Ajker Patrika

নৌকায় ভোট দেওয়ায় অধ্যক্ষের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগ

বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ২৩
Thumbnail image

রাজশাহীর বাগমারায় গোড়সার বি. এম কলেজের অধ্যক্ষের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন জালাল উদ্দিন নামের এক প্রভাষক। অপরদিকে, গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের আবু বকর সিদ্দিক নামে কম্পিউটার ল্যাবের এক শিক্ষককেও অকথ্য ভাষা ব্যবহারসহ মারধরের হুমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় লাঞ্ছিতের শিকার ওই দুই শিক্ষক গতকাল সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও বাগমারা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, একই স্থানে গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়, গোরসার মহাবিদ্যালয় এবং গোরসার বি. এম কলেজ নামে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করেন গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। আব্দুর রশিদ পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোট করেন। ভোটে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তাঁর প্রতিষ্ঠানসহ তিনি যে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নৌকা প্রার্থীর ভোট করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাঁকে ভোট না দিয়ে কেন অন্য প্রার্থীর হয়ে সরাসরি কাজ করল এমন অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের নির্দেশনায় তাঁরই প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে লাঞ্ছিত করেন। একই সঙ্গে কম্পিউটার ল্যাবের আবু বকর সিদ্দিককে স্কুল থেকে বের করে দেন। পরে তাঁকে ২ জানুয়ারি থেকে আর বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর আগে ২০২১ সালে জানুয়ারি মাসের বেতনটাও আটকিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। বেতন চাইলে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, গোরসার মহাবিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মতর রয়েছেন জালাল উদ্দিন। গত সোমবার কলেজে গেলে আব্দুর রশিদের শ্যালক গোরসার বি. এম কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী শেখ সম্রাট অবৈধভাবে গোরসার কলেজে প্রবেশ করে জালাল উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। পরে জালাল উদ্দিনকে শাহজাহান আলী শেখ সম্রাট ও তাঁর ছোট ভাই গোলাম মোস্তফা এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকেন। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করেন। জালাল উদ্দিন নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। নৌকার হয়ে ভোট করায় আগে থেকেই তাঁরা হুমকি প্রদান করে আসছিলেন। 
 
লাঞ্ছিতের শিকার গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের একক আধিপত্য চলে। সেখানে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। তিনি ইচ্ছা করেই আমার বেতন আটকে রেখেছেন। বেতন চাইলে চাকরিচ্যুত করার ভয়ভীতি দেখান। 

ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক তাঁর ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। আমি শুনেছি আবু বকর সিদ্দিকের এক মাসের বেতন এখনো পরিশোধ করা হয়নি। আমি সভাপতি হলেও আমার কথার কোনো মূল্য দেয় না। সেই সঙ্গে তাঁর বোনজামাই গোরসার মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার সুবাদে প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে প্রবেশ করে প্রভাষক জালাল উদ্দিনকে মারপিট করা হয়। 

অভিযোগের বিষয়ে শাহজাহান আলী শেখ সম্রাটের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যার কারণে আবু বকর সিদ্দিককে প্রতিষ্ঠান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রভাষককে কেন মারপিট করা হয়েছে তাঁর কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে গোরসার মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। 

গোরসার মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি জালাল উদ্দিনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। তবে কি কারণে সেটা আমার জানা নেই। আমি সে সময় বাইরে ছিলাম। এদিকে আব্দুর রশিদ গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও তিনি গোরসার মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর শ্যালক গোরসার বি. এম কলেজের অধ্যক্ষ। তিনটি প্রতিষ্ঠান আব্দুর রশিদের নিয়ন্ত্রণে চলছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান বলেন, প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত