ইলিয়াস শান্ত, ঢাকা
রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি।
ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে সম্প্রতি কমিটি সংশ্লিষ্টদের কাছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করেছে। এবার সে নাম চূড়ান্ত করতে সাত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের টিম লিডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে ইউজিসি।
শিগগির প্রস্তাবিত এ নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা করা হবে। এরপর ‘প্রস্তাবিত’ নাম উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির আদেশে কার্যকর হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক্করণ এবং কলেজগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার (১৬ মার্চ) একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সকাল ১০টায় কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কনফারেন্স রুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের ‘প্রস্তাবিত’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত সভাগুলোতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত টিম লিডারদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির সদস্য, সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও ছাত্র প্রতিনিধি টিম লিডারদের উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কাছে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করে ইউজিসি। নাম প্রস্তাবের বিষয়ে ইউজিসি একটি অফিস নোট অনুমোদন করেছে। আগ্রহী ব্যক্তিরা ইউজিসির এই [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় নামের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের পক্ষ থেকে শতাধিক নামের প্রস্তাবনা পেয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু নামের বিষয়ে তারা বেশি মেইল পেয়েছে। সব মিলিয়ে যেসব নামের পক্ষে বেশি জনমত ছিল, এমন পাঁচটি নাম নিয়ে একটি শর্ট লিস্ট তৈরি করা হয়েছে। এরপর শর্ট লিস্ট থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে একটি নাম বাছাই করা হবে। নাম বাছাইয়ের পর ইউজিসি চূড়ান্ত নামটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। সেটা আগামীকাল রোববারও দেওয়া হতে পারে। আর ঈদের আগেই দেওয়া হবে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাঠামো। বাকি মডেল ও আইনসহ বাকি প্রক্রিয়া ঈদের পর চূড়ান্ত হবে।
ইউজিসির চাহিদা অনুযায়ী নিজের পছন্দের নাম প্রস্তাব করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসাইন। তিনি আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের নাম শুধু একটি পরিচিতির মাধ্যম নয়; এটি মর্যাদার প্রতীক। একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নাম শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আমার পছন্দের নাম ইউজিসিতে পাঠিয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান থাকবে, তারা এমন একটি নাম নির্বাচন করবে, যেটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিতর্ক বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না।’
সরকারি তিতুমীর কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ আহমেদ সালমান বলেন, ‘সাত কলেজের মুক্তির আন্দোলনে আমি শুরু থেকে সক্রিয় ছিলাম। আমরা এখন চূড়ান্ত মুক্তির দারপ্রান্তে রয়েছি। ইউজিসি আমাদের কাছ থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করেছে। আমি ইউজিসির ঠিকানায় একটি নাম প্রস্তাব করেছি। সেটি হলো “ঢাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি”। নাম যা-ই হোক, ইউজিসির কাছ থেকে আমরা একটি কোয়ালিটিফুল বিশ্ববিদ্যালয় কামনা করি। যেটি হবে আমাদের স্বপ্নে বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে যেতে পারবো।’
ইউজিসির অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তির বাইরেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে আগামীকাল রোববারের সভার বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে ছাত্র প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ঢাকা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি মো. আব্দুর রহমান জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার সকালে ইউজিসির পক্ষ থেকে আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত সভায় অংশগ্রহণের বিষয়ে ফোনকল পেয়েছেন। সেই কলে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি কলেজের টিম লিডারদের রোববার সকাল ১০টায় ইউজিসিতে উপস্থিত থাকতে হবে।
নাম চূড়ান্তের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইউজিসি শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো নাম চাপিয়ে দেবে না। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা যেসব নাম প্রস্তাব করেছেন, সেখান থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত করা হবে। এ কাজে ইউজিসি সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। রোববার যে সভা আহ্বান করা হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সেই নাম অফিশিয়ালি ঘোষণা করা হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে আমরা একটি নাম প্রস্তাব করব। এরপর একটি মডেল দেব। এ মডেলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তৈরি হবে। এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই এ আইন উপদেষ্টা পরিষদে পাস হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি আইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত নামের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। এ পুরো কার্যক্রম আমাদের যে ৪ মাস সময় দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে শেষ করা হবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদে পাস হওয়ার আগপর্যন্ত প্রস্তাবিত নাম আইনসিদ্ধ হবে না। আমরা আশা করছি, এ সময়ের মধ্যে সাত কলেজের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসনও চূড়ান্ত করতে পারব। একই সঙ্গে আইন প্রস্তুত হলে পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পাবে সাত কলেজ।’
এদিকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের চেয়ে মানে বেশি জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘ইউজিসি হয়তো এখন একটি বাস্তবতা বিবেচনায় সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। কিন্তু এটার ফলাফল কেমন হবে, তা পরে দেখা যাবে। তবে এখন যেহেতু সময় নিয়ে ও স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে, তাই আশা করছি, শিক্ষার্থীদের জন্য একটা কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে। সব শিক্ষার্থী আমাদের সন্তান। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।’
অধ্যাপক জিন্নাহ বলেন, ‘নামের বিষয়টি যেটি বলেছেন, ইউজিসি হয়তো এটা বোঝাতে চেয়েছে যে তারা শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে। অবশ্যই এটা ভালো পদক্ষেপ হয়েছে। তবে আমি বলব, নাম যেটা হোক, এসব কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যতে যাঁরা এখানে পড়তে আসবেন, তাঁদের পাঠদান যেন সত্যিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের হয়, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে আমরা যেমন সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে শুনেছি, এমন কোনো কিছু যেন আর না ফেরে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে তাঁরা যেন নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তাঁদের জন্য গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এখানে কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে ভালো হবে।’
অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাজ কত দূর
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থা সংক্রান্ত’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। এরপর গত ২ মার্চ ইউজিসির এ সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক। এ বিষয়ে ঢাবি প্রশাসন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। বৈধ প্রক্রিয়ায় এ সহায়তা এগিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে। এ সময় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অনুমোদন আগামী সপ্তাহের মধ্যে দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
কেমন হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল
ইউজিসির নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি ইতিমধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে গঠিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মডেল চূড়ান্ত করেছে। মডেল চূড়ান্তের সঙ্গে কাজ করছেন, এমন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের (এনইউএস) মডেলগুলো কাস্টমাইজ করে বাংলাদেশ মডেলটি এখানে প্রয়োগ করব। এটা আমরা দেখেছি। এ মডেলের নীতিবাক্য ঠিক করেছি—Learning through interdisciplinary knowledge and teaching বা আন্তবিষয়ক জ্ঞান ও পাঠদানের মাধ্যমে শিখন।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মডেলটি প্রয়োগের জন্য আমরা সাতটি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেছি। বাস্তবতা হলো, ক্যাম্পাসগুলোর একটিও ইউনিভার্সিটি এডুকেশনের জন্য মানানসই নয়। এ জন্য আমরা একটি হাইব্রিড মডেল ঠিক করেছি। যেটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে উপযুক্ত হবে বলে মনে হয়েছে। নতুন কাঠামোর অধীনে একটি শক্তিশালী আইটি প্ল্যাটফর্ম থাকবে। হাইব্রিড মডেলে অনলাইন-অফলাইন পাঠদান কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম এই প্ল্যাটফর্ম সমন্বয় করবে।
আরও খবর পড়ুন:
রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি।
ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে সম্প্রতি কমিটি সংশ্লিষ্টদের কাছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করেছে। এবার সে নাম চূড়ান্ত করতে সাত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের টিম লিডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে ইউজিসি।
শিগগির প্রস্তাবিত এ নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা করা হবে। এরপর ‘প্রস্তাবিত’ নাম উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির আদেশে কার্যকর হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক্করণ এবং কলেজগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার (১৬ মার্চ) একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সকাল ১০টায় কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কনফারেন্স রুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের ‘প্রস্তাবিত’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত সভাগুলোতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত টিম লিডারদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির সদস্য, সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও ছাত্র প্রতিনিধি টিম লিডারদের উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কাছে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করে ইউজিসি। নাম প্রস্তাবের বিষয়ে ইউজিসি একটি অফিস নোট অনুমোদন করেছে। আগ্রহী ব্যক্তিরা ইউজিসির এই [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় নামের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের পক্ষ থেকে শতাধিক নামের প্রস্তাবনা পেয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু নামের বিষয়ে তারা বেশি মেইল পেয়েছে। সব মিলিয়ে যেসব নামের পক্ষে বেশি জনমত ছিল, এমন পাঁচটি নাম নিয়ে একটি শর্ট লিস্ট তৈরি করা হয়েছে। এরপর শর্ট লিস্ট থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে একটি নাম বাছাই করা হবে। নাম বাছাইয়ের পর ইউজিসি চূড়ান্ত নামটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। সেটা আগামীকাল রোববারও দেওয়া হতে পারে। আর ঈদের আগেই দেওয়া হবে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাঠামো। বাকি মডেল ও আইনসহ বাকি প্রক্রিয়া ঈদের পর চূড়ান্ত হবে।
ইউজিসির চাহিদা অনুযায়ী নিজের পছন্দের নাম প্রস্তাব করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসাইন। তিনি আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের নাম শুধু একটি পরিচিতির মাধ্যম নয়; এটি মর্যাদার প্রতীক। একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নাম শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আমার পছন্দের নাম ইউজিসিতে পাঠিয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান থাকবে, তারা এমন একটি নাম নির্বাচন করবে, যেটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিতর্ক বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না।’
সরকারি তিতুমীর কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ আহমেদ সালমান বলেন, ‘সাত কলেজের মুক্তির আন্দোলনে আমি শুরু থেকে সক্রিয় ছিলাম। আমরা এখন চূড়ান্ত মুক্তির দারপ্রান্তে রয়েছি। ইউজিসি আমাদের কাছ থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করেছে। আমি ইউজিসির ঠিকানায় একটি নাম প্রস্তাব করেছি। সেটি হলো “ঢাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি”। নাম যা-ই হোক, ইউজিসির কাছ থেকে আমরা একটি কোয়ালিটিফুল বিশ্ববিদ্যালয় কামনা করি। যেটি হবে আমাদের স্বপ্নে বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে যেতে পারবো।’
ইউজিসির অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তির বাইরেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে আগামীকাল রোববারের সভার বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে ছাত্র প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ঢাকা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি মো. আব্দুর রহমান জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার সকালে ইউজিসির পক্ষ থেকে আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত সভায় অংশগ্রহণের বিষয়ে ফোনকল পেয়েছেন। সেই কলে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি কলেজের টিম লিডারদের রোববার সকাল ১০টায় ইউজিসিতে উপস্থিত থাকতে হবে।
নাম চূড়ান্তের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইউজিসি শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো নাম চাপিয়ে দেবে না। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা যেসব নাম প্রস্তাব করেছেন, সেখান থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত করা হবে। এ কাজে ইউজিসি সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। রোববার যে সভা আহ্বান করা হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সেই নাম অফিশিয়ালি ঘোষণা করা হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে আমরা একটি নাম প্রস্তাব করব। এরপর একটি মডেল দেব। এ মডেলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তৈরি হবে। এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই এ আইন উপদেষ্টা পরিষদে পাস হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি আইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত নামের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। এ পুরো কার্যক্রম আমাদের যে ৪ মাস সময় দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে শেষ করা হবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদে পাস হওয়ার আগপর্যন্ত প্রস্তাবিত নাম আইনসিদ্ধ হবে না। আমরা আশা করছি, এ সময়ের মধ্যে সাত কলেজের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসনও চূড়ান্ত করতে পারব। একই সঙ্গে আইন প্রস্তুত হলে পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পাবে সাত কলেজ।’
এদিকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের চেয়ে মানে বেশি জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘ইউজিসি হয়তো এখন একটি বাস্তবতা বিবেচনায় সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। কিন্তু এটার ফলাফল কেমন হবে, তা পরে দেখা যাবে। তবে এখন যেহেতু সময় নিয়ে ও স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে, তাই আশা করছি, শিক্ষার্থীদের জন্য একটা কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে। সব শিক্ষার্থী আমাদের সন্তান। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।’
অধ্যাপক জিন্নাহ বলেন, ‘নামের বিষয়টি যেটি বলেছেন, ইউজিসি হয়তো এটা বোঝাতে চেয়েছে যে তারা শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে। অবশ্যই এটা ভালো পদক্ষেপ হয়েছে। তবে আমি বলব, নাম যেটা হোক, এসব কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যতে যাঁরা এখানে পড়তে আসবেন, তাঁদের পাঠদান যেন সত্যিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের হয়, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে আমরা যেমন সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে শুনেছি, এমন কোনো কিছু যেন আর না ফেরে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে তাঁরা যেন নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তাঁদের জন্য গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এখানে কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে ভালো হবে।’
অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাজ কত দূর
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থা সংক্রান্ত’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। এরপর গত ২ মার্চ ইউজিসির এ সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক। এ বিষয়ে ঢাবি প্রশাসন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। বৈধ প্রক্রিয়ায় এ সহায়তা এগিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে। এ সময় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অনুমোদন আগামী সপ্তাহের মধ্যে দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
কেমন হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল
ইউজিসির নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি ইতিমধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে গঠিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মডেল চূড়ান্ত করেছে। মডেল চূড়ান্তের সঙ্গে কাজ করছেন, এমন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের (এনইউএস) মডেলগুলো কাস্টমাইজ করে বাংলাদেশ মডেলটি এখানে প্রয়োগ করব। এটা আমরা দেখেছি। এ মডেলের নীতিবাক্য ঠিক করেছি—Learning through interdisciplinary knowledge and teaching বা আন্তবিষয়ক জ্ঞান ও পাঠদানের মাধ্যমে শিখন।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মডেলটি প্রয়োগের জন্য আমরা সাতটি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেছি। বাস্তবতা হলো, ক্যাম্পাসগুলোর একটিও ইউনিভার্সিটি এডুকেশনের জন্য মানানসই নয়। এ জন্য আমরা একটি হাইব্রিড মডেল ঠিক করেছি। যেটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে উপযুক্ত হবে বলে মনে হয়েছে। নতুন কাঠামোর অধীনে একটি শক্তিশালী আইটি প্ল্যাটফর্ম থাকবে। হাইব্রিড মডেলে অনলাইন-অফলাইন পাঠদান কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম এই প্ল্যাটফর্ম সমন্বয় করবে।
আরও খবর পড়ুন:
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্বগ্রহণ করেছি জাতির একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে নিয়ে। সেটা শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা, ব্যবসায়–বাণিজ্য, আন্তরিকতা বা ন্যায়নিষ্ঠতা–যাইহোক না কেন।
৬ ঘণ্টা আগে২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার নতুন প্রবেশপত্র ডাউনলোড শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারছেন।
৬ ঘণ্টা আগেইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার (আইআইইউএম) স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরী। তিনি দেশটিতে বাংলাদেশিদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ, স্কলারশিপ এবং ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ নিয়ে কথা বলেছেন...
১১ ঘণ্টা আগেফ্রান্সে প্যারিস-স্যাকলে বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি ২০২৫-২৬-এর আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এ বৃত্তির আওতায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
১১ ঘণ্টা আগে