Ajker Patrika

বাকৃবিতে কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি মেলা, আধুনিক যন্ত্রের প্রদর্শনী

মো. রিয়াজ হোসাইন
রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন। ছবি: সংগৃহীত
রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন। ছবি: সংগৃহীত

‘এই দৈত্যাকার মেশিনের নাম কী? এটি দিয়ে কী কাজ করা হয়? আমরা কি এটি ক্রয় করতে পারব?’—বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে অনুষ্ঠিত কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি মেলায় এভাবেই বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করছিলেন এক প্রান্তিক কৃষক। তাঁর চোখে ছিল আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবল আগ্রহ।

কৃষিপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও জীবাশ্ম সম্পদের সঠিক ব্যবহারের লক্ষ্যে আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অংশ হিসেবে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

দুই দিনব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া এবং বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আওয়াল, সদস্যসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার করিম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ এবং এসিআই মোটরস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস।

মেলায় দেশের স্বনামধন্য আটটি কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবিত ও আমদানি করা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী করে। কৃষকদের সচেতন করতে ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা দেন তাঁরা। প্রদর্শিত যন্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন, ধান মাড়াইয়ের কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ট্রাক্টর, আলু গ্রেডিং মেশিন, রাইস উইডার, সূর্যমুখী ও ভুট্টা মাড়াই মেশিন, রিপারসহ দেড় শতাধিক আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি।

মেলায় অংশ নেওয়া ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসাইন বলেন, ‘এই আয়োজন অত্যন্ত শিক্ষামূলক। এখানে অনেক আধুনিক যন্ত্রের নাম এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছি। তবে এসব যন্ত্রের দাম কৃষকদের ক্রয়সীমার বাইরে। কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হলে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে হবে।’

মাড়াই যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
মাড়াই যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, ‘কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়াতে হবে। সরকার প্রযুক্তিগুলো কৃষকের কাছে সহজলভ্য করার জন্য নিরলস কাজ করছে। স্যাটেলাইট-নির্ভর আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাঠপর্যায়ে কৃষি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে উপযুক্ত কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা নির্ধারণ করা হবে।’

বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘কৃষির সব পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ এখন আবশ্যক। তবে আন্তর্জাতিকভাবে বিদ্যমান যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্র নকশা করতে হবে। কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে যন্ত্র তৈরি করতে হবে, যাতে কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন।

এই মেলা শুধু যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী নয়, বরং কৃষিপ্রযুক্তির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার এক উন্মোচন। এ ধরনের উদ্যোগ যদি আরও বিস্তৃত হয় এবং কৃষকদের জন্য প্রযুক্তি সহজলভ্য করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব ঘটতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত