Ajker Patrika

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, ক্যাম্পাসে মানববন্ধন-বিক্ষোভ

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, ক্যাম্পাসে মানববন্ধন-বিক্ষোভ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ খুনের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া গতকাল সোমবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, শাহপরাণ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান, লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম এবং সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল।

সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হল সংলগ্ন গাজীকালুর টিলায় খুন হন বুলবুল আহমেদ। ঘটনার পরপরই
শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পৃথকভাবে এসব মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে শুরু হওয়া মিছিলগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্লোগান দিতে থাকে।

এ সময় তারা ‘বুলবুল খুন কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বুলবুলের খুনিরা হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এ ছাড়া গতকাল রাতেই তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আগুন জ্বালিয়ে ঘণ্টাব্যাপী সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এ সময় সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে উপাচার্যের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।

এরপর আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে দফায় দফায় মিছিল এবং মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এরপর জড়িতদের বিচার এবং দ্রুত গ্রেপ্তার দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে জাতীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

এতে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে বুলবুল আহমেদের খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা, নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুরো ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ঘোষণা করে অতিরিক্ত গার্ড নিয়োগ করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।

বুলবুলের জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ স্বজনেরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে নিহত শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের মরদেহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুর সোয়া ১টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরিবারের লোকজনের সম্মতি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মরদেহ নিয়ে আসা হয়নি বলে জানা গেছে। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে নরসিংদীর দিকে রওনা হন তাঁর স্বজনেরা।

খুনের ঘটনায় তিনজন আটক

বুলবুল খুনের ঘটনায় তিন বহিরাগতকে আটক করেছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটনের পুলিশ কর্মকর্তা বিএম আশরাফুল্লাহ তাহের (মিডিয়া) জানান, বুলবুল আহমেদকে খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গতকালও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমরা আশপাশের এলাকায় খবর নিয়েছি। আমরা জোর দিচ্ছি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের ওপর। ঘটনাটি ছিনতাই হতে পারে আবার পূর্বপরিকল্পিতও হতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত সেটি নিশ্চিত না। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত করে যারা জড়িত আছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

বুলবুলের পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস

নিহত বুলবুলের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বুলবুলের পরিবারের পাশে আমরা থাকব। যা যা করা লাগে, আমরা সব করব তার পরিবারের জন্য। আমাদের তরফ থেকে যে কোনো ধরনের সাপোর্ট আমরা করব। আমরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা সীমানা প্রাচীর সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগতরা এসে যেসব কর্মকাণ্ড করে তাদের প্রতিহত করার জন্য। এদিকটায় আমরা সফল হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সীমানা প্রাচীর আছে তা পুরো সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা। তারপরও কিছু কিছু দুষ্কৃতকারী আছে বালির বস্তা দিয়ে দেয়ালের ওপর দিয়ে চলে আসে। তারপর তারা মই লাগিয়ে রাখে। দেয়ালের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ করে, এখানে নিজেরা ঢুকে। আমরা চেষ্টা করছি এটা প্রতিহত করার।’

ফরিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ প্রশাসনসহ অন্য এজেন্সির লোকেরা চেষ্টা করছে জড়িতদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ইতিমধ্যে তারা সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত