Ajker Patrika

১৮ মাস পরে বাড়ি ফিরে দেখেন, তাঁদের কিছুই নেই

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ৪৭
১৮ মাস পরে বাড়ি ফিরে দেখেন, তাঁদের কিছুই নেই

দীর্ঘ আঠারো মাস পরে গ্রামে ফিরেছেন তাঁরা। ফিরে দেখেন তাঁদের ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ঘরে থাকা আসবাবপত্রের কোনো চিহ্ন নেই। বাড়ির চারপাশের গাছগুলো আর নেই। যত দূর চোখ যায়, শুধু লতাপাতায় ঘেরা জঙ্গল আর জঙ্গল।  দেখে মনে হবে এ যেন যুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত এক গ্রাম।

সভ্য সমাজেও এমন নিষ্ঠুর বর্বর চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে। অথচ আঠারো মাস আগেও এখানে ছিল মানুষের কোলাহল। কাঁচা পাকা কয়েকশত ঘরবাড়ি ও শত শত মানুষের বসবাস।

তবে অনেক দেরিতে হলেও প্রশাসনের সহযোগিতায় তাঁরা আবার গ্রামে ফিরেছেন। জঙ্গল কেটেকুটে পুনরায় আবাসস্থল গড়ার চেষ্টা করছেন। জরাজীর্ণ পরিবেশে শুরু করেছেন বসবাস।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দাবি করেছে, প্রতিপক্ষরা তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষরা বলেছে, ঘটনার পর তিন মাস এলাকায় পুলিশ ছিল। কে বা কারা এই জঘন্য কাজ করেছে তা তাদের জানা নেই।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার, সমাজপতিদের দলাদলি ও উসকানিতে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নেহেদ আলী (৬৫) ও বকুল আলী (৫৫) নামের আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার পরদিন নিহত নেহেদ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৮ জনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে আসামিরা এবং এ ঘটনায় প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার।

তাঁদের পালানোর সুযোগে ইট-পাথরের তৈরি পাকা ঘর-বাড়ি থেকে শুরু করে সব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরে থাকা সব ধরনের আসবাবপত্র, কৃষি ফসলাদি, গৃহপালিত পশু-পাখি, সোনার গয়না, নগদ টাকাসহ যাবতীয় সামগ্রী লুটপাট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

শুধু তাই নয়, দিনে দিনে ভাঙা ঘরের ইট, কাঠ ও মাটি পর্যন্ত লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বড় বড় কাঠের বাগানসহ সব গাছ ও বাঁশ কেটে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আঠারো মাস পরে ফেরা পাহারপুর গ্রামের মৃত হেকমতের ছেলে আলমগীর হোসেন বলেন, 'আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। ঘটনার সময় মার্কেটে ছিলাম। মুঠোফোনে জানতে পারি এলাকায় জোড়া খুন হয়েছে। পরে সেই খুনের মামলায় আমাকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।'

আলমগীর আরও বলেন, 'মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে ছিলাম। সেই সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন পাকা, কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে চার শ মেহগনি গাছের একটি বাগান ছিল। তিন বিঘা জমিতে পুকুর ছিল। সব লুটপাট হয়ে গেছে।'

ওই গ্রামের রুস্তম আলী শেখের স্ত্রী আলেয়া খাতুন বলেন, ' আমরা ঘটনায় জড়িত নই। তবু সেদিন রাতে মুখ বাঁধা কিছু লোক বাড়িতে হামলা চালিয়ে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার দুই লাখ টাকা ও গয়না লুট করে নেয় এবং আমার বিয়ের উপযোগী দুই মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে বেধড়ক মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। 'আলেয়া খাতুন আরও বলেন, 'আমার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। এত দিন সেখানে থাকতাম। এখন প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়িতে এসেছি। কিন্তু ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র কিছুই বাড়িতে নেই। তবু নতুন করে বসবাস শুরু করতে চাই। সরকার যেন আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।'

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, 'তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এলাকায় যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। আমরাও চাই প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। কিন্তু যারা নিরপরাধ, নির্দোষ, তারা কেন মামলার আসামি হবে, ভোগান্তি পোহাবে, এলাকাছাড়া হবে? তাঁরা আরও বলেন, 'একজন অপরাধ করতে পারে, কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা তো অপরাধী নয়! ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, পশুপাখি, গাছপালা, বাড়ির আসবাবপত্র তো অপরাধী নয়!'

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একসময় জনাকীর্ণ পাহাড়পুর গ্রামের অর্ধেক অংশ লতাপাতায় জঙ্গলে ভরা। শুধু ঘরবাড়িগুলোর ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে। ফেরত আসা পরিবারগুলোর কেউ বাঁশ কাঁটছে। কেউ আবার জরাজীর্ণ থাকার ঘর তৈরি করছে। 

এ ছাড়া গ্রামে পুলিশের টহল গাড়ি ও দুজন পুলিশ সদস্যকে দাঁয়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

মামলার ২৩ নম্বর আসামি মাসুদ রানার স্ত্রী বলেন, 'আমার স্বামী ময়মনসিংহে চাকরি করে। সেখানেই আমরা থাকি। ঘটনার দিন সেখানে থেকে মার্ডার মামলার আসামি হয়েছে স্বামী। আর কে বা কারা ঘরবাড়ি ভেঙে গাছগাছালিসহ মালামাল লুট করেছে।'

ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান বলেন, 'আমি একজন কৃষক। আট বিঘা জমিতে চাষাবাদ করি। আমি মামলার আসামি নই, তবু আমার ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে। নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু করেছি।'

জোড়া খুন মামলার বাদী বলেন, 'আমার পরিবার শোকাহত। আমরা কারও ঘরবাড়ি ভাঙিনি। লুটপাটও করিনি। ঘটনার পর প্রায় তিন মাস এলাকায় পুলিশ ছিল।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সঙ্গে সামাজিকভাবে সমঝোতা না করে হঠাৎ পুলিশ আসামিপক্ষের বাড়ি তুলে দিয়েছে। তৃতীয় পক্ষ কোনো  সুযোগ নিলে কে এর দায়ভার নেবে?'

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, 'আসামিরা জামিন নিয়ে গ্রামে ফিরেছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।'

ওসি আরও বলেন, ' ঘটনা আমি যোগদানের পূর্বে। তাই কে কী  করেছে জানা নেই। তবে মিলেমিশে বসবাসের জন্য উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত