Ajker Patrika

‘শারীরিক অক্ষমতার’ জন্য স্বামীকে হত্যা, আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২১: ০৪
‘শারীরিক অক্ষমতার’ জন্য স্বামীকে হত্যা, আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

প্রায় দেড় মাস আগে শরিফুলের (২৫) সঙ্গে ফারজানার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর শরিফুলের শারীরিক অক্ষমতার জন্য তাঁদের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এরই জেরে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী ফারজানা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যুবকের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করেছেন স্ত্রী ফারজানা খাতুন। গতকাল সোমবার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহজাদপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। 

আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল ইসলাম।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামের মৃত আবু সামার ছেলে তাঁতশ্রমিক শরিফুল (২৫) ও চর বেতকান্দি গ্রামের ফখরুল ইসলামের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা ফারজানার (১৮) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শরিফুলের শারীরিক অক্ষমতার কারণে ফারজানা অসুখী ছিলেন। 

৯ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১১টায় শরিফুল ফারজানাদের বাড়ি যান। এ সময় ফারজানা শরিফুলকে বলেন, কবিরাজ বলেছেন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় যদি নদীর স্রোতের পানি তুলে পান করা হয় তাহলে শারীরিক অক্ষমতা দূর হবে। পরে রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় দুজনে ফারজানাদের বাড়ির অদূরে অবস্থিত করতোয়া নদীর পোলঘাটে যান। 

এ সময় শরিফুল পরনের কাপড় খোলেন। পরে লুঙ্গির ছেঁড়া অংশ দিয়ে ফারজানা শরিফুলের হাত-পা বেঁধে দেন। শরিফুল একটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল হাতে নিয়ে নদীর স্রোতের পানি তুলতে গেলে ফারজানা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়ে ঘাড় চেপে ধরেন।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে শরিফুল ফারজানার হাতে কামড় বসিয়ে দেন। এ সময় ফারজানা ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফুলের ঘাড় ভেঙে দেয়। পরে শরিফুলের মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফারজানা শরিফুলের দেহ পাশে থাকা ইঞ্জিনচালিত নৌকার নিচে ঢুকিয়ে দেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসিবুল ইসলাম আরও বলেন, কিছুদিন আগে স্বামী শরিফুলের শারীরিক অক্ষমতার বিষয়টি ফারজানা তাঁর মা বুলবুলি খাতুনকে জানিয়ে ছাড়াছাড়ির আগ্রহের কথা জানালে তাঁকে তাঁর মা গালমন্দ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল মজিদ ও মামলার তদন্তকারী উপপরিদর্শক গোপাল চন্দ্র। 

উল্লেখ্য, ১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় পার্শ্ববর্তী শিবরামপুর গ্রামের করতোয়া নদীর পোলঘাটে লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন এলাকাবাসী। পরে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর শরিফুলের মা ও পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করেন। মরদেহ উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী ফারজানাসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। ওই দিন শরিফুলের মা সূর্য বানু অজ্ঞাত আসামিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ফারজানা হত্যার কথা শিকার করেন।

এর দুই দিন পর ফারজানা গতকাল সোমবার হত্যার দায় স্বীকার করেন শাহজাদপুর আমলি আদালতে। নিহত শরিফুলের স্ত্রী ফারজানা জবানবন্দি পেশ করেন ও শাহজাদপুর আমলি আদালতের বিচারক গোলাম রব্বানী জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত