Ajker Patrika

সুরে ঢাকা মাতালেন রাহাত ফতেহ আলী

অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১: ৩৩
Thumbnail image
‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করছেন রাহাত ফতেহ আলী খান। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য তহবিল সংগ্রহে এ কনসার্টের আয়োজন করে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম। গতকাল রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাত ৯টা ৫৫ মিনিট। মঞ্চে উঠলেন রাহাত ফতেহ আলী খান। সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের বাঁধভাঙা উল্লাসে মুখর হয়ে ওঠে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম। শিল্পী মঞ্চে উঠে দর্শকদের অভিবাদন জানিয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এরপর শুরু করলেন গান। প্রথমে গাইলেন ‘তু না জানে আস পাস হ্যায় খোদা’। এরপর একে একে গেয়ে শোনান, ‘সাজনা তেরে বিনা’, ‘ও রে পিয়া’, ‘জারুরি থা’, ‘মেরে রাশকে কামার’।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই শিল্পীর গানে গত রাতে দারুণ সময় কেটেছে সংগীতপ্রেমীদের। বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই সুরের সফর শীতের সন্ধ্যা পেরিয়ে শেষ হয় রাতে। এই গানের আসরে পরিবেশিত হয়েছে নানা ধারার গান। তবে কেন্দ্রে ছিলেন পাকিস্তানি শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান।

আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ কনসার্টের শিরোনাম ছিল ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য এ চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ নামের প্ল্যাটফর্ম। আয়োজনটি উপস্থাপনা করছেন জুলহাজ জুবায়ের ও দীপ্তি চৌধুরী। অভ্যুত্থানের প্রতিচ্ছবিময় এ কনসার্ট থেকে আয় করা অর্থ শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে অনুদান দেওয়া হবে। এ কারণে রাহাত ফতেহ আলী খানও বিনা পারিশ্রমিকে এই সংগীতায়োজনে অংশ নেন। রাহাত ফতেহ আলীকে অনুসরণ করে দেশের শিল্পীরাও স্বল্প পারিশ্রমিকে অংশ নিয়েছেন এই কনসার্টে।

গতকাল শনিবার বেলা ২টায় কনসার্টের প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়। আগে থেকে আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে সংগীত-অনুরাগীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিকেল ৪টায় সিলসিলার পরিবেশনা দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়। এরপর আসেন ‘আওয়াজ উডা’ গানের জন্য পরিচিত র‍্যাপার হান্নান ও ‘কথা ক’ গেয়ে আলোচিত র‍্যাপার সেজান। এরপর আসে ব্যান্ড দল আফটারম্যাথ, চিরকুট ও আর্টসেল। ব্যান্ড দল আফটারম্যাথ পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘হুংকার’, ‘ধোয়া’ ও ‘উৎসর্গ’। ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ শীর্ষক গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে চিরকুট। এরপর ব্যান্ড দলটি একে একে গেয়ে শোনায়, ‘জাদুর শহর’, ‘মরে যাবো’, ‘আহারে জীবন’, ‘কানামাছি’সহ বেশ কিছু গান। কনসার্টের শেষ আকর্ষণ রাহাত ফতেহ আলী। রাত ৮টায় তিনি মঞ্চে উঠবেন বলে কনসার্টের সূচিতে জানানো হয়েছিল। তবে তিনি মঞ্চে আসেন রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে।

বর্তমানে কাওয়ালি আর সুফি গানে দুনিয়ার সেরা শিল্পী ধরা হয় রাহাত ফতেহ আলী খানকে। এই শিল্পীর পরিবারের রয়েছে ৫০০ বছরের কাওয়ালিচর্চার ঐতিহ্য। রাহাত ফতেহ আলী খানের বাবা ওস্তাদ ফররুখ ফতেহ আলী খান, দাদা ফতেহ আলী খান, চাচা নুসরাত ফতেহ আলী খান। প্রত্যেকেই কালের সেরা শিল্পী। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে রাহাত তাঁর চাচা ও বাবার সঙ্গে গাওয়া শুরু করেন। সর্বশেষ চাচা নুসরাত ফতেহ আলী খানের ছায়া থেকে বেরিয়ে তৈরি করেছেন নিজের আলাদা পরিচয়। সংগীতের ওপর অগাধ দখল ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় রাহাত ফতেহ আলী খানকে দিয়েছে ‘ডক্টরেট অব মিউজিক’-এর বিশেষ সম্মাননা। তাঁকে মুসলিম সুফিদের ভক্তিমূলক গান ও কাওয়ালির কিংবদন্তি হিসেবেও অভিহিত করেছে অক্সফোর্ড।

মঞ্চে এসে জুলাই হত্যার বিচার চাইলেন আহতরা ‘কী দোষ ছিল আমার? কেন আমার এই অবস্থা হলো। এতগুলো মানুষ মারল। এর বিচার চাই। শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই।’ গতকাল সন্ধ্যায় আর্মি স্টেডিয়ামে ইকোস অব রেভল্যুশন কনসার্টের মঞ্চে এসে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মন। আন্দোলনের সময় গুলিতে মুখমণ্ডল থেঁতলে যায় তাঁর।

খোকন চন্দ্র বর্মন জানান, মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না তিনি। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং আন্দোলনে আহত এবং নিহত কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত