Ajker Patrika

এলাকায় অমায়িক মানুষটিই দুর্ধর্ষ খুনি

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২১, ১৬: ২৪
এলাকায় অমায়িক মানুষটিই দুর্ধর্ষ খুনি

মহল্লায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাস করেছেন। কিন্তু কখনো কারও সঙ্গে বিরোধ হয়নি। এলাকার লোকজনের ভাষ্য, লোকটি ‘অমায়িক ভালো’ মানুষ। অথচ তিনিই একজন দুর্ধর্ষ খুনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা কাজী আরেফ আহমেদসহ একসঙ্গে পাঁচজনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি হত্যায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। ডাকাতির মামলাও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

এই ব্যক্তির নাম রওশন। গত বুধবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর ভাড়ালীপাড়া থেকে র‍্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রাজশাহীতে তিনি ‘আলী’ নামে পরিচিত। আর জাতীয় পরিচয়পত্র করেছিলেন ‘উদয় মণ্ডল’ নামে।

১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি সভা চলাকালে প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ার করে কাজী আরেফসহ পাঁচ নেতাকে হত্যার পর আত্মগোপন করেন রওশন। মুখের দাঁড়ি কেটে ফেলে ভাড়ালীপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন। এরপর কেটে যায় ২২ বছর। এরই মধ্যে রাজশাহীতে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। করেছেন দুটি বাড়ি। 

ভাড়ালীপাড়া মহল্লায় রওশনের দোতলা বাড়ি। এটি নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। আরেকটি তিনতলা বাড়ি একই ওয়ার্ডের ডাঙ্গিপাড়ায়। ভাড়ালীপাড়ার বাড়িটিতেই ছেলে আমির হামজা, মেয়ে দুলালি খাতুন ও স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে থাকতেন রওশন। শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে বাড়িটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে। ডাঙ্গিপাড়ার বাড়িতে গিয়েও তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। 

ভাড়ালীপাড়ার প্রতিবেশী মো. সুমন বলেন, ‘আলী যে রওশন, সেটা আমরা আজই জানলাম। আমরা তো অবাকই হচ্ছি। এ রকম একটা ‘অমায়িক ভালো’ মানুষের অতীত এমন তা ভাবতেই পারছি না।’ ভাড়ালীপাড়ার গলিতে ঢোকার মুখেই রুহুল আমিনের মুদি দোকান। তাঁর সঙ্গে চলাচল ছিল রওশনের। রুহুল আমিন বলেন, এই এলাকায় আলীর কোন খারাপ রিপোর্ট নাই। কেউ বলতে পারবে না। সব সময় মাথা নিচু করে চলতো। তাঁর কথায় সাঁয় মিলিয়ে শাজাহান আলী নামে আরেক ব্যক্তি বললেন, ‘খুবই ঠান্ডা মানুষ। কারও সাথে গাঢ়ভাবে মিশত না।’ 

ভাড়ালীপাড়া মহল্লায় রওশনের দোতলা বাড়িএলাকার লোকজন জানান, দুই দশক আগে ভাড়ালীপাড়ায় এসে জার্জিস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন রওশন। তখন রওশন উন্নত জাতের গাভী কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। কিছুদিন পর এলাকার একটি খাস জমিতে বাড়ি করেন। ১৫ বছর আগে ৮ কাঠা জমি কিনে একটি টিনশেড বাড়ি করেন। বছর দশেক আগে গরু কেনাবেচা ছেড়ে জমির দালালিতে ঢুকে পড়েন রওশন। আর এতেই ঘুরে যায় ভাগ্য। টিনশেডের বাড়ির পাশে করেন দোতলা বাড়ি। তখন নিচতলায় রওশনের ভাই মামুন এসে থাকতে শুরু করেন। আর দোতলায় থাকেন রওশন। 

তিন বছর আগে ডাঙ্গিপাড়ায় সাত কাঠার আরেকটি প্লট কেনেন রওশন। সেখানে এখন তিনতলা বাড়ি। ডাঙ্গিপাড়া একটি নতুন আবাসিক এলাকা। আমবাগানে ঘেরা এলাকাটি খুবই নির্জন। হাতেগোনা কয়েকটি বাড়ি হয়েছে। আশপাশের সব জমি প্লট আকারে বিক্রি করেছেন রওশন। শুক্রবার বিকেলে ওই বাড়িটিতে গিয়ে এশাদুল ইসলাম ওরফে বাণিজ্য নামের এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল। এশাদুল পরিবার নিয়ে এ বাড়িতেই থাকেন। এশাদুল বললেন, আলী খুবই ‘দয়াবান’ মানুষ। 

তিনি জানান, বিপদে পড়ে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। তারপর ডাঙ্গিপাড়ায় আলীর বাড়ির পাশেই তাঁর কাছ থেকে এক কাঠা জমি নিয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে বাড়ি করতে পারেননি। যত দিন বাড়ি না হচ্ছে, তত দিন নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন আলী। এশাদুল বলেন, ‘আমরাও কিছু জানতাম না। এমনিতে তো সে খুব ভালো মানুষ। কেউ শালা বললে দুলাভাই বলে চলে এসেছে। তাই জমির মতো জটিল ব্যবসা করলেও কারও সাথে কোনো দিন ঝামেলা হয়নি। কোনো দিন থানা-পুলিশও হয়নি। এই প্রথম র‍্যাব তাঁকে নিয়ে গেল।’ 

স্থানীয়রা জানান, আমির হামজা নামের এক দলিল লেখকের মাধ্যমে জমির দালালিতে ঢোকেন রওশন। বড়বনগ্রাম এলাকার শালেক ও কৃষ্টগঞ্জের আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে এই ব্যবসা করতেন। তাঁরা জমির মালিককে অল্প কিছু টাকা দিয়ে জমি নিতেন। তারপর ক্রেতা ঠিক করতেন। ক্রেতার নামে জমির রেজিস্ট্রি করার দিন মালিককে বাকি টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হতো। মূল টাকা থেকে তিনজন কমিশন কেটে রাখতেন। এভাবে টাকার কুমির হয়েছেন রওশন। তাঁর একেকটি বাড়ির মূল্য কোটি টাকার ওপরে। এলাকার লোকজন জানেন, তানোর উপজেলার দিকে নিজের নামে আরও অনেক জমি কিনেছেন রওশন। 

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহাদত আলী বলেন, ‘ছদ্মবেশে থাকার জন্য সে দাঁড়ি কেটে ফেলেছিল। মাথায় সব সময় ক্যাপ দিয়ে থাকত। যদ্দুর জানি লোকটা জামায়াত-শিবির ঘেঁষা। গোপন মিটিংয়ে থাকত। জামায়াত-শিবিরকে টাকা দিত। শিবির ক্যাডার জসিমের সাথে তার খুব ভাব।’ 

১৭ নম্বর ওয়ার্ডে রওশনের আরকটি তিনতলা বাড়িনগরীর শাহমখদুম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাড়ালীপাড়ায় মো. জসিম নামে শিবিরের এক বড় নেতা আছে। তাঁর নামে থানায় তিনটা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তাই পলাতক। তবে জসিমের সাথে রওশনের কেমন সম্পর্ক সেটা জানি না।’

ওসি জানান, তাঁর এলাকার জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীদের ২০১৩ সালের একটা তালিকা আছে। সেই তালিকায় আলীর নাম নেই। এমন দুর্ধর্ষ খুনি এলাকায় পরিচয় লুকিয়ে এত দিন থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এখন নতুন কেউ এলে তাঁর গ্রামের ঠিকানা নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। ২২ বছর আগে সেটা হতো না। রওশন তো এলাকায় ‘আলী’ হিসেবে একরকম স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল। তাই তাঁর সম্পর্কে আলাদা করে খোঁজ নেওয়া হয়নি।

রওশনকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব জানিয়েছে, রওশনের ফাঁসির দণ্ড থাকার বিষয়টি শুধু তাঁর স্ত্রী জানতেন। ছেলে-মেয়েরাও জানত না। উদয় মণ্ডল নামে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। সেটি গাজীপুরের ঠিকানায় করা। জাতীয় পরিচয়পত্রে উদয় মণ্ডল নাম দেখে কেউ জানতে চাইলে রওশন বলতেন, উদয় মণ্ডল তাঁর আসল নাম। আর ডাকনাম আলী। জানাতেন, তাঁর জন্মস্থান গাজীপুর। প্রকৃতপক্ষে তাঁর জন্মস্থান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। 

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় জাসদের পাঁচ নেতাকে হত্যার মামলায় ২০১৬ সালে তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে পলাতক ছিলেন রওশন। এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিন নিয়ে পালিয়েছিলেন তিনি। গাংনীর কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাকী ও স্কুলশিক্ষক আমজাদ হত্যাকাণ্ডেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। গাংনী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি ডাকাতিরও মামলা আছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত