Ajker Patrika

সিগারেটের সূত্র ধরে খুনি শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সিগারেটের সূত্র ধরে খুনি শনাক্ত

বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে দুইটা রিকশা চুরি করে বিক্রি করেন  মো. হাফেজ। সর্বশেষ বিমল চন্দ্র মণ্ডল নামের একজনের বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেন তিনি। আর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন হয় দুইটি সিগারেটেরের সূত্র ধরে।

ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় বিমল চন্দ্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকায় আসামি হাফেজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা। ২২ জুন বিকেলে তাকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ রোববার পিবিআই হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।

কুদরত-ই-খুদা বলেন, নিহত বিমল চন্দ্র মণ্ডল স্ব-পরিবারে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করত।শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ভিকটিম বিমল বাসায় থাকে এবং জীবিকার তাগিদে তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। গত ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো বিমলের স্ত্রী এবং মেয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চলে যায়।

ওই দিন নিহত বিমল একাই বাসায় অবস্থান করছিলেন। ডিউটি শেষে অফিস ছুটি হওয়ার পর বিকেলে সাড়ে ৪টায় বিমলের মেয়ে পূর্ণিমা রানী মণ্ডল বাসায় গিয়ে তার বাবাকে মুখের ভেতরে কাপড় কাটার কাচি (সিজার) ঢোকানো অবস্থায় দেখতে পায়।

এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী পারুল অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানার মামলা করেন। আশুলিয়া থানা-পুলিশ ১৭ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে। গত ৪ জুন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়। 

নিহতের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ সুপার কুদরত জানান, এ ঘটনার ৬ মাস আগে বিমল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধুমপান ছেড়ে দেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের দিন নিহত বিমলের বাসায় সিগারেটের দুটি শেষাংশ পাওয়া যায়। আর এ সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত অগ্রসর হতে থাকে এবং বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। তার মধ্যে মো. হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় ১ নম্বরে রেখে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন বিকেল ৫টার দিকে তাকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি হাফেজ জানায়, নিহত ও হাফেজের স্ত্রী একই গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। একই গার্মেন্টেসে চাকরি করার সুবাদে এবং একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করায় হাফেজ মাঝে মধ্যেই নিহতের বাসায় যাতায়াত করতেন।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রেপ্তার হাফেজ নিহতের বাসায় যান। ওই বাসার লোকজন সবাই গামেন্টসে চলে যাওয়ায় বাসা ফাঁকা ছিল। হাফেজ ও বিমল চন্দ্র একসঙ্গে টিভি দেখে এবং খাওয়া-দাওয়া করে। পরে বিমলকে দিয়ে সিগারেট নিয়ে আসার জন্য বাসার নিচে দোকানে পাঠান হাফেজ।

পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, ওই সময়ে হাফেজ নিহত বিমলের স্ত্রী অলংকার/গয়না ও টাকা পয়সা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। সিগারেট নিয়ে বাসায় চলে এসে দেখেন গ্রেপ্তার হাফেজ ঘর অগোছালো করে কি যেন খোঁজাখুঁজি করছে। চুরির বিষয়টি বিমল দেখে ফেলায় হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে প্রথমে বিমলের গলায় ডান পাশে আঘাত করেন। পরে বিমলের মুখে ঢুকিয়ে হত্যা করে বাসা থেকে এক জোড়া স্বর্ণের বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ আলমারিতে থাকা ৯ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারের পরের দিন হাফেজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, হাফেজ বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করছিল। এর আগে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগার করার জন্য দুইটি অটোরিকশা চুরি করে বিক্রি করে। সর্বশেষ বিমলের বাসায় চুরি করতে গিয়ে বিমলকে হত্যা করে। 

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, হাফেজের চুরি করা স্বর্ণালংকার বিক্রিতে যারা সাহায্য করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। নিহত বিমলের স্ত্রী পারুল জানান, হাফেজের স্ত্রী পরিবারের সঙ্গে একই পোশাক কারখানায় কাজ করেন তারা। এ জন্য পারিবারিক সম্পর্ক হয়। তবে কখনো ভাবতে পারেনি এ রকম কিছু করতে পারেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

খেজুরে অতি মুনাফা, হতাশ ক্রেতা

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত