Ajker Patrika

গাঁজা দিয়ে ফাঁসাতে ব্যর্থ হয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর, দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে দুই শিক্ষার্থীকে গাঁজা দিয়ে ফাঁসাতে ব্যর্থ হয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে হরিরামপুর থানার দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজনের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক পদ্মানদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, হরিরামপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের বাসার কাজের লোক মাসুম এবং আন্ধারমানিক গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে মামুন দুই পুলিশ সদস্যের সহায়তায় গাঁজা দিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে আটকের চেষ্টা করেন। তারা হলো—ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী প্রবাসী আক্কাস আলীর ছেলে ফয়সাল আহমেদ এবং দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াজচর গ্রামের নৈমদ্দিনের ছেলে নিজাম উদ্দিন। প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদ করলে মাসুম ও মামুন তাদের মারধর করে। ওই সময় কনস্টেবল জব্বার ও লতিফকে ডেকে আনেন তাঁরা। এ সময় ওসির বডিগার্ড পুলিশ সদস্য জব্বার নিজাম উদ্দিনকে লাথি কিল ঘুষি এবং বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। এ ছাড়া পুলিশের অপর সদস্য লতিফ (ওসির ব্যক্তিগত সহকারী বলে পরিচিত) ফয়সালকে মারধর করেন। নেজাম ও ফয়সালকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়ারও চেষ্টা করেন তাঁরা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়।

উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল হক বলেন, ‘আন্ধারমানিক পদ্মাপাড়ে ওসির বাজার করে দেয় মাসুম। সে মামুনের সঙ্গে মিলে দুই ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে। পরে পুলিশকে ডেকে আনে মাসুম ও মামুন। পুলিশ সদস্য জব্বারসহ দুজন এসে নেজাম ও ফয়সাল নামে দুই ছাত্রকে মারধর করে।’

প্রত্যক্ষদর্শী জয়নালের স্ত্রী বলেন, ‘এলাকার দুইডা ভালো পোলারে গাঁজা দিয়ে পুলিশে দিতে চায় মাসুম ও মামুন। ওই দুই পোলা নেজাম ও ফয়সাল প্রতিবাদ করলে পুলিশ আইসা নেজাম ও ফয়সালরে মারছে। নিজামরে মাইরা জিহ্বা বাইর কইরা ফালাইছে।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মুসা জানান, আহত অবস্থায় নেজাম নামের এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আঘাতের ফলে তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, ‘পুলিশের সোর্স মাসুম ওরফে মাসুম গাঁজা দিয়ে দুইজন ভালো ছেলেকে ফাঁসাতে না পেরে পুলিশ ডেকে আনে। পরে ব্যাপক মারধর করেছে জব্বার ও লতিফ নামের দুই পুলিশ সদস্য। মাসুম থানার বাজার করে। নিজেকে পুলিশও ভাবে। সঙ্গে মামুন নামে একজন ছিল। ওসির বডিগার্ড জব্বার ও লতিফ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থীকে ব্যাপক মেরেছে। আমরা এর বিচার চাই।’

উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ দুজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়েছে। এটা দুঃখজনক। এসপি মহোদয়কে জানিয়েছি। এর বিচার হতে হবে।’

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। জব্বার ভাই ওসি স্যারের বডিগার্ড। ভুলে অনেকে আমার নাম বলে থাকতে পারে। জব্বার ভাই ওই সময় ছিল। তবে আমি শেষে গেছি। আমি মারধর করিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হরিরামপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, ‘দুই ছাত্রকে মারধরের অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছেন এসপি স্যার।’

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ গোলাম আজাদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত