ‘চাই না ভাবিস’। এরপর প্রকাশ করেছেন ‘হোক কলরব’ (২০০৬), ‘ডুব’ (২০০৮), ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লাইভ’ (২০০৯), ‘রোদ বলেছে হবে’ (২০১০), ‘আধেক ঘুমে’ (২০১২), ‘খুব ডুব’ (২০১৫), ‘অন্ধ শহর’ (নতুন-পুরোনো মিলিয়ে, ২০১৭) এবং ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস ২’ (রিমেক, ২০২২)।

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে...
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ সিনেমাটি করা হয়নি তাসনিয়া ফারিণের। সে সুযোগ হারিয়ে খানিকটা আশাহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সুযোগ আরেকটি এসেছে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে অনেক দিন ধরে। এতে চঞ্চল চৌধুরীরও থাকার কথা রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রস্তুতি অনেক দিনের। গান রেডি ছিল। মিউজিক ভিডিওর শুটিংও সম্পন্ন। তবে স্পনসরের অভাবে ‘এই অবেলায় ২’ মুক্তি দিতে পারছিল না শিরোনামহীন। গত বছরের অক্টোবরে ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্পনসর ছাড়া এত বিশাল আয়োজনের গান প্রকাশ করা কোনো ব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটে হুগলির ডন খ্যাত হুব্বা শ্যামল নামে এক গ্যাংস্টারের। হুগলি জেলার অপরাধ জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই শ্যামল। তাঁর জীবনকে বড় পর্দায় এনেছেন টালিউড নির্মাতা ব্রাত্য বসু। ‘হুব্বা’ নামের এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম।
৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ সিনেমাটি করা হয়নি তাসনিয়া ফারিণের। সে সুযোগ হারিয়ে খানিকটা আশাহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সুযোগ আরেকটি এসেছে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে অনেক দিন ধরে। এতে চঞ্চল চৌধুরীরও থাকার কথা রয়েছে। সে সিনেমা নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে কলকাতায় গেছেন ফারিণ। এবার আর ভিসা জটিলতা হয়নি।
কলকাতায় গিয়ে কোয়েল মল্লিকের ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারেও চঞ্চল ও অনিরুদ্ধের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন ফারিণ। কলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিচ্ছেন। সাধারণত দেশে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় না ফারিণকে। তবে আনন্দবাজার পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘আমার লড়াই বা যাত্রাপথ খুব কঠিন ছিল। আমাদের এক টাকা পারিশ্রমিক বাড়াতে অনেকটা পথ পেরোতে হয়। তবে একটা নতুন নায়ক দুটো সিনেমা করেই পারিশ্রমিক বাড়িয়ে ফেলেন। তাঁর সেই দাবি গ্রাহ্যও হয়। কাজের সময়ের বিষয়টিও আছে। তা হলে আমরা কোথায় এগোলাম? নারীকেন্দ্রিক সিনেমার বেলাতেও নায়িকা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ, ক্লিশে। হয় নারী নির্যাতন, নয় নারীর অধিকার। তার বাইরে আমাদের কেউ বের করতেই চান না। নারীর কাজ, তাঁর লড়াই নিয়ে সিনেমা হয় না। অথচ, সেই সিনেমা ভালো ব্যবসা না করলে, তখন দোষ দেওয়া হয়—নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বলেই চলল না। তুমি নারীকেন্দ্রিক সিনেমাকে সেই বাজেট দিচ্ছ না। হিট হওয়ার মতো গল্প দিচ্ছ না। পুরুষের ক্ষেত্রে কিন্তু এসবের বিন্দুমাত্র খামতি নেই।’
বিয়ে নিয়েও কথা বলেছেন ফারিণ। একটা সময় মনে করা হতো, বিয়ে করলেই নায়িকাদের ক্যারিয়ার শেষ। সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে এখন। ফারিণ বলেন, ‘বিয়ের সঙ্গে অভিনয়ের সত্যিই বিরোধ নেই। একজন নায়িকা কত বছর বয়সে বিয়ে করবেন, সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে কেন? আমার সঠিক সময় কোনটা, সেটা আমি ঠিক করব। আমি তো দেখছি, বিয়ের পর আমার কাজ বেড়েছে। হলিউড থেকে শুরু করে আমাদের দেশ—নায়িকার বিয়ে নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামান না।’
টিভি নাটক দিয়ে পরিচিতি পেলেও ইদানীং ছোট পর্দায় অনেকটাই অনুপস্থিত ফারিণ। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, নাটকে মনের মতো চরিত্র পাচ্ছেন না বলেই বড় পর্দায় মনোযোগী হয়েছেন। ফারিণ বলেন, ‘আমি যখন ছোট পর্দায় কাজ করেছি, তখন সিনেমায় এমন কোনো প্রস্তাব পাইনি যেটা রাজি হওয়ার মতো। যখন অতনু ঘোষের ‘‘আরো এক পৃথিবী’’ সিনেমায় কাজ করি, তখনো ছোট পর্দায় অভিনয় করেছি। এখন কী হয়েছে, ছোট পর্দায় নতুন করে আবিষ্কার করার কিছু নেই। সেই খিদে মেটাতে পারে বড় পর্দা। সেই জন্য দুই দেশের বড় পর্দায় নিজেকে দেখতে চাইছি। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমারও সুযোগ আসছে। তার মানে এটা নয়, আমি আর ছোট পর্দায় অভিনয় করব না। ওই মাধ্যমই তো আমাকে তাসনিয়া ফারিণ বানিয়েছে।’

ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ সিনেমাটি করা হয়নি তাসনিয়া ফারিণের। সে সুযোগ হারিয়ে খানিকটা আশাহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সুযোগ আরেকটি এসেছে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে অনেক দিন ধরে। এতে চঞ্চল চৌধুরীরও থাকার কথা রয়েছে। সে সিনেমা নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে কলকাতায় গেছেন ফারিণ। এবার আর ভিসা জটিলতা হয়নি।
কলকাতায় গিয়ে কোয়েল মল্লিকের ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারেও চঞ্চল ও অনিরুদ্ধের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন ফারিণ। কলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিচ্ছেন। সাধারণত দেশে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় না ফারিণকে। তবে আনন্দবাজার পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘আমার লড়াই বা যাত্রাপথ খুব কঠিন ছিল। আমাদের এক টাকা পারিশ্রমিক বাড়াতে অনেকটা পথ পেরোতে হয়। তবে একটা নতুন নায়ক দুটো সিনেমা করেই পারিশ্রমিক বাড়িয়ে ফেলেন। তাঁর সেই দাবি গ্রাহ্যও হয়। কাজের সময়ের বিষয়টিও আছে। তা হলে আমরা কোথায় এগোলাম? নারীকেন্দ্রিক সিনেমার বেলাতেও নায়িকা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ, ক্লিশে। হয় নারী নির্যাতন, নয় নারীর অধিকার। তার বাইরে আমাদের কেউ বের করতেই চান না। নারীর কাজ, তাঁর লড়াই নিয়ে সিনেমা হয় না। অথচ, সেই সিনেমা ভালো ব্যবসা না করলে, তখন দোষ দেওয়া হয়—নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বলেই চলল না। তুমি নারীকেন্দ্রিক সিনেমাকে সেই বাজেট দিচ্ছ না। হিট হওয়ার মতো গল্প দিচ্ছ না। পুরুষের ক্ষেত্রে কিন্তু এসবের বিন্দুমাত্র খামতি নেই।’
বিয়ে নিয়েও কথা বলেছেন ফারিণ। একটা সময় মনে করা হতো, বিয়ে করলেই নায়িকাদের ক্যারিয়ার শেষ। সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে এখন। ফারিণ বলেন, ‘বিয়ের সঙ্গে অভিনয়ের সত্যিই বিরোধ নেই। একজন নায়িকা কত বছর বয়সে বিয়ে করবেন, সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে কেন? আমার সঠিক সময় কোনটা, সেটা আমি ঠিক করব। আমি তো দেখছি, বিয়ের পর আমার কাজ বেড়েছে। হলিউড থেকে শুরু করে আমাদের দেশ—নায়িকার বিয়ে নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামান না।’
টিভি নাটক দিয়ে পরিচিতি পেলেও ইদানীং ছোট পর্দায় অনেকটাই অনুপস্থিত ফারিণ। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, নাটকে মনের মতো চরিত্র পাচ্ছেন না বলেই বড় পর্দায় মনোযোগী হয়েছেন। ফারিণ বলেন, ‘আমি যখন ছোট পর্দায় কাজ করেছি, তখন সিনেমায় এমন কোনো প্রস্তাব পাইনি যেটা রাজি হওয়ার মতো। যখন অতনু ঘোষের ‘‘আরো এক পৃথিবী’’ সিনেমায় কাজ করি, তখনো ছোট পর্দায় অভিনয় করেছি। এখন কী হয়েছে, ছোট পর্দায় নতুন করে আবিষ্কার করার কিছু নেই। সেই খিদে মেটাতে পারে বড় পর্দা। সেই জন্য দুই দেশের বড় পর্দায় নিজেকে দেখতে চাইছি। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমারও সুযোগ আসছে। তার মানে এটা নয়, আমি আর ছোট পর্দায় অভিনয় করব না। ওই মাধ্যমই তো আমাকে তাসনিয়া ফারিণ বানিয়েছে।’

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে...
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর অনেক দিনের। শায়ান চৌধুরী অর্ণব চাইছিলেন কবিতায় সুর দিয়ে তৈরি করবেন গান। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন বেশ আগে। সব গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগল। অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করছেন অর্ণব। ৩০ অক্টোবর আসবে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ভাল্লাগে না’।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রস্তুতি অনেক দিনের। গান রেডি ছিল। মিউজিক ভিডিওর শুটিংও সম্পন্ন। তবে স্পনসরের অভাবে ‘এই অবেলায় ২’ মুক্তি দিতে পারছিল না শিরোনামহীন। গত বছরের অক্টোবরে ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্পনসর ছাড়া এত বিশাল আয়োজনের গান প্রকাশ করা কোনো ব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটে হুগলির ডন খ্যাত হুব্বা শ্যামল নামে এক গ্যাংস্টারের। হুগলি জেলার অপরাধ জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই শ্যামল। তাঁর জীবনকে বড় পর্দায় এনেছেন টালিউড নির্মাতা ব্রাত্য বসু। ‘হুব্বা’ নামের এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম।
৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রস্তুতি অনেক দিনের। গান রেডি ছিল। মিউজিক ভিডিওর শুটিংও সম্পন্ন। তবে স্পনসরের অভাবে ‘এই অবেলায় ২’ মুক্তি দিতে পারছিল না শিরোনামহীন। গত বছরের অক্টোবরে ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্পনসর ছাড়া এত বিশাল আয়োজনের গান প্রকাশ করা কোনো ব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়। স্পনসর পেলেই এই অবেলায় ২ মুক্তি দেবেন তাঁরা। সে সমস্যা মিটেছে এত দিনে। তাই এই অবেলায় ২ গানটির মুক্তির তারিখ জানিয়ে দিল শিরোনামহীন। আগামী ৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে গানটি।
২০১৯ সালে ‘এই অবেলায়’ দিয়ে নতুন করে জেগে উঠেছিল ব্যান্ড শিরোনামহীন। নতুন ভোকাল নিয়ে ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে যখন হিমশিম খাচ্ছিল দলটি, তখন এই অবেলায় গানটি ছিল শিরোনামহীনের জন্য অক্সিজেনের মতো। ছয় বছর পর এ গানের সিকুয়েল নিয়ে আসছে শিরোনামহীন। বাংলার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে গানটির ইংরেজি ভার্সন। শিরোনামহীনের পঞ্চম অ্যালবাম বাতিঘরের শেষ গান হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে এটি।
এই অবেলায় ২ গানটি লিখেছেন জিয়াউর রহমান, সুর করেছেন কাজী আহমেদ শাফিন। ভিডিও নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। শুটিং হয়েছে থাইল্যান্ডে। মডেল হয়েছেন নীল হুরেরজাহান। নতুন গান নিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এই অবেলায় প্রকাশের পর শ্রোতামহলে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। গানটির সিকুয়েল হোক, সেটা সবাই চাইছিল। এর আগে আমাদের প্রথম অ্যালবামের হাসিমুখ গানের বেলায়ও এমনটা হয়েছিল। এই অবেলায় নিয়ে শ্রোতাদের ব্যাপক চাহিদা আমরা টের পাচ্ছিলাম। বাতিঘর অ্যালবামের পরিকল্পনার সময় তাই গানটির সিকুয়েল নিয়ে ভাবি। মুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছে গানটি। ভিডিও ধারণ করা হয়েছে থাইল্যান্ডের কো খাম, কো মাখ ও কো চ্যাং আইল্যান্ডে। দারুণ একটা গল্প আছে গানের ভিডিওতে।’
এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সন নিয়ে জিয়া বলেন, ‘এই অবেলায় গানটি বিদেশি ভাষার মানুষও পছন্দ করেছে। ইউটিউব চ্যানেলে অনেক মন্তব্য দেখেছি ইংরেজি, স্প্যানিশসহ বিভিন্ন ভাষায় লেখা—‘‘আমি গানের ভাষা বুঝতে পারছি না। কিন্তু গানটির সুর খুব ভালো লাগছে।” তাই এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সন করা।’
বাংলার সঙ্গে এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সনও মুক্তি পাবে।
অন্যদিকে ব্যান্ডটির ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল সন্ধ্যায় মুক্তি পেয়েছে শিরোনামহীনের বাতিঘর অ্যালবামের নবম গান ‘ক্লান্ত কফি শপ’।

প্রস্তুতি অনেক দিনের। গান রেডি ছিল। মিউজিক ভিডিওর শুটিংও সম্পন্ন। তবে স্পনসরের অভাবে ‘এই অবেলায় ২’ মুক্তি দিতে পারছিল না শিরোনামহীন। গত বছরের অক্টোবরে ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্পনসর ছাড়া এত বিশাল আয়োজনের গান প্রকাশ করা কোনো ব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়। স্পনসর পেলেই এই অবেলায় ২ মুক্তি দেবেন তাঁরা। সে সমস্যা মিটেছে এত দিনে। তাই এই অবেলায় ২ গানটির মুক্তির তারিখ জানিয়ে দিল শিরোনামহীন। আগামী ৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে গানটি।
২০১৯ সালে ‘এই অবেলায়’ দিয়ে নতুন করে জেগে উঠেছিল ব্যান্ড শিরোনামহীন। নতুন ভোকাল নিয়ে ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে যখন হিমশিম খাচ্ছিল দলটি, তখন এই অবেলায় গানটি ছিল শিরোনামহীনের জন্য অক্সিজেনের মতো। ছয় বছর পর এ গানের সিকুয়েল নিয়ে আসছে শিরোনামহীন। বাংলার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে গানটির ইংরেজি ভার্সন। শিরোনামহীনের পঞ্চম অ্যালবাম বাতিঘরের শেষ গান হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে এটি।
এই অবেলায় ২ গানটি লিখেছেন জিয়াউর রহমান, সুর করেছেন কাজী আহমেদ শাফিন। ভিডিও নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। শুটিং হয়েছে থাইল্যান্ডে। মডেল হয়েছেন নীল হুরেরজাহান। নতুন গান নিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এই অবেলায় প্রকাশের পর শ্রোতামহলে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। গানটির সিকুয়েল হোক, সেটা সবাই চাইছিল। এর আগে আমাদের প্রথম অ্যালবামের হাসিমুখ গানের বেলায়ও এমনটা হয়েছিল। এই অবেলায় নিয়ে শ্রোতাদের ব্যাপক চাহিদা আমরা টের পাচ্ছিলাম। বাতিঘর অ্যালবামের পরিকল্পনার সময় তাই গানটির সিকুয়েল নিয়ে ভাবি। মুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছে গানটি। ভিডিও ধারণ করা হয়েছে থাইল্যান্ডের কো খাম, কো মাখ ও কো চ্যাং আইল্যান্ডে। দারুণ একটা গল্প আছে গানের ভিডিওতে।’
এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সন নিয়ে জিয়া বলেন, ‘এই অবেলায় গানটি বিদেশি ভাষার মানুষও পছন্দ করেছে। ইউটিউব চ্যানেলে অনেক মন্তব্য দেখেছি ইংরেজি, স্প্যানিশসহ বিভিন্ন ভাষায় লেখা—‘‘আমি গানের ভাষা বুঝতে পারছি না। কিন্তু গানটির সুর খুব ভালো লাগছে।” তাই এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সন করা।’
বাংলার সঙ্গে এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সনও মুক্তি পাবে।
অন্যদিকে ব্যান্ডটির ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল সন্ধ্যায় মুক্তি পেয়েছে শিরোনামহীনের বাতিঘর অ্যালবামের নবম গান ‘ক্লান্ত কফি শপ’।

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে...
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর অনেক দিনের। শায়ান চৌধুরী অর্ণব চাইছিলেন কবিতায় সুর দিয়ে তৈরি করবেন গান। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন বেশ আগে। সব গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগল। অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করছেন অর্ণব। ৩০ অক্টোবর আসবে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ভাল্লাগে না’।
৯ ঘণ্টা আগে
ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ সিনেমাটি করা হয়নি তাসনিয়া ফারিণের। সে সুযোগ হারিয়ে খানিকটা আশাহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সুযোগ আরেকটি এসেছে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে অনেক দিন ধরে। এতে চঞ্চল চৌধুরীরও থাকার কথা রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটে হুগলির ডন খ্যাত হুব্বা শ্যামল নামে এক গ্যাংস্টারের। হুগলি জেলার অপরাধ জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই শ্যামল। তাঁর জীবনকে বড় পর্দায় এনেছেন টালিউড নির্মাতা ব্রাত্য বসু। ‘হুব্বা’ নামের এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম।
৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটে হুগলির ডন খ্যাত হুব্বা শ্যামল নামে এক গ্যাংস্টারের। হুগলি জেলার অপরাধ জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই শ্যামল। তাঁর জীবনকে বড় পর্দায় এনেছেন টালিউড নির্মাতা ব্রাত্য বসু। ‘হুব্বা’ নামের এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। গত ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায় সিনেমাটি।
একই চরিত্র আবার আসছে পর্দায়। এবার সিনেমা নয়, ওয়েব সিরিজ আকারে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ বাংলায় ৩১ অক্টোবর মুক্তি পাবে ‘গণশত্রু: বাংলার আতঙ্ক’। পাঁচজন পরিচালক পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সময়ের পাঁচজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্র নিয়ে বানিয়েছেন সিরিজটি। এতে রুদ্রনীল ঘোষ অভিনয় করেছেন হুব্বা শ্যামলকে নিয়ে নির্মিত পর্বে। যেহেতু এর আগে চরিত্রটি মোশাররফ করিম করেছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠল, মোশাররফের চেয়ে এ চরিত্রে কতটা আলাদা রুদ্রনীলের অভিনয়?
রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘মোশাররফ করিম যেভাবে হুব্বা শ্যামলকে পোট্রে করার সুযোগ পেয়েছেন, সেটা পরিচালক ব্রাত্য বসুর নির্দেশে। মোশাররফ করিম অন্য দেশের মানুষ। হুব্বা শ্যামলকে ব্যক্তিগতভাবে অতটা জানা তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। তিনি যতটা জেনেছেন, সেটা স্ক্রিপ্ট থেকে এবং পরিচালকের কথা অনুযায়ী। আর আমার এ ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে, এ চরিত্রের গল্প ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। তাই স্ক্রিপ্টের বাইরেও অনেকটা ধারণা আগে থেকেই আছে। তাই দুটোর মধ্যে কোনো তুলনা চলে না। তবে গণশত্রু ওয়েব সিরিজে হুব্বা শ্যামলের উপস্থাপন অনেক বেশি তথ্যনিষ্ঠ হয়েছে।’
মোশাররফ করিম অভিনীত ‘হুব্বা’ দেখেছেন রুদ্রনীল। সিনেমাটি আরও ভালো হতে পারত বলে মত তাঁর। অভিনেতা বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছিল, আরেকটু অন্য রকম হলে ভালো হতো। চরিত্রটি জীবন্ত করে তোলার ক্ষেত্রে, এত ভালো একজন অভিনেতাকে যদি চরিত্রের উপাদানগুলো ঠিক করে দেওয়া হতো, তাহলে হুব্বা শ্যামলকে নিয়ে তৈরি সিনেমাটি ব্লকবাস্টার হতে পারত। কিন্তু হয়নি। তার মানে কোথাও একটা ফাঁক থেকে গিয়েছিল। এটা অভিনেতার দুর্বলতা নয়।’
মোশাররফ করিমকে অনেক পছন্দ করেন রুদ্রনীল। তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে অভিনেতা বলেন, ‘মোশাররফ করিম আমার প্রিয় অভিনেতা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা দেখা করেছি, কথাও বলেছি বহুবার। আমাদের দুজনেরই ইচ্ছা আছে একসঙ্গে কাজ করার। কিছু পরিচালক চেষ্টা করছেন যাতে সেটা হয়। বিভিন্ন ধরনের চরিত্র বিভিন্ন এনার্জিতে করার ক্ষেত্রে আমাদের দুজনেরই নাকি অদ্ভুত ধরনের মিল আছে। এটা লোকে বলে। আমরা কেউ কারও দ্বারা প্রভাবিত একদমই নই। দুজনে বেড়ে উঠেছি দুটি দেশে। হুব্বা সিনেমাটি করার সময় মোশাররফ ভাইয়ের প্রতি আমার শুভেচ্ছা ছিল। একই চরিত্র যখন আমি করছি, নিশ্চয়ই মোশাররফ ভাইয়েরও আমার প্রতি সমান শুভেচ্ছা থাকবে।’

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটে হুগলির ডন খ্যাত হুব্বা শ্যামল নামে এক গ্যাংস্টারের। হুগলি জেলার অপরাধ জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই শ্যামল। তাঁর জীবনকে বড় পর্দায় এনেছেন টালিউড নির্মাতা ব্রাত্য বসু। ‘হুব্বা’ নামের এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। গত ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায় সিনেমাটি।
একই চরিত্র আবার আসছে পর্দায়। এবার সিনেমা নয়, ওয়েব সিরিজ আকারে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ বাংলায় ৩১ অক্টোবর মুক্তি পাবে ‘গণশত্রু: বাংলার আতঙ্ক’। পাঁচজন পরিচালক পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সময়ের পাঁচজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্র নিয়ে বানিয়েছেন সিরিজটি। এতে রুদ্রনীল ঘোষ অভিনয় করেছেন হুব্বা শ্যামলকে নিয়ে নির্মিত পর্বে। যেহেতু এর আগে চরিত্রটি মোশাররফ করিম করেছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠল, মোশাররফের চেয়ে এ চরিত্রে কতটা আলাদা রুদ্রনীলের অভিনয়?
রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘মোশাররফ করিম যেভাবে হুব্বা শ্যামলকে পোট্রে করার সুযোগ পেয়েছেন, সেটা পরিচালক ব্রাত্য বসুর নির্দেশে। মোশাররফ করিম অন্য দেশের মানুষ। হুব্বা শ্যামলকে ব্যক্তিগতভাবে অতটা জানা তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। তিনি যতটা জেনেছেন, সেটা স্ক্রিপ্ট থেকে এবং পরিচালকের কথা অনুযায়ী। আর আমার এ ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে, এ চরিত্রের গল্প ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। তাই স্ক্রিপ্টের বাইরেও অনেকটা ধারণা আগে থেকেই আছে। তাই দুটোর মধ্যে কোনো তুলনা চলে না। তবে গণশত্রু ওয়েব সিরিজে হুব্বা শ্যামলের উপস্থাপন অনেক বেশি তথ্যনিষ্ঠ হয়েছে।’
মোশাররফ করিম অভিনীত ‘হুব্বা’ দেখেছেন রুদ্রনীল। সিনেমাটি আরও ভালো হতে পারত বলে মত তাঁর। অভিনেতা বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছিল, আরেকটু অন্য রকম হলে ভালো হতো। চরিত্রটি জীবন্ত করে তোলার ক্ষেত্রে, এত ভালো একজন অভিনেতাকে যদি চরিত্রের উপাদানগুলো ঠিক করে দেওয়া হতো, তাহলে হুব্বা শ্যামলকে নিয়ে তৈরি সিনেমাটি ব্লকবাস্টার হতে পারত। কিন্তু হয়নি। তার মানে কোথাও একটা ফাঁক থেকে গিয়েছিল। এটা অভিনেতার দুর্বলতা নয়।’
মোশাররফ করিমকে অনেক পছন্দ করেন রুদ্রনীল। তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে অভিনেতা বলেন, ‘মোশাররফ করিম আমার প্রিয় অভিনেতা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা দেখা করেছি, কথাও বলেছি বহুবার। আমাদের দুজনেরই ইচ্ছা আছে একসঙ্গে কাজ করার। কিছু পরিচালক চেষ্টা করছেন যাতে সেটা হয়। বিভিন্ন ধরনের চরিত্র বিভিন্ন এনার্জিতে করার ক্ষেত্রে আমাদের দুজনেরই নাকি অদ্ভুত ধরনের মিল আছে। এটা লোকে বলে। আমরা কেউ কারও দ্বারা প্রভাবিত একদমই নই। দুজনে বেড়ে উঠেছি দুটি দেশে। হুব্বা সিনেমাটি করার সময় মোশাররফ ভাইয়ের প্রতি আমার শুভেচ্ছা ছিল। একই চরিত্র যখন আমি করছি, নিশ্চয়ই মোশাররফ ভাইয়েরও আমার প্রতি সমান শুভেচ্ছা থাকবে।’

হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে...
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর অনেক দিনের। শায়ান চৌধুরী অর্ণব চাইছিলেন কবিতায় সুর দিয়ে তৈরি করবেন গান। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন বেশ আগে। সব গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগল। অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর মৌলিক গানের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করছেন অর্ণব। ৩০ অক্টোবর আসবে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ভাল্লাগে না’।
৯ ঘণ্টা আগে
ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ সিনেমাটি করা হয়নি তাসনিয়া ফারিণের। সে সুযোগ হারিয়ে খানিকটা আশাহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সুযোগ আরেকটি এসেছে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে অনেক দিন ধরে। এতে চঞ্চল চৌধুরীরও থাকার কথা রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রস্তুতি অনেক দিনের। গান রেডি ছিল। মিউজিক ভিডিওর শুটিংও সম্পন্ন। তবে স্পনসরের অভাবে ‘এই অবেলায় ২’ মুক্তি দিতে পারছিল না শিরোনামহীন। গত বছরের অক্টোবরে ব্যান্ডটির দলনেতা জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্পনসর ছাড়া এত বিশাল আয়োজনের গান প্রকাশ করা কোনো ব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়।
৯ ঘণ্টা আগে