Ajker Patrika

তালাকের পরে তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ, পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ 

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
তালাকের পরে তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ, পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ 

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় এক তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তালাক দিয়ে ফের তাকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ নিয়েছেন আদালত।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন এ মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ নিদেয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ মে।

এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত যুবকের নাম ফুয়াদ শেখ (২৪)। তিনি উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহ প্রতাব গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শাহজান শেখের ছেলে। গত ২৪ মার্চ ওই নারী বাদী হয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায়  ফুয়াদ শেখ এবং  তার চার সহযোগী একই গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসি (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)।

ভুক্তভোগী ওই নারীর মা জানান, ৫ বছর আগে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার কাজলী গ্রামের বাসিন্দা এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে। বিয়ের পর তাঁদের সুখের সংসার চলছিল। তাঁর মেয়ের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু তাঁর মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে আসত, তখন তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন ফুয়াদ শেখ। একপর্যায়ে তাঁর মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফুয়াদ। আনুমানিক দেড় মাস আগে তাঁর মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন তিনি। তাঁর মেয়ে লোভে প্রতারণার শিকার হয়ে স্বামীকে তালাক দেন। পরে ফুয়াদ তাঁর মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই গত ১০ মার্চ তাঁকে তালাক দেন ফুয়াদ। 

গত ১২ মার্চ (শনিবার) সন্ধ্যায় তাঁর মেয়েকে বাড়ির পাশে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ফুয়াদ শেখ ও তাঁর সহযোগী সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ, জাকির মাতুব্বর, মুরাদ খালাসি ও জাফর শেখ। পরে ফরিদপুর শহরের মহাবিদ্যালয়ের পাশে থাকা জাকিরের বাসায় আটকে রেখে তাঁকে টানা ৮ দিন একাধিকবার ধর্ষণ করে ফুয়াদ। এতে তাঁর মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাটি নিয়ে তাঁর মেয়ে মামলা করতে চাইলে ফুয়াদ তাঁর সহযোগীদের বাসায় ডেকে নিয়ে ১৯ মার্চ রাতে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে সকলে মিলে পালাক্রমে গণধর্ষণ করেন। শুধু ধর্ষণ নয়-তাঁকে নির্যাতন ও পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পরদিন ২০ মার্চ বিকেল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যান। তখন বাড়ির লোকজন তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।

ওই নারীর মা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামিরা আমার স্বামী ও সন্তানদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছেন। এমনকি আমাদের জমির পেঁয়াজও ওঠাতে দিচ্ছে না তাঁরা।’

এ বিষয় অভিযুক্ত আসামিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফুয়াদ শেখের বাবা ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখ বলেন, ‘ঘটনাটি সাজানো নাটক। আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই নারীকে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর আবার তালাক দিয়ে দিয়েছে। তালাকের পর নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

ফরিদপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা আমরা এখনো হাতে পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত