Ajker Patrika

মেহেদির রঙে লিখে পরিবারকে দায়ী করে প্রেমিক দম্পতির ‘আত্মহত্যা’

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
মেহেদির রঙে লিখে পরিবারকে দায়ী করে প্রেমিক দম্পতির ‘আত্মহত্যা’

প্রায় দুই মাস আগে ভালোবেসে সংসার পেতেছিলেন ঝিনাইদহের রমজান হোসেন রুজিব (২০) ও মুক্তা খাতুন (১৮)। কিন্তু বিয়ে মেনে নেয়নি দুই পরিবার। তাই বাড়ি ছেড়ে সংসার করেন তাঁরা। আজ মুক্তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন। কিন্তু তার আগে গলায় একই ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এই প্রেমিক দম্পতি। এর আগে বুকে ও হাতে মেহেদি দিয়ে লিখে মৃত্যুর জন্য পরিবারকে দায়ী করেন তাঁরা। 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ঝিনাইদহের হাটবাকুয়া গ্রামের মাঠ থেকে স্বামী ও স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁদের বুকে ও হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ছিল-‘আমি মুক্তা ও রুজিব। আমরা চলে যাচ্ছি। আমাদের মৃত্যুর জন্য পরিবার দায়ী।’ 

রমজান হোসেন রুজিব জেলা সদরের তালতলা হরিপুর গ্রামের চমু শেখের ছেলে। অন্যদিকে মুক্তা খাতুন (১৮) হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিন্নি গ্রামের গোলাম হোসেনের মেয়ে। রমজান হোসেন জেলা শহরের হামদহ এলাকার একটি মোটর গ্যারেজে কাজ করতেন। 

মৃত্যুর পর প্রেমিক দম্পতির স্বজনদের আহাজারিসরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে রমজান হোসেন প্রেমের সম্পর্কের জেরে পরিবারের অজান্তে মুক্তা খাতুনকে বিয়ে করেন। এরপর থেকেই উভয় পরিবারের লোক তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তা খাতুনকে তাঁর বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া কথা ছিল। এরই জেরে রমজান ও মুক্তা গেল রাত ২টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। পরে সকালে বাড়ির পার্শ্ববর্তী হাটবাকুয়া গ্রামের মাঠের একটি মেহগনি গাছ থেকে তাঁদের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

পাশের গ্রামের আখি খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘ছেলেটা দুই মাস হয়েছে বিয়ে করেছে। প্রথম দিকে কয়েক দিন পর তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল পরিবারের লোকজন। কিন্তু এর কয়েক দিন পর মেয়ের পরিবারের লোকজন ছেলের বাড়িতে আসলে শুরু হয় বিপত্তি। সে সময় থেকেই তারা আবার মুক্তা ও রুজিবের সম্পর্কে বাধা দিতে থাকে। পৃথক করে দিতে চায় তাদের। আজ মুক্তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর বাবার বাড়ির লোকজনের। কিন্তু রমজান ও মুক্তা এক সঙ্গে থাকতে চায়। এ জন্য হয়তো তারা আত্মহত্যা করেছে।’ 

মৃত্যুর আগে মেহেদির রঙে হাতে লিখে মৃত্যুর জন্য পরিবারকে দায়ী করেন এই প্রেমিক দম্পতিনিহতের বড় ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাতের খাবার খেয়ে এক সঙ্গে বসে অনেক গল্প হাসি ঠাট্টা করে যার যার রুমে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে খবর পাই তারা দুজন মাঠের একটি মেহগনি গাছের ডালে একই ওড়নায় ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।’ 

মুক্তা খাতুনের ফুপু পরিচয় দেওয়া এক নারী বলেন, ‘আজ আমাদের মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন তারা আজ এ কাজ করল জানি না।’ 

ঝিনাইদহের নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে এই আত্মহত্যার ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত