Ajker Patrika

কুমারখালীতে আড়াই মাসের শিশুটির লাশ বিলে ফেলে দিয়েছিলেন মা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
Thumbnail image

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আড়াই মাসের শিশু ইসরাফিলকে লাশ বিলে ফেলে এসেছিলেন তারই গর্ভধারিণী মা রেহেনা খাতুন। সন্তানকে ঠিকঠাক বুকের দুধ পান করাতে পারতেন না তিনি। এ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এ থেকেই সন্তানের লাশ গোপন করে চুরির নাটক সাজান বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

আজ শুক্রবার বিকেলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে লাশ গোপন করার দায় স্বীকার করেছেন রেহেনা খাতুন। রেহেনারা বাবা বলছেন, তাঁর মেয়ে মানসিক ভাবে অসুস্থ। তিনিই সন্তানকে হত্যা করেছেন। 

আজ রাত পৌনে ৮টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ইকরামুল হক। 

ইকরামুল জানান, রেহেনার দুটি সন্তান বুকের দুধ পান করত। তারা সব সময় ঠিকঠাক দুধ পেত না। এ নিয়ে রেহেনা খাতুন সব সময় মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকতেন। 

রেহেনাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসআই ইকরামুল জানান, ঘটনার দিন (গত সোমবার) রাতে আড়াই মাসের শিশু ইসরাফিল বিছানা থেকে ইটের ওপর পড়ে যায়। এতে তার মাথা থেঁতলে গিয়ে মারা যায়। সেসময় দিশেহারা হয়ে রেহেনা শিশুটিকে প্রথমে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের স্লিপারের ভেতরে রাখেন। পরে বাড়ির পাশে বিলে ফেলে দিয়ে আসেন।

শিশু ইসরাফিল উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমানের সন্তান। জিয়া ও রেহেনা দম্পতির তিন কন্যা সন্তানের পর একমাত্র ছেলে সন্তান ইসরাফিলের জন্ম হয়। 

এর আগে নিখোঁজের প্রায় ৪২ ঘণ্টা পরে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের বুড়িমারা বিল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। বিলটি শিশুটির নানাবাড়ি থেকে প্রায় ৬০০ মিটার পূর্ব দিকে। গত সোমবার সকালে রেহেনা খাতুন ইসরাফিলকে নিয়ে বাবা মোহন মণ্ডলের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে ইসরাফিল, রেহেনা ও তার নানি রেনু খাতুন দরজা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত ১০টা থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল বলে দাবি করেছিলেন স্বজনেরা। গত মঙ্গলবার সকালে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় শিশু চুরির মামলা করেন শিশুটির বাবা জিয়াউর রহমান। 

আজ দুপরে বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম এলাকায় শিশুটির নানা মোহন মণ্ডলের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘নাতিকে আমার মেয়েই হত্যা করেছে। ওর (রেহেনা) মাথা ঠিক নেই, পাগল। মানসিক রোগী। উপরি (জিনে ধরা) দোষ আছে। প্রায়ই জিনে ধরে। সে জন্য বেহুঁশ ভাবে ছেলেকে হত্যা করেছে।’ মেয়েকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে এসে তিনি চিকিৎসা করাবেন বলেও জানান মোহন। 

তবে এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি নন শিশুটির বাবা জিয়াউর রহমান। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেহেনা খাতুনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ আজ বিকেলে তাঁকে আদালতে পাঠায়। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন শিশুটির মা। পরে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত