Ajker Patrika

গুরুদাসপুরে আছেন একজন ‘মিনি এমপি’

নাটোর প্রতিনিধি
গুরুদাসপুরে আছেন একজন ‘মিনি এমপি’

নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের ঘনিষ্ঠ নজরুল ইসলাম। গুরুদাসপুরে তাঁকে ‘মিনি এমপি’ বলেন স্থানীয়রা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে নানা আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন এলাকায়। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে গৃহহীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। পরে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন ইউএনও। 

গুরুদাসপুরে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে দরিদ্র গৃহহীনদের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা টিন শেড ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন নজরুল ইসলাম। উপজেলার বৃন্দাবনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের স্ত্রী জয়নব বেগমের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন নজরুল। এ ছাড়া স্থানীয় অসহায় আরও সাত নারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেন তিনি।

ভুক্তভোগী সাত নারী হলেন—নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী আসমা বেগম, ছাইফুল হোসেনের স্ত্রী ইঞ্জিরা বেগম, মৃত হাসমত আলীর স্ত্রী রাবিয়া বেগম, মৃত আবেদ আলীর স্ত্রী রিজিয়া বেগম, মৃত তারা মিয়ার স্ত্রী হাবিয়া বেগম, আব্দুল হামিদের স্ত্রী সাহারা বানু ও ইয়াছিন আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন। 

জয়নব বেগম গত বছর বাদী হয়ে নজরুলে বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। এই মামলায় গত ২ এপ্রিল আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন নজরুল। এরপর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৬ দিন কারাভোগের পর গত ১৮ এপ্রিল জামিনে বেরিয়ে আসেন নজরুল ইসলাম। এরপরই ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘জেল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠানোর পর গুরুদাসপুর থানার ওসির বদলি হয়ে গেছে।’ ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। 

এরপর নজরুলকে দলে আগের পদে বহাল করা হয়। গত ৪ মে গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পরিচিতি সভায় তাঁকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এমপি আব্দুল কুদ্দুস। এমপি আব্দুল কুদ্দুস নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এ দিকে টাকা না পেয়ে গত বুধবার ভুক্তভোগী সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগম গুরুদাসপুর আমলি আদালতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ এনে নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহাম্মদ ইউএনওর কার্যালয়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন। তখন ইউএনও শ্রাবণী রায় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। 

গতকাল শুক্রবার ওই সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের টাকা ফেরত দেন ইউএনও শ্রাবণী রায়। গতকাল সরকারি ছুটির দিন ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ভুক্তভোগী নারীদের ডেকে নিয়ে এসব টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তবে সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমের টাকা দেওয়া হয়নি। টাকা ফেরত পেতে তাঁদের শর্ত দেওয়া হয়েছে—নজরুলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

ইউএনও যখন তাঁর বাসভবনে ভুক্তভোগীদের ডেকে টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন তখন স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাঁর বাড়ির ফটকে উপস্থিত হন। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবরে ভুক্তভোগীদের ইউএনওর বাসভবনের প্রাচীর টপকে বের করে দেওয়া হয়। 

ঘুষের টাকা ফেরত নেওয়া নারীরা জানান, ইউএনও গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের ফোনকল করে টাকা নেওয়ার জন্য শুক্রবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবনে যেতে বলেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসমা বেগম, ইঞ্জিরা বেগম, রাবিয়া বেগম, রিজিয়া বেগম, হাবিয়া বেগম, সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগম ইউএনওর বাসভবনে যান। সেখানে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে অভিযোগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউএনও। বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে অভিযোগকারী ৭ জনের মধ্যে ৪ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। 

প্রাচীর টপকে পার হওয়া নারীদের মধ্যে আসমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে ইউএনওর পরামর্শে তাঁর গাড়িচালক জয়নাল হোসেনের সহায়তায় মই বেয়ে প্রাচীর টপকে বেরিয়ে যান তিনি। 

ভুক্তভোগী নারীরা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুম আহমেদ অভিযোগের বিষয়ে শুনানির পর রাতে নজরুল ইসলাম তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আসেন এবং ইউএনওর মাধ্যমে তাঁরা সবাই টাকা ফেরত পাবেন বলেও আশ্বাস দেন। 

গুরুদাসপুরের ইউএনও শ্রাবণী রায় জানান, নজরুল ইসলামের কাছ থেকে আদায় করেই টাকাগুলো ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। টাকা ফেরত দিতে এত গোপনীয়তা কেন—তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ইউএনও। তিনি বলেছেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। আমি শুধু আমার সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো নেতার প্রতি দুর্বলতা থেকে আমি কিছু করিনি।’ 

এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে নজরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার সকালে ফোনে তাঁকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমি পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার বিরুদ্ধে আমার প্রতিপক্ষ গৃহহীনদের দিয়ে মামলা করিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। জেলে যাওয়ার আগে আমি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পুকুর খননের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে চিঠি দিই। এই চিঠিতে গুরুদাসপুর থানার তৎকালীন ওসি আব্দুল মতিনের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ ছিল। এরপর তিনি বদলি হয়েছেন। আমি জেল থেকে বের হয়ে লাইভে বলেছিলাম যে, আমি ওসিকে বদলি করিয়েছি। শুক্রবার ইউএনও আমার থেকে কোনো টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী কাউকে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তবে ইউএনও অত্যন্ত ভালো মানুষ।’ 

এলাকায় তাঁকে ‘মিনি এমপি’ ডাকা হয় কেন জানতে চাইলে নজরুল পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমি মিনি এমপি হলে আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করবে কী করে? আমি এমপি কুদ্দুসের রাজনীতি করি।’ 

নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ‘নজরুল পেশায় একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। কিন্তু এলাকায় প্রভাবশালী। প্রতারণা করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে হয়রানি করেন। প্রশাসনও তাঁর কথায় চলে। এমপির ঘনিষ্ঠ এই নজরুলের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।’ 

গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ আলী বলেন, ‘নজরুল সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রতারক হিসেবে নানা অপকর্মে জড়িত। আমাদের লজ্জা হয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্প বেচে যিনি গরিবদের থেকে টাকা আদায় করার পরও সাংসদের সঙ্গে থাকেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা করার নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৫৮
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনার ২৯ বছর পর আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন।

সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া আদালতের রায়ের বিরুদ্ধের তাঁর মা নীলা চৌধুরী দ্বিতীয় দফায় যে রিভিশন মামলা করেছিলেন, তা মঞ্জুর করে আজ এই আদেশ দিলেন আদালত।

রিভিশনকারী পক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, আদেশে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাই অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

নীলা চৌধুরীর এ রিভিশন মামলার শুনানি শেষে গত ১৩ অক্টোবর আদালত আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর দিন করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন তাঁর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পরের বছর ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে আবার আদালতে মামলা করেন তাঁর বাবা। ওই সময় সিআইডিকে অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়।

ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হয়।

কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে রিভিশন মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে।

২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন মামলা করে বাদীপক্ষ।

রিভিশন মামলায় বলা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে বারবার তাঁর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে বলা হচ্ছে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যাকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

ভক্তদের মানববন্ধন

এদিকে সালমান শাহর ভক্তরা সকাল থেকে আদালত এলাকায় হাজির হন। হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানান তাঁরা। এ সময় তাঁরা সালমান শাহ হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত