Ajker Patrika

ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের পর সালিসেও অপমান, তরুণীর আত্মহত্যা 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ২১: ৩৭
ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের পর সালিসেও অপমান, তরুণীর আত্মহত্যা 

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এক তরুণীকে ধর্ষণ, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেল এবং বিচার সালিসে অপদস্থ করার ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুল মোমেন কচিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার সকালে ভুক্তভোগীর নিজ বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের নুরুল আমিন ওরফে নুরু (৪৫), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী। এ ছাড়া ইউপি সদস্য আব্দুল মোমেনসহ আরও কয়েকজনের নামে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অভিযোগে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণী দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের নুরুল আমিন ওরফে নুরুর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছিলেন। এই ঘটনায় গত ২৯ মে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্ষণের ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেন নুরু।

তরুণীর ভগ্নিপতি জনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী আমার স্ত্রীর বড় বোন। অর্থনৈতিকভাবে তাদের অবস্থা ভালো না হওয়ায় নুরুর বাড়িতে রান্নাবাড়ার কাজ করে দিয়ে আসত। কাজ করা অবস্থাতেই তার দিকে কুনজর দেয় নুরু। সে এবং তার স্ত্রী মিলে তাকে ধর্ষণ এবং ভিডিও ধারণ করে মাসের পর মাস নির্যাতন করে আসছিল। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হলে থানায় মামলা দায়ের করি আমরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরু তার মোবাইলে থাকা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়।’ 

জনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ভুক্তভোগী। এদিকে নুরু তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে পাল্টা ধর্ষণ মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীর বাবা ও বোনের স্বামীর বিরুদ্ধে। পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনার পর গত রোববার স্থানীয় মেম্বারসহ অন্যান্য লোকজন এই ঘটনায় বিচার বসান। ভুক্তভোগীদের চাওয়া ছিল—মামলাগুলো এখানে মীমাংসা করে নিষ্পত্তি করে দিতে। কিন্তু বিচারে মাতব্বররা জানায়, নুরু বিদেশে পালিয়ে গেছেন। সালিসে তাঁরা নুরুর পক্ষ নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ ও গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। এসব ঘটনায় অপমান অপদস্থের শিকার হয়ে সোমবার সকালে ঘর খালি থাকার সুযোগ পেয়ে আত্মহত্যা করেছে ভুক্তভোগী। পরে তার মা বাদী হয়ে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।’

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বলেছিল। সে জন্য সকালে আমি ভাড়া বাসা খুঁজতে গেছি। আমার স্বামী রিকশা চালায়। সে কাজে যাওয়ায় ঘর খালি হয়ে যায়। এরই মধ্যে আমার মেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন বলেন, ধর্ষণ মামলা তারা আগেই দায়ের করেছিল। আজকে বিচার সালিস বসিয়ে ভুক্তভোগীকে অপমান করে আত্মহত্যার প্ররোচনা এবং ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মেম্বারের পাশাপাশি ধর্ষক নুরুল আমিন, ভিডিও ধারণকারী নুরুল আমিনের স্ত্রী শ্যামলীসহ আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে রেখে ‘৪ কোটি টাকা আদায়’

সব কমিটি থেকে নারীদের সিস্টেমেটিক্যালি সাইড করা হয়েছে: সামান্তা শারমিন

অবরোধকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিপেটায় শাহবাগ ফাঁকা

একে একে আট বিয়ে, নয়বারের বেলায় গ্রেপ্তার ‘লুটেরা দুলহান’

অদৃশ্য শর্তে বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্পের ১৫% শুল্ক ছাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত