Ajker Patrika

গৃহবধূ শিউলীকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে স্বামী: পুলিশ

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৫৬
গৃহবধূ শিউলীকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে স্বামী: পুলিশ

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় গৃহবধূ শিউলী আক্তার আরুদাকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাঁর স্বামী ওড়না দিয়ে পা বেঁধে পাশের ডোবার কচুরিপানার নিচে ফেলে রাখে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানায় পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে হত্যা মামলায় গৃহবধূর স্বামী সুমন মিয়াকে (৪৫) আদালতে পাঠালে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 
 
এর আগে গত রোববার ময়নাতদন্ত শেষে গৃহবধূর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে তাঁর বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এদিন রাতেই নিহতের মা ঝর্ণা বেগম বাদী হয়ে সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। 
 
শিউলি আক্তার আরুদা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লাড়ুচৌ গ্রামের জানু সরকারবাড়ির সুমন মিয়ার স্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। 
 
পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুমন মিয়ার সঙ্গে ১৮ বছর আগে শিউলির বিয়ে হয়। তাঁদের চারটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে সুমন মিয়া তাঁর স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন। ঘর থেকে বের করে দিতেন। শিউলি বাবার বাড়িতে চলে গেলে বাবার বাড়ির লোকজন তাঁর সন্তানদের কথা চিন্তা করে বুঝিয়ে আবারও স্বামী সংসারে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে সুমনকে সংশোধন হতে বলা হয় এবং মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে সুমনকে বিভিন্ন সময়ে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্কের নগদ টাকা ও গরু কিনে দেওয়া হয়। 
 
কয়েক মাস আগে সুমন মিয়াকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনে দেন।  কয়েক দিন আগে সুমন মিয়া তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে বাবার বাড়ি থেকে আবারও টাকা এনের দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এ খবর পেয়ে সৌদি আরব প্রবাসী এক ভাই তাঁকে ৩০ হাজার টাকা দেন। ওই টাকা নিয়ে গত শুক্রবার রাতে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শিউলিকে মারধর করেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে খুন করেন। 
 
ঘটনার পর থেকে শিউলি আর খোঁজে পাওয়া যায়নি। পরদিন শনিবার বিকেলে বাড়ির পশ্চিম পাশের একটি ডোবায় কচুরিপানার নিচে থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিউলির মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানা-পুলিশ এদিন রাত ১০টায় লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। 
 
নিহতের বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা জড়না বেগম বলেন, কয়েক দিন আগে শিউলিকে টাকার জন্য মারধর করে বাবার বাড়িতে পাঠায়। তাকে আবারও ত্রিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকা নিয়ে ঘটনার দিন রাতে শিউলি ও তার স্বামী সুমন মিয়ার মধ্যে ঝগড়া হয়। সুমন শীউলীকে খুন করে লাশ ঘুম করার জন্য ডোবার মধ্যে ফেলে রাখে। মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা। 
 
ব্রাহ্মণপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়াকে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহের জের ধরে গৃহবধূকে খুন করা হয়েছে। ওই গৃহবধূকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ডোবায় কচুরিপানার নিচে ফেলে রাখে। 
 
ব্রাহ্মণপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিথুন কুমার মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার হাত-পা বাঁধা ছিল। কপালে ও গালেসহ বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে শুক্রবার রাতে যেকোনো সময় তাঁকে হত্যার পর ওই ডোবায় ফেলে আসা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত