Ajker Patrika

মসজিদে কন্যাশিশুকে নেওয়ার জেরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
Thumbnail image

নরসিংদীর রায়পুরায় মসজিদে মুসল্লিদের সারিতে বাবার সঙ্গে এক কন্যাশিশুকে নেওয়া কেন্দ্র করে সংঘাতের জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। 

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে মারা যান লাল চাঁন (২৮) নামে ওই যুবক। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নিহতের খালাতো ভাই হযরত আলী।

লাল চাঁন উপজেলার উত্তর বাখর নগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর এলাকার মৃত ময়ধর আলীর ছেলে। তিনি নবজাতকসহ চার সন্তানের জনক। 

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বাহাদুরপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম তাঁর চার বছরের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে মাগরিবের ওয়াক্তে বাড়ির পাশের মসজিদে যান। জামাত শুরু হলে মেয়েকে নিয়ে ইমামের পেছনের সারিতে দাঁড়ান। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন প্রতিবেশী আলা উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। এরই জেরে নামাজের পর দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আলা উদ্দিনকে মারধর করেন নুরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা। 

আলা উদ্দিনকে মেরে আহত করার সংবাদ শুনে রাতে তাঁকে দেখতে আসেন ভাগনে লাল চাঁন। মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে নুরুল ইসলাম, জুয়েল, মুক্তার ও অলি মিলে লাল চাঁনের মাথায় উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করেন। তাঁকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান। সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা লাল চাঁনকে ঢাকায় পাঠাতে বলেন। রাজধানীর উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে তিন দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার দুপুরে মারা যান লাল চাঁন। 

লাল চাঁনের মামা আলা উদ্দিন বলেন, ‘নাবালক একটি মেয়ে ইমামের পেছনে দাঁড়ানো নিয়ে কথা বলায় মেয়েটির বাবা নুরুল আমাকে প্রথমে গালি দেয়। পরে চড়থাপ্পড় ও মারধর করে। রাতে ভাগনে লাল চাঁন আমাকে দেখে বাড়ি যাওয়ার পথে নুরুল ও তার লোকজন মিলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।’ 

নবজাতকসহ চার সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে লাল চাঁনের স্ত্রীএ ব্যাপারে জানতে চাইলে আড়ো প্রধানবাড়ির মসজিদের ইমাম মো. মোফাজ্জল বলেন, ‘একটি মেয়ে শিশু আমার পেছনের সারিতে দাঁড়ানো নিয়ে দুজন মুসল্লির মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এ মসজিদে আমি নতুন তাই ওই দুজন ব্যক্তির নাম পরিচয় জানি না। রাত ১০টার দিকে মসজিদের বাইরে ঝগড়ার শব্দ শুনেছি। তারপর কী হয়েছে জানি না।’ 

স্বামীর মৃত্যুর পর লাল চাঁনের স্ত্রী সাত দিনের সন্তান কোলে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী তো কোনো ঝগড়াঝাঁটিতে ছিল না। কী অপরাধ ছিল তার? চার সন্তান নিয়ে কী করে সংসার চলবে!’

অভিযুক্ত নুরুলের মা মনোয়ারা বলেন, ‘রাতে ছেলের সঙ্গে চার বছরের নাতি নুসরাত মসজিদে গিয়েছিল। এ নিয়ে আলা উদ্দিনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় আমার ছেলে নুরুল, মেয়ে আমেনা ও ভাশুরের ছেলে জুয়েল আহত হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।’

পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছেএ ব্যাপারে রায়পুরা থানার পরিদর্শক তদন্ত গোবিন্দ সরকার বলেন, ‘লাল চাঁনের পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার একটি মারধরের অভিযোগ করেছে। আজ যেহেতু সে মারা গেছে সেহেতু সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। আসামিদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা করছে।’ 

সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, ‘মারামারি হয়েছে শুনেছি। তবে এ ঘটনায় কেউ মারা গেছে কি না এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং এলাকায় অভিযান অব্যাহত আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত