Ajker Patrika

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রাখার ১০ পরামর্শ

মো. আশিকুর রহমান
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ২৩
Thumbnail image

মানসিক স্বাস্থ্য প্রত্যেকের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি তাদের শিখন ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আজহারুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন মো. আশিকুর রহমান

নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করুন
কায়িক পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম মনকে প্রফুল্ল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কায়িক পরিশ্রম শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে; যা আমাদের মেজাজ ভালো রাখে এবং উদ্বেগ কমায়। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

সময়মতো খাবার খান
পুষ্টিকর খাবার খেলে খুব ভালো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সময়মতো খাবার খাওয়া হয়ে ওঠে না। অনেক শিক্ষার্থী সকালে নাশতা না খেয়ে ক্লাসে চলে আসে। ক্লাসে যত সময় গড়ায়, তাদের শারীরিক শক্তি তত কমে আসে। ফলে মনোযোগ ধরে রাখা কষ্ট হয়। এভাবে অনেকে দুপুরের খাবারও অসময়ে খায়। সুস্থ মনের জন্য অন্তত তিন বেলা সময়মতো খাবার খেতে হবে। 

আরাম করে ঘুমান
কায়িক পরিশ্রম করলে, রাতের খাবার সময়মতো খেলে ঘুমের সমস্যাও কেটে যাবে। রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব উদ্বেগ ও হতাশার কারণ হতে পারে। রাতে ঘুমানোর জন্য একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করুন। অনেক শিক্ষার্থী ঘুমানোর পর্যাপ্ত সময় পায় না বলে অভিযোগ করে। এ ক্ষেত্রে যেটুকু সময় পাচ্ছে, সেটা যেন গভীর ঘুমের হয়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। গভীর ঘুমের জন্য মোবাইল দূরে রাখা জরুরি।

মনকে বর্তমানে নিয়ে আসুন
অস্থির মন সব সময় অতীত, না হয় ভবিষ্যৎ নিয়েই পড়ে থাকে। বর্তমান নিয়ে সে ভাবে না। অন্যদিকে সুস্থ মন বর্তমানে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, সেদিকে দৃষ্টিপাত করে। মনকে বর্তমানে ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিদিন একটা সময় সচেতন হয়ে ইন্দ্রিয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিন। খেয়াল করুন, শরীর কেমন বোধ করছে। খাওয়ার সময় খাবারের স্বাদটা কেমন, খেয়াল করুন আশপাশের শব্দ, নেওয়ার চেষ্টা করুণ ঘ্রাণ।

সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন
সামাজিক সমর্থন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। একে অপরের সঙ্গে কথা বলুন, মতামত শেয়ার করুন এবং সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করুন। সামাজিক সম্পর্ক মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

শখের প্রতি সময় দিন
 শখ এবং আগ্রহগুলোর প্রতি সময় দেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আঁকা, লেখা, গিটার বাজানো বা ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করা—এগুলো মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে নিজেকে ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

মানসিক চাপ চিহ্নিত করুন
মানসিক চাপের কারণে শরীর ও মনে নানা সমস্যা হতে পারে। মানসিক চাপ চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন এবং এর উৎস বুঝুন। সমস্যা চিহ্নিত করার পর সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যেমন বিশ্রাম নেওয়া বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা একটা পদক্ষেপ হতে পারে। 

সময় ব্যবস্থাপনা
ভালো সময় ব্যবস্থাপনা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কাজগুলোর তালিকা তৈরি করুন এবং প্রাধিকার দিন। ডেডলাইন মেনে চলুন এবং অসমাপ্ত কাজের চাপ কমাতে পরিকল্পনা করুন। নিয়মিত বিরতি নিন এবং চাপমুক্ত সময় কাটান। 

পেশাগত সাহায্য নিন
যদি মানসিক চাপ অনুভব করেন বা উদ্বেগে ভোগেন, তবে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিন। একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বললে উপকার পাবেন। তাঁরা আপনাকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সমর্থন দেবেন। 

নিজের মনকে বুঝুন
ওপরের বিষয়গুলো মেনে চললে মনের স্বাস্থ্যের নিশ্চিত উন্নতি হবে। তবে তাকে টেকসই করার জন্য প্রয়োজন নিজের মনকে বোঝা। মন বলতে এখানে চিন্তা, দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টি। মানুষ হিসেবে আপনি কেমন, জীবন, সমাজ, সম্পর্ক, ধর্ম, রাজনীতি, লিঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা কী, এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা আপনার আত্মশক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত