Ajker Patrika

মোহাম্মদপুরে মধ্যরাতে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব, নেপথ্যে ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ২১: ৫৯
Thumbnail image

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। অন্যদিনের মতো স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখেন, ছোট মেয়ের গায়ের ওপর জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে। মেয়ের গায়ে কম্বল থাকায় বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছে। এরপর দোতলা থেকে নিচে রাস্তায় তাকিয়ে দেখেন বিপুলসংখ্যক কিশোরের মহড়া। প্রত্যেকের হাতে দেশীয় অস্ত্র। কারও হাতে চাপাতি, ছুরি, চাকু, লোহার পাইপ। দল বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছে আর ধর ধর বলছে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে ভাঙচুর করছে। রাস্তার দুই পাশের বাড়ির জানালার কাচ, দোকানের শাটার, এসি, মোটরসাইকেল, পিকআপ—কিছুই বাদ যাচ্ছে না। 

মিজানুর রহমানের মতো সে রাতে নবীনগর হাউজিংয়ের ৬ থেকে ৮ নম্বর রোডের প্রতিটি বাড়ির বাসিন্দাই আচমকা ঘুম থেকে উঠে দেখেন অস্ত্রধারী কিশোরদের তাণ্ডব। তাদের মুখে হুমকি-ধমকি আর ‘ধর ধর’ শব্দ। হট্টগোল দেখে কেউ কেউ রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু কিশোরেরা বাসা থেকে বের হলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ‘বাসায় থাকেন, ঘুমান। রাস্তায় বের হলে মেরে ফেলব।’ 

সকালে উঠে মধ্যরাতের তাণ্ডবের চিহ্ন দেখে আঁতকে ওঠেন স্থানীয়রা। আজ শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ৬ নম্বর রোডের বেড়িবাঁধ থেকে ৮ নম্বর সড়ক পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ির জানালার কাচ ভাঙা। নিচতলা, দ্বিতীয় তলার জানালার কাচে হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। বাদ যায়নি রাস্তায় রাখা ভ্যান গাড়ি, পিকআপ, মোটরসাইকেল, দোকানের শাটার, এমনকি পিঠা বিক্রেতার মাটির চুলা, সবজি বিক্রেতার ভ্যান গাড়ি, হোটেলের চুলাও! 

৬ নম্বর রোডের ভাঙচুর হওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের কাছে এই হামলার কারণ জানতে চাইলে সবাই বলেন, ‘আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না, কেন হামলা হলো, কারাই বা হামলা করল।’ 

রফিক, বিপুলসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মধ্যরাতে শতাধিক কিশোরের এমন হামলার কারণ বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। কিশোরদের সঙ্গে দু-একজনের শত্রুতা থাকতে পারে, তাই বলে একটি আবাসিক এলাকায় মধ্যরাতে রাস্তার এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত ভাঙচুর চালাবে! 

ঘটনার পরপরই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেন বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। কিশোরেরা চলে যাওয়ার পরে পুলিশ আসে। তারা তাণ্ডবের চিহ্ন দেখে যায়। থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যায় তারা। 

বাসিন্দারা আরও জানান, কিশোরের দল তাণ্ডব চালিয়ে চলে যাওয়ার পরে পাঁচ থেকে সাতটি মোটরসাইকেল এলাকায় এসে ঘুরে যায়। তাদের দেখে মনে হয়েছে, তারা কাউকে খুঁজতে এসেছিল। কিন্তু তাঁদেরও কাউকে স্থানীয়রা চেনেন না। 

মধ্যরাতে মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবএ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। যাদের বাসায় ভাঙচুর করা হয়েছে তাদের থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর কী হয়েছে বলতে পারছি না। আমি নাইট ডিউটি করেছি।’

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এমন কিছু ঘটেছে কি না, জানা নেই। আপনি থানার ডিউটি অফিসারকে কল দেন। সে হয়তো বিস্তারিত জানাতে পারবে।’ 

আজকের পত্রিকার হাতে কিশোরদের তাণ্ডবের বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। তাতে দেখা যায়, দল বেঁধে কিশোরের দল ৬ নম্বর সড়কে ঢুকছে। প্রত্যেকের হাতে চাপাতি, লোহার রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। কেউ হাতের অস্ত্র দিয়ে সড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালাচ্ছে। শব্দ শুনে রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করায় এক নারীকে ধাওয়া দেয় কিশোরেরা। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানান স্থানীয়রা। 

এ বিষয়ে নবীনগর হাউজিং মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নাজমুল আহসান বলেন, ‘মধ্যরাতে হামলার পরে আমরা ৯৯৯-এ কল দেই। পরে থানা থেকে রফিক নামে একজন এসআই আসেন। তিনি দেখে গেছেন। কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি আমাদের মামলার পরামর্শ দিয়ে চলে যান। হাউজিংয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে কি না জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। থানায় মামলার বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে একটি দাওয়াত শেষে মোটরসাইকেলযোগে বাসায় ফিরছিলেন মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকায় আসার পর কয়েকজন অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী তাঁদের পথরোধ করে অতর্কে হামলা করে। এতে মোটরসাইকেলে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করতে আসেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। উদ্ধার শেষে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে পাঠানোর পর ছিনতাই চক্রের সদস্যদের খোঁজে নামেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। শখানেক অস্ত্রধারী কিশোর নিয়ে তাঁরা নবোদয় হাউজিং, নবীনগর হাউজিংসহ বিভিন্ন এলাকায় শোডাউন দেন। এই শোডাউন দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা নবীনগর হাউজিংয়ের ৬ নম্বর রোডের ৬০-৭০টি বাড়ির জানালার গ্লাস, রাস্তায় রাখা মোটরসাইকেল, পিকআপ, দোকানের শাটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। 

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক অমিক বলেন, ‘গতকাল নবোদয়ে তার দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তারা হলেন- মিজান (২৬), নাদিম(২৭), শফিক(৩০), রবিন(২৫)। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একজনের শরীরে ৩৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনতাই হয়েছে।’ এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

এদিকে নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। নববর্ষের প্রথম রাতেই রাজধানীজুড়ে মারামারির তথ্য দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এমন ২৫ থেকে ৩০টি কল পেয়েছেন জরুরি সেবা সেলের কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ করল আ.লীগ

‘মধ্যমপন্থী’ দল গড়ছেন অভ্যুত্থানের নেতারা, আলোচনায় ইলিশ প্রতীক

লিবিয়ার সৈকতে ২০ জনের গলিত লাশ, সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, বিচার চাইল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত