Ajker Patrika

যাতায়াতের রাস্তার বিনিময়ে কুপ্রস্তাব, রাজি না হওয়ায় ঘরবন্দী গৃহবধূ

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫২
যাতায়াতের রাস্তার বিনিময়ে কুপ্রস্তাব, রাজি না হওয়ায় ঘরবন্দী গৃহবধূ

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিষখালী গ্রামে এক গৃহবধূর যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রতিবেশী ভাশুর এমন আচরণ করছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি চেয়ারম্যান ও থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। 

রাস্তা বন্ধ করায় চার বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে প্রায় ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন গৃহবধূ দিপা রায়। তিনি বলেন, চাকরির কারণে স্বামী বাদল দাস ঢাকায় থাকেন। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন তিনি। পাশেই ভাশুর (বাদল রায়ের চাচাতো ভাই) বিনয় দাসের বাড়ি। তাঁর বাড়ির পাশ দিয়েই তাঁকে যাতায়াত করতে হয়। প্রায় চার বছর আগে এখানে বাড়ি করেন তাঁরা। তখন থেকেই ভাশুর তাঁর ওপর লোলুপ দৃষ্টি দেন। নানাভাবে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তাঁর নামে অপপ্রচার চালান। প্রায় দুই মাস আগে ভাশুর বিনয় ও তাঁর ভাই বিপুল দাসসহ স্থানীয় কয়েকজন মিলে চলাচলের রাস্তাটিতে কাদামাটি ফেলে বন্ধ করে দেন। বিষয়টি থানার পুলিশকে জানালে তাঁদের উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ হয়। ওই সালিশে বিষয়টি সমাধানের জন্য বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন দাসের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান শুধু কালক্ষেপণ করছেন। 

দিপা রায়ের স্বামী বাদল দাস বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি আমি জানি। জায়গার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমাধান করে দেওয়ার কথা বললে আমি এলাকায় আসি। চেয়ারম্যান তিন দিনের মধ্যে সমাধানের কথা বললেও আজ-কাল করে করেননি। তিনি চাইলে যেকোনো সময় বিষয়টির সমাধান করতে পারেন। কী কারণে সমাধান করছেন না, তা আমি জানি না। আমার স্ত্রী ও সন্তান চরম সমস্যা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।’ 

দিপা রায়ের প্রতিবেশী চন্দনা দাস বলেন, ‘দিপার স্বামী ঢাকায় থাকে। বাড়িতে দিপা ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে একা থাকে। এই সুযোগে বিভিন্ন সময়ে তার ভাশুর বিনয় ও তার পরিবার দিপাকে নানাভাবে হয়রানি করে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। দিপা আমাকে জানিয়েছে, গোপনে নাকি তার ভাশুর তাদের জায়গার ওপর দিয়ে চলাচল করতে দেওয়ার বিনিময়ে কুপ্রস্তাব দিয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে দিপা তার ছেলেকে নিয়ে একপ্রকার ঘরবন্দী অবস্থায় আছে।’ 

অভিযুক্ত বিনয় দাস বলেন, ‘আমি অনৈতিক কুপ্রস্তাব দিইনি। মূল ঘটনা হচ্ছে, তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য কোনো জায়গা নেই। তারা আমার বাড়ির জায়গার ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। আমি শুরু থেকে বলছি, আমার জায়গার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হলে আমাকে জায়গার মূল্য হিসাবে টাকা দিতে হবে, না হয় আমাকে সমপরিমাণ জায়গা দিতে হবে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন দাস বলেন, ‘পারিবারিক জায়গা-জমি নিয়ে দিপার স্বামীর সঙ্গে বিনয় দাসের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করছি।’ 

কুপ্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। যেহেতু বিষয়টির কোনো প্রমাণ নাই, তাই এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাইছি না।’ 

মোরেলগঞ্জ থানার এসআই উজ্জ্বল কুমার মৈত্র লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দিপা রায় নামের এক গৃহবধূ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যেহেতু এটা পারিবারিক বিষয়, সে কারণে সমাধানের জন্য ২০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু ২০ দিন পার হলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি, এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঈদের পরে বসে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত