Ajker Patrika

বোনদের ঠকাতে ভাইয়ের অভিনব চালাকি

এসএম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
বোনদের ঠকাতে ভাইয়ের অভিনব চালাকি

বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে ছোট বোনদের বঞ্চিত করতে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইয়াকুব নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পুরো সম্পত্তি একা আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে যোগসাজশ করে আদালত থেকে নাবালক দুই বোনের অভিভাবকত্বও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। ইয়াকুবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং তাঁর মা লীনা আক্তার। লীনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াকুবকে তাঁর বোনের অভিভাবকত্ব দেওয়ার রায় স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। 

লীনা জানান, ১৯৯৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় ৫০ বছর বয়সী ইব্রাহীম মিয়ার সঙ্গে। তত দিনে ইব্রাহীমের সঙ্গে তাঁর প্রথম স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়েছে। বিয়ের পর চট্টগ্রাম থেকে লীনাকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ায় নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন ইব্রাহীম। বয়সের ব্যবধানের কারণে স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল না। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে ইব্রাহীমের নির্যাতনের কারণে। ২০১২ সালে নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীর ঘর ছাড়েন লীনা। তাঁদের সংসারে তত দিনে তিন সন্তান। তাদের নিজের সঙ্গেই নিয়ে এসেছিলেন লীনা। ছেলে ইয়াকুবের বয়স তখন ১২, বড় মেয়েটির বয়স ৮ এবং ছোট মেয়েটি তখন ৯ মাসের শিশু। লীনা চলে আসার পর ইব্রাহীম তাঁকে তালাক দেন। এর কিছুদিন পর ইয়াকুবকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেও দুই মেয়ে আর স্ত্রীর কোনো খোঁজ রাখেননি ইব্রাহীম। 

লীনা আরও জানান, স্বামীর ঘর ছাড়ার পর শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন সংগ্রাম। সেলাই করে কষ্টে জীবন চালাচ্ছেন। ছোট মেয়ে এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও দিতে পারেনি। 

গত বছরের ৫ এপ্রিল ইব্রাহীম মারা যান। লীনার দাবি, মৃত্যুর সময় ইব্রাহীম উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রায় আড়াই কোটি টাকার সম্পদ এবং ব্যাংকে ৪০ লাখ টাকা রেখে গেছেন। সেই সম্পত্তি একা হাতিয়ে নিতে ইব্রাহীমের ছোট ভাই এসহাকের সঙ্গে যোগসাজশ করে গত বছর নারায়ণগঞ্জের সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন ইয়াকুব। চাচা এসহাককে বিবাদী করে দায়ের করা মামলার আবেদনে ইয়াকুব বলেন, নাবালক দুই বোনের ভরণপোষণ, পড়ালেখা ও বিয়ের জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে তাঁকে সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্ত করা আবশ্যক। শুনানির সময় এসহাক আদালতকে বলেন, দুই বোন ভাইয়ের সঙ্গেই থাকে। শুনানি শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে আদালতের রায়ে ইয়াকুবকে সম্পত্তি বিক্রির অধিকার দেওয়া হয়। 

বিষয়টি জানার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন লীনা। আপিলেও রায় বহাল থাকে। পরে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন তিনি। প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের রায় এক বছরের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন আদালত। 

হাইকোর্টে লীনার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী বেহেশতি মারজান। তিনি বলেন, জেলা আদালতের বিচারক তাঁর বিচারিক মণ প্রয়োগ করেননি। মুসলিম আইন অনুযায়ী, মা বেঁচে থাকতে দুই নাবালক বোনের অভিভাবকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই ভাইয়ের। 

লীনা আক্তার বলেন, ‘মেয়েদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। আমি চাই, মেয়েরা বড় হয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিক।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইয়াকুব বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে ১৩ বছর আগে। মায়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আমাদের কেউ নন। বোনদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি ঠিক নয়।’ 

তাহলে মামলা কেন করতে হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহীমের ছোট ভাই এসহাক বলেন, ‘সম্পত্তি তো আগেই ভাগ হয়ে গেছে। চাইলেই হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ভাইয়ের (ইব্রাহীম) চিকিৎসায় অনেক টাকা ঋণ হয়েছে। সেই ঋণ পরিশোধে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা তাঁর (ভাই) টাকা তোলার জন্য মামলা করতে হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত