Ajker Patrika

২০ লাখ টাকায়ও লিবিয়ায় মুক্তি মেলেনি নাঈমের, পরিবার পেল মৃত্যুর খবর

ফরিদপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন বুনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার শেখ নাঈম (২৫)। কিন্তু সেই স্বপ্ন লিবিয়ায় গিয়ে ফিকে হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) পরিবারের কাছে খবর আসে তিনি আর বেঁচে নেই! এর মাঝে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। 

শেখ নাঈম ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গারপাড় গ্রামের কৃষক শেখ নূর হোসেনের ছেলে। ঢাকার একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (বিএসসি) শিক্ষার্থী ছিল। 

তাঁর মৃত্যুর খবরে পরিবারের লোকজন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। নাঈমের মা–বোনের বিলাপে আকাশ–বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। 

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে নাঈমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই গ্রামের ইতালি প্রবাসী শেখ মেহেদির ফাঁদে পড়েন নাঈম। তাঁর সঙ্গে ১৪ লাখ টাকা চুক্তিতে গত জানুয়ারি চলে যান লিবিয়ায়। সেখানে বন্দী হয়ে পড়েন মাফিয়ার চক্রের হাতে, শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে ২০ লাখ টাকা পাঠায় পরিবার। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা পৌঁছানোর আগেই তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে খবর এসেছে। 

নাঈমের ছোট ভাই শেখ ফাহিম জানান, এই চক্রের হাতে বন্দী হয় একই উপজেলার ইউনিয়নের মালিগ্রামের এক যুবক। তিনি বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে ওই মাফিয়া চক্রের হাত থেকে মুক্তি পান। এরপরই ফোন কলে তাঁর পরিবারের লোকজনের কাছে জানান, কয়েক মাস আগেই নাঈমকে মেরে ফেলেছে তারা। কোনো ভাবেই যেন নাঈমের পরিবার আর কোনো টাকা ওদের না দেয়। 

নাঈমের পরিবারে শোকের মাতমএর আগে বন্দী অবস্থায় মাফিয়া চক্রটি নির্যাতনের অডিও, ভিডিও পাঠিয়ে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ হাতিয়ে নেয় বলে জানান নাঈমের বাবা শেখ নূর হোসেন। তিনি বলেন, জমিজমা বিক্রি করে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। দালাল মেহেদির বাড়ি আমার বাড়ির পাশেই হওয়ায় আমাদের বিশ্বাস ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় নিয়েই মাফিয়া চক্র নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও আমাদের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। আমরা তখন দালাল মেহেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে। 

শেখ নূর হোসেন বলেন, এরপর কয়েক মাস কেটে গেলে আমরা জানতে পারি ভাঙ্গার আরও দুইজন নাঈমের সঙ্গে মাফিয়াদের হাতে আটক। এরপর আমরা নাঈমের আর কোনো খোঁজ খবরই পাচ্ছিলাম না। আমরা মেহেদির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আরও ২০ লাখ টাকা দিলে নাঈমকে ছেড়ে দেবে। আমরা আবারও সহায় সম্বল বিক্রি করে নাঈমের মামা ও মায়ের হাতে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা তুলে দেই। টাকা দেওয়ার কয়েক মাস পার হলেও নাঈমের কোনো খোঁজখবর আমরা পাচ্ছিলাম না। 

নূর হোসেন কেঁদে কেঁদে বলেন, এই ২০ লাখ টাকা নেওয়ার বেশ কিছুদিন আগেই নাঈমকে মেরে ফেলে লিবিয়ার মাফিয়াচক্র। দালাল মেহেদী সবকিছু জেনেও আমাদের কাছে গোপন করে একের পর এক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি আমার সন্তান হারানোর বিচার চাই। 

এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন আল রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তবে, কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে মামলা করতে বলেছি। কারণ, ঘটনাস্থল দেশের বাইরে হওয়ায় আইনগত জটিলতায় যেন পড়তে না হয় তাঁদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত