গুঞ্জন রহমান
খালিদের প্রতিটি গানই সুরুচির পরিচায়ক। সেই যে ৮০-র পরপর শুরু করলেন গান গাওয়া। ‘চাইম’ ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট হিসেবে তাঁর গাওয়া প্রতিটি গানই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে সুন্দর কথা আর হৃদয় ছোঁয়া সুরের জন্য। কীর্তনখোলার পারের ছেলে খালিদ নিজেকে বলতেন গাঁয়ের ছেলে। তাঁর ব্যান্ড চাইমও লোকগানের প্রতি বিপুল আগ্রহী ছিল। চাইমের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটিই তো লোকজ ধাঁচের, ‘নাতি খাতি বেলা গেইলো, শুতি পারলাম না, আহারে সদরুদ্দির মা।’ এই গানটি কোনো চিরায়ত বাংলা লোকগান, নাকি তাঁদের নিজেদেরই (বা চাইমের জন্য অন্য কারও লেখা বা সুর করা) গান, তা আমার জানা নেই। রিলিজ হওয়ার সময় অ্যালবাম কভারে নিশ্চয়ই সে তথ্য লেখা ছিল, আমার এখন আর মনে পড়ছে না। কিন্তু গানের বাণী চিরায়ত লোকগীতিরই প্রমাণ রাখে।
‘বড় চাচার গরু ছুটে লাউয়ের জাংলা খাইলো
চাচা আইসে খালি খালি চাচীরে কেন্ মাইল্লো
সময় কইরে বাড়ির কেউ তো চোহি দ্যাকলো না!
আহারে সদরুদ্দির মা…’
কথাগুলো গ্রামীণ জীবনের চিরায়ত চর্চার এক শাশ্বত নিদর্শন। আবার কীর্তনখোলা নদী নিয়ে অপূর্ব সুন্দর একটি গানও সে সময় উপহার দিয়েছিল চাইম নামের ব্যান্ডটি। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অপরূপ এক নমুনা তাঁরা উপস্থাপন করেছিলেন উচ্চশিক্ষা নামের একটি গানে।
পড়ালেখা শেষ করে বেকারত্বের যুগে মোরা
এ কেমন অভিশাপ বলো
কেউ নেতা বনে যায়
কেউ প্রেমের তরী বায়
ডিমোশনে হয় টলোমলো
এ কেমন অভিশাপ বলো...
এ রকম কথার এবং কীর্তন আঙ্গিকের প্যারোডি সুরে তৈরি সেই গান সেকালে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিল মননশীল যেকোনো মানুষকে।
আবার, বাংলার নারীদের চিরায়ত দুঃখ শরীরের কালো রং নিয়েও যুগোপযোগী গান করেছিলেন চাইম ব্যান্ডের খালিদ। ‘কালো মাইয়া কালো বইলা কইরো না কেউ হেলা...।’ এ রকম কথার সেই গান এক দুঃসহ সামাজিক সংকটের কথা তরুণ শ্রোতাদের ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আরেকটি গান, ‘ও আমার হাঁসের ছাও রে...’ গ্রামীণ জীবনের আরেক নিত্য ঘটনা তুলে এনেছে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে। এসব হলো ব্যান্ড মিউজিকের ভরা যৌবনে বাংলা লোকজ সংগীতকে দেয়া চাইমের অবদান, খালিদ সাইফুল্লাহ্র অবদান।
সোলস, ফিডব্যাক ও মাইলসের পরেই গড়ে ওঠে চাইম নামের ব্যান্ডটি। বিটিভির ব্যান্ড শোতে অংশ নেয়ার মাধ্যমে রাতারাতি সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দলটি। সে সময়েই নজর কাড়েন খালিদ, তাঁর দরাজ কণ্ঠ আর স্টাইলিশ পারফরমেন্সের জন্য। জিনস, টি–শার্ট, কেডস, সানগ্লাসের সঙ্গে লম্বা চুলের গেটআপে নিজের একটা পারফেক্ট রকস্টার ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। সেই তিরাশি-চুরাশির দিকে তাঁর স্টাইলিশ পারফরম্যান্স অনুকরণ করতেন সমকালীন অনেক ব্যান্ড তারকা। কেবল দর্শনধারীই নন, তিনি ছিলেন প্রকৃত গুণবিচারীও। সে কালে সোলসের তপন চৌধুরী ও নাসিম আলী খান, ফিডব্যাকের মাকসুদ আর চাইমের খালিদ— এঁরাই ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের আইকনিক ভোকাল। মনে রাখতে হবে, জেমস তখনো নজর কাড়তে পারেননি, আইয়ুব বাচ্চু সেভাবে গাইতে শুরুই করেননি, পার্থ বড়ুয়া এলেন আরও পরে, মাইলসের হামিন ও শাফিন তখনো বাংলা গান করছেন না। কোনো প্রকার ফাঁকি ঝুঁকিহীন, একেবারে তৈরি গলায় গান করতেন খালিদ। কণ্ঠে যেমন ছিল আবেগ, তেমনি ছিল জোর। অনেক চড়ুইয়ে উঠে যেতে পারতেন সাবলীলভাবে, নাকি সুর লাগাতেন না, গাইতেন শুদ্ধ উচ্চারণে, স্পষ্ট স্বরে।
নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যখন মিক্সড অ্যালবামের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকল, খালিদের যেন পুনর্জন্ম দেখলাম আমরা। একের পর এক মিক্সড অ্যালবাম, খালিদের কণ্ঠে একের পর এক হিট সিংগলস। তখনকার সময়ে জনপ্রিয় সব ব্যান্ডের ভোকালিস্টদের নিয়ে মিক্সড অ্যালবামগুলো প্রকাশিত হলেও, দশ বারোটা গান থেকে হিট করত দুই-তিনটি, বড়জোর। সেই দু-তিনটির মধ্যে খালিদের একটি গান থাকত। আর, সেকাল থেকে আজ প্রায় তিন দশক পরের অবস্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, দুই-তিনটিও নয়, বড় জোর একটি করে গানই টিকে আছে, যে গানটি খালিদের গাওয়া। সরলতার প্রতিমা, যদি হিমালয় হয়ে, কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে, আবার দেখা হবে/এখনই শেষ দেখা নয়, হয়নি যাবার বেলা, আকাশনীলা ইত্যাদি গানগুলো সবই কালোত্তীর্ণ, ক্রমশ এগিয়ে চলেছে কালজয়ী বাংলা গান হওয়ার পথে। এগুলো সবই বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামে গাওয়া।
যে কথাটি দিয়ে শুরু করেছিলাম, খালিদের গাওয়া প্রতিটি গানের কথা ও সুরে দারুণ সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়। গানগুলোর খুব কমই তাঁর লেখা বা সুর করা। কিন্তু তিনি লিরিক বুঝতেন, সুর চিনতেন। তাই দশ-বারোজন শিল্পীর জন্য করা দশ বারোটা গান থেকে ঠিকঠাক বেছে নিতে পারতেন নিজের জন্য সেরা গানটাই। কিংবা কে জানে, গানের কম্পোজারেরাই হয়তো তাঁর জন্য আলাদা করে রাখতেন তাঁর সেরা কাজটা।
‘সে যে হৃদয় পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে/ হারিয়ে গেল নিমেষেই...’ ভেবে দেখুন তো, প্রেম ভেঙে যাওয়ায় প্রেমিকাকে দোষারোপ করার, তাকে রীতিমতো ভিলেন বানিয়ে দেয়ার গাজোয়ারির কালে তিনি কত নান্দনিকভাবে তুলে ধরলেন ভালোবাসা হারানোর কথা! প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার জনপ্রিয় চর্চার কালেই তিনি স্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলেন, ‘নীরা, ক্ষমা করো আমাকে/ এতটুকু সুখ তোমায় পারিনি দিতে!’ এমনটাই কি হওয়া উচিত নয় সকল ক্ষেত্রে? আবার দেখুন, ভালোবাসা হারানোর দুঃখকে কী অদ্ভুতভাবে তিনি বর্ণনা করলেন একটিমাত্র বাক্যে, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে এ হৃদয়ে, সে কিছুই নয়!’ কিংবা, ‘যাবার বেলায় শুধু সান্ত্বনা, নয় কান্না/ আবার দেখা হবে, এখনই শেষ দেখা নয়’ এভাবেও তো সম্পর্কের ইতি টানা যায়। ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা/ তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা’–এভাবেই বুঝি কমপ্লিমেন্ট দিতে হয় প্রেয়সীকে।
খালিদ চলে গেলেন ষাট বছর বয়সে। মধ্যম গড় আয়ুর দেশে ষাট বছর তেমন বেশি না হলেও খুব কম বয়স নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত জানাশোনা থেকে উপলব্ধি করি, তিনি হয়তো আরও কিছুদিন থাকতে পারতেন। সঞ্জীব চৌধুরীর মতো তিনিও বুঝি অপচয় করে গেলেন নিজের যোগ্যতাকে, প্রতিভাকে, জীবনটাকেই।
শেষ দশ বছরে তেমন একটা গান করেননি। নতুন গান ছিল কি না, আমার শোনা হয়নি। তাঁর জীবনযাপনও খুব সুশৃঙ্খল ছিল না। প্রবাসে স্থায়ী ঠিকানা গড়েছিলেন। তবু দেশে ছুটে আসতেন বারবার। গান করতে চাইতেন। নতুন কিছু করতে চাইতেন। থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটা হয়তো ভালো, কিন্তু সে তো আমজনতার ক্ষেত্রে। একজন শিল্পীর জন্য, বাঙালি শিল্পীর জন্য কি ওই ভিনদেশ, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক বাতাবরণ খুব অনুকূল? প্রবাস-জীবনে জীবিকার চিন্তা হয়তো তাঁর ছিল না। কিন্তু মনের খোরাক কি ডলার গুনে মেটে? তাই হয়তো দেশে আসতেন বারবার গানের টানে। সে গান করা হতো না। এ দেশে যে গানের পরিবেশটাই গেছে বদলে! এখানে এখন রুচিমান গায়কের কোথায় স্থান? উদ্ভট কিছু করতে পারা তো খালিদের মতো শিল্পীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। যে অভিমানে নিজেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিলেন সাদি মহম্মদ, সেই একই অভিমান হয়তো একটু অন্যভাবে ছিল খালিদের মনেও। নয়তো এমন দরাজ কণ্ঠে বছরের পর বছর কোনো গান শোনা যায়নি কেন? দু’জনের মৃত্যু দুইভাবে হলেও, আমার কাছে তা এই অসময় যাত্রাকে অভিন্ন যাত্রাই মনে হয়।
খালিদ চলে গেলেন তাঁর আবেগমাখা দরাজ গলার গানগুলো রেখে, এক জীবনে বারবার ঘুরেফিরে শোনার জন্য যা যথেষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ ক’জন আইকনিক শিল্পীকে হারাল আমাদের গানের জগৎ। আমাদের আধুনিক বাংলা গানের জগতে কেবল শূন্যতাই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক। সে শূন্যতা পূরণ হচ্ছে কতটুকু? আরেকজন সুরুচিবান খালিদ সাইফুল্লাহ্ আসবেন আর কবে?
লেখক: কবি, গল্পকার, গীতিকার
খালিদের প্রতিটি গানই সুরুচির পরিচায়ক। সেই যে ৮০-র পরপর শুরু করলেন গান গাওয়া। ‘চাইম’ ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট হিসেবে তাঁর গাওয়া প্রতিটি গানই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে সুন্দর কথা আর হৃদয় ছোঁয়া সুরের জন্য। কীর্তনখোলার পারের ছেলে খালিদ নিজেকে বলতেন গাঁয়ের ছেলে। তাঁর ব্যান্ড চাইমও লোকগানের প্রতি বিপুল আগ্রহী ছিল। চাইমের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটিই তো লোকজ ধাঁচের, ‘নাতি খাতি বেলা গেইলো, শুতি পারলাম না, আহারে সদরুদ্দির মা।’ এই গানটি কোনো চিরায়ত বাংলা লোকগান, নাকি তাঁদের নিজেদেরই (বা চাইমের জন্য অন্য কারও লেখা বা সুর করা) গান, তা আমার জানা নেই। রিলিজ হওয়ার সময় অ্যালবাম কভারে নিশ্চয়ই সে তথ্য লেখা ছিল, আমার এখন আর মনে পড়ছে না। কিন্তু গানের বাণী চিরায়ত লোকগীতিরই প্রমাণ রাখে।
‘বড় চাচার গরু ছুটে লাউয়ের জাংলা খাইলো
চাচা আইসে খালি খালি চাচীরে কেন্ মাইল্লো
সময় কইরে বাড়ির কেউ তো চোহি দ্যাকলো না!
আহারে সদরুদ্দির মা…’
কথাগুলো গ্রামীণ জীবনের চিরায়ত চর্চার এক শাশ্বত নিদর্শন। আবার কীর্তনখোলা নদী নিয়ে অপূর্ব সুন্দর একটি গানও সে সময় উপহার দিয়েছিল চাইম নামের ব্যান্ডটি। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অপরূপ এক নমুনা তাঁরা উপস্থাপন করেছিলেন উচ্চশিক্ষা নামের একটি গানে।
পড়ালেখা শেষ করে বেকারত্বের যুগে মোরা
এ কেমন অভিশাপ বলো
কেউ নেতা বনে যায়
কেউ প্রেমের তরী বায়
ডিমোশনে হয় টলোমলো
এ কেমন অভিশাপ বলো...
এ রকম কথার এবং কীর্তন আঙ্গিকের প্যারোডি সুরে তৈরি সেই গান সেকালে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিল মননশীল যেকোনো মানুষকে।
আবার, বাংলার নারীদের চিরায়ত দুঃখ শরীরের কালো রং নিয়েও যুগোপযোগী গান করেছিলেন চাইম ব্যান্ডের খালিদ। ‘কালো মাইয়া কালো বইলা কইরো না কেউ হেলা...।’ এ রকম কথার সেই গান এক দুঃসহ সামাজিক সংকটের কথা তরুণ শ্রোতাদের ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আরেকটি গান, ‘ও আমার হাঁসের ছাও রে...’ গ্রামীণ জীবনের আরেক নিত্য ঘটনা তুলে এনেছে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে। এসব হলো ব্যান্ড মিউজিকের ভরা যৌবনে বাংলা লোকজ সংগীতকে দেয়া চাইমের অবদান, খালিদ সাইফুল্লাহ্র অবদান।
সোলস, ফিডব্যাক ও মাইলসের পরেই গড়ে ওঠে চাইম নামের ব্যান্ডটি। বিটিভির ব্যান্ড শোতে অংশ নেয়ার মাধ্যমে রাতারাতি সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দলটি। সে সময়েই নজর কাড়েন খালিদ, তাঁর দরাজ কণ্ঠ আর স্টাইলিশ পারফরমেন্সের জন্য। জিনস, টি–শার্ট, কেডস, সানগ্লাসের সঙ্গে লম্বা চুলের গেটআপে নিজের একটা পারফেক্ট রকস্টার ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। সেই তিরাশি-চুরাশির দিকে তাঁর স্টাইলিশ পারফরম্যান্স অনুকরণ করতেন সমকালীন অনেক ব্যান্ড তারকা। কেবল দর্শনধারীই নন, তিনি ছিলেন প্রকৃত গুণবিচারীও। সে কালে সোলসের তপন চৌধুরী ও নাসিম আলী খান, ফিডব্যাকের মাকসুদ আর চাইমের খালিদ— এঁরাই ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের আইকনিক ভোকাল। মনে রাখতে হবে, জেমস তখনো নজর কাড়তে পারেননি, আইয়ুব বাচ্চু সেভাবে গাইতে শুরুই করেননি, পার্থ বড়ুয়া এলেন আরও পরে, মাইলসের হামিন ও শাফিন তখনো বাংলা গান করছেন না। কোনো প্রকার ফাঁকি ঝুঁকিহীন, একেবারে তৈরি গলায় গান করতেন খালিদ। কণ্ঠে যেমন ছিল আবেগ, তেমনি ছিল জোর। অনেক চড়ুইয়ে উঠে যেতে পারতেন সাবলীলভাবে, নাকি সুর লাগাতেন না, গাইতেন শুদ্ধ উচ্চারণে, স্পষ্ট স্বরে।
নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যখন মিক্সড অ্যালবামের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকল, খালিদের যেন পুনর্জন্ম দেখলাম আমরা। একের পর এক মিক্সড অ্যালবাম, খালিদের কণ্ঠে একের পর এক হিট সিংগলস। তখনকার সময়ে জনপ্রিয় সব ব্যান্ডের ভোকালিস্টদের নিয়ে মিক্সড অ্যালবামগুলো প্রকাশিত হলেও, দশ বারোটা গান থেকে হিট করত দুই-তিনটি, বড়জোর। সেই দু-তিনটির মধ্যে খালিদের একটি গান থাকত। আর, সেকাল থেকে আজ প্রায় তিন দশক পরের অবস্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, দুই-তিনটিও নয়, বড় জোর একটি করে গানই টিকে আছে, যে গানটি খালিদের গাওয়া। সরলতার প্রতিমা, যদি হিমালয় হয়ে, কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে, আবার দেখা হবে/এখনই শেষ দেখা নয়, হয়নি যাবার বেলা, আকাশনীলা ইত্যাদি গানগুলো সবই কালোত্তীর্ণ, ক্রমশ এগিয়ে চলেছে কালজয়ী বাংলা গান হওয়ার পথে। এগুলো সবই বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামে গাওয়া।
যে কথাটি দিয়ে শুরু করেছিলাম, খালিদের গাওয়া প্রতিটি গানের কথা ও সুরে দারুণ সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়। গানগুলোর খুব কমই তাঁর লেখা বা সুর করা। কিন্তু তিনি লিরিক বুঝতেন, সুর চিনতেন। তাই দশ-বারোজন শিল্পীর জন্য করা দশ বারোটা গান থেকে ঠিকঠাক বেছে নিতে পারতেন নিজের জন্য সেরা গানটাই। কিংবা কে জানে, গানের কম্পোজারেরাই হয়তো তাঁর জন্য আলাদা করে রাখতেন তাঁর সেরা কাজটা।
‘সে যে হৃদয় পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে/ হারিয়ে গেল নিমেষেই...’ ভেবে দেখুন তো, প্রেম ভেঙে যাওয়ায় প্রেমিকাকে দোষারোপ করার, তাকে রীতিমতো ভিলেন বানিয়ে দেয়ার গাজোয়ারির কালে তিনি কত নান্দনিকভাবে তুলে ধরলেন ভালোবাসা হারানোর কথা! প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার জনপ্রিয় চর্চার কালেই তিনি স্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলেন, ‘নীরা, ক্ষমা করো আমাকে/ এতটুকু সুখ তোমায় পারিনি দিতে!’ এমনটাই কি হওয়া উচিত নয় সকল ক্ষেত্রে? আবার দেখুন, ভালোবাসা হারানোর দুঃখকে কী অদ্ভুতভাবে তিনি বর্ণনা করলেন একটিমাত্র বাক্যে, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে এ হৃদয়ে, সে কিছুই নয়!’ কিংবা, ‘যাবার বেলায় শুধু সান্ত্বনা, নয় কান্না/ আবার দেখা হবে, এখনই শেষ দেখা নয়’ এভাবেও তো সম্পর্কের ইতি টানা যায়। ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা/ তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা’–এভাবেই বুঝি কমপ্লিমেন্ট দিতে হয় প্রেয়সীকে।
খালিদ চলে গেলেন ষাট বছর বয়সে। মধ্যম গড় আয়ুর দেশে ষাট বছর তেমন বেশি না হলেও খুব কম বয়স নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত জানাশোনা থেকে উপলব্ধি করি, তিনি হয়তো আরও কিছুদিন থাকতে পারতেন। সঞ্জীব চৌধুরীর মতো তিনিও বুঝি অপচয় করে গেলেন নিজের যোগ্যতাকে, প্রতিভাকে, জীবনটাকেই।
শেষ দশ বছরে তেমন একটা গান করেননি। নতুন গান ছিল কি না, আমার শোনা হয়নি। তাঁর জীবনযাপনও খুব সুশৃঙ্খল ছিল না। প্রবাসে স্থায়ী ঠিকানা গড়েছিলেন। তবু দেশে ছুটে আসতেন বারবার। গান করতে চাইতেন। নতুন কিছু করতে চাইতেন। থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটা হয়তো ভালো, কিন্তু সে তো আমজনতার ক্ষেত্রে। একজন শিল্পীর জন্য, বাঙালি শিল্পীর জন্য কি ওই ভিনদেশ, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক বাতাবরণ খুব অনুকূল? প্রবাস-জীবনে জীবিকার চিন্তা হয়তো তাঁর ছিল না। কিন্তু মনের খোরাক কি ডলার গুনে মেটে? তাই হয়তো দেশে আসতেন বারবার গানের টানে। সে গান করা হতো না। এ দেশে যে গানের পরিবেশটাই গেছে বদলে! এখানে এখন রুচিমান গায়কের কোথায় স্থান? উদ্ভট কিছু করতে পারা তো খালিদের মতো শিল্পীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। যে অভিমানে নিজেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিলেন সাদি মহম্মদ, সেই একই অভিমান হয়তো একটু অন্যভাবে ছিল খালিদের মনেও। নয়তো এমন দরাজ কণ্ঠে বছরের পর বছর কোনো গান শোনা যায়নি কেন? দু’জনের মৃত্যু দুইভাবে হলেও, আমার কাছে তা এই অসময় যাত্রাকে অভিন্ন যাত্রাই মনে হয়।
খালিদ চলে গেলেন তাঁর আবেগমাখা দরাজ গলার গানগুলো রেখে, এক জীবনে বারবার ঘুরেফিরে শোনার জন্য যা যথেষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ ক’জন আইকনিক শিল্পীকে হারাল আমাদের গানের জগৎ। আমাদের আধুনিক বাংলা গানের জগতে কেবল শূন্যতাই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক। সে শূন্যতা পূরণ হচ্ছে কতটুকু? আরেকজন সুরুচিবান খালিদ সাইফুল্লাহ্ আসবেন আর কবে?
লেখক: কবি, গল্পকার, গীতিকার
বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও ও নাচের মঞ্চে মামনুন ইমন ও প্রার্থনা ফারদিন দীঘি জুটি হয়েছিলেন আগে। এবার এই জুটিকে প্রথমবারের মতো দেখা যাবে বড় পর্দায়। সরকারি অনুদানের ‘দেনাপাওনা’ সিনেমায় অভিনয় করবেন তাঁরা।
২ ঘণ্টা আগেঅত ভালো ছাত্র ছিলেন না সুরিয়া। টেনেটুনে পাস করতেন। ফেল ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। সেই গড়পড়তা ছাত্র এখন হাজারো শিক্ষার্থীর ভরসা। ২০০৬ সালে তামিল এই অভিনেতা গড়ে তোলেন আগারাম ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি থেকে তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেন তি
২ ঘণ্টা আগেএকসময় টিভি নাটকে ছিল পারিবারিক গল্পের রাজত্ব। মাঝে প্রেম আর কমেডি গল্পের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছিল এই ধরনের নাটক। সংখ্যায় কম হলেও সম্প্রতি আবার ফিরছে পারিবারিক গল্পের নাটক। গত বছরের শেষ দিকে কে এম সোহাগ রানা শুরু করেন ‘দেনা পাওনা’ নামের ধারাবাহিকের কাজ। শুরুতে ইউটিউবে ৮ পর্বের মিনি সিরিজ হিসেবে পরিকল্
২ ঘণ্টা আগেকালজয়ী রূপকথা ‘স্নো হোয়াইট’কে নতুনভাবে পর্দায় নিয়ে এসেছে ডিজনি। প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে তৈরি হয়েছে স্নো হোয়াইট। ডিজনির অন্যতম ব্যয়বহুল এই মিউজিক্যাল ফ্যান্টাসি মুক্তির আগে থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়েছিল। গত ২১ মার্চে মুক্তির পর বিতর্ক বেড়েছে আরও।
২ ঘণ্টা আগে