Ajker Patrika

পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি, মামা–ভাগনির কাছে ৪৩ লাখ টাকা খোয়ালেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি, মামা–ভাগনির কাছে ৪৩ লাখ টাকা খোয়ালেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

ছেলের অস্ট্রেলিয়ায় এবং মেয়ের বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির জন্য ৪৩ লাখ টাকা ঘুষ দেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সাবেক কর্মকর্তা মো. এমাদ উদ্দিন। তবে তার ছেলে মেয়েদের কারওরই চাকরি হয়নি। টাকাও আর ফেরত পাননি। প্রতারিত হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানায় তিনি একটি মামলা করেছেন। এই ঘটনায় এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন–সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া দিদারুল ইসলাম (৩০) ও তাঁর ভাগনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেওয়া তাপসী রাবেয়া বসরি (২৮। তাঁদের মধ্যে দিদারুল ইসলামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের যশোদল এবং তাপসী রাবেয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায়।

তাঁদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গত ২৭ মার্চ এমাম উদ্দিন হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন। এরপর গতকাল শুক্রবার দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমাদ উদ্দিন মামলার অভিযোগে বলেন, তাঁর কিশোরগঞ্জের বাসার প্রতিবেশী শফিকুর রহমান। সেই সুবাদে তাঁর ঢাকার মগবাজারের বাসায় আসতেন তিনি। শফিকুর রহমান কিশোরগঞ্জের দিদারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে সঙ্গে করে মাঝেমধ্যে বাসায় আসতেন। দিদারুল ঢাকা সেনানিবাসে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত রয়েছেন বলে পরিচয় দিতেন।

তাপসী রাবেয়া বসরি নামে আরও এক নারীও তাঁদের সঙ্গে আসতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ। তিনি দিদারুলের ভাগনি। নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন।

দিদারুল ও তাপসী বিআরডিসির সাবেক কর্মকর্তা এমাদ উদ্দিনকে জানান, তাঁরা বৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠাতে পারেন এবং সরকারি চাকরিও দিতে পারেন। এরপর এমাদ উদ্দিন তাঁর ছেলেকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে এবং মেয়েকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার অনুরোধ করেন।

দিদারুল ইসলাম এর জন্য ৪৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে ৪৩ লাখ টাকায় রফা হয়। মেয়েকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরির জন্য ২৫ লাখ এবং ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির জন্য ১৮ লাখ টাকা দিতে রাজি হন এমাদ উদ্দিন। হোয়াটসঅ্যাপে দিদারুল সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত একটি ছবি পাঠালে এমাদ উদ্দিনের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।

২০২২ সালের ২ নভেম্বর এমাদ উদ্দিনকে মেয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও প্রিলিমিনারি টেস্টের ফলাফলের তালিকা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান দিদারুল। পরীক্ষা না দিয়েও মেয়ের চাকরির কাগজপত্র পেয়ে এমাদ উদ্দিন খুশি হন। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর বিকেলে মগবাজারের বাসায় বসে দিদারুলকে ১৩ লাখ টাকা দেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ দিদারুলের হাতে আরও ২৫ লাখ টাকা দেন। গত বছরের ১৬ মার্চ আরও ৫ লাখ টাকা দেন।

গত বছরের ২৪ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশের পর এমাদ উদ্দিন দেখতে পান, তাঁর মেয়ের রোল নম্বর সেখানে নেই। তখন তিনি প্রবেশপত্র নিয়ে যাচাই বাছাই শুরু করেন। পরে জানতে পারেন দিদারুলের পাঠানো কাগজপত্র জাল। দিদারুল সেনাবাহিনীতেও চাকরি করেন না। তাঁর ভাগনি পরিচয় দেওয়া নারীও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নন।

এরপর সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা সেই প্রতিবেশী শফিকুর রহমানকে ফোন কল করেন। এই প্রতারকদের কেন তিনি তাঁর বাসায় এনেছিলেন—সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি শফিকুর। এরপর তিনি মামলা করেন।

বিএডিসির সাবেক ভান্ডার কর্মকর্তা মো. এমাদ উদ্দিন বলেন, ‘আমি একটা প্রতারণার শিকার হয়েছি। কখনো বুঝতে পারিনি তারা এমন। পরে মামলা করি।’

গ্রেপ্তার দুজনের বিষয়ে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, দুই প্রতারকই উচ্চ শিক্ষিত। দিদারুল অনার্স পাস। তাঁর ভাগনি কথিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। মামা–ভাগনি মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছেন।

এই প্রতারক চক্র কিশোরগঞ্জে এক পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যকে একই ভাবে চাকরি দেওয়ার নামে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত