Ajker Patrika

অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে পালিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি কিশোরী

বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ২২: ০৪
অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে পালিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি কিশোরী

কাজে দেরি হলেই মোটা লাঠি দিয়ে পেটাত। চামচ ও খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে খোঁচা দিত। মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। অবশেষে এক কাপড়ে পালিয়ে এসেছে রাবেয়া আক্তার ওরফে আকলিমা (১৭)। আজ শনিবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন গৃহকর্মী রাবেয়া এভাবেই তাকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে।

রাবেয়া আক্তার ওরফে আকলিমা বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর বারইখালী গ্রামের সুলতান মোল্লার মেয়ে। ২০১৫ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে একই গ্রামের জালাল হাওলাদারের মাধ্যমে খুলনার নিরালা এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক এস এম সামছুল হকের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে পাঠান তার মা-বাবা। সেখানে পাঁচ বছর কাজ করার পর রাবেয়াকে সিলেটে সামছুল হকের মেয়ে তানিয়া সুলতানা লাকির কাছে পাঠানো হয়। তিন মাস পর তাঁকে ঢাকার মিরপুরে ছোট বোন নাসরিন সুলতানা লিজার বাসায় পাঠিয়ে দেন লাকি।

এর আগে পর্যন্ত বেশ ভালোই ছিল রাবেয়া। কিন্তু নাসরিন সুলতানার বাসায় আসার পর অমানুষিক নির্যাতন শুরু হয়। তিন বছর নির্যাতন সহ্য করেছে। অবশেষে শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে ৫ অক্টোবর পালিয়ে মোরেলগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে আসে রাবেয়া। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাবেয়ার হাত-পা, মুখমণ্ডল, ঘাড়-পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। শারীরিকভাবে বেশ দুর্বলও।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শর্মী রায় বলেন, ‘ওই কিশোরীর সারা শরীরেই ক্ষতচিহ্ন। এগুলো বেশ পুরাতন। শার্প কাটিং (ধারালো কিছু দিয়ে কাটা) কোনো ক্ষত নেই। সবই লাঠি বা এ ধরনের কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন বলে মনে হয়েছে। সে দুর্বলতা ও শরীরে ব্যথার কথা বলেছে। এখন শারীরিকভাবে সে ভালো আছে। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’

হাসপাতালের বিছানায় বসে নির্যাতনের বর্ণনা দেয় রাবেয়া। সে বলে, ‘সামছুল হক স্যার ও তাঁর বড় মেয়ে সবাই ভালো ছিল। কিন্তু তাঁর ছোট মেয়ে অন্য রকম। প্রতিটা কাজে সময় বেঁধে দিত। একটু দেরি হলে বা ভুল হলেই মারধর, বকাবকি করত। একদিন ওয়ারড্রবের ওপর টিকটিকির মল পাওয়ায় আমাকে মুখ দিয়ে পরিষ্কার করায়। আমার মা মারা গেলেও বাড়ি আসতে পারিনি। ওই ম্যাডামের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহফুজুর রহমান স্যারের পোস্টিংয়ের কারণে সৈয়দপুর, ঘাটাইল, সাভার, রংপুর হয়ে ঢাকার বাসায় কাজ করেছি। কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হতো না। পেটেভাতে কাজ করতাম। বড় করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে এমন কথা বলে অনেক ছোটবেলায় বাড়ি থেকে কাজে পাঠানো হয়েছিল।’

রাবেয়া বলে, ‘আমাকে প্রচুর মারধর করত। লাঠি, খুন্তি দিয়ে পেটাত। দেওয়ালে মাথা টাক (আঘাত) দিত। সব সময় একটা ভয়ে থাকতাম। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে আমি পালায় আসছি। আমি আর কিছু চাই না, আমার সঙ্গে যা হয়েছে এমন যেন আর কারও এমন জীবনে না হয়। আমার মা নেই। মায়ের শেষ স্মৃতি একটা নাক ফুল আছে ওই বাসায়। আপনারা আমাকে ওইটা এনে দেন।’ এই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে রাবেয়া।

মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাবেয়া আক্তার। ছবি: আজকের পত্রিকারাবেয়ার বড় বোন হামিদা বেগম বলেন, ‘বাবার দুই বিয়ে। প্রথম ঘরে আমরা চার বোন। পরের ঘরে সাত বোন দুই ভাই। অভাবের কারণে ওকে কাজ দিই। বছরে এক-দুইবার কথা হতো। আমরা জানতাম ও রংপুরে আছে। ঢাকায় আছে এই কথা আমাদের জানানো হয়নি।’

রাবেয়ার চাচা কাঞ্চন মোল্লা বলেন, ‘ওর বাবা এখন মৃত্যুশয্যায়। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওর বাবার কাছে ফোন করে বলা হয় রাবেয়া ঢাকার বাসা থেকে পালাইছে। কিন্তু তার আগে আমাদের জানানোই হয়নি মেয়েটা ঢাকায়। মেয়ে বাড়িতে আসলে আমরা ওসি সামছুল হক স্যারকে জানাই। তিনি এসে চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং আরও ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি এমন নির্যাতনের বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সামছুল হক বলেন, ‘রাবেয়া আমার মেয়ের বাসা থেকে অনেক মালামাল নিয়ে গত বুধবার পালিয়ে গেছে। মিরপুর থানায় জিডি করা হয়েছে। আপনারা শিগগিরই মোরেলগঞ্জ থানার মাধ্যমে মেইল পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া আমার মেয়ে রাবেয়াকে মারধর করেছে তাই মানবিক কারণে মোরেলগঞ্জে গিয়ে তার চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি।’

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাবেয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এখন জানলেন। তার চিকিৎসার বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত