Ajker Patrika

শ্রীপুরে রাতে শীতলক্ষ্যার পাড়ের মাটি কাটার মহোৎসব

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ২৭
Thumbnail image

গাজীপুরের শ্রীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের মাটি গভীর রাতে কেটে বিক্রি করছে কয়েকটি চক্র। নদীর তীর থেকে কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে ডাম্প ট্রাকে করে মাটি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। নদীর তীর থেকে মাটিকাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একাধিকবার অর্থদণ্ড করলেও লাভ হচ্ছে না। তবে নদীর তীরের অবৈধ মাটিকাটা বন্ধ করতে প্রয়োজনে রাতেও অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গোসিঙ্গা বাজারের পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের কয়েকটি স্থান থেকে গত কয়েক দিনে গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে একেবারে নদীর তীর ঘেঁষে করা হয়েছে গভীর গর্ত। এগুলোর কোনো কোনোটি ৩০ ফুট পর্যন্ত গভীর। 

সিমেন্ট ঘাট এলাকায় নদীঘেঁষা তীরের বিরাট একটি অংশ কেটে নিয়েছে অসাধু চক্র। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন গভীর রাত হলেই শুরু হয় মাটিকাটার মহোৎসব। এক্সকাভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ডাম্প ট্রাকে করে নিয়ে যায় বিভিন্ন অঞ্চলে। 

গোসিঙ্গা গ্রামের মো. তাজ উদ্দিন বলেন, গভীর রাত হলেই শোনা যায় এক্সকাভেটর আর ডাম্প ট্রাকের শব্দ। সকালে এই দস্যুতার প্রমাণ পাওয়া যায় নদীর তীরে গিয়ে। বিকেলে যেখানে সমতল চর, রাত পোহালে সেখানে দেখা যায় গভীর গর্ত। ঘরে শুয়ে যত দূর ধারণা করা যায় ২০ থেকে ৩০টি ডাম্প ট্রাক একসঙ্গে মাটি পরিবহন করে। 

শ্রীপুরে রাতে শীতলক্ষ্যার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছেস্থানীয় অটোরিকশাচালক স্বপন মিয়া বলেন, ‘গাড়ি চালাই বলে দেরি করে বাড়ি ফেরা হয়। ১০টার পর থেকেই মাটি কাটার প্রস্তুতি শুরু করে চক্র। স্থানীয়দের ছাড়া কি মাটি কেটে নেওয়া সম্ভব? তাও নদীর মাটি। ১১টার পর পুরোদমে মাটির গাড়ি চলাচল শুরু করে। নিচু জমি ভরাট করা ছাড়াও আশপাশের ইটভাটায় এসব মাটি বিক্রি করে। আমরা মুখ খোলার সাহস পাই না। আমাদের ভয়ের বহু কারণ আছে। সরকারি জমি, সরকারি লোকজন আছে তাঁরা দেখবেন।’ 

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই নদীর তীরের, নদীর চরে মাটি কাটার ব্যাপারে সংবাদ পাই। আমরা প্রতিবাদও করেছি এ বিষয়ে। নদীর মাটি কাটার বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করি। গাড়ি জব্দ করা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ যাঁরা অপরাধী তাঁদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। যেভাবেই হোক মাটি কাটা বন্ধ করতেই হবে।’ 

গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর তীরের মাটি কাটা নয়, সকল অপরাধের বিষয়ে আমি প্রশাসনকে অবহিত করে থাকি। গভীর রাতে মাটি কাটার বিষয়টি আমি জেনেছি। প্রশাসনকে এ বিষয়ে অবহিত করব। চক্রটিকে কীভাবে আটক করা যায় সেই চেষ্টা করছি।’ 

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল মামুন আজকের পত্রিকা বলেন, ‘শুধু নদীপাড়ের মাটি নয়, উপজেলার সব জায়গার মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অর্থদণ্ড করছে। গভীর রাতে নদীপাড়ের মাটি কেটে বিক্রির বিষয়টি জানলাম। প্রয়োজনে রাত জেগে অভিযান পরিচালনা করে অসাধু চক্র আটক করে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত