Ajker Patrika

টাকা ও মোটরসাইকেল দিয়েও বাঁচাতে পারেননি জীবন 

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

যশোরের চৌগাছায় পুলিশ সদস্যের বাবার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ১২ ঘন্টার ব্যবধানে মোটিভ উদ্ঘাটনের দাবি করেছে চৌগাছা থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় রাহিম মন্ডল (২৪) ও অন্তর হোসেন (১৮) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ।

গ্রেপ্তারকৃত রাহিম মন্ডল নওগা সদর উপজেলার শৈলকূপা গ্রামের এবং অন্তর চৌগাছা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা।

গতকাল সোমবার রাতে রাহিমকে মাগুরা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে এবং অন্তরকে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জে তাঁর খালার বাড়ি থেকে আটক করে চৌগাছা থানা-পুলিশ। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যা কাজে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু এবং নিহতের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। 

এর আগে সোমবার সকাল ৮টার দিকে চৌগাছার ফুলসারা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের পাকা রাস্তার পাশ থেকে কাইয়ুম নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির এক ছেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন। 

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছে, আরেক সহযোগী চৌগাছার সৈয়দপুরের ইয়াসিনসহ (২২) তাঁরা মাগুরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি নির্মাণাধীন ভবনে রড মিস্ত্রির কাজ করতেন তিন কিশোর। সামনের ঈদে কেনাকাটার জন্য তাঁরা ছিনতাই বা চুরি জাতীয় কিছু করার পরিকল্পনার করে। এ সময় নওগার বাসিন্দা রাহিম মন্ডল বলেন-আমাদের এলাকায় মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে পরে গলা ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল বিক্রি করে দেয়।’ তখন তিনজনে মিলে কাইয়ূমের মোটরসাইকেল কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। 

পরিকল্পনা মতো মাগুরা থেকে রোববার রাতে যশোর শহরের পালবাড়ি নেমে কাইয়ূমকে মোবাইলে ডেকে নেন। এরপর কাইয়ূমসহ চারজন এক মোটরসাইকেল উঠে চৌগাছার সৈয়দপুর গ্রামের মাঠে হত্যাকান্ডের স্থানে পৌঁছে কাইয়ূমকে থামতে বলেন। কাইয়ূম গাড়ি দাড় করানোর পরই ইয়াসিন মোটরসাইকেল লক করে চাবি নিয়ে নেন। এরপর ছুরির ভয় দেখিয়ে বলেন-‘তোর গাড়ি আর টাকা নিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা এখানে এনেছি। কাছে যে টাকা আছে দিয়ে দে।’ 

তখন কাইয়ূম নিজের কাছে থাকা টাকা দিয়ে দেন। তবুও তিনজনে ধরাধরি করে ইয়াসিনের নির্দেশে অন্তর ছুরি দিয়ে কাইয়ূমকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান এবং মাগুরায় গিয়ে মোটরসাইকেলটি বিক্রির চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে সকালে গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বিভিন্নস্থানে বার্তা পাঠিয়ে দেন এবং মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারে মোটরসাইকেলটি নিয়ে তাঁরা মাগুরার দিকে গেছে। সেই সূত্র ধরেই মাগুরা শহর থেকে রাহিম মন্ডলকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর স্বীকারোক্তিতে মোটসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ সময় কালীগঞ্জ থেকে অন্তরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কাইয়ূম ওই এলাকায় রাত বিরাতেও মানুষকে মোটরসাইকেল নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সেনা-নৌ বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন চাকরিজীবিরা মহাসড়ক দিয়ে বাসে বা ট্রেনে এসে সাতমাইল থেকে যশোর শহরের বিভিন্নস্থানে নেমে তাঁর মোটরসাইকেল করে নিজেদের বাড়িতে যেতেন। তিন কিশোর সেই সুযোগ নিয়ে কাইয়ূমকে হত্যা করেন। 

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্লু-লেস হত্যাকান্ডটির মরদেহ উদ্ধারের ১২ ঘন্টার মধ্যে রাহিম ও অন্তরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেছে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে তাঁরা এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। 

ওসি জানান, নিহতের স্ত্রীর করা হত্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ওসি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত