Ajker Patrika

এক মানুষখেকোর কাহিনি

পরাগ মাঝি
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০: ০৩
এক মানুষখেকোর কাহিনি

রাষ্ট্রশক্তির গহিনে চলে অন্তর্ঘাতের খেলা। সেই খেলায় ভর দিয়ে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠে ভয়ংকর সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। এই চক্রের পাঁকে পড়ে কেউ খুনি, কেউ ডাকাত, কেউ ধর্ষক ও লুটেরা হয়। মানবতার সেখানে কোনো ঠাঁই নেই, পাগলামিই হয়ে ওঠে মুখ্য। দুনিয়াজুড়ে বেড়ে ওঠা এমন ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আজকের পত্রিকার এই সিরিজ প্রতিবেদন। তবে বলে রাখা ভালো, এটা কোনো মৌলিক রচনা নয়, সংকলনমাত্র। প্রকাশিত হয় প্রতি শুক্রবার দুপুরে, আজ তার পঞ্চম কিস্তি।

পানশালাটির নাম ‘ক্লাব ২১৯’। সমকামীদের এই পানশালায় কিছুদিন ধরেই আনাগোনা করছিলেন জেফরি ডাহমার। ১৯৯১ সালের ২২ জুলাই সন্ধ্যায়ও যথারীতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ৩১ বছর বয়সী স্বর্ণকেশী শ্বেতাঙ্গ এই যুবককে নিয়ে কদিন ধরেই ক্লাবে আসা নর্তকদের মধ্যে কানাকানি আর হাসিঠাট্টা চলছিল। বিশেষ করে বিয়ার অফার করে নর্তকদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা অনেকের দৃষ্টি এড়ায়নি। বিনা মূল্যে বিয়ারের আশায় কেউ কেউ আবার তাঁর সঙ্গে খাতির জমানোর চেষ্টাতেও ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে অবস্থিত সেই পানশালায় সেদিন সন্ধ্যায়ও কৃষ্ণাঙ্গ তিন নর্তককে বিয়ার অফার করেন জেফরি। শুধু বিয়ারই নয়, ওই তিন নর্তকের যেকোনো একজনকে তাঁর সঙ্গে বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে দেবেন ৫০ ডলার। কাজ খুব বেশি নয়। জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে পোজ দিতে হবে শুধু। কয়েকটি ছবি তুলবেন নিজেকে শিল্পী পরিচয় দেওয়া জেফরি। 

প্রস্তাবটি দুজন উড়িয়ে দিলেও লুফে নিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী ট্রেসি এডওয়ার্ডস নামের নর্তক যুবকটি। সারা রাতের জন্য সেদিন জেফরির সঙ্গে রওনা হন তিনি। কিন্তু মিলওয়াকির অক্সফোর্ড অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত জেফরির ২১৩ নম্বর ফ্ল্যাটে ঢুকেই কিছুটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যান ট্রেসি। ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই উৎকট এক গন্ধ তাঁর নাকে এসে ধাক্কা দেয়। কিছুটা দ্বিধা নিয়েই তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। জেফরি তাঁকে জানান, গন্ধটা আর কিছুর নয়, বাড়ি থেকে শূকরের মাংস পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই মাংস ফ্রিজে রাখলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে যা হওয়ার হলো—সব মাংস পচে গেছে!

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমার। ছবি: সংগৃহীতজেফরির এ কথায়ও সন্দেহ দূর হয়নি ট্রেসির। ফ্ল্যাটে প্রবেশের পর একটি গ্লাসে ডাহমার বিয়ার ঢেলে দিলেও তিনি তা কৌশলে পান করেননি। ট্রেসির সন্দেহ শেষ পর্যন্ত আতঙ্কে পরিণত হয়, যখন অ্যাকোরিয়ামের মাছ দেখানোর ছলে তাঁর হাতে একটি হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন জেফরি। আর বলেন, তিনি ট্রেসির হৃৎপিণ্ড খেতে চান। 

ট্রেসি বুঝতে পারেন, খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবু অনেক কৌশল এবং কথার ছলে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন এবং পেয়েও গেলেন। জেফরির একটু অন্যমনস্কতায় হ্যান্ডকাফ পরা হাতেই তাঁর মুখে মোক্ষম এক আঘাত করেন ট্রেসি। জেফরি মেঝেতে পড়ে গেলে ট্রেসি দৌড়ে যান দরজার কাছে। কোনোক্রমে দরজা খুলে বেরিয়েই তিনি দিগ্বিদিক দৌড়াতে শুরু করেন। তাঁর মুখ দিয়ে তখন কেবল একটি শব্দই বের হচ্ছিল—পুলিশ...পুলিশ...। 

জেফরি ডাহমারকে নিয়ে নির্মিত নেটফ্লিক্সের সিনেমায় ট্রেসি এডওয়ার্ডের ভূমিকায় ছিলেন এই অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীতকিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের একটি গাড়ি ট্রেসির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রেসিও হাত-পা ছেড়ে দিয়ে গাড়িটির সামনে একেবারে শুয়ে পড়ার দশা হয়। একটু আগেই ঘটে যাওয়া জীবনের কঠিনতম মুহূর্তটির কথা গাড়িতে থাকা দুই পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশ অবশ্য শুরুতে তাঁর কথাকে এতটা পাত্তা দিতে চায়নি। তবু তারা ট্রেসিকে নিয়ে জেফরির ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলতো করে টোকা দেওয়ার পর জেফরিও দরজাটি একটু ফাঁক করেন। পুলিশ তখন ট্রেসির অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চায়। জেফরি জানান, আসলে ট্রেসি তাঁর পুরুষ প্রেমিকা। তাঁরা দুজন সমকামী। একটু মান-অভিমান হয়েছে, তাই এমন অভিযোগ করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

পুলিশ এবার ট্রেসির দিকে তাকায়। ভাবখানা এমন—তলে তলে এসব চলছে, এর মাঝে আবার পুলিশের কাছে নালিশ কেন? প্রেমিকের সঙ্গে মিলে যাও আর সুখে থাকো। 

কিন্তু ট্রেসির হাতের হ্যান্ডকাফটিই সব গন্ডগোল করে দিল। জেফরির কাছে পুলিশ জানতে চাইল, এই হ্যান্ডকাফ কোথায় পেলেন? এর চাবি কোথায়? 

চাবি কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই কিছুটা হকচকিয়ে যান জেফরি। আসলে একটু আগের ধস্তাধস্তি আর গোলমালে চাবিটি ঠিক কোথায়, মনে করতে পারছিলেন না তিনি। তবু শোয়ার ঘরের একটি ড্রয়ারে চাবিটি রাখা আছে বলে জানান। পুলিশ এবার চাবিটির জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। পুলিশকে না বলার মতো কোনো অজুহাতই মাথায় আসেনি জেফরির। অগত্যা দুই পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ট্রেসিকেও ডাকে। কিন্তু ট্রেসি ইশারায় জানিয়ে দেন—না, আপনারাই যান, আমি আর এর মধ্যে নেই। 

জেফরির ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুম। ছবি: সংগৃহীতফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করেই সেই বিদঘুটে গন্ধ পায় পুলিশ। বিষয়টি তাদের কাছেও অস্বাভাবিক ঠেকে। এবার তারা জেফরিকে দাঁড় করিয়ে কোন ড্রয়ারে চাবি রাখা, সেই ড্রয়ার দেখিয়ে দিতে বলে। ড্রয়ার খুলে চাবি শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়, কিন্তু সেই ড্রয়ারেই কতগুলো ছবিও পাওয়া যায়। ছবিগুলোতে নৃশংসতার শিকার কিছু মানুষ, শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মাথাবিহীন শরীর দেখে পুলিশ বুঝতে পারছিল না এগুলো সত্যি কি না। জেফরি অবশ্য সেই মুহূর্তে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুই পুলিশের একজন তাঁকে জাপটে ধরে মেঝেতে শুইয়ে ফেলে। এরপরের ঘটনাগুলো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল পুরো পুলিশ বাহিনীর। জেফরির ঘরে পরে যা পাওয়া যায়, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না পুলিশ। ফ্রিজের মধ্যে পাওয়া যায় মানুষের বিচ্ছিন্ন একটি মাথা। ফ্রিজের ভেতরেই দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছিল মানুষের দুটি হৃৎপিণ্ড। একটি পুরুষাঙ্গও ছিল আরেক ব্যাগে। শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় মানুষের মাথার পাঁচটি খুলি, ধারালো ছুরি আর করাত। একটি ড্রয়ারে মানুষের আস্ত একটি কঙ্কালও মেলে। ঘরের ভেতরেই ছিল ৫৭ গ্যালনের একটি প্লাস্টিকের ড্রাম। ওই ড্রামে রাখা অ্যাসিডের মধ্যে ডুবানো অবস্থায় পাওয়া যায় মাথাবিহীন আরও তিনটি শরীর। মূলত হত্যার পর এই অ্যাসিডে ডুবিয়েই হাড় থেকে মানুষের রক্ত-মাংস আলাদা করে নিতেন জেফরি। 

আলামত হিসেবে জেফরির বাড়ি থেকে ফ্রিজ জব্দ করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত২৯ বছর আগে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের ঘটনাটি নাড়িয়ে দেয় পুরো পৃথিবীকে। ফ্ল্যাটে তল্লাশির সময়ই পুলিশ বুঝতে পেরেছিল, এই শতাব্দীর ভয়ংকরতম খুনির সন্ধান পেয়ে গেছে তারা। জেফরি ডাহমারও বুঝে যান, এখানেই তাঁর শেষ। তাই কোনো কিছু না লুকিয়ে পুলিশের কাছে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। জেফরি জানান, তিনি মোট ১৭ জনকে খুন করেছেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সব কটি খুন করেন তিনি। হাত ফসকে না গেলে ট্রেসি হতেন তাঁর ১৮তম খুন। তবে শুধু খুন নয়, খুনের পর কিংবা অচেতন অবস্থায় তিনি তাঁর শিকারকে ধর্ষণও করতেন। কিশোর বয়সেই তাঁর মধ্যে সমকামিতা প্রকট হতে শুরু করেছিল। 

অনেকে মনে করেন, জেফরির এমন ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠার নেপথ্যে ছিল তাঁর শৈশব। ছোটবেলা থেকেই তিনি একটি বিশৃঙ্খল পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। ১৯৬০ সালের ২১ মে মিলওয়াকির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। মা জয়েস ফ্লিন্ট ছিলেন অস্বাভাবিক চরিত্রের অধিকারী। সব সময় স্বামীর মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জেফরির বাবা লিওনেল ডাহমার ছিলেন একজন রসায়নবিদ এবং কাজপাগল মানুষ। সংসারে সময় দেওয়ার সুযোগ পেতেন কম। ফলে এটা-ওটা নিয়ে দাম্পত্য কলহ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় সময়ই বাড়ি থেকে কয়েক দিনের জন্য বেরিয়ে যেতেন লিওনেল। 

বাবা-মায়ের সঙ্গে জেফরি। ছবি: সংগৃহীতপারিবারিক এই বিশৃঙ্খলা স্কুল কিংবা সমবয়সীদের মাঝেও একা করে দিয়েছিল জেফরিকে। তাঁর বাবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অল্প বয়সেই মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। প্রায়ই তিনি মৃত প্রাণীদের হাড় নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন। 

জেফরি হাইস্কুলে ওঠার পর ডাহমার পরিবার উইসকনসিন থেকে ওহাইও অঙ্গরাজ্যে চলে যায়। হাইস্কুলে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সেই মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন জেফরি। জ্যাকেটের পকেটে বিয়ার কিংবা মদের বোতল নিয়ে তিনি স্কুলে যেতেন। এর প্রভাব পড়ে পড়াশোনায়ও। কিছুদিনের মধ্যে নিজের ভেতরে আরও এক অস্বাভাবিক কিছু টের পান জেফরি। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি সমকামী। বিপরীত লিঙ্গের বদলে ছেলেদের প্রতিই যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেন। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায় যে ১৬ বছর বয়সে একদিন রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গেও তিনি মিলিত হয়েছিলেন। মিলনের পর অবশ্য তিনি কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, বিষয়টি টের পেয়ে যাবেন ওই লোক এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তাই একটি ঝোপের আড়ালে বেসবলের ব্যাট নিয়ে ওত পেতে ছিলেন তিনি। লোকটি অবশ্য সেদিন ওই পথে না গিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তা না হলে ওই লোকই হতেন জেফরির হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। 

হাইস্কুলে পড়ার দিনগুলোতে মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জেফরি। ছবি: সংগৃহীতপরের বছর, অর্থাৎ জেফরির যখন ১৭ বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা-মায়ের মধ্যে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটে। একদিন বাড়ি ফিরে জেফরি দেখেন, ছোট ভাইকে নিয়ে তাঁর মা চলে গেছেন আত্মীয়দের বাড়িতে আর বাবা গিয়ে উঠেছেন একটি মোটেলে। এর ফলে পুরো বাড়িতে জেফরির একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিঃসঙ্গ এমন পরিবেশই হয়তো তাঁকে সিরিয়াল কিলারে পরিণত করেছিল। 

১৯৭৮ সালে ১৮ বছর বয়সে হাইস্কুল পাস করেন জেফরি। এর কয়েক সপ্তাহ পরই নিজ বাড়িতে তিনি জীবনের প্রথম খুনটি করেন। সেদিন তাঁর শিকার ছিলেন স্টিভেন মার্ক হিকস নামে ১৯ বছর বয়সী এক হিচহাইকার। হিচহাইকার বলা হয় তাদেরই, যারা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অন্যের গাড়িতে লিফট নেয়। হাত ওড়াতে দেখে হিকসকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন জেফরি। হিকস যাচ্ছিলেন ওহাইওর চিপ্পেওয়া লেক পার্কে একটি রক ব্যান্ডের কনসার্টে। জেফরি তাঁকে পৌঁছে দেবেন বলেছিলেন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে হিকসকে নিজ বাড়িতে কয়েক চুমুক বিয়ার পান করারও অফার করেন তিনি। হিকসের কাছে এই প্রস্তাব ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কনসার্টে যাওয়ার আগে একটু পান করে নিলে মন্দ হয় না। কিন্তু সেই বাড়িতে কয়েক টান গাঁজা আর বিয়ার পানের পরই হিকস বুঝতে পেরেছিলেন জেফরির সমকামিতার বিষয়টি। হিকস তাই ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলেন। ঠিক এমন সময় মেজাজ হারিয়ে তাঁর মাথায় ১০ পাউন্ড ওজনের একটি ডাম্বেল দিয়ে সজোরে আঘাত করেন জেফরি। মেঝেতে লুটিয়ে পড়া হিকসকে পরে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। একপর্যায়ে জামাকাপড় খুলে হিকসের নগ্ন মরদেহের ওপর হস্তমৈথুনও করেন। 

পরদিন হিকসের মৃতদেহটি কেটে টুকরো টুকরো করে বাড়ির পেছনেই মাটিচাপা দেন। এক সপ্তাহ পর সেই টুকরোগুলো আবার ওপরে তোলেন এবং হাড় থেকে মাংস আলাদা করেন। পরে অ্যাসিডে মাংস গলিয়ে বাথরুমের কমোডে ঢেলে ফ্ল্যাশ করে দেন। আর হাড়গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন বাড়িসংলগ্ন জঙ্গলে। 

জেফরির প্রথম শিকার স্টিভেন মার্ক হিকস। ছবি: সংগৃহীতজেফরির প্রথম খুনের ছয় সপ্তাহ পর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাবা বাড়িতে এসে হাজির হন। সেই বছরের আগস্টে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ছাত্রত্ব হারান। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে বাবার পীড়াপীড়িতে মার্কিন সেনাবাহিনীতেও যোগ দেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহলের কারণে দুই বছরের মাথায় তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে সম্মানজনকভাবে বিদায় করা হয়। 

সেনাবাহিনী থেকে ফেরার পর জেফরির ঠিকানা হয় আবারও উইসকনসিন। মিলওয়াকির শহরতলি অ্যালিসে দাদির বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। বেসামরিক জীবনে মদ্যপান ছাড়াও শিশুদের সামনে হস্তমৈথুন করা থেকে শুরু করে একটি সমকামী স্নানাগারে অন্তত ১২ জন সঙ্গীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো মদ খাইয়ে তাঁদের অচেতন দেহের সঙ্গে যৌনতার মতো নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন। এই অভিযোগে পরে তাঁর সদস্যপদও বাতিল করে স্নানাগার কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম খুনের পর দ্বিতীয় খুনটি করতে ৯ বছর সময় লেগেছিল তাঁর। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি হত্যা করেন স্টিভেন তুওমি নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে। একটি পানশালায় দেখা হয়েছিল দুজনের। পরে তাঁরা শহরের একটি হোটেলে রাত কাটাতে যান। কিন্তু সেই রাতের পরদিন সকালে তুওমিকে রক্তাক্ত ও নিহত অবস্থায় দেখেন জেফরি। স্বীকারোক্তিতে তিনি দাবি করেছিলেন, অচেতন করে যৌন সম্পর্ক করা ছাড়া তুওমির সঙ্গে আর কিছু করার পরিকল্পনা ছিল না তাঁর। কিন্তু রাতের বেলায় কখন কী ঘটল কিছুই মনে ছিল না। পরদিন তুওমির মরদেহটি একটি স্যুটকেসে ভরে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন বলে কেউ কিছু জানেনি। 

জেফরির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড়। ছবি: সংগৃহীতমূলত তুওমির হত্যার মধ্য দিয়েই সিরিয়াল কিলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেছিলেন জেফরি। সেই দিনগুলোতে দাদির সঙ্গে থাকা অবস্থায় দাদির বাড়ির বেসমেন্টে নিয়ে অন্তত তিনজন সমকামীকে মাদক সেবন করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন তিনি। এই তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন অ্যান্টনি সিয়ার্স নামে ২৪ বছর বয়সী উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক মডেল। তাঁকে হত্যার পর স্মারক হিসেবে তাঁর মাথা ও পুরুষাঙ্গ অ্যাসিটোনে ভরা একটি বয়ামে সংরক্ষণ করেছিলেন জেফরি। পরবর্তী সময়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে অক্সফোর্ড অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত নিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটেও ওই মাথা ও পুরুষাঙ্গ নিয়ে গিয়েছিলেন। পরের দুই বছরে তিনি তাঁর ১৭টি খুনের সিংহভাগই করেছিলেন ওই ফ্ল্যাটে। সেখানেই মানুষের মাংস ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে তাঁর। নর্তক ট্রেসি এডওয়ার্ডসের উপস্থিত বুদ্ধিতে শেষ পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটেই ধরা পড়েছিলেন তিনি। 

১৯৯২ সালের বিচারে ১৬টি যাবজ্জীবনসহ মোট ৯৪১ বছরের জামিন অযোগ্য কারাদণ্ড পান জেফরি। তবে জীবনের নির্মম পরিণতি তাঁর জন্যও অপেক্ষা করছিল খোদ কারাগারের ভেতরে। দিনটি ছিল ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর। সেদিন সকালে উইসকনসিনের কলম্বিয়া কারেকশনাল ইনস্টিটিউট কারাগারের ভেতর জেফরির সামনে মূর্তিমান এক যমরূপে হাজির হন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক বন্দী ক্রিস্টোফার স্কারভার। কারাগারের স্নানাগারের ভেতরে জেফরিকে একটি লৌহদণ্ড দিয়ে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করেন তিনি। নির্মম প্রহারে মাথার খুলি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়েছিল সিরিয়াল কিলারের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু ঘটে। 

কারাগারের ভেতর জেফরিকে হত্যা করা ক্রিস্টোফার স্কারভার তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীতএই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ক্রিস্টোফার স্কারভার জানিয়েছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তিনি জেফরিকে খুন করেছেন। পেটানোর সময় জেফরি কোনো প্রতিরোধ কিংবা পাল্টা আঘাত করেননি। যেন নিয়তিকে তিনি মেনে নিয়েছিলেন। 

জেফরির হাতে নিহত ১৭ জনের বেশির ভাগই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। ধারণা করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিশোধ নিতেই জেফরিকে খুন করেন কালো শরীরের ক্রিস্টোফার স্কারভার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে ভারত কেন বেজার

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তি হবে গণ-অভ্যুত্থান

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

পুতিন যুদ্ধ বন্ধে ‘অস্বীকৃতি জানানোয়’ রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের ‘প্রথম’ নিষেধাজ্ঞা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে ভারত কেন বেজার

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তি হবে গণ-অভ্যুত্থান

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

পুতিন যুদ্ধ বন্ধে ‘অস্বীকৃতি জানানোয়’ রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের ‘প্রথম’ নিষেধাজ্ঞা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে ভারত কেন বেজার

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তি হবে গণ-অভ্যুত্থান

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

পুতিন যুদ্ধ বন্ধে ‘অস্বীকৃতি জানানোয়’ রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের ‘প্রথম’ নিষেধাজ্ঞা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে ভারত কেন বেজার

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তি হবে গণ-অভ্যুত্থান

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

পুতিন যুদ্ধ বন্ধে ‘অস্বীকৃতি জানানোয়’ রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের ‘প্রথম’ নিষেধাজ্ঞা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা করার নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৫৮
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনার ২৯ বছর পর আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন।

সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া আদালতের রায়ের বিরুদ্ধের তাঁর মা নীলা চৌধুরী দ্বিতীয় দফায় যে রিভিশন মামলা করেছিলেন, তা মঞ্জুর করে আজ এই আদেশ দিলেন আদালত।

রিভিশনকারী পক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, আদেশে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাই অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

নীলা চৌধুরীর এ রিভিশন মামলার শুনানি শেষে গত ১৩ অক্টোবর আদালত আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর দিন করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন তাঁর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পরের বছর ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে আবার আদালতে মামলা করেন তাঁর বাবা। ওই সময় সিআইডিকে অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়।

ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হয়।

কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে রিভিশন মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে।

২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন মামলা করে বাদীপক্ষ।

রিভিশন মামলায় বলা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে বারবার তাঁর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে বলা হচ্ছে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যাকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

ভক্তদের মানববন্ধন

এদিকে সালমান শাহর ভক্তরা সকাল থেকে আদালত এলাকায় হাজির হন। হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানান তাঁরা। এ সময় তাঁরা সালমান শাহ হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে ভারত কেন বেজার

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তি হবে গণ-অভ্যুত্থান

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

পুতিন যুদ্ধ বন্ধে ‘অস্বীকৃতি জানানোয়’ রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের ‘প্রথম’ নিষেধাজ্ঞা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত