Ajker Patrika

সিঙ্গাপুরের কথা বলে চট্টগ্রামে নামিয়ে দেওয়া হলো যুবককে

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ০৫: ০৭
সিঙ্গাপুরের কথা বলে চট্টগ্রামে নামিয়ে দেওয়া হলো যুবককে

ভাতিজাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আপন ভাইয়ের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলেয়া বেগম ও তাঁর ছেলের প্রতারক চক্র। সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট বলে ভাতিজাকে উড়োজাহাজে চড়িয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে, এরপর ঢাকায় রেখে লাপাত্তা প্রতারক চক্র। প্রতারণার শিকার ব্যক্তি পরে বোন ও এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। 

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বটগাছতলা এলাকায়। ভুক্তভোগী শহীজল মাঝি। পেশায় জেলে। আর তাঁর প্রতারক বোন আলেয়া বেগম ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার কুদবা ইউনিয়নের কুদবা গ্রামের পল্লি পশু চিকিৎসক বশির আহমেদের স্ত্রী। 

এ ঘটনায় আলেয়া বেগমসহ ছয়জনের নামে লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে মামলা করেছেন শহীজল মাঝি। শনিবার (১৪ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ দুলাল। 

গত ৯ মে মামলাটি করা হয়। এর আগে ২৮ এপ্রিল শহীজলের ছেলে জুয়েলকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলে উড়োজাহাজে চড়িয়ে নেওয়া হয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। ঘটনার সঙ্গে শহীজলের বোন আলেয়া, তাঁর ছেলে আওলাদসহ আত্মীয় পরিচয়ের আরও চারজন জড়িত ছিল। 

দেনা করে বোনকে দেওয়া ৪ লাখ টাকার পাওনাদারদের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শহীজল মাঝি। 

প্রতারণার শিকার শহীজল মাঝি জানান, বোন আলেয়া বেগম দীর্ঘদিন তাঁর বাড়িতে বেড়াতে আসেননি। বাবা মারা যাওয়ার খবর শুনেও আসেননি। ঘটনার ছয় মাস আগে ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার কুদবা গ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন গ্রামে বেড়াতে আসেন আলেয়া। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর বোনকে কাছে পেয়ে সাধ্যমতো আদরযত্ন করেন শহীজল মাঝি। অভাবের সংসারে বোনের আদর যত্নের কমতি রাখেননি। এর কয়েক দিন পর শহীজলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন আলেয়ার ছেলে আওলাদ হোসেন। ভাগনেকেও সমাদর করেন তিনি। 

আপন বোন আর ভাগনে প্রতারণার শিকার হলেন জেলে শহীজল মাঝি।ভাগনে আসার দুই দিনের মধ্যে আলেয়া শহীজলকে জানান, তাঁর ছেলে আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এখন ছেলেকে লক্ষ্মীপুর জেলায় দ্বিতীয় বিয়ে দিতে চান। বোনের আবদারে ভাগনের জন্য পাত্রী দেখে কয়েক দিনের মধ্যে বিয়ে দেন শহীজল ও তাঁর পরিবার। 

ভাগনের দ্বিতীয় বিয়ের দুতিন দিন পর বোন আলেয়া শহীজলকে আবার জানান, ছেলের আগের শ্বশুর ছেলের জন্য সিঙ্গাপুরের একটা ভিসা দিয়েছেন। দুতিন দিনের মধ্যে ছেলেকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। খরচের জন্য চার লাখ টাকা লাগবে। সেই টাকা দ্বিতীয় শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে দিতে হবে। বোনের কথায় ভাগনের দ্বিতীয় শ্বশুর বাড়ি থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে দেন। এর পরদিনই ভাগনে শহীজলদের বাড়ি থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা বলে বিদায় নেন। মামার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার একদিন পর ভাগনে অপরিচিত নম্বর থেকে শহীজলকে কল দিয়ে জানান তিনি এখন সিঙ্গাপুরে। এখন শহীজলের ছেলে জুয়েলকেও সিঙ্গাপুর নিতে চান। মায়ের সঙ্গে শহীজলকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেন। 

বোন আলেয়া তার শহীজল মাঝির ছেলে জুয়েলকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার জন্য ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে নয় লাখ টাকায় চুক্তি হয়। এর মধ্যে শহীজল দেবেন ৫ লাখ বাকি ৪ লাখ টাকা বোন আলেয়া দেবেন বলে ভাইকে জানান। দ্রুত টাকা জোগাড় করতে বলেন তিনি। ভাগনে আওলাদও বারবার ফোনে তাগাদা দিতে থাকেন। 

শহীজলের ছোট ভাই মাহে আলম জানান, ভাগনে আর বোনের চাপাচাপিতে শহীজল মাঝি ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে রাজি হন। বোনের পরামর্শে শহীজল এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা, তিন মেয়ের জামাইয়ের কাছ থেকে আড়াই লাখ এবং নিজের ৫০ হাজারসহ মোট ৪ লাখ টাকা জোগাড় করেন। 

গত ২৯ এপ্রিল জুয়েলের সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট আছে বলে জানান বোন আলেয়া। সকালে নগদ ৪ লাখ টাকাসহ বোন আর ছেলেকে নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন শহীজল মাঝি। বিমানবন্দরে বোন আলেয়ার কথা মতো সানী নামের এক ব্যক্তির ব্যাগে টাকা দেন। সানী শহীজলের ছেলে জুয়েলের হাতে বিমানের টিকিট ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত বিমানে উঠতে বলেন। 

আপন বোন আর ভাগনে প্রতারণার শিকার হলেন জেলে শহীজল মাঝি। শহীজলের ছেলে জুয়েল বলেন, বিমানবন্দরের দুটি গেট অতিক্রম করার পরপরই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ‘সিঙ্গাপুর’ যাওয়া ফুফুতো ভাই আওলাদের। থমকে যান জুয়েল। জুয়েল ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁকে উড়োজাহাজে ওঠান। সেই উড়োজাহাজ গিয়ে থামে চট্টগ্রামে। 

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে শামীম নামের একজন আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা জুয়েলকে নিয়ে একটি হোটেলে ওঠেন। হোটেলে কক্ষে নিয়ে তাঁরা জুয়েলকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখান, তাঁদের কথামতো চলার নির্দেশ দেন। তাঁর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন বলে বাবাকে জানাতে বলেন। সিঙ্গাপুরের পরিচয়পত্রের জন্য ফুফুকে (আলেয়া) আরও দেড় লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলতে বাধ্য করেন।

পরদিন সকালে হোটেলের এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলেন জুয়েল। কিছুক্ষণ পর ভাগনে ও তাঁর সহযোগী শামীম তাঁকে বাস যোগে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকার সায়েদাবাদ ফেলে রেখে তাঁরা উধাও হয়ে যান।

শহীজলের প্রতিবেশী আবদুল হালিম জানায়, শহীজলকে পাওনাদারেরা চাপ দিচ্ছেন। টাকার জন্য এক জামাই মেয়েকে শহীজলের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অন্য জামাইরাও চাপাচাপি করছেন।

এ ঘটনায় গত ৯ মে শহীজল মাঝি বাদী হয়ে প্রতারণা ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বোন আলেয়া বেগম, ভাগনে আওলাদ হোসেন, আওলাদের শালা সানী, ভাগনি জামাই শামীম, ভাগনের স্ত্রী আয়েশাসহ ছয়জনকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত