Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

অনলাইনে যাচাই করা যায়, এমন সনদের গুরুত্ব বেশি

ড. মশিউর রহমান

বিশ্বখ্যাত ওমরন হেলথকেয়ারের ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ড. মশিউর রহমান। স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ নিয়ে তাঁর প্রধান কাজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ

প্রশ্ন: ওমরন হেলথকেয়ার কী নিয়ে কাজ করে এবং আপনার কাজের ক্ষেত্রগুলো কী কী?

মশিউর: ওমরন হেলথকেয়ার হলো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান অফিস জাপানে। এটি মূলত ডিজিটাল হেলথকেয়ার ও মেডিকেল ডিভাইস নিয়ে কাজ করে। আমি ওমরন হেলথকেয়ারের এশিয়ার হেড অফিস সিঙ্গাপুরে ডিজিটাল হেলথ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), IoT, ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডেটা অ্যানালিটিকস ও রিমোট পেশেন্ট মনিটরিং সম্পর্কিত ডিজিটাল হেলথ সল্যুশন তৈরি ও উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছি।

প্রশ্ন: স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে কোন কোন জায়গায় জাপান আমাদের চেয়ে এগিয়ে?

মশিউর: আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বাড়ছে। স্বাস্থ্য খাতে এর প্রয়োগ বহুলাংশে বেড়েছে। দেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের তুলনা করলে বলব, দেশের স্বাস্থ্য খাতে তথ্যের পরিমাণ ও গুণগত মান সবচেয়ে বড় বাধা। অন্য দেশে স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু যে তথ্য বেশি থাকে তা নয়, সেসব তথ্য অনেকাংশে সঠিক। কিন্তু আমাদের হাতে খুব বেশি তথ্য নেই। আবার যে তথ্য রয়েছে, তার একটি বড় অংশ ভুলে ভরা। আমরা যাকে জাঙ্ক তথ্য বলি, যা কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না।

প্রশ্ন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে শিক্ষার্থীদের টিকে থাকতে হলে কী কী শেখা উচিত?

মশিউর: শিক্ষার্থীদের কার্যকর কিছু শেখা উচিত, যা তাঁদের একাডেমিক জীবন শেষে চাকরির বাজারে প্রবেশে সহায়ক হবে। তখন লব্ধ শিক্ষা সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, এমন কর্মমুখী স্কিলসেট অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: দেশের হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোথায় কোথায় ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে?

মশিউর: প্রথমে আমাদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সঠিক তথ্য (ভুল বা জাঙ্ক তথ্য নয়) সংরক্ষণের কাজ করতে হবে। কেননা তথ্য না থাকলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোনো কাজ করতে পারবে না। এরপর অন্য দেশে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রশ্ন: দক্ষ বাংলাদেশিরা সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাইলে তাদের কী ধরনের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন?

মশিউর: আমি ব্যক্তিগতভাবে সিঙ্গাপুরে চাকরির জন্য অনেককে পরামর্শ দিচ্ছি। অনলাইনে আপনার তথ্য থাকা খুবই জরুরি, যেন চাকরিদাতারা সেগুলো যাচাই করতে পারে। সিঙ্গাপুরে নিচের জব পোর্টালগুলো বেশি পরিচিত। তাই এসব পোর্টালে আপনার প্রফাইল ও তথ্য থাকা প্রয়োজন।

  • LinkedIn Jobs - https:// www.linkedin.com/jobs
  • JobStreet Singapore https://www.jobstreet.com.sg
  • Indeed Singapore https://sg.indeed.com

প্রশ্ন: উন্নত দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের সঙ্কট রয়েছে। সেসব দেশে চাকরির জন্য বাংলাদেশিদের কী ধরনের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন?

মশিউর: বাংলাদেশে বিশাল যুবসম্পদ রয়েছে, কিন্তু প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে অনেকে উন্নত দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এটা ঠিক যে উন্নত দেশগুলোতে যোগ্য ও দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে; বিশেষ করে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল ও গবেষণা খাতে। আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে বর্তমানে যেসব ক্ষেত্র ও পদে ঘাটতি রয়েছে, তার কিছু তথ্য উল্লেখ করছি—

  • যুক্তরাষ্ট্র (USA): IT, Healthcare, AI & Data Science, Engineering, Cybersecurity
  • কানাডা: Skilled Worker, IT, Health Tech, Engineering
  • ইউরোপ (জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস): AI, Software, Healthcare, Green Energy
  • সিঙ্গাপুর: FinTech, AI, Biomedical Engineering, Digital Health
  • অস্ট্রেলিয়া: Healthcare, Cybersecurity, IT, Renewable Energy
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

উন্নত দেশে চাকরি পাওয়ার জন্য যেসব বিষয় অনুসরণ করতে পারেন—

  • প্রথমে নিজের ইচ্ছা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ক্যারিয়ার প্ল্যান ঠিক করতে হবে।
  • সঠিক চাকরির বাজার নির্বাচন করে সেখানে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যেটিতে নিজের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে।
  • IELTS, TOEFL বা প্রয়োজনীয় ভাষা দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
  • কোর্স ও সার্টিফিকেশন করে চাকরির যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
  • প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং বাড়ানো ও বিভিন্ন রিক্রুটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে।
  • ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব করার অভিজ্ঞতা থাকলে আন্তর্জাতিক চাকরির সুযোগ বাড়ে।

প্রশ্ন: চীন ও ভারতে প্রবাসে থাকা রিসোর্স দেশে ফেরত আনার প্রোগ্রাম রয়েছে। দক্ষ বাংলাদেশিদের দেশে নিয়ে আসার জন্য সরকার কী ধরনের প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারে?

মশিউর: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। চীনে রয়েছে ‘তিয়েনশান স্কলার প্রোগ্রাম’ ও ‘থাউজ্যান্ড ট্যালেন্ট প্রোগ্রাম’, যার মাধ্যমে তারা দক্ষ জনবল দেশে ফিরিয়ে উন্নয়নের কাজে লাগাচ্ছে। তাদেরকে উচ্চ বেতনের চাকরি, গবেষণার তহবিল ও স্টার্টআপ, বৈজ্ঞানিক অনুদান ও ট্যাক্সের সুবিধা দিচ্ছে। তেমনিভাবে ভারতের রয়েছে ‘গঙ্গা প্রোগ্রাম’ ও ‘Startup India’। আমরাও এমন উদ্যোগ নিতে পারি, যেটি বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত