Ajker Patrika

কিশোরীকে ধর্ষণ-হত্যার পর চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন সৎবাবা: পুলিশ

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭: ০৪
কিশোরীকে ধর্ষণ-হত্যার পর চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন সৎবাবা: পুলিশ

যশোরে রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পরিচয় শনাক্তের পর তার সৎবাবাকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি তাঁর সৎমেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণের কথা গোপন রাখতেই, শ্বাসরোধে হত্যা করে মেয়েকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানানো হয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মিন্টু সরদার (৩৯)। 

আর নিহত কিশোরীর নাম আঁখি খাতুন (১৪)। তার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের দড়িয়াপুর গ্রামে। 

পুলিশ বলছে, গতকাল সোমবার সকালে যশোর সদরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনের পাশে অজ্ঞাত এক কিশোরীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তার মুখমণ্ডল রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই কিশোরীর ছবি দিয়ে পরিচয় শনাক্তের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। ফেসবুকে ছবি দেখে মহেশপুর থেকে এক ব্যক্তি নিহতকে শনাক্ত করতে পারেন। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, কিশোরীর পরিচয় পাওয়ার পরে সন্দেহভাজন হিসেবে তার সৎবাবা মিন্টুকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এই ঘটনায় আঁখির মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা করবেন। 

মিন্টুর বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বেলাল হোসাইন বলেন, ‘ ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সৎমেয়ে আঁখিকে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যান মিন্টু। মেলায় ঘোরাঘুরি শেষে রোববার যশোর শহরের রেলস্টেশন এলাকার বৈকালী হোটেলের একটি কক্ষে ওঠেন। সেখানে আঁখির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান সৎবাবা মিন্টু। পরের দিন রাতে ট্রেনযোগে বাড়ি ফেরার সময় রাতে যশোর রেলস্টেশনের ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে পুনরায় তাকে ধর্ষণ করেন। এ দিন রাত ১১টার দিকে সীমান্ত এক্সপ্রেসে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের কথা ধামাচাপা দিতে চলন্ত ট্রেনেই কিশোরীর গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মিন্টু। এরপর ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে তিনি বাড়িতে ফিরে তরুণীর দুই পায়ের এক জোড়া নূপুর একটি সিগারেটের প্যাকেটে ভরে তার বসতঘরের পাশে আবর্জনার মধ্যে পুঁতে রাখেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, আঁখির মা নুরজাহান বেগমের মিন্টুর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে সাতক্ষীরায় বিয়ে হয়েছিল। সেই দম্পতির সন্তান আঁখি। পরবর্তীতে সেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে মিন্টুকে বিয়ে করেন নুরজাহান। মিন্টু দিনমজুরের কাজ করেন। এর আগে মিন্টুরও দুই বিয়ে হয়েছিল। এর মধ্যে এক স্ত্রী মিন্টুকে ছেড়ে চলে যান; অন্যটি মারা যান। মিন্টু ও নুরজাহানের সংসারে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। 

এদিকে অভিযুক্ত আসামি মিন্টুকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত করা হলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি জীবনে বড় ভুল করেছি। আমার মেয়েকে মেলাতে ঘোরানোর প্রলোভনে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছি। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুইবার ধর্ষণ করেছি। এমন ভুল জীবনে আর করব না। আমার মতো এই ভুল যাতে কেউ না করে। এই কথা ভাবতে গেলে আমি কিছু খেতেও পারছি না। কীভাবে কী করে ফেললাম ভাবতে পারছি না। মারার সময় মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইও-১ ডিএসবি) মামুন খান, জেলা ডিবি (ওসি) রুপন কুমার সরকার, ডিবি পুলিশের এস আই মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেয়াদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা সরকারের

নারীর সঙ্গে এনসিপি নেতা তুষারের কথোপকথন ফাঁস নিয়ে যা বললেন সহযোদ্ধা ইমি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, স্বীকার করল ইসরায়েল

ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের সংলাপ ‘বয়কট’ করল জামায়াত

চোখের সামনে খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ফাঁকা করে দিচ্ছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত