Ajker Patrika

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে ভাঙনের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে ভাঙনের আশঙ্কা

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারশানে বিভাজনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়েক মাস ধরেই ফেডারেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান বনাম সাবেক চেয়ারম্যানদের পাল্টাপাল্টি চিঠি এই ইঙ্গিত দেয়। সর্বশেষ এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এই অবস্থাকে ‘সাংবাদিকেরা ফেডারেশনের বিভাজন’ হিসেবে দেখছেন। যদিও এই সংকট ততটা গুরুতর পরিণতিতে যাবে না বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নাট্যজনরা। 

বিগত কয়েক মাসে সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দর ব্যানারে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ইঙ্গিত দেয় যে, ভেতরে-ভেতরে দুটো গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছে মঞ্চনাটকের সবচেয়ে বড় এই মোর্চা সংগঠন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষ্যাপা বিডি নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল বিকেলে একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়ে। চিঠিটি চলতি বছরের গত ২০ জুন পাঠানো হয়েছে। চিঠির প্রাপক ফেডারেশানের বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। চিঠি পাঠানো হয়েছে রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, সারা যাকের ও ম. হামিদেরর পক্ষ থেকে। তারা চারজনই সাবেক চেয়ারম্যান এবং তিনজন ফেডারেশানের বর্তমান সদস্য। 

চিঠিতে নাট্যাঙ্গনের বর্তমান সংকট নিয়ে নানা বিষয়ের পাশাপাশি লেখা হয়েছে, ‘ফেডারেশানের বর্তমান সংকট নিয়ে যে সব চিঠি চালাচালি হয়েছে, তাতে নাট্যকর্মীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমরা অত্যন্ত অস্বস্তিবোধ করছি। সাংবাদিকেরা এই অবস্থাকে একটা বিভাজন হিসেবে দেখছে। ফেডারেশানের বিভাজন কোনো অবস্থাতেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত নয়। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ফেডারেশনের শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতা ফিরে আসুক।’

চিঠি প্রসঙ্গে নাট্যজন ও ফেডারেশানের সাবেক চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এই প্রসঙ্গে আমি আর একটি কথাও বলতে চাই না। যা হবার হবে।’

ফেডারেশানে বিভাজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাট্যাঙ্গনে একটা মানসিক বিভাজন তৈরি হয়েছে। এটা যাতে আনুষ্ঠানিক বিভাজনে পরিণত না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ও নাট্যজন মামুনুর রশীদকে চিঠি প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, একটি গোপন চিঠি ছিল এটি। সেটি কে বা করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এতে তিনি খুবই দুঃখ পেয়েছেন। 

যদিও তিনি নাট্যাঙ্গনের এই অবস্থাকে বিভাজন বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘ফেডারেশনে বিভাজন হবে না। কিন্তু নাট্যকর্মীদের ভেতরে যে একটা সংকট তৈরি হয়েছে এটা আমরা মনে করি।’

তাদের এই চিঠির উত্তরে যদি কোনো চিঠি না আসে কিংবা উত্তর মনঃপূত না হয়, তাহলে সামনে কী কর্মসূচি নেবেন তারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা বয়স্ক মানুষ। বহু বছর ধরে থিয়েটার করছি। আমাদের চিঠির যদি গুরুত্ব না দেওয়া হয়, আমরা তো বলতে পারব না যে, হুট করেই আমরা কিছু করে ফেলব। আমরা চাই সাধারণ নাট্যকর্মীদের যে দাবি, আকাঙ্ক্ষা সেটা পরিপূর্ণ হোক। আমাদের পক্ষে জোরালো কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি দেওয়া সম্ভব না। সামনে কী করা যায়, সেসব ব্যাপারে আমরা বসব, আলোচনা করব।’

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সূত্র জানিয়েছে, ফেডারেশানের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাই এই চিঠির ব্যাপারে তারা কিছুই বলতে পারছেন না।
মূলত ফেডারেশানের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদকে নিয়ে নাট্যাঙ্গনে এই অস্থিরতা শুরু হয়। গত বছর জানুয়ারিতে ফেডারেশানের প্রচার সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও সাংগঠনিক স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে’ কামাল বায়েজীদ (সাধারণ সম্পাদক) ও রফিকুল্লাহ সেলিমকে (অর্থ সম্পাদক) অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে কামাল বায়েজীদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফেডারেশানের সাবেক চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদার গত ২৩ জানুয়ারি নাট্যকর্মীদের উদ্দেশে এক খোলা চিঠিতে ফেডারেশানের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার আহ্বান জানান। বায়েজীদকে বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় চলতি বছরের মার্চে ফেডারেশান ছাড়ার ঘোষণা দেয় ঢাকা থিয়েটার। ফেডারেশানের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ ছিলেন ঢাকা থিয়েটার প্রতিনিধি।

এই সংকটে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে গত এপ্রিল মাসে ফেডারেশানের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীকে চিঠি দেন সাবেক চার চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, ম হামিদ ও সারা যাকের। সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে ৬৭ জন নাট্যকার, নির্দেশক ও সংগঠক বিবৃতি দেন। এই অবস্থায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ঢাকার নাটকপাড়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ তুলে ১৬ জুন জাতীয় নাট্যশালার প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ নামে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন একদল নাট্যকর্মী। পাশাপাশি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানও পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে।

সাবেক চার চেয়ারম্যানের চিঠির জবাবে গত ১৩ এপ্রিল ফেডারেশানের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত সাত পাতার দীর্ঘ এক চিঠি দেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০ জুনের এই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। সেখানে নানা ইস্যু তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘আমাদের মূল বক্তব্য সম্পর্কে সরাসরি কিছু না বলে দীর্ঘ চিঠিতে আপনারা কামাল বায়েজীদ সম্পর্কে অভিযোগসমূহ বর্ণনা করেছেন।’

চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কামাল বায়েজীদ কীভাবে কাউকে তোয়াক্কা না করে এক বছর ফেডারেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কীভাবে এক কোটি চব্বিশ লাখ একান্ন হাজার তিন শ সাতাত্তর টাকার মতো বড় অংকের অর্থ কোনো অনুমোদন ছাড়া ব্যয় করা হলো। কারণ ফেডারশানের চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি জেনারেল ও অর্থ সম্পাদক এই ব্যাংক হিসাবের জিম্মাদার। চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে বাকি দুজন যদি এই বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে, তখন কি চেয়ারম্যানের কোনো দায়িত্ব থাকে না? এই অর্থ সদস্য দলগুলোর। তার জবাবদিহি তো করতে হবে। আপনি নিজেও কি এ দায় এড়াতে পারবেন?’

চিঠিতে কামাল বায়েজীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তেরও আহ্বান জানান তারা। শুধু তাই নয়, তারা এটাও উল্লেখ করেন যে, এই সংকট নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে সম্ভবত এটিই তাদের ‘শেষ চিঠি’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত