Ajker Patrika

চোরকে পুলিশে দেওয়ায় পিয়নকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ৮ 

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ৪১
চোরকে পুলিশে দেওয়ায় পিয়নকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ৮ 

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চোর ধরাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে একজন নিহত এবং অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম আব্দুর রাজ্জাক (৫৫)। তিনি কোমরকান্দি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে ও খোকসার গোপগ্রাম ভূমি অফিসের পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আহতরা হলেন নিহত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদ (২৫), মেয়ে রোজিনা, তাঁর স্ত্রী রেবেকা খাতুন (৪০), একই এলাকার মৃত আতর আলীর ছেলে জাফর, আজেদ আলী (৬৫), আজেদ আলীর ছেলে ফারুক (৪০), আমদ শেখ ও মজনু শেখ। তাঁরা নিজ বাড়ি, কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের আহাজির। এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আসামিপক্ষের বেশ কিছু ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি। বর্তমানে কোমরকান্দি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শনিবার বালা ১১টার দিকে কোমরকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের অবস্থান। বেশ কিছু ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের চিহ্ন রয়েছে। আসামিপক্ষের বাড়িতে নেই কোনো পুরুষ। আতঙ্কে পালাচ্ছে নারীরাও। কয়েকজন গরু-ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। 

নিহতের স্বজনেরা ও এলাকাবাসী জানান, গত শুক্রবার রাতে এলাকায় চোর ঢুকেছিল। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বর ফিরোজ খাঁর লোকজন চোরকে ধাওয়া করেছিল। ধাওয়া খেয়ে চোর বর্তমান মেম্বার আব্দুস সাত্তারের সমর্থক নিহত রাজ্জাকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় রাজ্জাক ও তাঁর লোকজন চোরকে মারপিট করতে বাধা দেন এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এ নিয়ে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কথা বলার জন্য রাজ্জাককে কোমরকান্দি বাজারে ডেকে আনেন ফিরোজা খাঁ।

কুমারখালীর কোমরকান্দি গ্রামে পুলিশের অবস্থান। এরপর রাজ্জাক কোমরকান্দি বাজারে পৌঁছালে প্রতিপক্ষের সুরদ্দিন তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন এবং প্রতিপক্ষরা রাজ্জাকসহ তাঁর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালান। এতে নিহতের ছেলে, স্ত্রীসহ অন্তত আট জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, চোর ধরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। 

ঘটনার পর থেকেই পরাজিত মেম্বার ফিরোজ খাঁসহ তাঁর লোকজন পালিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর সমর্থক মন্টুর স্ত্রী খালেদা খাতুন বলেন, ‘সাত্তার মেম্বরের লোকজন অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। টাকা, স্বর্ণ, গরু-বাছুর সব লুট করে নিয়ে গেছে।’ 

নিহতের মেয়ে শামিমা খাতুন বলেন, ‘সকালে বসাবসির (সালিস) কথা বলে ফিরোজ, ‘শহিদুল, লিমনরা বাবাকে ডেকে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পরে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমার মা, ভাই, বোন সবাইকে কুপিয়েছে।’

কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আব্দুস সাত্তার জানান, শুক্রবার রাতে চোরকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শনিবার সকালে বৈঠকের কথা বলে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে শত শত লোকের সামনে ছুরিকাঘাত করে আব্দুর রাজ্জাককে হত্যা করা হয়েছে। হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ওসি আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই নাম-পরিচয় বলা যাচ্ছে না।

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত