বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত
একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ কেমন দেখছেন?
জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের মধ্যে একাডেমিক পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। দীর্ঘ একটা গ্যাপ দিয়ে এখন ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারি, তাহলে গবেষণা কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনীহার কারণ কী বলে মনে করেন?
আপনি দেখবেন, শিক্ষার্থীরা কিন্তু ছাত্র সংসদের বাইরে দলীয় রাজনীতিও ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না। এটির কারণ হতে পারে, দিন শেষে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাভোগের পথ তৈরি করে দিচ্ছে বা যারা প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ পদে থাকে, তাদের মধ্যে একধরনের অসম ক্ষমতা চর্চার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। এটা অনেকাংশে সত্যিও। এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ কারণেই হয়তো তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা অনীহা বা ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিগত ৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
এ মামলায় ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাজা চলছে। আসামিদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা আপিল করবে। মামলার কার্যক্রম সাজা পর্যন্তই আছে। আমরা চাইছি, এ মামলা যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বুয়েটের কেমন যোগাযোগ রয়েছে? বুয়েট কি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদানির্ভর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছে?
আগে হয়তো বুয়েটের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যোগাযোগ কম ছিল। আগে বলতে আমরা যখন ছাত্র, সে সময়ের কথা বলছি... এখন কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। এখন আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ চালু করেছি। আমরা নিজেরা প্রতিনিয়ত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এটা কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটা বিষয় হলো, ইন্টার্নশিপ করতে কিন্তু ফান্ডিং লাগে। এ ফান্ডিংটা কে করবে? সরকার বুয়েটের জন্য যে বাজেট দেয়, সেটাও অনেক কম। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে এগিয়ে আসে। এখানে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক সময় মেলে না। যেমন ধরুন, বুয়েটের একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি লেভেলে একজন ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কিছু টাকা বেশি বেতন পান। দেখেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলো একদিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে, কিন্তু মান অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বেতন দিতে কৃপণতা করে। প্রতিবছর বুয়েট থেকে যথেষ্ট দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দিন। তারপর তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার শিক্ষার্থীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরাটা দেবে।
বুয়েটের ভর্তির প্রক্রিয়াটা প্রায় ৩-৪ মাসের মতো দীর্ঘ হয়। এ সময়টা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব কি না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ, এটা সত্য। দেখেন, ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু আমার একার নয়। আমরা কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলাম। স্লট খালি না পাওয়ায় নিতে পারিনি।
এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দিন দিন অনেক জটিল হচ্ছে। অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি... এখন আমি কতজনকে পরীক্ষায় বসাতে পারব? আগে কিন্তু আমরা পরীক্ষা একটাই নিতাম। এখন আমাকে দুই ধরনের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এগুলো আবার একাধিক শিফটে নিতে হচ্ছে। স্বচ্ছ বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা করতে হচ্ছে। আবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করতে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের বেসিক পাঠদান করাতে হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। করোনাকালে একটা বিশেষ সময় ছিল। সে সময় হয়তো অটোপাস বা শর্ট সিলেবাস ছিল। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া না হয়। ফলে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে দীর্ঘ করতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরাও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবতে পারব।
বুয়েটের সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কোনো ভাবনা আছে কি?
বিগত সময়ে কেন হয়নি, সেটা তো বলতে পারব না। তবে সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে আমার খুব ইচ্ছা আছে। দেখুন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে বলব, সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বুয়েটও আর্থিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। আমরা আরেকটু স্থিতিশীল হতে চাই। এরপরই আমরা ১২তম সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
গত জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিপ্লবকে বুয়েট কীভাবে দেখছে?
এখানে আমরা সবাই একমত যে, এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম না, করতে পারতাম না—সে অর্থে এখন আমাদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এ সুযোগ একটা আমানত। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ছাত্র-জনতার। এ সুযোগের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে ন্যায়নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুখে বৈষম্যবিরোধী বলব, আর এটার সুযোগ নেব—এটা যেন না হয়।
বিগত ২৩ বছর ধরে বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশও এ নির্বাচন চান না। বুয়েটে এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, প্রশাসন কী ভাবছে?
আমিও বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমাদের ছাত্রজীবনে বুয়েটের ছাত্র সংসদ সক্রিয় ছিল। তখন ক্যাম্পাসে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য ছিল। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুজন ভিপি প্রার্থী ক্যাম্পেইন করে এসে একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় চা খেয়েছে। আমি আশা করি, ক্যাম্পাসে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। যখনই মনে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় বলে ধরে নেব। প্রশাসনের বাইরে শিক্ষার্থীদেরও একটা বড় অংশ ছাত্র সংসদ চায় না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে, তখন আমরা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করব।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আপিল করার কথা শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের সর্বশেষ অবস্থান কী?
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনই ছিল না। কারণ আপনি দেখবেন, বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, বুয়েট কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে করা যাবে না। কোনো ধরনের মিছিল-মিটিংও করা যাবে না। বুয়েট প্রশাসন যদি সে সময় নিষিদ্ধের কথা না বলে অর্ডিন্যান্সের কথা বলত, তাহলে সেটা আরও যথাযথ হতো। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না।
আর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল, সেটা কিন্তু আমাদের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার ওপর নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত তৎকালীন বুয়েট প্রশাসনের যে নির্দেশনা ছিল, হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা ছিল, সেটাও এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন আবার নিয়ম অনুযায়ী আগের আদেশ কার্যকর হবে। সুতরাং এখন আর এটা নিয়ে মুভ করার কিছু নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছি। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তারা–কর্মচারীরাও একই নীতিমালার মধ্যে রয়েছেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কী?
ওভারঅল যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা এখন আর নেই। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রনেতারা জেগে উঠেছিলেন, সে পরিস্থিতি তো এখন আর দেশে এক্সিট করে না। তাই বলব, আধুনিককালের ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এটার রূখরেখা বা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত—সেটা কিন্তু এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এটা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। শুধু বুয়েট নয়, বুয়েট তো আর ভিন্ন কোনো আইল্যান্ড নয়। বুয়েট দেশেরই একটা অংশ। বিশেষ করে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে চারদিকে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা আরও আগেই করা দরকার ছিল।
পরিবেশ প্রকৌশলে আপনার বেশ অবদান রয়েছে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতিদিন দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। এ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় কী?
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটার পেছনে রাজধানীর আশপাশে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার বড় একটা প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে বায়ুদূষণের প্রভাব বাড়ছে। এয়ার কোয়ালিটির দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লোকাল, আরেকটা রিজিওনাল। রিজিওনাল কোনো কিছুর কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখবেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলন হয়। সেখানে দূষণরোধে করণীয় নিয়ে সবাই কথা বলেন।
লোকাল যে ব্যাপারগুলো আছে, এগুলোতে আমাদের নিজেদের করণীয় রয়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নমূলক কাজের ধুলাবালুসহ এমন বিভিন্ন অসামঞ্জস্য কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে শব্দদূষণও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব দূষণরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের কাজ হবে, তাদের সহায়তা করা। তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জার্মানওয়াচের জলবায়ুঝুঁকি সূচকে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা সপ্তম স্থানে ছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই জানি, এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ডুবে যাবে। এটার একটা মানচিত্রও করা হয়েছে। দেখেন, এসব এলাকায় যে মানুষগুলো বাস করছে, তাদের আপনি কোথায়
নিয়ে যাবেন? বাংলাদেশ অলরেডি ঘনবসতির একটা দেশ। ধীরে ধীরে যখন আমাদের জায়গা কমে যাবে... দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে আমি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্লেস করব, তখন কিন্তু পপুলেশনের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আমরা যেখানে খাদ্য উৎপাদন করতাম, সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক চিন্তা করছি, ফিউচার নিয়ে ভাবছি কম। করলেও সেটার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার দৃশ্যমান নকশা আমরা দেখছি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের করণীয় কী হবে, সেটা আগে থেকে সবাইকে নোটিশ করতে হবে।
বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে তাঁদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু টিউশন করে তাঁদের কার্যকর কোনো স্কিল ডেভেলপ হয় না বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, টিউশনির সময়টা যেকোনো টেক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যয় করতে পারলে নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমাদের কাছেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এজন্য আমি যেটা বলব, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরাও বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয়, প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
মেট্রোরেলসহ সরকারি প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা দেখি, একটা প্রজেক্টের পিডি প্রশাসন থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হয়তো এর আগে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর তো প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন প্রকৌশলী প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিকটা যতটা ভালো জানবেন, একজন প্রশাসকের কিন্তু ততটা গভীরে জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যাঁর যাঁর দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে দেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, প্রজেক্টের দায়িত্বে যদি একজন প্রকৌশলীও থাকেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন, প্রশাসনের কেউ থাকলে তাঁকে সাধারণত সেভাবে তাঁর কাজের প্রতি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগও থাকে না। সরকার যদি বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাব। আমরা মনে করি, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।
বর্তমানে বুয়েটে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
বুয়েটে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রোবোটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলছে। এসব কাজে আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বুয়েটের এ গবেষণা অবদান রাখছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের ড. মুজিবুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে বুয়েট হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাটা করে দিয়েছে। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরোটা সময় মনিটরিং করেছে। বুয়েট শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে। আমরা হয়তো প্রচারবিমুখ, যে কারণে আমাদের কাজগুলো সামনে আসছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না?
অধ্যাপক বদরুজ্জামান: আমি তো বাড়াতে চাই। তবে বিগত সময় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। আমরা সরকারের কাছে চাইব, সরকার দিলে আমরা অবশ্যই গবেষণা খাতে আরও ব্যয় করতে পারব। বরাদ্দের টাকা সরকার বা ইউজিসি থেকে আসতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এবং এটা সম্ভব। এজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান করব।
যানজট নিরসন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বুয়েট কোনো অবদান রাখতে পারে কি না?
যানজট আমাদের জন্য একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যানজটে আমাদের যে সময়, ফুয়েল, ওয়ার্কিং আওয়ার, রিসোর্স ব্যয় হয়—শুধু এই যানজটের কারণে সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজট নিরসনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। দুর্ভাগ্যবশত বিগত সময়ে আমাদের উপদেশ আমলে নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনলেও কাজে বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বুয়েটে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে, সেখানে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আশা করব, বর্তমান সরকার বা পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের বিশেষজ্ঞদের এ কাজে লাগাতে পারবে। শুধু বুয়েট নয়, এ বিষয়ে দেশে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমরা চাইলেই যানজট জিরোতে নিয়ে আসতে পারব না। তবে আমার ধারণা, সবার সমন্বিত চেষ্টায় যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত একাধিক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েট ভালো অবস্থানে ছিল না। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
র্যাঙ্কিং একটা সাবজেকটিভ বিষয়। এটির প্রতি আমার সে অর্থে খুব আগ্রহ নেই। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং হয়। আমি কোন র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেব? এ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ের অনেক মানদণ্ড আছে। দেখেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের বিষয় আছে। যেগুলো ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাঙ্কিংটা করে। বুয়েট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করি। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলাতে পারি না। যদি শুধু প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাহলে বুয়েটের র্যাঙ্কিং অনেক ওপরে উঠে আসবে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি আমরা ওভারঅল র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি। তবে র্যাঙ্কিং যেহেতু একটা আপেক্ষিক বিষয়... তাই আমি কাজ করতে চাই। আমার কাজের পরিধি আমাকে আমার অবস্থানকে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে। এ কাজে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি উত্তরণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কতগুলো মাস্টার্স, কতগুলো পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো—র্যাঙ্কিংয়ে তার ওপর একটা মার্কস আছে। দেখেন, আমি কাকে মাস্টার্স-পিএইচডি ডিগ্রি দেব? কে পাবে? ধরুন, একজন শিক্ষার্থী স্নাতকের পর পিডিবিতে যোগদান করেছে। এমন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির আর আগ্রহ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকের পর বিদেশে চলে যান। দেখেন, তাহলে কিন্তু আমি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীই পাচ্ছি না। ফলে এদিক থেকে আমি বড় একটা স্কোর হারাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। নানা কারণে এ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর এই উদ্যোগকে অভিভাবকেরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর এ পদ্ধতি চলমান থাকলেও এবার তা প্রায় ভেঙে গেছে। নতুন এ পদ্ধতি কেন স্থায়ী হয়নি?
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অসংগতি ছিল। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সমস্যা ফেস করেছে। আমার মনে হয়, এটা সমন্বিতভাবে বসে সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত করা যেত, তাহলে হয়তো এটা স্থায়ী হতে পারত। তবে সে সুযোগ এখনো একেবারে চলে যায়নি। তারা হয়তো অনেকবার বসেছেও। কিন্তু ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ার কারণে সমাধানটাও আর হয়নি।
বুয়েটের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা ফল দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন। একসঙ্গে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ফল প্রকাশের সাইট স্লো হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?
আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যান্ডউইথ ওভারলোডেড হয়ে গেছে। নতুন প্রশাসন গঠনের পর আমরা বিডিরেনের সঙ্গে কথা বলে আরও ব্যান্ডউইথ বাড়িয়েছি। ফলে এখন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের যে সেবাটা দিচ্ছি, সেটা কিন্তু আমাদের নিজস্ব নয়। আমরা অন্যদের থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ফলে আমরা যাদের থেকে সেবা গ্রহণ করছি, তাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর ফল প্রকাশের পর দেখবেন অনেকে একসঙ্গে সার্ভারে ঢোকে। তখন কিন্তু সার্ভারও ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। তবে এটাকে আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবে।
একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ কেমন দেখছেন?
জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের মধ্যে একাডেমিক পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। দীর্ঘ একটা গ্যাপ দিয়ে এখন ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারি, তাহলে গবেষণা কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনীহার কারণ কী বলে মনে করেন?
আপনি দেখবেন, শিক্ষার্থীরা কিন্তু ছাত্র সংসদের বাইরে দলীয় রাজনীতিও ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না। এটির কারণ হতে পারে, দিন শেষে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাভোগের পথ তৈরি করে দিচ্ছে বা যারা প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ পদে থাকে, তাদের মধ্যে একধরনের অসম ক্ষমতা চর্চার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। এটা অনেকাংশে সত্যিও। এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ কারণেই হয়তো তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা অনীহা বা ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিগত ৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
এ মামলায় ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাজা চলছে। আসামিদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা আপিল করবে। মামলার কার্যক্রম সাজা পর্যন্তই আছে। আমরা চাইছি, এ মামলা যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বুয়েটের কেমন যোগাযোগ রয়েছে? বুয়েট কি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদানির্ভর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছে?
আগে হয়তো বুয়েটের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যোগাযোগ কম ছিল। আগে বলতে আমরা যখন ছাত্র, সে সময়ের কথা বলছি... এখন কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। এখন আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ চালু করেছি। আমরা নিজেরা প্রতিনিয়ত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এটা কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটা বিষয় হলো, ইন্টার্নশিপ করতে কিন্তু ফান্ডিং লাগে। এ ফান্ডিংটা কে করবে? সরকার বুয়েটের জন্য যে বাজেট দেয়, সেটাও অনেক কম। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে এগিয়ে আসে। এখানে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক সময় মেলে না। যেমন ধরুন, বুয়েটের একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি লেভেলে একজন ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কিছু টাকা বেশি বেতন পান। দেখেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলো একদিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে, কিন্তু মান অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বেতন দিতে কৃপণতা করে। প্রতিবছর বুয়েট থেকে যথেষ্ট দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দিন। তারপর তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার শিক্ষার্থীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরাটা দেবে।
বুয়েটের ভর্তির প্রক্রিয়াটা প্রায় ৩-৪ মাসের মতো দীর্ঘ হয়। এ সময়টা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব কি না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ, এটা সত্য। দেখেন, ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু আমার একার নয়। আমরা কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলাম। স্লট খালি না পাওয়ায় নিতে পারিনি।
এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দিন দিন অনেক জটিল হচ্ছে। অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি... এখন আমি কতজনকে পরীক্ষায় বসাতে পারব? আগে কিন্তু আমরা পরীক্ষা একটাই নিতাম। এখন আমাকে দুই ধরনের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এগুলো আবার একাধিক শিফটে নিতে হচ্ছে। স্বচ্ছ বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা করতে হচ্ছে। আবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করতে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের বেসিক পাঠদান করাতে হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। করোনাকালে একটা বিশেষ সময় ছিল। সে সময় হয়তো অটোপাস বা শর্ট সিলেবাস ছিল। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া না হয়। ফলে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে দীর্ঘ করতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরাও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবতে পারব।
বুয়েটের সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কোনো ভাবনা আছে কি?
বিগত সময়ে কেন হয়নি, সেটা তো বলতে পারব না। তবে সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে আমার খুব ইচ্ছা আছে। দেখুন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে বলব, সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বুয়েটও আর্থিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। আমরা আরেকটু স্থিতিশীল হতে চাই। এরপরই আমরা ১২তম সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
গত জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিপ্লবকে বুয়েট কীভাবে দেখছে?
এখানে আমরা সবাই একমত যে, এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম না, করতে পারতাম না—সে অর্থে এখন আমাদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এ সুযোগ একটা আমানত। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ছাত্র-জনতার। এ সুযোগের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে ন্যায়নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুখে বৈষম্যবিরোধী বলব, আর এটার সুযোগ নেব—এটা যেন না হয়।
বিগত ২৩ বছর ধরে বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশও এ নির্বাচন চান না। বুয়েটে এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, প্রশাসন কী ভাবছে?
আমিও বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমাদের ছাত্রজীবনে বুয়েটের ছাত্র সংসদ সক্রিয় ছিল। তখন ক্যাম্পাসে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য ছিল। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুজন ভিপি প্রার্থী ক্যাম্পেইন করে এসে একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় চা খেয়েছে। আমি আশা করি, ক্যাম্পাসে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। যখনই মনে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় বলে ধরে নেব। প্রশাসনের বাইরে শিক্ষার্থীদেরও একটা বড় অংশ ছাত্র সংসদ চায় না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে, তখন আমরা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করব।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আপিল করার কথা শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের সর্বশেষ অবস্থান কী?
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনই ছিল না। কারণ আপনি দেখবেন, বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, বুয়েট কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে করা যাবে না। কোনো ধরনের মিছিল-মিটিংও করা যাবে না। বুয়েট প্রশাসন যদি সে সময় নিষিদ্ধের কথা না বলে অর্ডিন্যান্সের কথা বলত, তাহলে সেটা আরও যথাযথ হতো। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না।
আর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল, সেটা কিন্তু আমাদের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার ওপর নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত তৎকালীন বুয়েট প্রশাসনের যে নির্দেশনা ছিল, হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা ছিল, সেটাও এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন আবার নিয়ম অনুযায়ী আগের আদেশ কার্যকর হবে। সুতরাং এখন আর এটা নিয়ে মুভ করার কিছু নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছি। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তারা–কর্মচারীরাও একই নীতিমালার মধ্যে রয়েছেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কী?
ওভারঅল যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা এখন আর নেই। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রনেতারা জেগে উঠেছিলেন, সে পরিস্থিতি তো এখন আর দেশে এক্সিট করে না। তাই বলব, আধুনিককালের ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এটার রূখরেখা বা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত—সেটা কিন্তু এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এটা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। শুধু বুয়েট নয়, বুয়েট তো আর ভিন্ন কোনো আইল্যান্ড নয়। বুয়েট দেশেরই একটা অংশ। বিশেষ করে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে চারদিকে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা আরও আগেই করা দরকার ছিল।
পরিবেশ প্রকৌশলে আপনার বেশ অবদান রয়েছে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতিদিন দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। এ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় কী?
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটার পেছনে রাজধানীর আশপাশে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার বড় একটা প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে বায়ুদূষণের প্রভাব বাড়ছে। এয়ার কোয়ালিটির দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লোকাল, আরেকটা রিজিওনাল। রিজিওনাল কোনো কিছুর কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখবেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলন হয়। সেখানে দূষণরোধে করণীয় নিয়ে সবাই কথা বলেন।
লোকাল যে ব্যাপারগুলো আছে, এগুলোতে আমাদের নিজেদের করণীয় রয়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নমূলক কাজের ধুলাবালুসহ এমন বিভিন্ন অসামঞ্জস্য কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে শব্দদূষণও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব দূষণরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের কাজ হবে, তাদের সহায়তা করা। তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জার্মানওয়াচের জলবায়ুঝুঁকি সূচকে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা সপ্তম স্থানে ছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই জানি, এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ডুবে যাবে। এটার একটা মানচিত্রও করা হয়েছে। দেখেন, এসব এলাকায় যে মানুষগুলো বাস করছে, তাদের আপনি কোথায়
নিয়ে যাবেন? বাংলাদেশ অলরেডি ঘনবসতির একটা দেশ। ধীরে ধীরে যখন আমাদের জায়গা কমে যাবে... দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে আমি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্লেস করব, তখন কিন্তু পপুলেশনের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আমরা যেখানে খাদ্য উৎপাদন করতাম, সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক চিন্তা করছি, ফিউচার নিয়ে ভাবছি কম। করলেও সেটার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার দৃশ্যমান নকশা আমরা দেখছি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের করণীয় কী হবে, সেটা আগে থেকে সবাইকে নোটিশ করতে হবে।
বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে তাঁদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু টিউশন করে তাঁদের কার্যকর কোনো স্কিল ডেভেলপ হয় না বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, টিউশনির সময়টা যেকোনো টেক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যয় করতে পারলে নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমাদের কাছেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এজন্য আমি যেটা বলব, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরাও বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয়, প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
মেট্রোরেলসহ সরকারি প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা দেখি, একটা প্রজেক্টের পিডি প্রশাসন থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হয়তো এর আগে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর তো প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন প্রকৌশলী প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিকটা যতটা ভালো জানবেন, একজন প্রশাসকের কিন্তু ততটা গভীরে জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যাঁর যাঁর দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে দেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, প্রজেক্টের দায়িত্বে যদি একজন প্রকৌশলীও থাকেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন, প্রশাসনের কেউ থাকলে তাঁকে সাধারণত সেভাবে তাঁর কাজের প্রতি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগও থাকে না। সরকার যদি বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাব। আমরা মনে করি, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।
বর্তমানে বুয়েটে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
বুয়েটে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রোবোটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলছে। এসব কাজে আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বুয়েটের এ গবেষণা অবদান রাখছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের ড. মুজিবুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে বুয়েট হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাটা করে দিয়েছে। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরোটা সময় মনিটরিং করেছে। বুয়েট শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে। আমরা হয়তো প্রচারবিমুখ, যে কারণে আমাদের কাজগুলো সামনে আসছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না?
অধ্যাপক বদরুজ্জামান: আমি তো বাড়াতে চাই। তবে বিগত সময় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। আমরা সরকারের কাছে চাইব, সরকার দিলে আমরা অবশ্যই গবেষণা খাতে আরও ব্যয় করতে পারব। বরাদ্দের টাকা সরকার বা ইউজিসি থেকে আসতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এবং এটা সম্ভব। এজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান করব।
যানজট নিরসন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বুয়েট কোনো অবদান রাখতে পারে কি না?
যানজট আমাদের জন্য একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যানজটে আমাদের যে সময়, ফুয়েল, ওয়ার্কিং আওয়ার, রিসোর্স ব্যয় হয়—শুধু এই যানজটের কারণে সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজট নিরসনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। দুর্ভাগ্যবশত বিগত সময়ে আমাদের উপদেশ আমলে নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনলেও কাজে বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বুয়েটে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে, সেখানে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আশা করব, বর্তমান সরকার বা পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের বিশেষজ্ঞদের এ কাজে লাগাতে পারবে। শুধু বুয়েট নয়, এ বিষয়ে দেশে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমরা চাইলেই যানজট জিরোতে নিয়ে আসতে পারব না। তবে আমার ধারণা, সবার সমন্বিত চেষ্টায় যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত একাধিক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েট ভালো অবস্থানে ছিল না। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
র্যাঙ্কিং একটা সাবজেকটিভ বিষয়। এটির প্রতি আমার সে অর্থে খুব আগ্রহ নেই। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং হয়। আমি কোন র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেব? এ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ের অনেক মানদণ্ড আছে। দেখেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের বিষয় আছে। যেগুলো ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাঙ্কিংটা করে। বুয়েট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করি। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলাতে পারি না। যদি শুধু প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাহলে বুয়েটের র্যাঙ্কিং অনেক ওপরে উঠে আসবে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি আমরা ওভারঅল র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি। তবে র্যাঙ্কিং যেহেতু একটা আপেক্ষিক বিষয়... তাই আমি কাজ করতে চাই। আমার কাজের পরিধি আমাকে আমার অবস্থানকে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে। এ কাজে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি উত্তরণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কতগুলো মাস্টার্স, কতগুলো পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো—র্যাঙ্কিংয়ে তার ওপর একটা মার্কস আছে। দেখেন, আমি কাকে মাস্টার্স-পিএইচডি ডিগ্রি দেব? কে পাবে? ধরুন, একজন শিক্ষার্থী স্নাতকের পর পিডিবিতে যোগদান করেছে। এমন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির আর আগ্রহ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকের পর বিদেশে চলে যান। দেখেন, তাহলে কিন্তু আমি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীই পাচ্ছি না। ফলে এদিক থেকে আমি বড় একটা স্কোর হারাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। নানা কারণে এ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর এই উদ্যোগকে অভিভাবকেরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর এ পদ্ধতি চলমান থাকলেও এবার তা প্রায় ভেঙে গেছে। নতুন এ পদ্ধতি কেন স্থায়ী হয়নি?
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অসংগতি ছিল। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সমস্যা ফেস করেছে। আমার মনে হয়, এটা সমন্বিতভাবে বসে সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত করা যেত, তাহলে হয়তো এটা স্থায়ী হতে পারত। তবে সে সুযোগ এখনো একেবারে চলে যায়নি। তারা হয়তো অনেকবার বসেছেও। কিন্তু ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ার কারণে সমাধানটাও আর হয়নি।
বুয়েটের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা ফল দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন। একসঙ্গে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ফল প্রকাশের সাইট স্লো হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?
আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যান্ডউইথ ওভারলোডেড হয়ে গেছে। নতুন প্রশাসন গঠনের পর আমরা বিডিরেনের সঙ্গে কথা বলে আরও ব্যান্ডউইথ বাড়িয়েছি। ফলে এখন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের যে সেবাটা দিচ্ছি, সেটা কিন্তু আমাদের নিজস্ব নয়। আমরা অন্যদের থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ফলে আমরা যাদের থেকে সেবা গ্রহণ করছি, তাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর ফল প্রকাশের পর দেখবেন অনেকে একসঙ্গে সার্ভারে ঢোকে। তখন কিন্তু সার্ভারও ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। তবে এটাকে আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে রিক্রুটমেন্ট কর্মসূচির আয়োজন করেছে হুয়াওয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। আজ শনিবার (১ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক
১ ঘণ্টা আগে২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
৪ ঘণ্টা আগেময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৬ ঘণ্টা আগে১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে দেশসেরা হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী হালিমাতুস সাদিয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়। বাবা মো. রহমান কবির ও মা নাসিমা আক্তার দুজনই পেশায় শিক্ষক। সাদিয়া শিক্ষক পরিবারে বেড়ে উঠলেও ছোটবেলা...
১১ ঘণ্টা আগে