Ajker Patrika

মজা করে যাকে ‘চোর’ ডাকেন, সালিস দেওয়ায় তাঁরই চাচাকে কুপিয়ে হত্যা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ১৬
মজা করে যাকে ‘চোর’ ডাকেন, সালিস দেওয়ায় তাঁরই চাচাকে কুপিয়ে হত্যা

মজা করে ভাতিজা মিজানকে ‘চোর’ বলে ডাকা ও তাঁকে চড়থাপ্পড় মারায় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে বিচার দেন মঞ্জিল মিয়া (৪৫)। অভিযোগ পেয়ে সালিস ডাকেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার। কিন্তু সালিসে বসার আগে বাড়িতে হামলা চালিয়ে চাচা মঞ্জিল মিয়া কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ সময় নিহতের ভাতিজা মিজান ও ভাবি আছমা আক্তারকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। 

আজ শনিবার সকালে সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের দামপাটুলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মঞ্জিল মিয়া একই গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একই এলাকার সিরাজুল মিয়ার বড় ভাই গিয়াসউদ্দিন প্রায়ই নিহত মঞ্জিল মিয়ার ভাতিজা মিজানকে ‘চোর’ বলে সম্বোধন করে মজা করতেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবার চাচার মুরগির খামারে কাজ করতে যান মিজান। এ সময় গিয়াসউদ্দিন খামারে গিয়ে মিজানকে ‘চোর’ বলে সম্বোধন করেন। এ নিয়ে মিজান প্রতিবাদ করলে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে গিয়াসউদ্দিনের ছোট ভাই সিরাজুল মিয়া মুরগির খামারে এসে মিজানকে চড়থাপ্পড় দেন। এ ঘটনা মিজান তাঁর চাচা মঞ্জিল মিয়াকে জানালে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেন। 

অন্যদিকে গিয়াসউদ্দিনের লোকজনও চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে অভিযোগ দেন। পরে চেয়ারম্যান দুটি পক্ষকেই আজ সকালে বিষয়টি সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আজ সকালে সিরাজুল মিয়া ও গিয়াসউদ্দিনসহ ৮-১০ জন সালিসে না গিয়ে মঞ্জিল মিয়ার বাড়িঘরে হামলা চালান। এ সময় মঞ্জিল মিয়াকে পেয়ে ধারালো দা দিয়ে কোপান। পরে স্থানীয়রা মঞ্জিলকে উদ্ধার করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মঞ্জিল মিয়ার ভাতিজা মিজান ও আছমা আক্তার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কুমার ঘোষ বলেন, ‘মঞ্জিল মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনলে আমরা তাঁকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আর মিজান ও আছমা আক্তারকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ 

নিহতের ভাগনে ইসরাইল মিয়া বলেন, ‘সিরাজুল মিয়ার বড় ভাই গিয়াসউদ্দিন প্রায়ই মিজানকে মশকরা করে চোর ডাকত। শুক্রবারও গিয়াসউদ্দিন মুরগির খামার দিয়ে যাওয়ার পথে মিজানকে চোর বলে ডাক দেয়। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’

ইসরাইল মিয়া আরও বলেন, ‘সিরাজুল মিয়া ও গিয়াসউদ্দিন আমাদের গ্রামের ধনী লোক। শুক্রবারের ঘটনার পর তারা এলাকাবাসীকে বলছিল কয়েক কাঠা জমি বিক্রি করে হলেও এদের (ইসরাইলদের) দেখার আছে। সিরাজুল মিয়া ও গিয়াসউদ্দিনসহ ৮ থেকে ১০ জন দিনদুপুরে আমার মামার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সামনেই মামাকে কুপিয়ে হত্যা করে। তারা গ্রামের প্রভাবশালী লোক। আমরা নিরীহ মানুষ। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ 

যশোদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন বলেন, ‘নিহত মঞ্জিল মিয়া আমার কাছে বলেছিল তাঁর ভাতিজা মিজানকে সিরাজুল ও গিয়াসউদ্দিন মারধর করেছে। অন্যদিকে গিয়াসউদ্দিন ও সিরাজুল আমাকে জানায় মিজান গিয়াসউদ্দিনকে কিলঘুষি মেরেছে। দুটি পক্ষকেই বলা হয়েছিল আমরা বিচার সালিস করব। তারপরও একটি পক্ষ বাড়িঘরে হামলা চালায় এবং মঞ্জিল মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’ 

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ‘নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে: ৬৮ মানবাধিকার সংগঠন

মানিকগঞ্জে সালিসে বিএনপি নেতার নির্দেশে পাঁচ ভাইকে জুতাপেটা

রাখাইনে মানবিক করিডর: জান্তার আপত্তিতে সরকারে দ্বিধা

ভারতের ব্ল্যাকআউট মহড়া, সীমান্তে আটার মজুত বাড়াচ্ছে পাকিস্তান, যুদ্ধ কি লেগে যাচ্ছে

মানবিক করিডরে বাংলাদেশের ফায়দা কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত