Ajker Patrika

সখীর পর সুজনও দিলেন পাড়ি

আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ১৪: ২৭
সখীর পর সুজনও দিলেন পাড়ি

‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলায় নেব সখী তোমার কানের সোনা; সখী গো আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি, তোমার কাছে পয়সা নেব না’।

পর্দায় সুজন ও সখীর ঠোঁট মেলানো এই গান ছিল ‘সুজন সখী’ ছবির। গত শতকের সত্তরের দশকের ব্যবসাসফল এই ছবিতে সুজন চরিত্রে নায়ক ফারুক ও সখী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নায়িকা কবরী। প্রায় দুই বছর আগে কবরী পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। আর গতকাল সোমবার পাড়ি জমালেন সুজন চরিত্র করা ফারুক।

নায়ক ফারুক সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত এই চিত্রনায়কের আসল নাম আকবর হোসেন পাঠান। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ঢাকা-১৭ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। উচ্চরক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তাঁর মৃত্যুতে রাজনীতি, চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ফারুকের জন্ম মানিকগঞ্জে, ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট। বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। তরুণ বয়স থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময় তাঁর নামে প্রায় ৩৬টি মামলা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

জীবদ্দশায় ফারুক জানিয়েছিলেন, ছয় দফা আন্দোলনের পর পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে বন্ধুদের পরামর্শে সিনেমায় কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক। ওই ছবির নায়িকা ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে ফারুক অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ ব্যাপক আলোচিত ও ব্যবসাসফল হয়।

‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লা কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস ‘সারেং বৌ’ অবলম্বনে নির্মিত আবদুল্লাহ আল-মামুন পরিচালিত ‘সারেং বৌ’ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় ফারুকের অভিনয় প্রশংসিত হয়। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি সিনেমা হলো ‘নয়নমনি’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘ঝিনুক মালা’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’ ইত্যাদি। ১৯৮৭ সালে ‘মিয়া ভাই’ সিনেমায় অভিনয় করে মিয়াভাই পরিচিতি লাভ করেন তিনি। 

বেশ কিছু সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন ফারুক। পেয়েছেন বহু সম্মাননা। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘আজীবন সম্মাননা’ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। 

পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ফারুক ছিলেন সবার ছোট। তাঁর স্ত্রী ফারজানা পাঠান। তাঁদের দুই সন্তান। মেয়ে ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ। চলচ্চিত্রের বাইরে ফারুক ছিলেন ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত ‘ফারুক নিটিং ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। 

২০১২ সালের জুলাইয়ে নায়ক ফারুক এক মাস ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শেষে ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। ২০২১ সালের মার্চে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে আবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

ফারুকের ভাতিজি আসমা পাঠান রুম্পা জানান, আজ মঙ্গলবার সকালে ৭টা ৫০ মিনিটে ফারুকের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নেওয়া হবে ফারুকের উত্তরার বাসায়। বেলা ১১টায় শ্রদ্ধা জানাতে নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে গার্ড অব অনার দেওয়ার কথা। দুপুর সাড়ে ১২টায় মরদেহ নেওয়া হবে বিএফডিসিতে। সেখানে জানাজার পর নিয়ে যাওয়া হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। বাদ আসর সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হবে গাজীপুরের কালীগঞ্জে। ফারুকের ইচ্ছা অনুসারে কালীগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তাঁকে। 

সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, প্রযোজক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ (বাচসাস) চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় নিজের বক্তব্য জানালেন শাবনূর

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শাবনূর; ছবি: সংগৃহীত
শাবনূর; ছবি: সংগৃহীত

আদালতের নির্দেশে চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা অপমৃত্যু মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তাঁর ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলার ১১ আসামির প্রাথমিক তালিকায় অভিনেত্রী শাবনূরের নাম না থাকলেও সালমান শাহর সহশিল্পী হিসেবে বারবার আলোচনায় এসেছেন অভিনেত্রী। শাবনূর এখন অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হয়েছেন। সেখান থেকেই এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে আজ সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন শাবনূর। তিনি দাবি করেছেন, সালমান শাহ কীভাবে মারা গেছেন, তা তিনি জানেন না, সে সঙ্গে নায়কের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন তিনি।

সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় শাবনূরকে নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে শাবনূর এক পোস্টে লিখেছেন, ‘যেহেতু বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন, তাই শুরুতে এ নিয়ে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি, কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে সালমান শাহ সংক্রান্ত এই মামলার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ভ্রান্ত প্রচার ছড়াচ্ছেন। আমার সম্পর্কে ভিত্তিহীন এসব গুজব ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সবাইকে অনুরোধ করছি সত্যতা বিবর্জিত ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন।’

সালমান শাহর মৃত্যুতে ব্যক্তিগত ও মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শাবনূর। তিনি লিখেছেন, ‘সালমান শাহ ছিলো আমার অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা। আমরা একসঙ্গে প্রায় ১৪টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সালমান ছিলো একজন জনপ্রিয়, অসাধারণ শক্তিমান এবং প্রতিভাবান অভিনেতা। নিঃসন্দেহে বলতে পারি তাঁর সঙ্গে কাজ করে আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার বিকশিত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সালমান শাহর অকাল মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। আমাদের জুটির সাফল্য একসময় অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ কেউ হয়তো নিজেদের বাঁচাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকতে পারে। আমাদের নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, যা আমাকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে আঘাত করেছে।’

সালমান শাহ; ছবি: সংগৃহীত
সালমান শাহ; ছবি: সংগৃহীত

সালমান কীভাবে মারা গেছেন কিংবা কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছেন—এসবের কিছুই তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন শাবনূর। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘আজও আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সালমান শাহ কীভাবে মারা গেছে তা আমি সত্যিই জানি না। আমি শুধু তাঁর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। যে-ই দোষী হোক না কেন, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়—এটাই আমার একান্ত দাবি ও প্রত্যাশা।’

সালমান শাহর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শাবনূর লিখেছেন, ‘সন্তান হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের, তা সালমানের মা নীলা আন্টির আহাজারি দেখলেই অনুভব করতে পারি। আমি আন্টি এবং তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং সর্বোপরি সালমান শাহর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ভক্তের সংগ্রহে জুবিনের ৩৮ হাজার গান, কপিরাইট জটিলতায় হারানোর ভয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জুবিন গার্গ। ছবি: সংগৃহীত
জুবিন গার্গ। ছবি: সংগৃহীত

কিংবদন্তি অসমিয়া সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গের প্রয়াণের পর তাঁর বিপুল সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। গুয়াহাটির বাসিন্দা বিশাল কলিতা নামের এক ভক্ত তাঁর বাড়িতে জুবিন গার্গের গানের ক্যাসেটের এক বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলেছেন। জুবিনের মৃত্যুর পর এখন সেটি ব্যক্তিগত জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। তবে এই অমূল্য সংগ্রহকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গানের জটিল কপিরাইট সমস্যা।

৩০ বছর বয়সী বিশাল কলিতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতজুড়ে ঘুরে ঘুরে জুবিন গার্গের দুর্লভ ক্যাসেট সংগ্রহ করেছেন। এই ব্যক্তিগত সংগ্রহটিতে ক্যাসেট ছাড়াও রয়েছে শত শত সিডি এবং বিশ্বজুড়ে সংগীতশিল্পীদের বিরল পোস্টার। তবে দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ জুবিন গার্গের গানের ডিস্কোগ্রাফি নিয়ে।

গত মাসে সিঙ্গাপুরে জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর তাঁর লাখ লাখ ভক্তের এখনো শোক কাটেনি। বিশাল কলিতার দাবি, তাঁর সংগ্রহে জুবিনের প্রায় ৩৮ হাজার গান রয়েছে, যার মধ্যে এমন গানও রয়েছে যা এখন আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

শিল্পী নিজেও তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছিলেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে, ১৬ সেপ্টেম্বর, জুবিন গার্গ বিশাল কলিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন যে এই সংগ্রহ তাঁর ‘দীর্ঘদিন ভুলে যাওয়া’ কিছু সৃষ্টির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।

বিশাল কলিতা এখন জুবিন গার্গের ভক্ত ও বন্ধুদের একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের অংশ। তাদের মূল লক্ষ্য—জুবিনের গানগুলো অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে আরও সহজলভ্য করা এবং শিল্পীর পরিবারের জন্য রয়্যালটি নিশ্চিত করা। কলিতা বলেন, ‘কিছু ক্যাসেট খুবই পুরোনো এবং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমি সেগুলোকে জনস্মৃতিতে ফিরিয়ে আনতে চাই।’

তবে কাজটি সহজ নয়। গার্গের বহু গানের স্বত্ব একটি জটিল প্রযোজক, পরিবেশক এবং মিউজিক লেবেলের মধ্যে বিভক্ত। ফলে স্বত্বাধিকার নিয়ে স্পষ্টতার অভাবে সেগুলোকে অনলাইনে আপলোড করলে কপিরাইট লঙ্ঘনের ঝুঁকি থেকে যায়।

জুবিনের গান নিয়ে বিশাল কলিতার ব্যক্তিগত জাদুঘর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
জুবিনের গান নিয়ে বিশাল কলিতার ব্যক্তিগত জাদুঘর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

জুবিন গার্গের মৃত্যুর পরই ভক্তরা এই জটিলতার আঁচ পান, যখন তাঁর জনপ্রিয় গান ‘মায়াবিনী রাতির বুকুত’ শীর্ষক জনপ্রিয় গানটি কোনো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গানটি পরে একজন ব্যবহারকারী আপলোড করলেও লাইসেন্সিং সমস্যার কারণে এক সপ্তাহের মধ্যে তা সরিয়ে ফেলা হয়। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও জুবিনের বন্ধু মানস বড়ুয়া জানান, তাঁর শত শত গানের স্বত্ব হয় খুঁজে বের করা কঠিন, নয়তো বিতর্কিত।

দিল্লিভিত্তিক ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস (আইপিআর) আইনজীবী নীল মেসন জানান, ভারতে কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ সংগীত স্বত্বের বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর অধীনে গানের কথা, সংগীত কম্পোজিশন এবং সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের জন্য আলাদা আলাদা কপিরাইট রয়েছে।

গানের কথা ও সুরের ক্ষেত্রে গীতিকার ও সুরকাররাই ‘প্রথম মালিক’ হলেও, সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ‘প্রযোজককেই রচয়িতা বলে গণ্য করা হয়’। ফলে তারাই প্রথম মালিক হন। স্বত্বাধিকারীরা তৃতীয় পক্ষকে লাইসেন্সের মাধ্যমে অধিকার হস্তান্তর বা প্রদান করতে পারেন। এটি যত্নসহকারে নথিভুক্ত না থাকলে একটি জটিল জাল তৈরি করে।

জুবিন গার্গের গানের প্রযোজক শ্যামন্তক গৌতম জানিয়েছেন, তাঁর গান তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি দল কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি (আইপিআরএস)-এর সঙ্গে এ পর্যন্ত জুবিনের অন্তত ১ হাজার ৩৩টি গান নিবন্ধিত হয়েছে।’

আইপিআরএস ভারতে সংগীত রয়্যালটি সংগ্রহ ও বিতরণ করার একমাত্র সরকারি অনুমোদিত সংস্থা। তারা নিশ্চিত করছে, গানগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হলে শিল্পী বা তাঁর পরিবার যেন প্রাপ্য অর্থ পান। আইপিআরএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকেশ নিগাম বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দ্রুত উত্থান স্বত্বাধিকার ট্র্যাকিং আরও জটিল করে তুলেছে। তবে আইপিআরএস-এর সঙ্গে নিবন্ধিত গানগুলো ‘তাঁর জীবনকাল পেরিয়ে আরও ৬০ বছর সুরক্ষিত থাকবে।’

এদিকে বিশাল কলিতা এখন জুবিনের দুর্লভ ক্যাসেটগুলো সর্বোচ্চ মানের ডিজিটালের মাধ্যমে সংরক্ষণের জন্য জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই এই বিরল টেপগুলো সেরা মানে ডিজিটাইজ করা হোক। জুবিন গার্গ তাঁর গানের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন। আর তাঁর একজন ভক্ত হিসেবে, এটাই আমার পক্ষ থেকে তাঁর জন্য ক্ষুদ্রতম কাজ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের সন্ধ্যায় কেটি পেরি ও ট্রুডোর একান্ত সময়

বিনোদন ডেস্ক
কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: সংগৃহীত
কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: সংগৃহীত

কেটি পেরির জন্মদিন ছিল ২৫ অক্টোবর। শনিবার সন্ধ্যাটি তাই বিশেষ হয়ে ধরা দিল জাস্টিন ট্রুডোর জন্যও। প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোলেন প্যারিসের রাস্তায়। এত দিন নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে লুকোচুরি করলেও এবারই প্রথম প্রকাশ্যে একে অপরের হাত ধরে ঘুরলেন তাঁরা। এবার আর রাখঢাক রাখলেন না, পৃথিবীকে জানিয়ে দিলেন তাঁদের প্রেমের খবর।

জন্মদিনের সন্ধ্যায় কেটিকে নিয়ে ক্রেজি হর্স প্যারিস নামের এক থিয়েটারে যান ট্রুডো। সেখানে তাঁরা ক্যাবারে শো উপভোগ করেন। বের হওয়ার সময় পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় ধরা পড়েন তাঁরা। এক ভক্ত কেটিকে এক জোড়া গোলাপ দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান। বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। ভক্ত ও সাংবাদিকদের ভিড় ঠেলে কেটিকে আগলে গাড়িতে তুলে দেন ট্রুডো। পুরোটা সময় পরস্পরের হাত ধরাধরি করে ছিলেন তাঁরা।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারা উপকূলে একটি ইয়টে কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর চুমুর ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাঁদের প্রেমের গুঞ্জন ছড়াচ্ছিল আরও আগে থেকে। জুলাইয়ের শেষ দিকে মন্ট্রিয়লের বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ ল্য ভিয়লোঁতে কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর একসঙ্গে ডিনারের ছবি প্রকাশ্যে আসে। ৩০ জুলাই দ্য লাইফটাইম ট্যুরের অংশ হিসেবে মন্ট্রিয়লে আয়োজিত এক কনসার্টে পারফর্ম করেন কেটি পেরি। সেখানেও দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে কেটির গান উপভোগ করেন ট্রুডো। কয়েক দিনের ব্যবধানে ওই শহরের মাউন্ট রয়্যাল পার্কে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে দেখা যায় তাঁদের।

মার্কিন গায়িকা কেটি পেরি এবং কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দুজনই বিচ্ছেদের যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায় পেরিয়ে এসেছেন। দুজনই খুঁজছেন জীবনসঙ্গী। সংসারে আবার থিতু হওয়ার তীব্র ইচ্ছা দুজনের মনেই। এ বছরের জুনে অরল্যান্ডো ব্লুমের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় কেটি পেরির। অন্যদিকে, ট্রুডোর ১৮ বছরের সংসার ভাঙে ২০২৩ সালে। কেটির বিচ্ছেদের পরের মাস থেকেই গুঞ্জন ছড়ায়, নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন গায়িকা! এত দিনে এসে সে গুঞ্জনে সিলমোহর দিলেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে একই মঞ্চে অর্থহীন ও আসিফ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আসিফ ও সুমন ছবি: ফেসবুক থেকে
আসিফ ও সুমন ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রায় দুই মাস সংগীতসফরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন আসিফ আকবর। সম্প্রতি দেশটিতে সংগীতসফরে গেছে অর্থহীন ব্যান্ড। ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে একই মঞ্চে পারফর্ম করেছে অর্থহীন ও আসিফ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্থহীন ব্যান্ডের দলনেতা সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমনের (বেজবাবা সুমন) সঙ্গে স্টেজ শেয়ারের অভিজ্ঞতা জানালেন আসিফ।

কনসার্টের গ্রিন রুমে বেজবাবা সুমনের সঙ্গে তোলা একটি ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে আসিফ লেখেন, ‘বিগত বছরগুলোতে সৌভাগ‍্য হয়েছে মিউজিক লিজেন্ডদের সঙ্গে স্টেজ শেয়ার করার। গ্রিন রুম শেয়ার করেছি তরুণদের সঙ্গেও। আমি সংগীতের মানুষ নই, তবু নিয়তি আমাকে এখানেই সফলতা দিয়েছে। এ কারণেই আমার দায়বদ্ধতাও বেশি। বোস্টনে এসে একই স্টেজ শেয়ার করেছি স্বনামখ‍্যাত ব‍্যান্ড অর্থহীনের সঙ্গে। লিভিং লিজেন্ড সুমন (বেজবাবা) ভাইয়ের সঙ্গে আগেও একই স্টেজে পারফর্ম করা হয়েছে। তিনি সব সময়ই আমার ব‍্যাপারে উচ্ছ্বসিত, আজকেও তার ব‍্যত‍্যয় ঘটেনি, ব‍্যাকস্টেজে দাঁড়িয়ে আমার পারফরম্যান্স দেখেছেন।’

আসিফ আরও লেখেন, ‘সুমন ভাইয়ের জীবনের ওপর দিয়ে স্টিম রোলার চললেও, তিনি এমন আস্থায়ও অবিচল। এ ধরনের মানুষের জন‍্য সংগীত জগৎটা এখনো ভালো লাগে। কিছু লেসপেন্সার অবশ‍্য তাদের হিপোক্রেসি নিয়ে এখনো জীবন্মৃত অবস্থায় টিকে আছে, থাকুক। সুমন ভাই আপনার জন‍্য অনেক দোয়া আর শুভকামনা। আপনাকে ভালোবাসি। আপনি আমাদের জীবন্ত কিংবদন্তি। আপনার সুস্বাস্থ‍্য আর দীর্ঘায়ু কামনা করি।’

এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে কনসার্ট করতে গেছে অর্থহীন। অন্যদিকে ১৭ বছর পর মার্কিন মুলুকে গান শোনাচ্ছেন আসিফ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত