কামরুল হাসান
ঢাকা: যেদিকে তাকাই দেখি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে। কাউকে তাঁদের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোথায় দাঁড়াব ভাবতে ভাবতে ফোন দিলেন সহকর্মী গোলাম মর্তুজা অন্তু। জানালেন, আফতাব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার খান আমাকে খুঁজছেন। শাহরিয়ার খান আমার পূর্বপরিচিত। ফোন পেয়ে গেলাম গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে, সেখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে দুজন সংবাদকর্মী কথা বলছেন। আমাকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। বললেন, ‘কানাডাপ্রবাসী বড় ছেলে হোলি আর্টিজান বেকারিতে আটকা পড়েছে। কোনো খবর পাচ্ছি না। ফোনও বন্ধ।’
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, তার পাশেই একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বাংলো। এর উল্টো দিকে হোলি আর্টিজান বেকারি, যেখানে তাঁর সন্তানকে জিম্মি করে রেখেছে জঙ্গিরা। বাংলোর নিচের তলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বৈঠকে বসেছেন, করণীয় ঠিক করতে। কিন্তু ভেতরে আটকা পড়া লোকজনের স্বজনেরা ততক্ষণে হোলি আর্টিজানের আশপাশের রাস্তায় জড়ো হয়েছেন। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজকর্মে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কয়েকজন প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু শাহরিয়ার নীরব, তিনি কিছুই বলছেন না। একটু পরপর চোখের পানি মুছছেন।
একটু পর পরিচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা এলেন আমাদের কাছে। তাঁকে দেখে এগিয়ে গেলেন শাহরিয়ার খান। নিজের মোবাইল ফোনে একটি ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘ভাই, এটা আমার ছেলের ছবি। কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। একটু দেখবেন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় কি না।’ পুলিশ কর্মকর্তা মাথা নেড়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এলেন র্যাবের এক কর্মকর্তা, তাঁকেও বললেন। এভাবে যাঁকে পাচ্ছেন, তাঁকেই ছবি দেখিয়ে একই কথা বলছেন। অসহায় পিতার মতো আমাদেরও মন খারাপ। আমরা তাঁকে আগলে রেখে নানান কথায় সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি।
মাঝরাতের পর পুলিশ কর্মকর্তারা হাল ছেড়ে দেন। উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ আসে রাতে আর অভিযান হবে না। সকালে কমান্ডোরা আসবেন, তাঁরা অভিযান চালাবেন। পুলিশের কাজ শুধু পাহারা দেওয়া। অভিযানের জন্য সবাই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত বাড়তে থাকে, তত বাড়তে থাকে তাঁর উৎকণ্ঠা।
রাত আড়াইটার দিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের মুখপাত্র ‘আমাক’ নিহত ব্যক্তিদের ছবিসহ খবর প্রকাশ করে। এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আমরা তাঁকে সান্ত্বনা দিই—এ খবর হয়তো ঠিক নয়।
২ জুলাই, ২০১৬। ভোরে সিলেট থেকে ঢাকায় আসে বিশেষ কমান্ডো বাহিনী। শুরু হয় অপারেশন ‘থান্ডার বোল্ট’। কমান্ডোরা চারদিক ঘেরাও করে অভিযান শুরু করেন। তাঁদের গুলির আওয়াজে চারদিক কেঁপে ওঠে। একটি করে গুলির শব্দ হয় আর শাহরিয়ার খান আর্তনাদ করে ওঠেন। এভাবে সকাল হয়। গুলির আওয়াজ থেমে যায়। ভেতরের কমান্ডো অপারেশন শেষ হয়ে যায়। আমরা অসহায়ের মতো অপেক্ষায় থাকি।
হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে এমফোর কারবাইন হাতে এক কমান্ডো আসেন, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে। জবজবে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আসা লোকটির আচরণও কিছুটা রূঢ়। তিনি বলেন, ‘সেই মোটামতো দাড়িওয়ালা লোকটা কই? তাঁকে ডেকে দেন।’ কমান্ডোর কথা শুনে আমরা একটু ঘাবড়ে যাই। কারণ জানতে চাইলে তিনি ধমকের সুরে বলেন, ‘আরে ভাই, আগে তাঁকে ডাকেন।’
শাহরিয়ার খান উল্টো দিকে মুখ করে ফোনে কথা বলছিলেন। কমান্ডোর কথা শুনে তিনি ঘুরে দাঁড়ান। এবার লোকটি তাঁকে দেখে যে খবর দেন, তা শুনে আমরা একমুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যাই। তিনি বললেন, ‘স্নাইপারে চোখ রেখে আমি ট্রিগারে চাপ দেব, হঠাৎ মনে পড়ে গেল এটা তো জঙ্গি নয়, আপনার ছেলে। গত রাতে আপনি মোবাইল ফোনে ছেলের সেই ছবি আমাকে দেখিয়েছিলেন। এর পর আমি ট্রিগার থেকে হাত সরিয়ে নিই। বেশি সময় না, মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য প্রাণে বেঁচে গেল ছেলেটা। ভয় নেই, আপনার ছেলে এখন আমাদের হেফাজতে আছে।’ বলেই যেভাবে এসেছিলেন সেভাবে ঝড়ের বেগে চলে গেলেন লোকটা।
কমান্ডো দুই পা এগোতেই ‘ও আল্লাহ…’ বলে চিৎকার করে মাটিতে সেজদায় পড়ে গেলেন শাহরিয়ার খান। অনেকক্ষণ পর যখন উঠলেন, তখন তাঁর চোখমুখে প্রশান্তির ছাপ। তিনি শক্ত করে আমার বাঁ হাত ধরেন, কোনো কথা বলতে পারেন না। এরই মধ্যে তাঁর মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। একটি নম্বর থেকে ছেলে তাহমিদ ফোন করেছেন। ছেলের কণ্ঠ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে কান্না আমাদের সংক্রমিত করে, আমরাও কাঁদি।
ঢাকা: যেদিকে তাকাই দেখি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে। কাউকে তাঁদের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোথায় দাঁড়াব ভাবতে ভাবতে ফোন দিলেন সহকর্মী গোলাম মর্তুজা অন্তু। জানালেন, আফতাব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার খান আমাকে খুঁজছেন। শাহরিয়ার খান আমার পূর্বপরিচিত। ফোন পেয়ে গেলাম গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে, সেখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে দুজন সংবাদকর্মী কথা বলছেন। আমাকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। বললেন, ‘কানাডাপ্রবাসী বড় ছেলে হোলি আর্টিজান বেকারিতে আটকা পড়েছে। কোনো খবর পাচ্ছি না। ফোনও বন্ধ।’
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, তার পাশেই একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বাংলো। এর উল্টো দিকে হোলি আর্টিজান বেকারি, যেখানে তাঁর সন্তানকে জিম্মি করে রেখেছে জঙ্গিরা। বাংলোর নিচের তলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বৈঠকে বসেছেন, করণীয় ঠিক করতে। কিন্তু ভেতরে আটকা পড়া লোকজনের স্বজনেরা ততক্ষণে হোলি আর্টিজানের আশপাশের রাস্তায় জড়ো হয়েছেন। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজকর্মে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কয়েকজন প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু শাহরিয়ার নীরব, তিনি কিছুই বলছেন না। একটু পরপর চোখের পানি মুছছেন।
একটু পর পরিচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা এলেন আমাদের কাছে। তাঁকে দেখে এগিয়ে গেলেন শাহরিয়ার খান। নিজের মোবাইল ফোনে একটি ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘ভাই, এটা আমার ছেলের ছবি। কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। একটু দেখবেন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় কি না।’ পুলিশ কর্মকর্তা মাথা নেড়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এলেন র্যাবের এক কর্মকর্তা, তাঁকেও বললেন। এভাবে যাঁকে পাচ্ছেন, তাঁকেই ছবি দেখিয়ে একই কথা বলছেন। অসহায় পিতার মতো আমাদেরও মন খারাপ। আমরা তাঁকে আগলে রেখে নানান কথায় সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি।
মাঝরাতের পর পুলিশ কর্মকর্তারা হাল ছেড়ে দেন। উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ আসে রাতে আর অভিযান হবে না। সকালে কমান্ডোরা আসবেন, তাঁরা অভিযান চালাবেন। পুলিশের কাজ শুধু পাহারা দেওয়া। অভিযানের জন্য সবাই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত বাড়তে থাকে, তত বাড়তে থাকে তাঁর উৎকণ্ঠা।
রাত আড়াইটার দিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের মুখপাত্র ‘আমাক’ নিহত ব্যক্তিদের ছবিসহ খবর প্রকাশ করে। এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আমরা তাঁকে সান্ত্বনা দিই—এ খবর হয়তো ঠিক নয়।
২ জুলাই, ২০১৬। ভোরে সিলেট থেকে ঢাকায় আসে বিশেষ কমান্ডো বাহিনী। শুরু হয় অপারেশন ‘থান্ডার বোল্ট’। কমান্ডোরা চারদিক ঘেরাও করে অভিযান শুরু করেন। তাঁদের গুলির আওয়াজে চারদিক কেঁপে ওঠে। একটি করে গুলির শব্দ হয় আর শাহরিয়ার খান আর্তনাদ করে ওঠেন। এভাবে সকাল হয়। গুলির আওয়াজ থেমে যায়। ভেতরের কমান্ডো অপারেশন শেষ হয়ে যায়। আমরা অসহায়ের মতো অপেক্ষায় থাকি।
হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে এমফোর কারবাইন হাতে এক কমান্ডো আসেন, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে। জবজবে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আসা লোকটির আচরণও কিছুটা রূঢ়। তিনি বলেন, ‘সেই মোটামতো দাড়িওয়ালা লোকটা কই? তাঁকে ডেকে দেন।’ কমান্ডোর কথা শুনে আমরা একটু ঘাবড়ে যাই। কারণ জানতে চাইলে তিনি ধমকের সুরে বলেন, ‘আরে ভাই, আগে তাঁকে ডাকেন।’
শাহরিয়ার খান উল্টো দিকে মুখ করে ফোনে কথা বলছিলেন। কমান্ডোর কথা শুনে তিনি ঘুরে দাঁড়ান। এবার লোকটি তাঁকে দেখে যে খবর দেন, তা শুনে আমরা একমুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যাই। তিনি বললেন, ‘স্নাইপারে চোখ রেখে আমি ট্রিগারে চাপ দেব, হঠাৎ মনে পড়ে গেল এটা তো জঙ্গি নয়, আপনার ছেলে। গত রাতে আপনি মোবাইল ফোনে ছেলের সেই ছবি আমাকে দেখিয়েছিলেন। এর পর আমি ট্রিগার থেকে হাত সরিয়ে নিই। বেশি সময় না, মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য প্রাণে বেঁচে গেল ছেলেটা। ভয় নেই, আপনার ছেলে এখন আমাদের হেফাজতে আছে।’ বলেই যেভাবে এসেছিলেন সেভাবে ঝড়ের বেগে চলে গেলেন লোকটা।
কমান্ডো দুই পা এগোতেই ‘ও আল্লাহ…’ বলে চিৎকার করে মাটিতে সেজদায় পড়ে গেলেন শাহরিয়ার খান। অনেকক্ষণ পর যখন উঠলেন, তখন তাঁর চোখমুখে প্রশান্তির ছাপ। তিনি শক্ত করে আমার বাঁ হাত ধরেন, কোনো কথা বলতে পারেন না। এরই মধ্যে তাঁর মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। একটি নম্বর থেকে ছেলে তাহমিদ ফোন করেছেন। ছেলের কণ্ঠ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে কান্না আমাদের সংক্রমিত করে, আমরাও কাঁদি।
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) ওয়াহিদুজ্জামান এই আদেশ দেন।
৪ দিন আগে১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের খালাসের রায় নিয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ডেভিড বার্গম্যান আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের ভূমিকাকে স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখছেন। অতীতে তিনি যাঁদের আইনি সহায়তা দিয়েছেন, তাঁদের মামলায় তাঁর দলের সদস্যদের রাষ্ট্রপক্ষের
৭ দিন আগেময়মনসিংহের সেলিম হোসেনকে জীবিত থাকা সত্ত্বেও ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার’ দেখিয়ে ভাইয়ের করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। মূল ঘটনা জমিসংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ ও পুলিশের চরম গাফিলতির নিদর্শন।
৮ দিন আগেরাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফতেহ আলীকে আট দিন, আরেক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদসহ তিনজনকে ছয় দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
১১ দিন আগে