Ajker Patrika

এক মানুষখেকোর কাহিনি

পরাগ মাঝি
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০: ০৩
এক মানুষখেকোর কাহিনি

রাষ্ট্রশক্তির গহিনে চলে অন্তর্ঘাতের খেলা। সেই খেলায় ভর দিয়ে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠে ভয়ংকর সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। এই চক্রের পাঁকে পড়ে কেউ খুনি, কেউ ডাকাত, কেউ ধর্ষক ও লুটেরা হয়। মানবতার সেখানে কোনো ঠাঁই নেই, পাগলামিই হয়ে ওঠে মুখ্য। দুনিয়াজুড়ে বেড়ে ওঠা এমন ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আজকের পত্রিকার এই সিরিজ প্রতিবেদন। তবে বলে রাখা ভালো, এটা কোনো মৌলিক রচনা নয়, সংকলনমাত্র। প্রকাশিত হয় প্রতি শুক্রবার দুপুরে, আজ তার পঞ্চম কিস্তি।

পানশালাটির নাম ‘ক্লাব ২১৯’। সমকামীদের এই পানশালায় কিছুদিন ধরেই আনাগোনা করছিলেন জেফরি ডাহমার। ১৯৯১ সালের ২২ জুলাই সন্ধ্যায়ও যথারীতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ৩১ বছর বয়সী স্বর্ণকেশী শ্বেতাঙ্গ এই যুবককে নিয়ে কদিন ধরেই ক্লাবে আসা নর্তকদের মধ্যে কানাকানি আর হাসিঠাট্টা চলছিল। বিশেষ করে বিয়ার অফার করে নর্তকদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা অনেকের দৃষ্টি এড়ায়নি। বিনা মূল্যে বিয়ারের আশায় কেউ কেউ আবার তাঁর সঙ্গে খাতির জমানোর চেষ্টাতেও ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে অবস্থিত সেই পানশালায় সেদিন সন্ধ্যায়ও কৃষ্ণাঙ্গ তিন নর্তককে বিয়ার অফার করেন জেফরি। শুধু বিয়ারই নয়, ওই তিন নর্তকের যেকোনো একজনকে তাঁর সঙ্গে বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে দেবেন ৫০ ডলার। কাজ খুব বেশি নয়। জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে পোজ দিতে হবে শুধু। কয়েকটি ছবি তুলবেন নিজেকে শিল্পী পরিচয় দেওয়া জেফরি। 

প্রস্তাবটি দুজন উড়িয়ে দিলেও লুফে নিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী ট্রেসি এডওয়ার্ডস নামের নর্তক যুবকটি। সারা রাতের জন্য সেদিন জেফরির সঙ্গে রওনা হন তিনি। কিন্তু মিলওয়াকির অক্সফোর্ড অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত জেফরির ২১৩ নম্বর ফ্ল্যাটে ঢুকেই কিছুটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যান ট্রেসি। ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই উৎকট এক গন্ধ তাঁর নাকে এসে ধাক্কা দেয়। কিছুটা দ্বিধা নিয়েই তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। জেফরি তাঁকে জানান, গন্ধটা আর কিছুর নয়, বাড়ি থেকে শূকরের মাংস পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই মাংস ফ্রিজে রাখলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে যা হওয়ার হলো—সব মাংস পচে গেছে!

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমার। ছবি: সংগৃহীতজেফরির এ কথায়ও সন্দেহ দূর হয়নি ট্রেসির। ফ্ল্যাটে প্রবেশের পর একটি গ্লাসে ডাহমার বিয়ার ঢেলে দিলেও তিনি তা কৌশলে পান করেননি। ট্রেসির সন্দেহ শেষ পর্যন্ত আতঙ্কে পরিণত হয়, যখন অ্যাকোরিয়ামের মাছ দেখানোর ছলে তাঁর হাতে একটি হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন জেফরি। আর বলেন, তিনি ট্রেসির হৃৎপিণ্ড খেতে চান। 

ট্রেসি বুঝতে পারেন, খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবু অনেক কৌশল এবং কথার ছলে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন এবং পেয়েও গেলেন। জেফরির একটু অন্যমনস্কতায় হ্যান্ডকাফ পরা হাতেই তাঁর মুখে মোক্ষম এক আঘাত করেন ট্রেসি। জেফরি মেঝেতে পড়ে গেলে ট্রেসি দৌড়ে যান দরজার কাছে। কোনোক্রমে দরজা খুলে বেরিয়েই তিনি দিগ্বিদিক দৌড়াতে শুরু করেন। তাঁর মুখ দিয়ে তখন কেবল একটি শব্দই বের হচ্ছিল—পুলিশ...পুলিশ...। 

জেফরি ডাহমারকে নিয়ে নির্মিত নেটফ্লিক্সের সিনেমায় ট্রেসি এডওয়ার্ডের ভূমিকায় ছিলেন এই অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীতকিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের একটি গাড়ি ট্রেসির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রেসিও হাত-পা ছেড়ে দিয়ে গাড়িটির সামনে একেবারে শুয়ে পড়ার দশা হয়। একটু আগেই ঘটে যাওয়া জীবনের কঠিনতম মুহূর্তটির কথা গাড়িতে থাকা দুই পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশ অবশ্য শুরুতে তাঁর কথাকে এতটা পাত্তা দিতে চায়নি। তবু তারা ট্রেসিকে নিয়ে জেফরির ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলতো করে টোকা দেওয়ার পর জেফরিও দরজাটি একটু ফাঁক করেন। পুলিশ তখন ট্রেসির অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চায়। জেফরি জানান, আসলে ট্রেসি তাঁর পুরুষ প্রেমিকা। তাঁরা দুজন সমকামী। একটু মান-অভিমান হয়েছে, তাই এমন অভিযোগ করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

পুলিশ এবার ট্রেসির দিকে তাকায়। ভাবখানা এমন—তলে তলে এসব চলছে, এর মাঝে আবার পুলিশের কাছে নালিশ কেন? প্রেমিকের সঙ্গে মিলে যাও আর সুখে থাকো। 

কিন্তু ট্রেসির হাতের হ্যান্ডকাফটিই সব গন্ডগোল করে দিল। জেফরির কাছে পুলিশ জানতে চাইল, এই হ্যান্ডকাফ কোথায় পেলেন? এর চাবি কোথায়? 

চাবি কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই কিছুটা হকচকিয়ে যান জেফরি। আসলে একটু আগের ধস্তাধস্তি আর গোলমালে চাবিটি ঠিক কোথায়, মনে করতে পারছিলেন না তিনি। তবু শোয়ার ঘরের একটি ড্রয়ারে চাবিটি রাখা আছে বলে জানান। পুলিশ এবার চাবিটির জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। পুলিশকে না বলার মতো কোনো অজুহাতই মাথায় আসেনি জেফরির। অগত্যা দুই পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ট্রেসিকেও ডাকে। কিন্তু ট্রেসি ইশারায় জানিয়ে দেন—না, আপনারাই যান, আমি আর এর মধ্যে নেই। 

জেফরির ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুম। ছবি: সংগৃহীতফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করেই সেই বিদঘুটে গন্ধ পায় পুলিশ। বিষয়টি তাদের কাছেও অস্বাভাবিক ঠেকে। এবার তারা জেফরিকে দাঁড় করিয়ে কোন ড্রয়ারে চাবি রাখা, সেই ড্রয়ার দেখিয়ে দিতে বলে। ড্রয়ার খুলে চাবি শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়, কিন্তু সেই ড্রয়ারেই কতগুলো ছবিও পাওয়া যায়। ছবিগুলোতে নৃশংসতার শিকার কিছু মানুষ, শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মাথাবিহীন শরীর দেখে পুলিশ বুঝতে পারছিল না এগুলো সত্যি কি না। জেফরি অবশ্য সেই মুহূর্তে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুই পুলিশের একজন তাঁকে জাপটে ধরে মেঝেতে শুইয়ে ফেলে। এরপরের ঘটনাগুলো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল পুরো পুলিশ বাহিনীর। জেফরির ঘরে পরে যা পাওয়া যায়, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না পুলিশ। ফ্রিজের মধ্যে পাওয়া যায় মানুষের বিচ্ছিন্ন একটি মাথা। ফ্রিজের ভেতরেই দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছিল মানুষের দুটি হৃৎপিণ্ড। একটি পুরুষাঙ্গও ছিল আরেক ব্যাগে। শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় মানুষের মাথার পাঁচটি খুলি, ধারালো ছুরি আর করাত। একটি ড্রয়ারে মানুষের আস্ত একটি কঙ্কালও মেলে। ঘরের ভেতরেই ছিল ৫৭ গ্যালনের একটি প্লাস্টিকের ড্রাম। ওই ড্রামে রাখা অ্যাসিডের মধ্যে ডুবানো অবস্থায় পাওয়া যায় মাথাবিহীন আরও তিনটি শরীর। মূলত হত্যার পর এই অ্যাসিডে ডুবিয়েই হাড় থেকে মানুষের রক্ত-মাংস আলাদা করে নিতেন জেফরি। 

আলামত হিসেবে জেফরির বাড়ি থেকে ফ্রিজ জব্দ করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত২৯ বছর আগে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের ঘটনাটি নাড়িয়ে দেয় পুরো পৃথিবীকে। ফ্ল্যাটে তল্লাশির সময়ই পুলিশ বুঝতে পেরেছিল, এই শতাব্দীর ভয়ংকরতম খুনির সন্ধান পেয়ে গেছে তারা। জেফরি ডাহমারও বুঝে যান, এখানেই তাঁর শেষ। তাই কোনো কিছু না লুকিয়ে পুলিশের কাছে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। জেফরি জানান, তিনি মোট ১৭ জনকে খুন করেছেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সব কটি খুন করেন তিনি। হাত ফসকে না গেলে ট্রেসি হতেন তাঁর ১৮তম খুন। তবে শুধু খুন নয়, খুনের পর কিংবা অচেতন অবস্থায় তিনি তাঁর শিকারকে ধর্ষণও করতেন। কিশোর বয়সেই তাঁর মধ্যে সমকামিতা প্রকট হতে শুরু করেছিল। 

অনেকে মনে করেন, জেফরির এমন ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠার নেপথ্যে ছিল তাঁর শৈশব। ছোটবেলা থেকেই তিনি একটি বিশৃঙ্খল পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। ১৯৬০ সালের ২১ মে মিলওয়াকির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। মা জয়েস ফ্লিন্ট ছিলেন অস্বাভাবিক চরিত্রের অধিকারী। সব সময় স্বামীর মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জেফরির বাবা লিওনেল ডাহমার ছিলেন একজন রসায়নবিদ এবং কাজপাগল মানুষ। সংসারে সময় দেওয়ার সুযোগ পেতেন কম। ফলে এটা-ওটা নিয়ে দাম্পত্য কলহ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় সময়ই বাড়ি থেকে কয়েক দিনের জন্য বেরিয়ে যেতেন লিওনেল। 

বাবা-মায়ের সঙ্গে জেফরি। ছবি: সংগৃহীতপারিবারিক এই বিশৃঙ্খলা স্কুল কিংবা সমবয়সীদের মাঝেও একা করে দিয়েছিল জেফরিকে। তাঁর বাবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অল্প বয়সেই মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। প্রায়ই তিনি মৃত প্রাণীদের হাড় নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন। 

জেফরি হাইস্কুলে ওঠার পর ডাহমার পরিবার উইসকনসিন থেকে ওহাইও অঙ্গরাজ্যে চলে যায়। হাইস্কুলে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সেই মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন জেফরি। জ্যাকেটের পকেটে বিয়ার কিংবা মদের বোতল নিয়ে তিনি স্কুলে যেতেন। এর প্রভাব পড়ে পড়াশোনায়ও। কিছুদিনের মধ্যে নিজের ভেতরে আরও এক অস্বাভাবিক কিছু টের পান জেফরি। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি সমকামী। বিপরীত লিঙ্গের বদলে ছেলেদের প্রতিই যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেন। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায় যে ১৬ বছর বয়সে একদিন রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গেও তিনি মিলিত হয়েছিলেন। মিলনের পর অবশ্য তিনি কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, বিষয়টি টের পেয়ে যাবেন ওই লোক এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তাই একটি ঝোপের আড়ালে বেসবলের ব্যাট নিয়ে ওত পেতে ছিলেন তিনি। লোকটি অবশ্য সেদিন ওই পথে না গিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তা না হলে ওই লোকই হতেন জেফরির হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। 

হাইস্কুলে পড়ার দিনগুলোতে মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জেফরি। ছবি: সংগৃহীতপরের বছর, অর্থাৎ জেফরির যখন ১৭ বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা-মায়ের মধ্যে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটে। একদিন বাড়ি ফিরে জেফরি দেখেন, ছোট ভাইকে নিয়ে তাঁর মা চলে গেছেন আত্মীয়দের বাড়িতে আর বাবা গিয়ে উঠেছেন একটি মোটেলে। এর ফলে পুরো বাড়িতে জেফরির একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিঃসঙ্গ এমন পরিবেশই হয়তো তাঁকে সিরিয়াল কিলারে পরিণত করেছিল। 

১৯৭৮ সালে ১৮ বছর বয়সে হাইস্কুল পাস করেন জেফরি। এর কয়েক সপ্তাহ পরই নিজ বাড়িতে তিনি জীবনের প্রথম খুনটি করেন। সেদিন তাঁর শিকার ছিলেন স্টিভেন মার্ক হিকস নামে ১৯ বছর বয়সী এক হিচহাইকার। হিচহাইকার বলা হয় তাদেরই, যারা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অন্যের গাড়িতে লিফট নেয়। হাত ওড়াতে দেখে হিকসকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন জেফরি। হিকস যাচ্ছিলেন ওহাইওর চিপ্পেওয়া লেক পার্কে একটি রক ব্যান্ডের কনসার্টে। জেফরি তাঁকে পৌঁছে দেবেন বলেছিলেন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে হিকসকে নিজ বাড়িতে কয়েক চুমুক বিয়ার পান করারও অফার করেন তিনি। হিকসের কাছে এই প্রস্তাব ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কনসার্টে যাওয়ার আগে একটু পান করে নিলে মন্দ হয় না। কিন্তু সেই বাড়িতে কয়েক টান গাঁজা আর বিয়ার পানের পরই হিকস বুঝতে পেরেছিলেন জেফরির সমকামিতার বিষয়টি। হিকস তাই ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলেন। ঠিক এমন সময় মেজাজ হারিয়ে তাঁর মাথায় ১০ পাউন্ড ওজনের একটি ডাম্বেল দিয়ে সজোরে আঘাত করেন জেফরি। মেঝেতে লুটিয়ে পড়া হিকসকে পরে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। একপর্যায়ে জামাকাপড় খুলে হিকসের নগ্ন মরদেহের ওপর হস্তমৈথুনও করেন। 

পরদিন হিকসের মৃতদেহটি কেটে টুকরো টুকরো করে বাড়ির পেছনেই মাটিচাপা দেন। এক সপ্তাহ পর সেই টুকরোগুলো আবার ওপরে তোলেন এবং হাড় থেকে মাংস আলাদা করেন। পরে অ্যাসিডে মাংস গলিয়ে বাথরুমের কমোডে ঢেলে ফ্ল্যাশ করে দেন। আর হাড়গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন বাড়িসংলগ্ন জঙ্গলে। 

জেফরির প্রথম শিকার স্টিভেন মার্ক হিকস। ছবি: সংগৃহীতজেফরির প্রথম খুনের ছয় সপ্তাহ পর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাবা বাড়িতে এসে হাজির হন। সেই বছরের আগস্টে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ছাত্রত্ব হারান। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে বাবার পীড়াপীড়িতে মার্কিন সেনাবাহিনীতেও যোগ দেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহলের কারণে দুই বছরের মাথায় তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে সম্মানজনকভাবে বিদায় করা হয়। 

সেনাবাহিনী থেকে ফেরার পর জেফরির ঠিকানা হয় আবারও উইসকনসিন। মিলওয়াকির শহরতলি অ্যালিসে দাদির বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। বেসামরিক জীবনে মদ্যপান ছাড়াও শিশুদের সামনে হস্তমৈথুন করা থেকে শুরু করে একটি সমকামী স্নানাগারে অন্তত ১২ জন সঙ্গীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো মদ খাইয়ে তাঁদের অচেতন দেহের সঙ্গে যৌনতার মতো নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন। এই অভিযোগে পরে তাঁর সদস্যপদও বাতিল করে স্নানাগার কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম খুনের পর দ্বিতীয় খুনটি করতে ৯ বছর সময় লেগেছিল তাঁর। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি হত্যা করেন স্টিভেন তুওমি নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে। একটি পানশালায় দেখা হয়েছিল দুজনের। পরে তাঁরা শহরের একটি হোটেলে রাত কাটাতে যান। কিন্তু সেই রাতের পরদিন সকালে তুওমিকে রক্তাক্ত ও নিহত অবস্থায় দেখেন জেফরি। স্বীকারোক্তিতে তিনি দাবি করেছিলেন, অচেতন করে যৌন সম্পর্ক করা ছাড়া তুওমির সঙ্গে আর কিছু করার পরিকল্পনা ছিল না তাঁর। কিন্তু রাতের বেলায় কখন কী ঘটল কিছুই মনে ছিল না। পরদিন তুওমির মরদেহটি একটি স্যুটকেসে ভরে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন বলে কেউ কিছু জানেনি। 

জেফরির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড়। ছবি: সংগৃহীতমূলত তুওমির হত্যার মধ্য দিয়েই সিরিয়াল কিলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেছিলেন জেফরি। সেই দিনগুলোতে দাদির সঙ্গে থাকা অবস্থায় দাদির বাড়ির বেসমেন্টে নিয়ে অন্তত তিনজন সমকামীকে মাদক সেবন করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন তিনি। এই তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন অ্যান্টনি সিয়ার্স নামে ২৪ বছর বয়সী উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক মডেল। তাঁকে হত্যার পর স্মারক হিসেবে তাঁর মাথা ও পুরুষাঙ্গ অ্যাসিটোনে ভরা একটি বয়ামে সংরক্ষণ করেছিলেন জেফরি। পরবর্তী সময়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে অক্সফোর্ড অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত নিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটেও ওই মাথা ও পুরুষাঙ্গ নিয়ে গিয়েছিলেন। পরের দুই বছরে তিনি তাঁর ১৭টি খুনের সিংহভাগই করেছিলেন ওই ফ্ল্যাটে। সেখানেই মানুষের মাংস ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে তাঁর। নর্তক ট্রেসি এডওয়ার্ডসের উপস্থিত বুদ্ধিতে শেষ পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটেই ধরা পড়েছিলেন তিনি। 

১৯৯২ সালের বিচারে ১৬টি যাবজ্জীবনসহ মোট ৯৪১ বছরের জামিন অযোগ্য কারাদণ্ড পান জেফরি। তবে জীবনের নির্মম পরিণতি তাঁর জন্যও অপেক্ষা করছিল খোদ কারাগারের ভেতরে। দিনটি ছিল ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর। সেদিন সকালে উইসকনসিনের কলম্বিয়া কারেকশনাল ইনস্টিটিউট কারাগারের ভেতর জেফরির সামনে মূর্তিমান এক যমরূপে হাজির হন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক বন্দী ক্রিস্টোফার স্কারভার। কারাগারের স্নানাগারের ভেতরে জেফরিকে একটি লৌহদণ্ড দিয়ে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করেন তিনি। নির্মম প্রহারে মাথার খুলি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়েছিল সিরিয়াল কিলারের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু ঘটে। 

কারাগারের ভেতর জেফরিকে হত্যা করা ক্রিস্টোফার স্কারভার তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীতএই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ক্রিস্টোফার স্কারভার জানিয়েছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তিনি জেফরিকে খুন করেছেন। পেটানোর সময় জেফরি কোনো প্রতিরোধ কিংবা পাল্টা আঘাত করেননি। যেন নিয়তিকে তিনি মেনে নিয়েছিলেন। 

জেফরির হাতে নিহত ১৭ জনের বেশির ভাগই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। ধারণা করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিশোধ নিতেই জেফরিকে খুন করেন কালো শরীরের ক্রিস্টোফার স্কারভার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত