
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ কেমন দেখছেন?
জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের মধ্যে একাডেমিক পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। দীর্ঘ একটা গ্যাপ দিয়ে এখন ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারি, তাহলে গবেষণা কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনীহার কারণ কী বলে মনে করেন?
আপনি দেখবেন, শিক্ষার্থীরা কিন্তু ছাত্র সংসদের বাইরে দলীয় রাজনীতিও ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না। এটির কারণ হতে পারে, দিন শেষে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাভোগের পথ তৈরি করে দিচ্ছে বা যারা প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ পদে থাকে, তাদের মধ্যে একধরনের অসম ক্ষমতা চর্চার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। এটা অনেকাংশে সত্যিও। এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ কারণেই হয়তো তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা অনীহা বা ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিগত ৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
এ মামলায় ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাজা চলছে। আসামিদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা আপিল করবে। মামলার কার্যক্রম সাজা পর্যন্তই আছে। আমরা চাইছি, এ মামলা যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বুয়েটের কেমন যোগাযোগ রয়েছে? বুয়েট কি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদানির্ভর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছে?
আগে হয়তো বুয়েটের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যোগাযোগ কম ছিল। আগে বলতে আমরা যখন ছাত্র, সে সময়ের কথা বলছি... এখন কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। এখন আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ চালু করেছি। আমরা নিজেরা প্রতিনিয়ত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এটা কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটা বিষয় হলো, ইন্টার্নশিপ করতে কিন্তু ফান্ডিং লাগে। এ ফান্ডিংটা কে করবে? সরকার বুয়েটের জন্য যে বাজেট দেয়, সেটাও অনেক কম। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে এগিয়ে আসে। এখানে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক সময় মেলে না। যেমন ধরুন, বুয়েটের একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি লেভেলে একজন ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কিছু টাকা বেশি বেতন পান। দেখেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলো একদিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে, কিন্তু মান অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বেতন দিতে কৃপণতা করে। প্রতিবছর বুয়েট থেকে যথেষ্ট দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দিন। তারপর তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার শিক্ষার্থীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরাটা দেবে।

বুয়েটের ভর্তির প্রক্রিয়াটা প্রায় ৩-৪ মাসের মতো দীর্ঘ হয়। এ সময়টা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব কি না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ, এটা সত্য। দেখেন, ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু আমার একার নয়। আমরা কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলাম। স্লট খালি না পাওয়ায় নিতে পারিনি।
এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দিন দিন অনেক জটিল হচ্ছে। অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি... এখন আমি কতজনকে পরীক্ষায় বসাতে পারব? আগে কিন্তু আমরা পরীক্ষা একটাই নিতাম। এখন আমাকে দুই ধরনের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এগুলো আবার একাধিক শিফটে নিতে হচ্ছে। স্বচ্ছ বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা করতে হচ্ছে। আবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করতে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের বেসিক পাঠদান করাতে হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। করোনাকালে একটা বিশেষ সময় ছিল। সে সময় হয়তো অটোপাস বা শর্ট সিলেবাস ছিল। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া না হয়। ফলে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে দীর্ঘ করতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরাও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবতে পারব।

বুয়েটের সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কোনো ভাবনা আছে কি?
বিগত সময়ে কেন হয়নি, সেটা তো বলতে পারব না। তবে সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে আমার খুব ইচ্ছা আছে। দেখুন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে বলব, সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বুয়েটও আর্থিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। আমরা আরেকটু স্থিতিশীল হতে চাই। এরপরই আমরা ১২তম সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
গত জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিপ্লবকে বুয়েট কীভাবে দেখছে?
এখানে আমরা সবাই একমত যে, এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম না, করতে পারতাম না—সে অর্থে এখন আমাদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এ সুযোগ একটা আমানত। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ছাত্র-জনতার। এ সুযোগের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে ন্যায়নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুখে বৈষম্যবিরোধী বলব, আর এটার সুযোগ নেব—এটা যেন না হয়।
বিগত ২৩ বছর ধরে বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশও এ নির্বাচন চান না। বুয়েটে এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, প্রশাসন কী ভাবছে?
আমিও বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমাদের ছাত্রজীবনে বুয়েটের ছাত্র সংসদ সক্রিয় ছিল। তখন ক্যাম্পাসে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য ছিল। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুজন ভিপি প্রার্থী ক্যাম্পেইন করে এসে একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় চা খেয়েছে। আমি আশা করি, ক্যাম্পাসে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। যখনই মনে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় বলে ধরে নেব। প্রশাসনের বাইরে শিক্ষার্থীদেরও একটা বড় অংশ ছাত্র সংসদ চায় না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে, তখন আমরা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করব।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আপিল করার কথা শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের সর্বশেষ অবস্থান কী?
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনই ছিল না। কারণ আপনি দেখবেন, বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, বুয়েট কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে করা যাবে না। কোনো ধরনের মিছিল-মিটিংও করা যাবে না। বুয়েট প্রশাসন যদি সে সময় নিষিদ্ধের কথা না বলে অর্ডিন্যান্সের কথা বলত, তাহলে সেটা আরও যথাযথ হতো। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না।
আর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল, সেটা কিন্তু আমাদের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার ওপর নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত তৎকালীন বুয়েট প্রশাসনের যে নির্দেশনা ছিল, হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা ছিল, সেটাও এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন আবার নিয়ম অনুযায়ী আগের আদেশ কার্যকর হবে। সুতরাং এখন আর এটা নিয়ে মুভ করার কিছু নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছি। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তারা–কর্মচারীরাও একই নীতিমালার মধ্যে রয়েছেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কী?
ওভারঅল যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা এখন আর নেই। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রনেতারা জেগে উঠেছিলেন, সে পরিস্থিতি তো এখন আর দেশে এক্সিট করে না। তাই বলব, আধুনিককালের ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এটার রূখরেখা বা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত—সেটা কিন্তু এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এটা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। শুধু বুয়েট নয়, বুয়েট তো আর ভিন্ন কোনো আইল্যান্ড নয়। বুয়েট দেশেরই একটা অংশ। বিশেষ করে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে চারদিকে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা আরও আগেই করা দরকার ছিল।

পরিবেশ প্রকৌশলে আপনার বেশ অবদান রয়েছে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতিদিন দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। এ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় কী?
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটার পেছনে রাজধানীর আশপাশে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার বড় একটা প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে বায়ুদূষণের প্রভাব বাড়ছে। এয়ার কোয়ালিটির দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লোকাল, আরেকটা রিজিওনাল। রিজিওনাল কোনো কিছুর কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখবেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলন হয়। সেখানে দূষণরোধে করণীয় নিয়ে সবাই কথা বলেন।
লোকাল যে ব্যাপারগুলো আছে, এগুলোতে আমাদের নিজেদের করণীয় রয়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নমূলক কাজের ধুলাবালুসহ এমন বিভিন্ন অসামঞ্জস্য কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে শব্দদূষণও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব দূষণরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের কাজ হবে, তাদের সহায়তা করা। তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জার্মানওয়াচের জলবায়ুঝুঁকি সূচকে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা সপ্তম স্থানে ছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই জানি, এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ডুবে যাবে। এটার একটা মানচিত্রও করা হয়েছে। দেখেন, এসব এলাকায় যে মানুষগুলো বাস করছে, তাদের আপনি কোথায়
নিয়ে যাবেন? বাংলাদেশ অলরেডি ঘনবসতির একটা দেশ। ধীরে ধীরে যখন আমাদের জায়গা কমে যাবে... দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে আমি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্লেস করব, তখন কিন্তু পপুলেশনের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আমরা যেখানে খাদ্য উৎপাদন করতাম, সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক চিন্তা করছি, ফিউচার নিয়ে ভাবছি কম। করলেও সেটার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার দৃশ্যমান নকশা আমরা দেখছি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের করণীয় কী হবে, সেটা আগে থেকে সবাইকে নোটিশ করতে হবে।
বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে তাঁদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু টিউশন করে তাঁদের কার্যকর কোনো স্কিল ডেভেলপ হয় না বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, টিউশনির সময়টা যেকোনো টেক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যয় করতে পারলে নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমাদের কাছেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এজন্য আমি যেটা বলব, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরাও বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয়, প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
মেট্রোরেলসহ সরকারি প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা দেখি, একটা প্রজেক্টের পিডি প্রশাসন থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হয়তো এর আগে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর তো প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন প্রকৌশলী প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিকটা যতটা ভালো জানবেন, একজন প্রশাসকের কিন্তু ততটা গভীরে জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যাঁর যাঁর দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে দেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, প্রজেক্টের দায়িত্বে যদি একজন প্রকৌশলীও থাকেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন, প্রশাসনের কেউ থাকলে তাঁকে সাধারণত সেভাবে তাঁর কাজের প্রতি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগও থাকে না। সরকার যদি বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাব। আমরা মনে করি, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।

বর্তমানে বুয়েটে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
বুয়েটে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রোবোটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলছে। এসব কাজে আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বুয়েটের এ গবেষণা অবদান রাখছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের ড. মুজিবুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে বুয়েট হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাটা করে দিয়েছে। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরোটা সময় মনিটরিং করেছে। বুয়েট শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে। আমরা হয়তো প্রচারবিমুখ, যে কারণে আমাদের কাজগুলো সামনে আসছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না?
অধ্যাপক বদরুজ্জামান: আমি তো বাড়াতে চাই। তবে বিগত সময় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। আমরা সরকারের কাছে চাইব, সরকার দিলে আমরা অবশ্যই গবেষণা খাতে আরও ব্যয় করতে পারব। বরাদ্দের টাকা সরকার বা ইউজিসি থেকে আসতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এবং এটা সম্ভব। এজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান করব।
যানজট নিরসন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বুয়েট কোনো অবদান রাখতে পারে কি না?
যানজট আমাদের জন্য একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যানজটে আমাদের যে সময়, ফুয়েল, ওয়ার্কিং আওয়ার, রিসোর্স ব্যয় হয়—শুধু এই যানজটের কারণে সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজট নিরসনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। দুর্ভাগ্যবশত বিগত সময়ে আমাদের উপদেশ আমলে নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনলেও কাজে বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বুয়েটে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে, সেখানে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আশা করব, বর্তমান সরকার বা পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের বিশেষজ্ঞদের এ কাজে লাগাতে পারবে। শুধু বুয়েট নয়, এ বিষয়ে দেশে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমরা চাইলেই যানজট জিরোতে নিয়ে আসতে পারব না। তবে আমার ধারণা, সবার সমন্বিত চেষ্টায় যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত একাধিক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েট ভালো অবস্থানে ছিল না। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
র্যাঙ্কিং একটা সাবজেকটিভ বিষয়। এটির প্রতি আমার সে অর্থে খুব আগ্রহ নেই। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং হয়। আমি কোন র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেব? এ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ের অনেক মানদণ্ড আছে। দেখেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের বিষয় আছে। যেগুলো ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাঙ্কিংটা করে। বুয়েট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করি। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলাতে পারি না। যদি শুধু প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাহলে বুয়েটের র্যাঙ্কিং অনেক ওপরে উঠে আসবে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি আমরা ওভারঅল র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি। তবে র্যাঙ্কিং যেহেতু একটা আপেক্ষিক বিষয়... তাই আমি কাজ করতে চাই। আমার কাজের পরিধি আমাকে আমার অবস্থানকে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে। এ কাজে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি উত্তরণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কতগুলো মাস্টার্স, কতগুলো পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো—র্যাঙ্কিংয়ে তার ওপর একটা মার্কস আছে। দেখেন, আমি কাকে মাস্টার্স-পিএইচডি ডিগ্রি দেব? কে পাবে? ধরুন, একজন শিক্ষার্থী স্নাতকের পর পিডিবিতে যোগদান করেছে। এমন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির আর আগ্রহ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকের পর বিদেশে চলে যান। দেখেন, তাহলে কিন্তু আমি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীই পাচ্ছি না। ফলে এদিক থেকে আমি বড় একটা স্কোর হারাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। নানা কারণে এ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর এই উদ্যোগকে অভিভাবকেরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর এ পদ্ধতি চলমান থাকলেও এবার তা প্রায় ভেঙে গেছে। নতুন এ পদ্ধতি কেন স্থায়ী হয়নি?
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অসংগতি ছিল। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সমস্যা ফেস করেছে। আমার মনে হয়, এটা সমন্বিতভাবে বসে সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত করা যেত, তাহলে হয়তো এটা স্থায়ী হতে পারত। তবে সে সুযোগ এখনো একেবারে চলে যায়নি। তারা হয়তো অনেকবার বসেছেও। কিন্তু ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ার কারণে সমাধানটাও আর হয়নি।
বুয়েটের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা ফল দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন। একসঙ্গে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ফল প্রকাশের সাইট স্লো হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?
আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যান্ডউইথ ওভারলোডেড হয়ে গেছে। নতুন প্রশাসন গঠনের পর আমরা বিডিরেনের সঙ্গে কথা বলে আরও ব্যান্ডউইথ বাড়িয়েছি। ফলে এখন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের যে সেবাটা দিচ্ছি, সেটা কিন্তু আমাদের নিজস্ব নয়। আমরা অন্যদের থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ফলে আমরা যাদের থেকে সেবা গ্রহণ করছি, তাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর ফল প্রকাশের পর দেখবেন অনেকে একসঙ্গে সার্ভারে ঢোকে। তখন কিন্তু সার্ভারও ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। তবে এটাকে আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবে।
একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ কেমন দেখছেন?
জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের মধ্যে একাডেমিক পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। দীর্ঘ একটা গ্যাপ দিয়ে এখন ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারি, তাহলে গবেষণা কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনীহার কারণ কী বলে মনে করেন?
আপনি দেখবেন, শিক্ষার্থীরা কিন্তু ছাত্র সংসদের বাইরে দলীয় রাজনীতিও ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না। এটির কারণ হতে পারে, দিন শেষে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাভোগের পথ তৈরি করে দিচ্ছে বা যারা প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ পদে থাকে, তাদের মধ্যে একধরনের অসম ক্ষমতা চর্চার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। এটা অনেকাংশে সত্যিও। এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ কারণেই হয়তো তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা অনীহা বা ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিগত ৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
এ মামলায় ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাজা চলছে। আসামিদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা আপিল করবে। মামলার কার্যক্রম সাজা পর্যন্তই আছে। আমরা চাইছি, এ মামলা যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বুয়েটের কেমন যোগাযোগ রয়েছে? বুয়েট কি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদানির্ভর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছে?
আগে হয়তো বুয়েটের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যোগাযোগ কম ছিল। আগে বলতে আমরা যখন ছাত্র, সে সময়ের কথা বলছি... এখন কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। এখন আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ চালু করেছি। আমরা নিজেরা প্রতিনিয়ত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এটা কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটা বিষয় হলো, ইন্টার্নশিপ করতে কিন্তু ফান্ডিং লাগে। এ ফান্ডিংটা কে করবে? সরকার বুয়েটের জন্য যে বাজেট দেয়, সেটাও অনেক কম। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে এগিয়ে আসে। এখানে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক সময় মেলে না। যেমন ধরুন, বুয়েটের একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি লেভেলে একজন ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কিছু টাকা বেশি বেতন পান। দেখেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলো একদিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে, কিন্তু মান অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বেতন দিতে কৃপণতা করে। প্রতিবছর বুয়েট থেকে যথেষ্ট দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দিন। তারপর তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার শিক্ষার্থীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরাটা দেবে।

বুয়েটের ভর্তির প্রক্রিয়াটা প্রায় ৩-৪ মাসের মতো দীর্ঘ হয়। এ সময়টা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব কি না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ, এটা সত্য। দেখেন, ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু আমার একার নয়। আমরা কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলাম। স্লট খালি না পাওয়ায় নিতে পারিনি।
এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দিন দিন অনেক জটিল হচ্ছে। অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি... এখন আমি কতজনকে পরীক্ষায় বসাতে পারব? আগে কিন্তু আমরা পরীক্ষা একটাই নিতাম। এখন আমাকে দুই ধরনের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এগুলো আবার একাধিক শিফটে নিতে হচ্ছে। স্বচ্ছ বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা করতে হচ্ছে। আবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করতে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের বেসিক পাঠদান করাতে হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। করোনাকালে একটা বিশেষ সময় ছিল। সে সময় হয়তো অটোপাস বা শর্ট সিলেবাস ছিল। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া না হয়। ফলে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে দীর্ঘ করতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরাও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবতে পারব।

বুয়েটের সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কোনো ভাবনা আছে কি?
বিগত সময়ে কেন হয়নি, সেটা তো বলতে পারব না। তবে সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে আমার খুব ইচ্ছা আছে। দেখুন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে বলব, সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বুয়েটও আর্থিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। আমরা আরেকটু স্থিতিশীল হতে চাই। এরপরই আমরা ১২তম সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
গত জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিপ্লবকে বুয়েট কীভাবে দেখছে?
এখানে আমরা সবাই একমত যে, এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম না, করতে পারতাম না—সে অর্থে এখন আমাদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এ সুযোগ একটা আমানত। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ছাত্র-জনতার। এ সুযোগের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে ন্যায়নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুখে বৈষম্যবিরোধী বলব, আর এটার সুযোগ নেব—এটা যেন না হয়।
বিগত ২৩ বছর ধরে বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশও এ নির্বাচন চান না। বুয়েটে এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, প্রশাসন কী ভাবছে?
আমিও বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমাদের ছাত্রজীবনে বুয়েটের ছাত্র সংসদ সক্রিয় ছিল। তখন ক্যাম্পাসে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য ছিল। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুজন ভিপি প্রার্থী ক্যাম্পেইন করে এসে একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় চা খেয়েছে। আমি আশা করি, ক্যাম্পাসে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। যখনই মনে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় বলে ধরে নেব। প্রশাসনের বাইরে শিক্ষার্থীদেরও একটা বড় অংশ ছাত্র সংসদ চায় না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে, তখন আমরা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করব।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আপিল করার কথা শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের সর্বশেষ অবস্থান কী?
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনই ছিল না। কারণ আপনি দেখবেন, বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, বুয়েট কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে করা যাবে না। কোনো ধরনের মিছিল-মিটিংও করা যাবে না। বুয়েট প্রশাসন যদি সে সময় নিষিদ্ধের কথা না বলে অর্ডিন্যান্সের কথা বলত, তাহলে সেটা আরও যথাযথ হতো। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না।
আর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল, সেটা কিন্তু আমাদের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার ওপর নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত তৎকালীন বুয়েট প্রশাসনের যে নির্দেশনা ছিল, হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা ছিল, সেটাও এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন আবার নিয়ম অনুযায়ী আগের আদেশ কার্যকর হবে। সুতরাং এখন আর এটা নিয়ে মুভ করার কিছু নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছি। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তারা–কর্মচারীরাও একই নীতিমালার মধ্যে রয়েছেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কী?
ওভারঅল যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা এখন আর নেই। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রনেতারা জেগে উঠেছিলেন, সে পরিস্থিতি তো এখন আর দেশে এক্সিট করে না। তাই বলব, আধুনিককালের ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এটার রূখরেখা বা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত—সেটা কিন্তু এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এটা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। শুধু বুয়েট নয়, বুয়েট তো আর ভিন্ন কোনো আইল্যান্ড নয়। বুয়েট দেশেরই একটা অংশ। বিশেষ করে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে চারদিকে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা আরও আগেই করা দরকার ছিল।

পরিবেশ প্রকৌশলে আপনার বেশ অবদান রয়েছে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতিদিন দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। এ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় কী?
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটার পেছনে রাজধানীর আশপাশে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার বড় একটা প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে বায়ুদূষণের প্রভাব বাড়ছে। এয়ার কোয়ালিটির দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লোকাল, আরেকটা রিজিওনাল। রিজিওনাল কোনো কিছুর কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখবেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলন হয়। সেখানে দূষণরোধে করণীয় নিয়ে সবাই কথা বলেন।
লোকাল যে ব্যাপারগুলো আছে, এগুলোতে আমাদের নিজেদের করণীয় রয়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নমূলক কাজের ধুলাবালুসহ এমন বিভিন্ন অসামঞ্জস্য কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে শব্দদূষণও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব দূষণরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের কাজ হবে, তাদের সহায়তা করা। তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জার্মানওয়াচের জলবায়ুঝুঁকি সূচকে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা সপ্তম স্থানে ছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই জানি, এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ডুবে যাবে। এটার একটা মানচিত্রও করা হয়েছে। দেখেন, এসব এলাকায় যে মানুষগুলো বাস করছে, তাদের আপনি কোথায়
নিয়ে যাবেন? বাংলাদেশ অলরেডি ঘনবসতির একটা দেশ। ধীরে ধীরে যখন আমাদের জায়গা কমে যাবে... দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে আমি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্লেস করব, তখন কিন্তু পপুলেশনের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আমরা যেখানে খাদ্য উৎপাদন করতাম, সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক চিন্তা করছি, ফিউচার নিয়ে ভাবছি কম। করলেও সেটার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার দৃশ্যমান নকশা আমরা দেখছি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের করণীয় কী হবে, সেটা আগে থেকে সবাইকে নোটিশ করতে হবে।
বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে তাঁদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু টিউশন করে তাঁদের কার্যকর কোনো স্কিল ডেভেলপ হয় না বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, টিউশনির সময়টা যেকোনো টেক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যয় করতে পারলে নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমাদের কাছেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এজন্য আমি যেটা বলব, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরাও বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয়, প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
মেট্রোরেলসহ সরকারি প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা দেখি, একটা প্রজেক্টের পিডি প্রশাসন থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হয়তো এর আগে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর তো প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন প্রকৌশলী প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিকটা যতটা ভালো জানবেন, একজন প্রশাসকের কিন্তু ততটা গভীরে জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যাঁর যাঁর দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে দেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, প্রজেক্টের দায়িত্বে যদি একজন প্রকৌশলীও থাকেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন, প্রশাসনের কেউ থাকলে তাঁকে সাধারণত সেভাবে তাঁর কাজের প্রতি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগও থাকে না। সরকার যদি বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাব। আমরা মনে করি, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।

বর্তমানে বুয়েটে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
বুয়েটে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রোবোটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলছে। এসব কাজে আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বুয়েটের এ গবেষণা অবদান রাখছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের ড. মুজিবুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে বুয়েট হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাটা করে দিয়েছে। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরোটা সময় মনিটরিং করেছে। বুয়েট শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে। আমরা হয়তো প্রচারবিমুখ, যে কারণে আমাদের কাজগুলো সামনে আসছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না?
অধ্যাপক বদরুজ্জামান: আমি তো বাড়াতে চাই। তবে বিগত সময় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। আমরা সরকারের কাছে চাইব, সরকার দিলে আমরা অবশ্যই গবেষণা খাতে আরও ব্যয় করতে পারব। বরাদ্দের টাকা সরকার বা ইউজিসি থেকে আসতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এবং এটা সম্ভব। এজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান করব।
যানজট নিরসন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বুয়েট কোনো অবদান রাখতে পারে কি না?
যানজট আমাদের জন্য একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যানজটে আমাদের যে সময়, ফুয়েল, ওয়ার্কিং আওয়ার, রিসোর্স ব্যয় হয়—শুধু এই যানজটের কারণে সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজট নিরসনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। দুর্ভাগ্যবশত বিগত সময়ে আমাদের উপদেশ আমলে নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনলেও কাজে বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বুয়েটে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে, সেখানে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আশা করব, বর্তমান সরকার বা পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের বিশেষজ্ঞদের এ কাজে লাগাতে পারবে। শুধু বুয়েট নয়, এ বিষয়ে দেশে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমরা চাইলেই যানজট জিরোতে নিয়ে আসতে পারব না। তবে আমার ধারণা, সবার সমন্বিত চেষ্টায় যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত একাধিক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েট ভালো অবস্থানে ছিল না। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
র্যাঙ্কিং একটা সাবজেকটিভ বিষয়। এটির প্রতি আমার সে অর্থে খুব আগ্রহ নেই। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং হয়। আমি কোন র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেব? এ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ের অনেক মানদণ্ড আছে। দেখেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের বিষয় আছে। যেগুলো ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাঙ্কিংটা করে। বুয়েট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করি। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলাতে পারি না। যদি শুধু প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাহলে বুয়েটের র্যাঙ্কিং অনেক ওপরে উঠে আসবে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি আমরা ওভারঅল র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি। তবে র্যাঙ্কিং যেহেতু একটা আপেক্ষিক বিষয়... তাই আমি কাজ করতে চাই। আমার কাজের পরিধি আমাকে আমার অবস্থানকে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে। এ কাজে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি উত্তরণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কতগুলো মাস্টার্স, কতগুলো পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো—র্যাঙ্কিংয়ে তার ওপর একটা মার্কস আছে। দেখেন, আমি কাকে মাস্টার্স-পিএইচডি ডিগ্রি দেব? কে পাবে? ধরুন, একজন শিক্ষার্থী স্নাতকের পর পিডিবিতে যোগদান করেছে। এমন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির আর আগ্রহ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকের পর বিদেশে চলে যান। দেখেন, তাহলে কিন্তু আমি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীই পাচ্ছি না। ফলে এদিক থেকে আমি বড় একটা স্কোর হারাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। নানা কারণে এ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর এই উদ্যোগকে অভিভাবকেরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর এ পদ্ধতি চলমান থাকলেও এবার তা প্রায় ভেঙে গেছে। নতুন এ পদ্ধতি কেন স্থায়ী হয়নি?
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অসংগতি ছিল। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সমস্যা ফেস করেছে। আমার মনে হয়, এটা সমন্বিতভাবে বসে সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত করা যেত, তাহলে হয়তো এটা স্থায়ী হতে পারত। তবে সে সুযোগ এখনো একেবারে চলে যায়নি। তারা হয়তো অনেকবার বসেছেও। কিন্তু ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ার কারণে সমাধানটাও আর হয়নি।
বুয়েটের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা ফল দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন। একসঙ্গে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ফল প্রকাশের সাইট স্লো হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?
আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যান্ডউইথ ওভারলোডেড হয়ে গেছে। নতুন প্রশাসন গঠনের পর আমরা বিডিরেনের সঙ্গে কথা বলে আরও ব্যান্ডউইথ বাড়িয়েছি। ফলে এখন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের যে সেবাটা দিচ্ছি, সেটা কিন্তু আমাদের নিজস্ব নয়। আমরা অন্যদের থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ফলে আমরা যাদের থেকে সেবা গ্রহণ করছি, তাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর ফল প্রকাশের পর দেখবেন অনেকে একসঙ্গে সার্ভারে ঢোকে। তখন কিন্তু সার্ভারও ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। তবে এটাকে আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ কেমন দেখছেন?
জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের মধ্যে একাডেমিক পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। দীর্ঘ একটা গ্যাপ দিয়ে এখন ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারি, তাহলে গবেষণা কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনীহার কারণ কী বলে মনে করেন?
আপনি দেখবেন, শিক্ষার্থীরা কিন্তু ছাত্র সংসদের বাইরে দলীয় রাজনীতিও ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না। এটির কারণ হতে পারে, দিন শেষে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাভোগের পথ তৈরি করে দিচ্ছে বা যারা প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ পদে থাকে, তাদের মধ্যে একধরনের অসম ক্ষমতা চর্চার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। এটা অনেকাংশে সত্যিও। এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ কারণেই হয়তো তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা অনীহা বা ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিগত ৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
এ মামলায় ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাজা চলছে। আসামিদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা আপিল করবে। মামলার কার্যক্রম সাজা পর্যন্তই আছে। আমরা চাইছি, এ মামলা যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বুয়েটের কেমন যোগাযোগ রয়েছে? বুয়েট কি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদানির্ভর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছে?
আগে হয়তো বুয়েটের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যোগাযোগ কম ছিল। আগে বলতে আমরা যখন ছাত্র, সে সময়ের কথা বলছি... এখন কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। এখন আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ চালু করেছি। আমরা নিজেরা প্রতিনিয়ত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এটা কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটা বিষয় হলো, ইন্টার্নশিপ করতে কিন্তু ফান্ডিং লাগে। এ ফান্ডিংটা কে করবে? সরকার বুয়েটের জন্য যে বাজেট দেয়, সেটাও অনেক কম। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে এগিয়ে আসে। এখানে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক সময় মেলে না। যেমন ধরুন, বুয়েটের একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি লেভেলে একজন ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কিছু টাকা বেশি বেতন পান। দেখেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলো একদিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে, কিন্তু মান অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বেতন দিতে কৃপণতা করে। প্রতিবছর বুয়েট থেকে যথেষ্ট দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দিন। তারপর তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার শিক্ষার্থীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরাটা দেবে।

বুয়েটের ভর্তির প্রক্রিয়াটা প্রায় ৩-৪ মাসের মতো দীর্ঘ হয়। এ সময়টা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব কি না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ, এটা সত্য। দেখেন, ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু আমার একার নয়। আমরা কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলাম। স্লট খালি না পাওয়ায় নিতে পারিনি।
এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দিন দিন অনেক জটিল হচ্ছে। অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি... এখন আমি কতজনকে পরীক্ষায় বসাতে পারব? আগে কিন্তু আমরা পরীক্ষা একটাই নিতাম। এখন আমাকে দুই ধরনের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এগুলো আবার একাধিক শিফটে নিতে হচ্ছে। স্বচ্ছ বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা করতে হচ্ছে। আবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করতে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের বেসিক পাঠদান করাতে হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। করোনাকালে একটা বিশেষ সময় ছিল। সে সময় হয়তো অটোপাস বা শর্ট সিলেবাস ছিল। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া না হয়। ফলে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে দীর্ঘ করতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরাও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবতে পারব।

বুয়েটের সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কোনো ভাবনা আছে কি?
বিগত সময়ে কেন হয়নি, সেটা তো বলতে পারব না। তবে সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে আমার খুব ইচ্ছা আছে। দেখুন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে বলব, সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বুয়েটও আর্থিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। আমরা আরেকটু স্থিতিশীল হতে চাই। এরপরই আমরা ১২তম সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
গত জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিপ্লবকে বুয়েট কীভাবে দেখছে?
এখানে আমরা সবাই একমত যে, এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম না, করতে পারতাম না—সে অর্থে এখন আমাদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এ সুযোগ একটা আমানত। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ছাত্র-জনতার। এ সুযোগের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে ন্যায়নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুখে বৈষম্যবিরোধী বলব, আর এটার সুযোগ নেব—এটা যেন না হয়।
বিগত ২৩ বছর ধরে বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশও এ নির্বাচন চান না। বুয়েটে এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, প্রশাসন কী ভাবছে?
আমিও বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমাদের ছাত্রজীবনে বুয়েটের ছাত্র সংসদ সক্রিয় ছিল। তখন ক্যাম্পাসে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য ছিল। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুজন ভিপি প্রার্থী ক্যাম্পেইন করে এসে একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় চা খেয়েছে। আমি আশা করি, ক্যাম্পাসে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। যখনই মনে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় বলে ধরে নেব। প্রশাসনের বাইরে শিক্ষার্থীদেরও একটা বড় অংশ ছাত্র সংসদ চায় না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে, তখন আমরা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করব।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আপিল করার কথা শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের সর্বশেষ অবস্থান কী?
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনই ছিল না। কারণ আপনি দেখবেন, বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, বুয়েট কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে করা যাবে না। কোনো ধরনের মিছিল-মিটিংও করা যাবে না। বুয়েট প্রশাসন যদি সে সময় নিষিদ্ধের কথা না বলে অর্ডিন্যান্সের কথা বলত, তাহলে সেটা আরও যথাযথ হতো। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না।
আর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল, সেটা কিন্তু আমাদের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার ওপর নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত তৎকালীন বুয়েট প্রশাসনের যে নির্দেশনা ছিল, হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা ছিল, সেটাও এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন আবার নিয়ম অনুযায়ী আগের আদেশ কার্যকর হবে। সুতরাং এখন আর এটা নিয়ে মুভ করার কিছু নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছি। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তারা–কর্মচারীরাও একই নীতিমালার মধ্যে রয়েছেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কী?
ওভারঅল যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা এখন আর নেই। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রনেতারা জেগে উঠেছিলেন, সে পরিস্থিতি তো এখন আর দেশে এক্সিট করে না। তাই বলব, আধুনিককালের ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এটার রূখরেখা বা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত—সেটা কিন্তু এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এটা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। শুধু বুয়েট নয়, বুয়েট তো আর ভিন্ন কোনো আইল্যান্ড নয়। বুয়েট দেশেরই একটা অংশ। বিশেষ করে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে চারদিকে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা আরও আগেই করা দরকার ছিল।

পরিবেশ প্রকৌশলে আপনার বেশ অবদান রয়েছে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতিদিন দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। এ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় কী?
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটার পেছনে রাজধানীর আশপাশে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার বড় একটা প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে বায়ুদূষণের প্রভাব বাড়ছে। এয়ার কোয়ালিটির দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লোকাল, আরেকটা রিজিওনাল। রিজিওনাল কোনো কিছুর কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখবেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলন হয়। সেখানে দূষণরোধে করণীয় নিয়ে সবাই কথা বলেন।
লোকাল যে ব্যাপারগুলো আছে, এগুলোতে আমাদের নিজেদের করণীয় রয়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নমূলক কাজের ধুলাবালুসহ এমন বিভিন্ন অসামঞ্জস্য কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে শব্দদূষণও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব দূষণরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের কাজ হবে, তাদের সহায়তা করা। তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জার্মানওয়াচের জলবায়ুঝুঁকি সূচকে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা সপ্তম স্থানে ছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই জানি, এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ডুবে যাবে। এটার একটা মানচিত্রও করা হয়েছে। দেখেন, এসব এলাকায় যে মানুষগুলো বাস করছে, তাদের আপনি কোথায়
নিয়ে যাবেন? বাংলাদেশ অলরেডি ঘনবসতির একটা দেশ। ধীরে ধীরে যখন আমাদের জায়গা কমে যাবে... দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে আমি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্লেস করব, তখন কিন্তু পপুলেশনের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আমরা যেখানে খাদ্য উৎপাদন করতাম, সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক চিন্তা করছি, ফিউচার নিয়ে ভাবছি কম। করলেও সেটার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার দৃশ্যমান নকশা আমরা দেখছি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের করণীয় কী হবে, সেটা আগে থেকে সবাইকে নোটিশ করতে হবে।
বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে তাঁদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু টিউশন করে তাঁদের কার্যকর কোনো স্কিল ডেভেলপ হয় না বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, টিউশনির সময়টা যেকোনো টেক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যয় করতে পারলে নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমাদের কাছেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এজন্য আমি যেটা বলব, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরাও বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয়, প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
মেট্রোরেলসহ সরকারি প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা দেখি, একটা প্রজেক্টের পিডি প্রশাসন থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হয়তো এর আগে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর তো প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন প্রকৌশলী প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিকটা যতটা ভালো জানবেন, একজন প্রশাসকের কিন্তু ততটা গভীরে জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যাঁর যাঁর দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে দেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, প্রজেক্টের দায়িত্বে যদি একজন প্রকৌশলীও থাকেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন, প্রশাসনের কেউ থাকলে তাঁকে সাধারণত সেভাবে তাঁর কাজের প্রতি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগও থাকে না। সরকার যদি বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাব। আমরা মনে করি, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।

বর্তমানে বুয়েটে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
বুয়েটে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রোবোটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলছে। এসব কাজে আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বুয়েটের এ গবেষণা অবদান রাখছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের ড. মুজিবুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে বুয়েট হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাটা করে দিয়েছে। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরোটা সময় মনিটরিং করেছে। বুয়েট শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে। আমরা হয়তো প্রচারবিমুখ, যে কারণে আমাদের কাজগুলো সামনে আসছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না?
অধ্যাপক বদরুজ্জামান: আমি তো বাড়াতে চাই। তবে বিগত সময় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। আমরা সরকারের কাছে চাইব, সরকার দিলে আমরা অবশ্যই গবেষণা খাতে আরও ব্যয় করতে পারব। বরাদ্দের টাকা সরকার বা ইউজিসি থেকে আসতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এবং এটা সম্ভব। এজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান করব।
যানজট নিরসন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বুয়েট কোনো অবদান রাখতে পারে কি না?
যানজট আমাদের জন্য একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যানজটে আমাদের যে সময়, ফুয়েল, ওয়ার্কিং আওয়ার, রিসোর্স ব্যয় হয়—শুধু এই যানজটের কারণে সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজট নিরসনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। দুর্ভাগ্যবশত বিগত সময়ে আমাদের উপদেশ আমলে নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনলেও কাজে বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বুয়েটে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে, সেখানে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আশা করব, বর্তমান সরকার বা পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের বিশেষজ্ঞদের এ কাজে লাগাতে পারবে। শুধু বুয়েট নয়, এ বিষয়ে দেশে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমরা চাইলেই যানজট জিরোতে নিয়ে আসতে পারব না। তবে আমার ধারণা, সবার সমন্বিত চেষ্টায় যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত একাধিক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েট ভালো অবস্থানে ছিল না। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
র্যাঙ্কিং একটা সাবজেকটিভ বিষয়। এটির প্রতি আমার সে অর্থে খুব আগ্রহ নেই। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং হয়। আমি কোন র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেব? এ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ের অনেক মানদণ্ড আছে। দেখেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের বিষয় আছে। যেগুলো ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাঙ্কিংটা করে। বুয়েট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করি। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলাতে পারি না। যদি শুধু প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাহলে বুয়েটের র্যাঙ্কিং অনেক ওপরে উঠে আসবে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি আমরা ওভারঅল র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি। তবে র্যাঙ্কিং যেহেতু একটা আপেক্ষিক বিষয়... তাই আমি কাজ করতে চাই। আমার কাজের পরিধি আমাকে আমার অবস্থানকে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে। এ কাজে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি উত্তরণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কতগুলো মাস্টার্স, কতগুলো পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো—র্যাঙ্কিংয়ে তার ওপর একটা মার্কস আছে। দেখেন, আমি কাকে মাস্টার্স-পিএইচডি ডিগ্রি দেব? কে পাবে? ধরুন, একজন শিক্ষার্থী স্নাতকের পর পিডিবিতে যোগদান করেছে। এমন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির আর আগ্রহ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকের পর বিদেশে চলে যান। দেখেন, তাহলে কিন্তু আমি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীই পাচ্ছি না। ফলে এদিক থেকে আমি বড় একটা স্কোর হারাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। নানা কারণে এ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর এই উদ্যোগকে অভিভাবকেরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর এ পদ্ধতি চলমান থাকলেও এবার তা প্রায় ভেঙে গেছে। নতুন এ পদ্ধতি কেন স্থায়ী হয়নি?
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অসংগতি ছিল। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সমস্যা ফেস করেছে। আমার মনে হয়, এটা সমন্বিতভাবে বসে সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত করা যেত, তাহলে হয়তো এটা স্থায়ী হতে পারত। তবে সে সুযোগ এখনো একেবারে চলে যায়নি। তারা হয়তো অনেকবার বসেছেও। কিন্তু ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ার কারণে সমাধানটাও আর হয়নি।
বুয়েটের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা ফল দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন। একসঙ্গে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ফল প্রকাশের সাইট স্লো হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?
আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যান্ডউইথ ওভারলোডেড হয়ে গেছে। নতুন প্রশাসন গঠনের পর আমরা বিডিরেনের সঙ্গে কথা বলে আরও ব্যান্ডউইথ বাড়িয়েছি। ফলে এখন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের যে সেবাটা দিচ্ছি, সেটা কিন্তু আমাদের নিজস্ব নয়। আমরা অন্যদের থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ফলে আমরা যাদের থেকে সেবা গ্রহণ করছি, তাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর ফল প্রকাশের পর দেখবেন অনেকে একসঙ্গে সার্ভারে ঢোকে। তখন কিন্তু সার্ভারও ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। তবে এটাকে আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবে।
একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ কেমন দেখছেন?
জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের মধ্যে একাডেমিক পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। দীর্ঘ একটা গ্যাপ দিয়ে এখন ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারি, তাহলে গবেষণা কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনীহার কারণ কী বলে মনে করেন?
আপনি দেখবেন, শিক্ষার্থীরা কিন্তু ছাত্র সংসদের বাইরে দলীয় রাজনীতিও ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না। এটির কারণ হতে পারে, দিন শেষে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাভোগের পথ তৈরি করে দিচ্ছে বা যারা প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ পদে থাকে, তাদের মধ্যে একধরনের অসম ক্ষমতা চর্চার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে। এটা অনেকাংশে সত্যিও। এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ কারণেই হয়তো তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা অনীহা বা ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিগত ৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
এ মামলায় ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাজা চলছে। আসামিদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা আপিল করবে। মামলার কার্যক্রম সাজা পর্যন্তই আছে। আমরা চাইছি, এ মামলা যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বুয়েটের কেমন যোগাযোগ রয়েছে? বুয়েট কি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদানির্ভর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছে?
আগে হয়তো বুয়েটের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যোগাযোগ কম ছিল। আগে বলতে আমরা যখন ছাত্র, সে সময়ের কথা বলছি... এখন কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। এখন আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ চালু করেছি। আমরা নিজেরা প্রতিনিয়ত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এটা কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটা বিষয় হলো, ইন্টার্নশিপ করতে কিন্তু ফান্ডিং লাগে। এ ফান্ডিংটা কে করবে? সরকার বুয়েটের জন্য যে বাজেট দেয়, সেটাও অনেক কম। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আহ্বান করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে এগিয়ে আসে। এখানে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক সময় মেলে না। যেমন ধরুন, বুয়েটের একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি লেভেলে একজন ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কিছু টাকা বেশি বেতন পান। দেখেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলো একদিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে, কিন্তু মান অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বেতন দিতে কৃপণতা করে। প্রতিবছর বুয়েট থেকে যথেষ্ট দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দিন। তারপর তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার শিক্ষার্থীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরাটা দেবে।

বুয়েটের ভর্তির প্রক্রিয়াটা প্রায় ৩-৪ মাসের মতো দীর্ঘ হয়। এ সময়টা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব কি না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ, এটা সত্য। দেখেন, ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু আমার একার নয়। আমরা কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলাম। স্লট খালি না পাওয়ায় নিতে পারিনি।
এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দিন দিন অনেক জটিল হচ্ছে। অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি... এখন আমি কতজনকে পরীক্ষায় বসাতে পারব? আগে কিন্তু আমরা পরীক্ষা একটাই নিতাম। এখন আমাকে দুই ধরনের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এগুলো আবার একাধিক শিফটে নিতে হচ্ছে। স্বচ্ছ বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা করতে হচ্ছে। আবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করতে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের বেসিক পাঠদান করাতে হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। করোনাকালে একটা বিশেষ সময় ছিল। সে সময় হয়তো অটোপাস বা শর্ট সিলেবাস ছিল। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া না হয়। ফলে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে দীর্ঘ করতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরাও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবতে পারব।

বুয়েটের সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কোনো ভাবনা আছে কি?
বিগত সময়ে কেন হয়নি, সেটা তো বলতে পারব না। তবে সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে আমার খুব ইচ্ছা আছে। দেখুন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে বলব, সরকার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বুয়েটও আর্থিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। আমরা আরেকটু স্থিতিশীল হতে চাই। এরপরই আমরা ১২তম সমাবর্তন আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
গত জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিপ্লবকে বুয়েট কীভাবে দেখছে?
এখানে আমরা সবাই একমত যে, এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম না, করতে পারতাম না—সে অর্থে এখন আমাদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এ সুযোগ একটা আমানত। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ছাত্র-জনতার। এ সুযোগের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে ন্যায়নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুখে বৈষম্যবিরোধী বলব, আর এটার সুযোগ নেব—এটা যেন না হয়।
বিগত ২৩ বছর ধরে বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশও এ নির্বাচন চান না। বুয়েটে এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, প্রশাসন কী ভাবছে?
আমিও বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমাদের ছাত্রজীবনে বুয়েটের ছাত্র সংসদ সক্রিয় ছিল। তখন ক্যাম্পাসে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য ছিল। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুজন ভিপি প্রার্থী ক্যাম্পেইন করে এসে একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় চা খেয়েছে। আমি আশা করি, ক্যাম্পাসে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। যখনই মনে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় বলে ধরে নেব। প্রশাসনের বাইরে শিক্ষার্থীদেরও একটা বড় অংশ ছাত্র সংসদ চায় না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে, তখন আমরা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করব।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আপিল করার কথা শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের সর্বশেষ অবস্থান কী?
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনই ছিল না। কারণ আপনি দেখবেন, বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, বুয়েট কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে করা যাবে না। কোনো ধরনের মিছিল-মিটিংও করা যাবে না। বুয়েট প্রশাসন যদি সে সময় নিষিদ্ধের কথা না বলে অর্ডিন্যান্সের কথা বলত, তাহলে সেটা আরও যথাযথ হতো। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না।
আর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ ছিল, সেটা কিন্তু আমাদের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার ওপর নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত তৎকালীন বুয়েট প্রশাসনের যে নির্দেশনা ছিল, হাইকোর্ট সেটাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা ছিল, সেটাও এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন আবার নিয়ম অনুযায়ী আগের আদেশ কার্যকর হবে। সুতরাং এখন আর এটা নিয়ে মুভ করার কিছু নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের ১৬ নম্বর ধারার বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছি। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তারা–কর্মচারীরাও একই নীতিমালার মধ্যে রয়েছেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কী?
ওভারঅল যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা এখন আর নেই। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রনেতারা জেগে উঠেছিলেন, সে পরিস্থিতি তো এখন আর দেশে এক্সিট করে না। তাই বলব, আধুনিককালের ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এটার রূখরেখা বা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত—সেটা কিন্তু এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এটা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দাবি রাখে। শুধু বুয়েট নয়, বুয়েট তো আর ভিন্ন কোনো আইল্যান্ড নয়। বুয়েট দেশেরই একটা অংশ। বিশেষ করে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে চারদিকে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা আরও আগেই করা দরকার ছিল।

পরিবেশ প্রকৌশলে আপনার বেশ অবদান রয়েছে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতিদিন দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। এ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় কী?
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটার পেছনে রাজধানীর আশপাশে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার বড় একটা প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে বায়ুদূষণের প্রভাব বাড়ছে। এয়ার কোয়ালিটির দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লোকাল, আরেকটা রিজিওনাল। রিজিওনাল কোনো কিছুর কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখবেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলন হয়। সেখানে দূষণরোধে করণীয় নিয়ে সবাই কথা বলেন।
লোকাল যে ব্যাপারগুলো আছে, এগুলোতে আমাদের নিজেদের করণীয় রয়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নমূলক কাজের ধুলাবালুসহ এমন বিভিন্ন অসামঞ্জস্য কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে শব্দদূষণও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব দূষণরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের কাজ হবে, তাদের সহায়তা করা। তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জার্মানওয়াচের জলবায়ুঝুঁকি সূচকে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা সপ্তম স্থানে ছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই জানি, এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ডুবে যাবে। এটার একটা মানচিত্রও করা হয়েছে। দেখেন, এসব এলাকায় যে মানুষগুলো বাস করছে, তাদের আপনি কোথায়
নিয়ে যাবেন? বাংলাদেশ অলরেডি ঘনবসতির একটা দেশ। ধীরে ধীরে যখন আমাদের জায়গা কমে যাবে... দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে আমি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্লেস করব, তখন কিন্তু পপুলেশনের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আমরা যেখানে খাদ্য উৎপাদন করতাম, সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক চিন্তা করছি, ফিউচার নিয়ে ভাবছি কম। করলেও সেটার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার দৃশ্যমান নকশা আমরা দেখছি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের করণীয় কী হবে, সেটা আগে থেকে সবাইকে নোটিশ করতে হবে।
বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে তাঁদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু টিউশন করে তাঁদের কার্যকর কোনো স্কিল ডেভেলপ হয় না বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, টিউশনির সময়টা যেকোনো টেক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যয় করতে পারলে নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমাদের কাছেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এজন্য আমি যেটা বলব, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমরাও বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয়, প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
মেট্রোরেলসহ সরকারি প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা দেখি, একটা প্রজেক্টের পিডি প্রশাসন থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হয়তো এর আগে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর তো প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন প্রকৌশলী প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিকটা যতটা ভালো জানবেন, একজন প্রশাসকের কিন্তু ততটা গভীরে জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যাঁর যাঁর দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে দেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, প্রজেক্টের দায়িত্বে যদি একজন প্রকৌশলীও থাকেন, তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন, প্রশাসনের কেউ থাকলে তাঁকে সাধারণত সেভাবে তাঁর কাজের প্রতি জবাবদিহি করতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগও থাকে না। সরকার যদি বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাদের পরিবর্তে প্রকৌলশীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাব। আমরা মনে করি, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।

বর্তমানে বুয়েটে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
বুয়েটে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রোবোটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলছে। এসব কাজে আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বুয়েটের এ গবেষণা অবদান রাখছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের ড. মুজিবুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে বুয়েট হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাটা করে দিয়েছে। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরোটা সময় মনিটরিং করেছে। বুয়েট শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে। আমরা হয়তো প্রচারবিমুখ, যে কারণে আমাদের কাজগুলো সামনে আসছে না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না?
অধ্যাপক বদরুজ্জামান: আমি তো বাড়াতে চাই। তবে বিগত সময় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। আমরা সরকারের কাছে চাইব, সরকার দিলে আমরা অবশ্যই গবেষণা খাতে আরও ব্যয় করতে পারব। বরাদ্দের টাকা সরকার বা ইউজিসি থেকে আসতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত এবং এটা সম্ভব। এজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান করব।
যানজট নিরসন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বুয়েট কোনো অবদান রাখতে পারে কি না?
যানজট আমাদের জন্য একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যানজটে আমাদের যে সময়, ফুয়েল, ওয়ার্কিং আওয়ার, রিসোর্স ব্যয় হয়—শুধু এই যানজটের কারণে সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজট নিরসনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। দুর্ভাগ্যবশত বিগত সময়ে আমাদের উপদেশ আমলে নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনলেও কাজে বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বুয়েটে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে, সেখানে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আশা করব, বর্তমান সরকার বা পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের বিশেষজ্ঞদের এ কাজে লাগাতে পারবে। শুধু বুয়েট নয়, এ বিষয়ে দেশে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমরা চাইলেই যানজট জিরোতে নিয়ে আসতে পারব না। তবে আমার ধারণা, সবার সমন্বিত চেষ্টায় যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত একাধিক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েট ভালো অবস্থানে ছিল না। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
র্যাঙ্কিং একটা সাবজেকটিভ বিষয়। এটির প্রতি আমার সে অর্থে খুব আগ্রহ নেই। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং হয়। আমি কোন র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেব? এ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ের অনেক মানদণ্ড আছে। দেখেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের বিষয় আছে। যেগুলো ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো র্যাঙ্কিংটা করে। বুয়েট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করি। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলাতে পারি না। যদি শুধু প্রকৌশল বিষয়গুলো নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাহলে বুয়েটের র্যাঙ্কিং অনেক ওপরে উঠে আসবে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি আমরা ওভারঅল র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি। তবে র্যাঙ্কিং যেহেতু একটা আপেক্ষিক বিষয়... তাই আমি কাজ করতে চাই। আমার কাজের পরিধি আমাকে আমার অবস্থানকে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে। এ কাজে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি উত্তরণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কতগুলো মাস্টার্স, কতগুলো পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো—র্যাঙ্কিংয়ে তার ওপর একটা মার্কস আছে। দেখেন, আমি কাকে মাস্টার্স-পিএইচডি ডিগ্রি দেব? কে পাবে? ধরুন, একজন শিক্ষার্থী স্নাতকের পর পিডিবিতে যোগদান করেছে। এমন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির আর আগ্রহ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকের পর বিদেশে চলে যান। দেখেন, তাহলে কিন্তু আমি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীই পাচ্ছি না। ফলে এদিক থেকে আমি বড় একটা স্কোর হারাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। নানা কারণে এ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর এই উদ্যোগকে অভিভাবকেরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর এ পদ্ধতি চলমান থাকলেও এবার তা প্রায় ভেঙে গেছে। নতুন এ পদ্ধতি কেন স্থায়ী হয়নি?
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অসংগতি ছিল। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের সমস্যা ফেস করেছে। আমার মনে হয়, এটা সমন্বিতভাবে বসে সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত করা যেত, তাহলে হয়তো এটা স্থায়ী হতে পারত। তবে সে সুযোগ এখনো একেবারে চলে যায়নি। তারা হয়তো অনেকবার বসেছেও। কিন্তু ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ার কারণে সমাধানটাও আর হয়নি।
বুয়েটের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা ফল দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন। একসঙ্গে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ফল প্রকাশের সাইট স্লো হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?
আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যান্ডউইথ ওভারলোডেড হয়ে গেছে। নতুন প্রশাসন গঠনের পর আমরা বিডিরেনের সঙ্গে কথা বলে আরও ব্যান্ডউইথ বাড়িয়েছি। ফলে এখন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের যে সেবাটা দিচ্ছি, সেটা কিন্তু আমাদের নিজস্ব নয়। আমরা অন্যদের থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ফলে আমরা যাদের থেকে সেবা গ্রহণ করছি, তাদের যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর ফল প্রকাশের পর দেখবেন অনেকে একসঙ্গে সার্ভারে ঢোকে। তখন কিন্তু সার্ভারও ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। তবে এটাকে আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবে।

নরওয়েতে বিআই প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যাঁরা নরওয়েতে বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নরওয়েজিয়ান
১ ঘণ্টা আগে
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
২০ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
২০ ঘণ্টা আগেশিক্ষা ডেস্ক

নরওয়েতে বিআই প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যাঁরা নরওয়েতে বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।
নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যবসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৪৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে নরওয়ের রাজধানী অসলোসহ কয়েকটি শহরে স্কুলটির ক্যাম্পাস রয়েছে। বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম, গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা এবং শিল্প-বাণিজ্য খাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার জন্য প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
সুযোগ-সুবিধা
যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বৃত্তির শর্ত পূরণ করবেন, তাঁদের প্রতিটি সেমিস্টারের সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত জীবনযাপনের খরচের জন্য ভাতা (স্টাইপেন্ড) দেওয়া হবে।
আবেদনের যোগ্যতা
বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে প্রার্থীদের সর্বনিম্ন ‘এ’ গ্রেড মানের পূর্ববর্তী একাডেমিক ফলাফল থাকতে হবে। প্রার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি থাকতে হবে। সম্পূর্ণ একাডেমিক ইয়ার শেষ করার মানসিকতাসম্পন্ন হতে হবে।
বৃত্তির সংখ্যা
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের (শরৎকাল সেশন) জন্য সর্বোচ্চ ২০টি বৃত্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এবং ১০টি বৃত্তি নরওয়েজিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো
নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল বেশকিছু বিভাগে পাঠদান ও গবেষণা পরিচালিত হয়। এই বিভাগগুলো ব্যবসায় শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর। এগুলো হলো হিসাবরক্ষণ ও অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, যোগাযোগ ও সংস্কৃতি, ডেটা সায়েন্স ও অ্যানালিটিকস, অর্থনীতি, আইন ও শাসন, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক আচরণ, বিপণন এবং কৌশল ও উদ্যোগ।
আবেদন পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়
১ মার্চ, ২০২৬।

নরওয়েতে বিআই প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যাঁরা নরওয়েতে বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।
নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যবসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৪৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে নরওয়ের রাজধানী অসলোসহ কয়েকটি শহরে স্কুলটির ক্যাম্পাস রয়েছে। বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম, গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা এবং শিল্প-বাণিজ্য খাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার জন্য প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
সুযোগ-সুবিধা
যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বৃত্তির শর্ত পূরণ করবেন, তাঁদের প্রতিটি সেমিস্টারের সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত জীবনযাপনের খরচের জন্য ভাতা (স্টাইপেন্ড) দেওয়া হবে।
আবেদনের যোগ্যতা
বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে প্রার্থীদের সর্বনিম্ন ‘এ’ গ্রেড মানের পূর্ববর্তী একাডেমিক ফলাফল থাকতে হবে। প্রার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি থাকতে হবে। সম্পূর্ণ একাডেমিক ইয়ার শেষ করার মানসিকতাসম্পন্ন হতে হবে।
বৃত্তির সংখ্যা
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের (শরৎকাল সেশন) জন্য সর্বোচ্চ ২০টি বৃত্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এবং ১০টি বৃত্তি নরওয়েজিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো
নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল বেশকিছু বিভাগে পাঠদান ও গবেষণা পরিচালিত হয়। এই বিভাগগুলো ব্যবসায় শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর। এগুলো হলো হিসাবরক্ষণ ও অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, যোগাযোগ ও সংস্কৃতি, ডেটা সায়েন্স ও অ্যানালিটিকস, অর্থনীতি, আইন ও শাসন, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক আচরণ, বিপণন এবং কৌশল ও উদ্যোগ।
আবেদন পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়
১ মার্চ, ২০২৬।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি...
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
২০ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
২০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ইউল্যাবের আচার্যের প্রতিনিধি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং সভাপতিত্ব করেন। এবারের সমাবর্তনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ইনফর্মড মাইন্ডস, ইন্সপায়ার পাথস’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম।
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন তাশিন হক; যিনি ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ৩.৮৬ সিজিপিএ অর্জন করে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায় থেকে দুজন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
এ বছর ইউল্যাব থেকে মোট ১ হাজার ৫০৮ জন শিক্ষার্থী সনদ পান, যার মধ্যে ১ হাজার ১১১ জন স্নাতক এবং ৩৯৭ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ইউল্যাবের আচার্যের প্রতিনিধি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং সভাপতিত্ব করেন। এবারের সমাবর্তনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ইনফর্মড মাইন্ডস, ইন্সপায়ার পাথস’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম।
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন তাশিন হক; যিনি ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ৩.৮৬ সিজিপিএ অর্জন করে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায় থেকে দুজন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
এ বছর ইউল্যাব থেকে মোট ১ হাজার ৫০৮ জন শিক্ষার্থী সনদ পান, যার মধ্যে ১ হাজার ১১১ জন স্নাতক এবং ৩৯৭ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি...
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নরওয়েতে বিআই প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যাঁরা নরওয়েতে বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নরওয়েজিয়ান
১ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
২০ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
২০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপকেরা।
‘ক্লাসরুম সোশ্যাল কমপ্যাক্ট কমিটি’ নামে সাতজন অধ্যাপকের একটি দল হার্ভার্ডের শ্রেণিকক্ষ সংস্কৃতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানান। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হলেও বেশির ভাগ সময় নিজের মুঠোফোন বা অন্যান্য ডিভাইসে বেশি মনোযোগ দেন। ক্লাসে চলমান আলোচনায় অংশ নিতে অনীহা দেখান। আবার অনেক সময় ভিন্নমত প্রকাশের ভয়ে চুপ থাকেন। আবার অনেক সময় হোমওয়ার্ক বা পাঠ্যবই না পড়ায় আলোচনায় অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না।
৭ অধ্যাপকের এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীরা সহজে ভালো ফল পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান বা ‘গ্রেড ইনফ্লেশন’-এর প্রবণতা চলছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বলেই কিংবা কোনো অর্থবহ আলোচনায় অংশ না নিয়েই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করছেন। নিজেদের মতাদর্শগত বলয়ের মধ্যে আটকে থাকায় এই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জিং বা ভিন্নধর্মী ধারণার সঙ্গে জড়াতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম হয়ে পড়ছেন।
রক্ষণশীল সমালোচকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, হার্ভার্ড ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদারপন্থী পক্ষপাতকে (liberal bias) ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে দিয়েছে। ফলে কার্যত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এই উদ্বেগ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে পরিবর্তন আনার জন্য রিপাবলিকানদের উদ্যোগকে আরও জোরদার করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, গত জানুয়ারিতে হার্ভার্ড কমিটির প্রতিবেদনটি যেন পরোক্ষভাবে এই সমালোচনার কিছু সত্যতা স্বীকার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাসে উপস্থিত না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির সহপাঠীদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ হারাচ্ছে।
অধ্যাপকদের এই কমিটির বক্তব্যের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে বলে মনে করেন হার্ভার্ডের প্রি-মেড বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমোসেফে নোরুওয়া। তিনি বলেন, ‘রেকর্ডেড লেকচারের কারণে সশরীরে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়েছে। ক্লাসে না গিয়েও যদি ভালো গ্রেড পাওয়া যায় বলে তাঁরা ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
তিনি আরও জানান, একবার এমন একটি কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে আলোচনা হয়েছিল ‘আমরা কি এখনো গৃহযুদ্ধ লড়ছি?’ তা নিয়ে। সেই ক্লাসের আলোচনা ছিল ‘চিন্তাশীল ও শিক্ষণীয়’। তবে ক্লাসের বাইরে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
নোরুওয়া বলেন, ‘আমার প্রথম দুই বছর ছিল খুবই রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ।’ তিনি জানান, হার্ভার্ডে উদারপন্থী মতাদর্শের আধিপত্য আছে। তাঁর মতো যাঁদের চিন্তাভাবনায় উদার ও রক্ষণশীল, উভয় দৃষ্টিভঙ্গির মিশ্রণ রয়েছে, তাঁদের জন্য পরিবেশটি কখনো কখনো অস্বস্তিকর হতে পারে।
এ বছর পরিস্থিতি ‘কিছুটা শান্ত ও স্বস্তিদায়ক’ বলে যোগ করেন তিনি।
হার্ভার্ডের ‘ইকোনমিকস ১০: প্রিন্সিপলস অব ইকোনমিকস’ ক্লাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় কোর্সগুলোর একটি। এই টার্মে ৭৬১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। একটি ঐতিহাসিক কাঠের প্যানেলে ঘেরা থিয়েটারে তাঁদের ক্লাস হয়। অধ্যাপক মঞ্চে এক পাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটেন, যেন শেক্সপিয়ারের নাটকের অভিনেতা।
থিয়েটারে ঢুকলেই চোখে পড়ে অর্কেস্ট্রা আসনের সারি, যেগুলোর সামনে বড় অক্ষরে লেখা ‘DEVICE FREE SECTION’। অর্থাৎ মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই সারির বেশির ভাগ আসনই ফাঁকা থাকে।
অর্থনীতির অধ্যাপক ডেভিড লাইবসন হার্ভার্ডের ওই প্রতিবেদন তৈরির কমিটির সহসভাপতিও ছিলেন। তিনি বলেন, এসব সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। সেই ১৯৮০-র দশক থেকে। যখন তিনি নিজেও হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন থেকে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তাঁর ভাষায়, ‘দ্বিধা, দেরি করা এবং অতিরিক্ত সময়সূচি তৈরি করা’—তিনটি বিষয়ই হার্ভার্ডে এবং আমার ধারণা অনুযায়ী বেশির ভাগ স্কুলেই, শিক্ষাজীবনের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে।’
এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক লাইবসন বলেন, ‘যখন তুমি তোমার ফোনে মন দিচ্ছ, তখন তুমি আসলে আমার ভাবনাগুলো শুনছ না।’
কমিটির প্রতিবেদন হার্ভার্ডের শিক্ষা সংস্কৃতির কিছু কঠিন সত্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেন হার্ভার্ডের ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ডিন হোপি হোয়েকস্ট্রা।
এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড এবং এর অধ্যাপকেরা ফল সেশনে শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা এবং শিক্ষাগতভাবে সক্রিয় করতে কাজ করছেন। কিছু শিক্ষক এখন উপস্থিতি নেওয়া শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের ফোন বা ল্যাপটপের পরিবর্তে হাতে লিখে নোট নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মত প্রকাশ করতে ভয় পেলে তা কাটিয়ে উঠতে অধ্যাপকেরা এমন নিয়ম চালু করছেন, যেখানে অন্যদের বক্তব্য বাইরে শেয়ার করা যাবে না।
পাশাপাশি হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা হওয়ার দক্ষতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা নিচ্ছে। ২০২৪ সালে তাঁদের আবেদনপত্রে এ-সম্পর্কিত একটি নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে। এতে প্রার্থীদের ১৫০ শব্দে কারও সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সময়কার কথা তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৭ অধ্যাপকের এই ‘ক্লাসরুম কমপ্যাক্ট কমিটি’ কাজ শুরু করে। সে সময় গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র এবং কখনো কখনো সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কমিটির দায়িত্ব ছিল সংলাপ বাড়ানোর উপায় খোঁজা এবং ‘হার্ভার্ডে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য কী?’ এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বের করা।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লাইবসন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস এড়িয়ে গেলে তারা চ্যালেঞ্জিং বা বিতর্কিত ধারণাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে। এমনকি যখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত থাকে, অনেক সময় দেখা যায়, তারা পড়াশোনা না করেও এমন ভান করে যেন করেছে, ফলে শ্রেণিকক্ষের আলোচনা যথাযথ ফলপ্রসূ হয় না। এভাবে সবার সময় নষ্ট হয়, আর প্রায়ই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীই পুরো আলোচনাকে টেনে নিয়ে যায়।’
প্রতিবেদনে কমিটি উল্লেখ করেছে, শ্রেণিকক্ষ এমন জায়গা হওয়া উচিত, যেখানে মতবিনিময়ের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ২০২৪ সালের বসন্তে হার্ভার্ডের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সিনিয়র শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেন, যা আগের বছরের ৪৬ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়ে এ কাজ করেন। তাঁরা আশঙ্কা করেন, কথা বললে হয়তো বোকা শোনাবে। অনেকের ধারণা, ভালো গ্রেড পেতে হলে অধ্যাপকের মতামতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলাতে হবে। আর তাঁরা কৌতূহল বা শেখার আগ্রহে নয়, বরং মূলত কোথায় ভালো গ্রেড পাওয়া সহজ হবে, সেটা দেখে ক্লাস বেছে নিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে হার্ভার্ডের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বিভাগের ডিন অ্যামান্ডা ক্লেবাহ জানান, গ্রেড ইনফ্লেশন, যা কোভিড মহামারির আগেই গুরুতর সমস্যা ছিল, তা এখন আরও বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট গ্রেডের প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল ‘এ’। এখন সেই হার প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এর অর্ধেক বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে বা রিমোট ক্লাসের সময়কালে।
ড. ক্লেবাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। শিক্ষকেরা সেটা বুঝতে পারেন। তাই তাঁরা কোর্সগুলোকে কম চাপযুক্ত করার চেষ্টা করেন।’
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক অধ্যাপক আশঙ্কা করেন, যদি তাঁরা কঠোরভাবে নম্বর দেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেতিবাচক মূল্যায়ন পেতে পারেন। ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলাদা করে তুলতে বেশি ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন, অতিরিক্ত কোর্স নিচ্ছেন বা একটি বিষয়ের বদলে দুটি বিষয়ে কনসেন্ট্রেশন (বিশেষায়ন) করছেন।
অধ্যাপকেরা লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বহির্গামী কার্যকলাপে (extracurricular commitments) ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণকে তাদের সময়ের আরও পরিপূর্ণ, অর্থবহ ও উপকারী ব্যবহার বলে মনে করে।’
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি শিক্ষার্থীরাই আসল সমস্যা
সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি, দৃঢ়পন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষাগত ফল হ্রাস।
মহামারির সময়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অনুপস্থিতি তীব্রভাবে বেড়েছে। অধ্যাপকেরা উদ্বিগ্ন যে, শিক্ষার্থীরা পুরো বই পড়ার মতো ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না। জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ করা শিক্ষাগত অর্জনও দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
কানসাস ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষাবিষয়ক অধ্যাপক লিসা উলফ-ওয়েন্ডেল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা অর্থপূর্ণ হতে হবে। এটা এমন কিছু হতে হবে, যা তাঁরা কেবল তাঁদের ডর্মরুমে একাই করতে পারবে না।’
ক্লাসে লেকচার সব সময় আকর্ষণীয় না-ও হতে পারে, কিন্তু আগে শিক্ষার্থীদের যেতে হতো (বা সহপাঠীর নোট ধার করতে হতো)। এখন যেহেতু অনেক লেকচার অনলাইনে দেখা যায়, তাই অধ্যাপকেরা আরও কঠোর চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আকৃষ্ট করার জন্য, যোগ করেন ড. উলফ-ওয়েন্ডেল।
তাহলে ক্লাসে আসার পেছনে আর কি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে ওয়েন্ডেল বলেন, ‘এটি একটি পারস্পরিক সম্পর্ক।’
হার্ভার্ডে কিছু শিক্ষার্থী এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, সমস্যা মূলত তাঁদের।
তাঁরা বলেন, আইন বা ফাইন্যান্সের মতো ক্ষেত্রের ইন্টার্নশিপ এবং পরবর্তী চাকরির প্রতিযোগিতা তীব্র। তাই তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। বরং তাঁরা ক্লাবে উল্লেখযোগ্য সময় বিনিয়োগ করতে বাধ্য, যা তাঁদের আগ্রহ ও দক্ষতা প্রদর্শন করবে এবং সেসব হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করবে যাঁরা ‘এ’ গ্রেড পাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই তাঁদের সবকিছু সামলানোর শিল্পে পারদর্শী হতে হয়েছিল কারণ এটিই তাঁদের এখানে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
লং আইল্যান্ডের পাবলিক স্কুল উইলিয়াম ফ্লয়েড হাই স্কুলের ক্লাস ভ্যালাডিক্টোরিয়ান (সেরা একাডেমিক ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থী) জোশুয়া শুল্টজার হার্ভার্ডে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এক্সট্রা-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বড় হয়েছি। যখন আপনি এমন একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে প্রায় সবাই সহপাঠ্যক্রমিক কাজ করে। তাঁরা যে তা চালিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’
শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে হার্ভার্ডও আংশিকভাবে দোষী হতে পারে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একই সময়ে দুটি ক্লাস ‘এনরোল’ করতে পারে।
ড. লাইবসন শিক্ষার্থীদের বলেন, সরাসরি উপস্থিত থেকে শেখা ভিডিও দেখে শেখার চেয়ে ভালো। তবে তিনি একই সঙ্গে ডাবল-শিডিউলিং প্রথাকে সমর্থন করেন কারণ হার্ভার্ডের অনেক ক্লাসই একই সময়ে চলে।
‘যদি আমরা একই সময়ে ভর্তি নেওয়া অনুমোদন না দিতাম, তবে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ত’, যোগ করেন তিনি।
যে শিক্ষার্থীরা তাঁর লেকচারে আসে, তাঁদের জন্য ড. লাইবসন শ্রেণিকক্ষের আলোচনাকে আরও খোলামেলা করার চেষ্টা করেন। তিনি সিলেবাসে সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত করেন, অন্য শিক্ষার্থীর ভিন্নমত থাকতে পারে এবং ক্লাসে মন্তব্যগুলো বাইরে শেয়ার করার সময় বক্তাকে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা আছে বলে সতর্ক করেন।
শিক্ষার্থী জোশুয়া শুল্টজার বলেন, শিক্ষার্থীদের আরও মুক্তমনা হতে উৎসাহ দেওয়া একটি মহান লক্ষ্য হতে পারে, তবে হার্ভার্ডের পরিবেশ শুধু সমস্যার একটি অংশমাত্র। একইভাবে, বর্তমানের অত্যন্ত বিভক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশও সমস্যার একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই বিশ্বের বাস্তবতা।’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপকেরা।
‘ক্লাসরুম সোশ্যাল কমপ্যাক্ট কমিটি’ নামে সাতজন অধ্যাপকের একটি দল হার্ভার্ডের শ্রেণিকক্ষ সংস্কৃতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানান। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হলেও বেশির ভাগ সময় নিজের মুঠোফোন বা অন্যান্য ডিভাইসে বেশি মনোযোগ দেন। ক্লাসে চলমান আলোচনায় অংশ নিতে অনীহা দেখান। আবার অনেক সময় ভিন্নমত প্রকাশের ভয়ে চুপ থাকেন। আবার অনেক সময় হোমওয়ার্ক বা পাঠ্যবই না পড়ায় আলোচনায় অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না।
৭ অধ্যাপকের এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীরা সহজে ভালো ফল পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান বা ‘গ্রেড ইনফ্লেশন’-এর প্রবণতা চলছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বলেই কিংবা কোনো অর্থবহ আলোচনায় অংশ না নিয়েই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করছেন। নিজেদের মতাদর্শগত বলয়ের মধ্যে আটকে থাকায় এই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জিং বা ভিন্নধর্মী ধারণার সঙ্গে জড়াতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম হয়ে পড়ছেন।
রক্ষণশীল সমালোচকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, হার্ভার্ড ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদারপন্থী পক্ষপাতকে (liberal bias) ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে দিয়েছে। ফলে কার্যত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এই উদ্বেগ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে পরিবর্তন আনার জন্য রিপাবলিকানদের উদ্যোগকে আরও জোরদার করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, গত জানুয়ারিতে হার্ভার্ড কমিটির প্রতিবেদনটি যেন পরোক্ষভাবে এই সমালোচনার কিছু সত্যতা স্বীকার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাসে উপস্থিত না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির সহপাঠীদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ হারাচ্ছে।
অধ্যাপকদের এই কমিটির বক্তব্যের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে বলে মনে করেন হার্ভার্ডের প্রি-মেড বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমোসেফে নোরুওয়া। তিনি বলেন, ‘রেকর্ডেড লেকচারের কারণে সশরীরে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়েছে। ক্লাসে না গিয়েও যদি ভালো গ্রেড পাওয়া যায় বলে তাঁরা ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
তিনি আরও জানান, একবার এমন একটি কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে আলোচনা হয়েছিল ‘আমরা কি এখনো গৃহযুদ্ধ লড়ছি?’ তা নিয়ে। সেই ক্লাসের আলোচনা ছিল ‘চিন্তাশীল ও শিক্ষণীয়’। তবে ক্লাসের বাইরে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
নোরুওয়া বলেন, ‘আমার প্রথম দুই বছর ছিল খুবই রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ।’ তিনি জানান, হার্ভার্ডে উদারপন্থী মতাদর্শের আধিপত্য আছে। তাঁর মতো যাঁদের চিন্তাভাবনায় উদার ও রক্ষণশীল, উভয় দৃষ্টিভঙ্গির মিশ্রণ রয়েছে, তাঁদের জন্য পরিবেশটি কখনো কখনো অস্বস্তিকর হতে পারে।
এ বছর পরিস্থিতি ‘কিছুটা শান্ত ও স্বস্তিদায়ক’ বলে যোগ করেন তিনি।
হার্ভার্ডের ‘ইকোনমিকস ১০: প্রিন্সিপলস অব ইকোনমিকস’ ক্লাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় কোর্সগুলোর একটি। এই টার্মে ৭৬১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। একটি ঐতিহাসিক কাঠের প্যানেলে ঘেরা থিয়েটারে তাঁদের ক্লাস হয়। অধ্যাপক মঞ্চে এক পাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটেন, যেন শেক্সপিয়ারের নাটকের অভিনেতা।
থিয়েটারে ঢুকলেই চোখে পড়ে অর্কেস্ট্রা আসনের সারি, যেগুলোর সামনে বড় অক্ষরে লেখা ‘DEVICE FREE SECTION’। অর্থাৎ মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই সারির বেশির ভাগ আসনই ফাঁকা থাকে।
অর্থনীতির অধ্যাপক ডেভিড লাইবসন হার্ভার্ডের ওই প্রতিবেদন তৈরির কমিটির সহসভাপতিও ছিলেন। তিনি বলেন, এসব সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। সেই ১৯৮০-র দশক থেকে। যখন তিনি নিজেও হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন থেকে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তাঁর ভাষায়, ‘দ্বিধা, দেরি করা এবং অতিরিক্ত সময়সূচি তৈরি করা’—তিনটি বিষয়ই হার্ভার্ডে এবং আমার ধারণা অনুযায়ী বেশির ভাগ স্কুলেই, শিক্ষাজীবনের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে।’
এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক লাইবসন বলেন, ‘যখন তুমি তোমার ফোনে মন দিচ্ছ, তখন তুমি আসলে আমার ভাবনাগুলো শুনছ না।’
কমিটির প্রতিবেদন হার্ভার্ডের শিক্ষা সংস্কৃতির কিছু কঠিন সত্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেন হার্ভার্ডের ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ডিন হোপি হোয়েকস্ট্রা।
এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড এবং এর অধ্যাপকেরা ফল সেশনে শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা এবং শিক্ষাগতভাবে সক্রিয় করতে কাজ করছেন। কিছু শিক্ষক এখন উপস্থিতি নেওয়া শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের ফোন বা ল্যাপটপের পরিবর্তে হাতে লিখে নোট নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মত প্রকাশ করতে ভয় পেলে তা কাটিয়ে উঠতে অধ্যাপকেরা এমন নিয়ম চালু করছেন, যেখানে অন্যদের বক্তব্য বাইরে শেয়ার করা যাবে না।
পাশাপাশি হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা হওয়ার দক্ষতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা নিচ্ছে। ২০২৪ সালে তাঁদের আবেদনপত্রে এ-সম্পর্কিত একটি নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে। এতে প্রার্থীদের ১৫০ শব্দে কারও সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সময়কার কথা তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৭ অধ্যাপকের এই ‘ক্লাসরুম কমপ্যাক্ট কমিটি’ কাজ শুরু করে। সে সময় গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র এবং কখনো কখনো সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কমিটির দায়িত্ব ছিল সংলাপ বাড়ানোর উপায় খোঁজা এবং ‘হার্ভার্ডে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য কী?’ এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বের করা।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লাইবসন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস এড়িয়ে গেলে তারা চ্যালেঞ্জিং বা বিতর্কিত ধারণাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে। এমনকি যখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত থাকে, অনেক সময় দেখা যায়, তারা পড়াশোনা না করেও এমন ভান করে যেন করেছে, ফলে শ্রেণিকক্ষের আলোচনা যথাযথ ফলপ্রসূ হয় না। এভাবে সবার সময় নষ্ট হয়, আর প্রায়ই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীই পুরো আলোচনাকে টেনে নিয়ে যায়।’
প্রতিবেদনে কমিটি উল্লেখ করেছে, শ্রেণিকক্ষ এমন জায়গা হওয়া উচিত, যেখানে মতবিনিময়ের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ২০২৪ সালের বসন্তে হার্ভার্ডের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সিনিয়র শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেন, যা আগের বছরের ৪৬ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়ে এ কাজ করেন। তাঁরা আশঙ্কা করেন, কথা বললে হয়তো বোকা শোনাবে। অনেকের ধারণা, ভালো গ্রেড পেতে হলে অধ্যাপকের মতামতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলাতে হবে। আর তাঁরা কৌতূহল বা শেখার আগ্রহে নয়, বরং মূলত কোথায় ভালো গ্রেড পাওয়া সহজ হবে, সেটা দেখে ক্লাস বেছে নিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে হার্ভার্ডের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বিভাগের ডিন অ্যামান্ডা ক্লেবাহ জানান, গ্রেড ইনফ্লেশন, যা কোভিড মহামারির আগেই গুরুতর সমস্যা ছিল, তা এখন আরও বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট গ্রেডের প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল ‘এ’। এখন সেই হার প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এর অর্ধেক বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে বা রিমোট ক্লাসের সময়কালে।
ড. ক্লেবাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। শিক্ষকেরা সেটা বুঝতে পারেন। তাই তাঁরা কোর্সগুলোকে কম চাপযুক্ত করার চেষ্টা করেন।’
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক অধ্যাপক আশঙ্কা করেন, যদি তাঁরা কঠোরভাবে নম্বর দেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেতিবাচক মূল্যায়ন পেতে পারেন। ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলাদা করে তুলতে বেশি ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন, অতিরিক্ত কোর্স নিচ্ছেন বা একটি বিষয়ের বদলে দুটি বিষয়ে কনসেন্ট্রেশন (বিশেষায়ন) করছেন।
অধ্যাপকেরা লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বহির্গামী কার্যকলাপে (extracurricular commitments) ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণকে তাদের সময়ের আরও পরিপূর্ণ, অর্থবহ ও উপকারী ব্যবহার বলে মনে করে।’
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি শিক্ষার্থীরাই আসল সমস্যা
সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি, দৃঢ়পন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষাগত ফল হ্রাস।
মহামারির সময়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অনুপস্থিতি তীব্রভাবে বেড়েছে। অধ্যাপকেরা উদ্বিগ্ন যে, শিক্ষার্থীরা পুরো বই পড়ার মতো ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না। জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ করা শিক্ষাগত অর্জনও দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
কানসাস ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষাবিষয়ক অধ্যাপক লিসা উলফ-ওয়েন্ডেল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা অর্থপূর্ণ হতে হবে। এটা এমন কিছু হতে হবে, যা তাঁরা কেবল তাঁদের ডর্মরুমে একাই করতে পারবে না।’
ক্লাসে লেকচার সব সময় আকর্ষণীয় না-ও হতে পারে, কিন্তু আগে শিক্ষার্থীদের যেতে হতো (বা সহপাঠীর নোট ধার করতে হতো)। এখন যেহেতু অনেক লেকচার অনলাইনে দেখা যায়, তাই অধ্যাপকেরা আরও কঠোর চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আকৃষ্ট করার জন্য, যোগ করেন ড. উলফ-ওয়েন্ডেল।
তাহলে ক্লাসে আসার পেছনে আর কি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে ওয়েন্ডেল বলেন, ‘এটি একটি পারস্পরিক সম্পর্ক।’
হার্ভার্ডে কিছু শিক্ষার্থী এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, সমস্যা মূলত তাঁদের।
তাঁরা বলেন, আইন বা ফাইন্যান্সের মতো ক্ষেত্রের ইন্টার্নশিপ এবং পরবর্তী চাকরির প্রতিযোগিতা তীব্র। তাই তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। বরং তাঁরা ক্লাবে উল্লেখযোগ্য সময় বিনিয়োগ করতে বাধ্য, যা তাঁদের আগ্রহ ও দক্ষতা প্রদর্শন করবে এবং সেসব হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করবে যাঁরা ‘এ’ গ্রেড পাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই তাঁদের সবকিছু সামলানোর শিল্পে পারদর্শী হতে হয়েছিল কারণ এটিই তাঁদের এখানে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
লং আইল্যান্ডের পাবলিক স্কুল উইলিয়াম ফ্লয়েড হাই স্কুলের ক্লাস ভ্যালাডিক্টোরিয়ান (সেরা একাডেমিক ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থী) জোশুয়া শুল্টজার হার্ভার্ডে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এক্সট্রা-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বড় হয়েছি। যখন আপনি এমন একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে প্রায় সবাই সহপাঠ্যক্রমিক কাজ করে। তাঁরা যে তা চালিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’
শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে হার্ভার্ডও আংশিকভাবে দোষী হতে পারে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একই সময়ে দুটি ক্লাস ‘এনরোল’ করতে পারে।
ড. লাইবসন শিক্ষার্থীদের বলেন, সরাসরি উপস্থিত থেকে শেখা ভিডিও দেখে শেখার চেয়ে ভালো। তবে তিনি একই সঙ্গে ডাবল-শিডিউলিং প্রথাকে সমর্থন করেন কারণ হার্ভার্ডের অনেক ক্লাসই একই সময়ে চলে।
‘যদি আমরা একই সময়ে ভর্তি নেওয়া অনুমোদন না দিতাম, তবে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ত’, যোগ করেন তিনি।
যে শিক্ষার্থীরা তাঁর লেকচারে আসে, তাঁদের জন্য ড. লাইবসন শ্রেণিকক্ষের আলোচনাকে আরও খোলামেলা করার চেষ্টা করেন। তিনি সিলেবাসে সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত করেন, অন্য শিক্ষার্থীর ভিন্নমত থাকতে পারে এবং ক্লাসে মন্তব্যগুলো বাইরে শেয়ার করার সময় বক্তাকে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা আছে বলে সতর্ক করেন।
শিক্ষার্থী জোশুয়া শুল্টজার বলেন, শিক্ষার্থীদের আরও মুক্তমনা হতে উৎসাহ দেওয়া একটি মহান লক্ষ্য হতে পারে, তবে হার্ভার্ডের পরিবেশ শুধু সমস্যার একটি অংশমাত্র। একইভাবে, বর্তমানের অত্যন্ত বিভক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশও সমস্যার একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই বিশ্বের বাস্তবতা।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি...
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নরওয়েতে বিআই প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যাঁরা নরওয়েতে বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নরওয়েজিয়ান
১ ঘণ্টা আগে
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
২০ ঘণ্টা আগেতাকি বিন মহসিন

‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন দুই সপ্তাহব্যাপী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ভিত্তিক স্টুডেন্ট আউটবাউন্ড প্রোগ্রামে। এই আয়োজন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত একাডেমিক সমঝোতা স্মারকের ধারাবাহিক অংশ।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস ট্যুর, অফিশিয়াল ফটোসেশন এবং এসইউবি ও ইন্তির প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতীকী পতাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠান।
স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন মো. ইয়াহিয়া আরমান, আলামিন হোসেন, ফারদিন আলম, দিয়া তারান্নুম, কামরুন নাহার পিয়া, ফাহমিদা খানম উম্মি, মাশরিহা ওয়াহিদ, সানজিদা মৌ, অর্চি, তামিম ও তাকি বিন মহসিন।
আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও অভিজ্ঞতা
এই প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চীনের জিয়ামেন নানইয়াং কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। একসঙ্গে শেখা, কাজ করা এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে তাঁরা গড়ে তুলছেন এক বৈশ্বিক বন্ধুত্বের বন্ধন।
দুই সপ্তাহব্যাপী এই সফরে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন বিজনেস, রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আই) এবং অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ের সার্টিফিকেট কোর্সে। পাশাপাশি তাঁরা মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন ঘুরে দেখবেন, যা তাঁদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার ফারহানা শারমিন এবং আউটরিচ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তাঁরা পুরো প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধান এবং শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্তি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাপতি ও কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এ প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য এটি হবে এক বাস্তবভিত্তিক অনুপ্রেরণা, যা তাঁদের ভাবনায় ও জীবনে নতুন আলো ছড়াবে।

‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন দুই সপ্তাহব্যাপী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ভিত্তিক স্টুডেন্ট আউটবাউন্ড প্রোগ্রামে। এই আয়োজন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত একাডেমিক সমঝোতা স্মারকের ধারাবাহিক অংশ।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস ট্যুর, অফিশিয়াল ফটোসেশন এবং এসইউবি ও ইন্তির প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতীকী পতাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠান।
স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন মো. ইয়াহিয়া আরমান, আলামিন হোসেন, ফারদিন আলম, দিয়া তারান্নুম, কামরুন নাহার পিয়া, ফাহমিদা খানম উম্মি, মাশরিহা ওয়াহিদ, সানজিদা মৌ, অর্চি, তামিম ও তাকি বিন মহসিন।
আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও অভিজ্ঞতা
এই প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চীনের জিয়ামেন নানইয়াং কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। একসঙ্গে শেখা, কাজ করা এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে তাঁরা গড়ে তুলছেন এক বৈশ্বিক বন্ধুত্বের বন্ধন।
দুই সপ্তাহব্যাপী এই সফরে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন বিজনেস, রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আই) এবং অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ের সার্টিফিকেট কোর্সে। পাশাপাশি তাঁরা মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন ঘুরে দেখবেন, যা তাঁদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার ফারহানা শারমিন এবং আউটরিচ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তাঁরা পুরো প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধান এবং শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্তি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাপতি ও কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এ প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য এটি হবে এক বাস্তবভিত্তিক অনুপ্রেরণা, যা তাঁদের ভাবনায় ও জীবনে নতুন আলো ছড়াবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৫তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি...
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নরওয়েতে বিআই প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যাঁরা নরওয়েতে বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নরওয়েজিয়ান
১ ঘণ্টা আগে
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
২০ ঘণ্টা আগে