Ajker Patrika

‘মা, তোমরা তো টাকা দিতে পারলে না, মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে’

মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১: ৫৩
‘মা, তোমরা তো টাকা দিতে পারলে না, মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে’

নরসিংদীর মনোহরদীতে উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি সিরাজগঞ্জ সদরের রায়পুর রেলওয়ে কলোনি এলাকার মুসলিম উদ্দিনের ছেলে মিঠু হোসেন (২৪)। তিনি অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করতেন। এ ঘটনায় মিঠুর বড় বোন মিনু আক্তার বাদী হয়ে মনোহরদী থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। 

মামলার বাদী মিনু আক্তার জানান, গত বুধবার ভোরে শাড়ি কেনার জন্য নরসিংদীর উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন মিঠু। সন্ধ্যায় মায়ের মোবাইল ফোনে কল করে নরসিংদী পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করেন। ওই দিন রাত ৮টার দিকে আবারও ফোন দিয়ে বলেন, কয়েকজন লোক তাঁকে অপহরণ করেছে এবং ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। অপহরণকারীরা মিঠুকে মারধর করে তাদের দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই মিঠুর পরিবার থেকে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

একই দিন রাত ১১টার দিকে মিঠু ফোন করে তাঁর মাকে বলেন, ‘তোমরা তো টাকা দিতে পারলে না। ওরা মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে। কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়ো।’ 

ওপাশে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মিঠুর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে তাঁর বোনকে বলে, ‘যেহেতু টাকা দিতে পারসনি, তাই তোর ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না। আগামীকাল তোর ভাইয়ের লাশ খুঁজে নিস।’ এ কথা বলেই মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মিঠুর খোঁজে তাঁর মা, বোন এবং নানি নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ১০টার দিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মিঠুর মোবাইল থেকে মিনুকে ফোন দিয়ে পুনরায় মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় তিনি মিঠুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপহরণকারী বলে, আগে টাকা দেন, তারপর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এ কথা বলে আবার মোবাইল বন্ধ করে দেয়। 

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জের পরিচিত এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন, মনোহরদী উপজেলায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে মিঠুর মা-বোন দ্রুত মনোহরদী থানায় উপস্থিত হন। পুলিশের মোবাইল ফোনে ছবি দেখে মিঠুর মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনেরা। 

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগোলিয়াপাড়া এলাকার রূপচান মিয়ার খড়ের গাদার পাশে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। যুবকের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

মনোহরদী থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা অন্য কোনো স্থানে মিঠুকে হত্যা করে মরদেহ এখানে ফেলে গেছে। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত