Ajker Patrika

চট্টগ্রামে বিচারকের মামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮: ৩৬
চট্টগ্রামে বিচারকের মামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বর্ণ চোরাচালানির মিথ্যা মামলা দিয়ে এক শিশুকে জেলহাজতে পাঠানোর পর মিথ্যা প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক বিচারক। এ মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি করেন শিশু আদালত এবং নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা। 

মামলার আসামিরা হলেন সিএমপি পতেঙ্গা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পাল। আনোয়ার হোসেন বর্তমানে শিল্প পুলিশে আছেন।

ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার পাচারের অভিযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুকে গ্রেপ্তার করে পতেঙ্গা থানা-পুলিশ।

ঘটনার পরদিন ওই শিশুর বিরুদ্ধে থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোনার বার পাচারের অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ওই শিশুর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল। তদন্ত শেষে শিশু নাজমুলকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটি নির্দোষ বলে রায় দেন নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা।

একই সঙ্গে আদালত মিথ্যা মামলা ও পুলিশ রিপোর্ট দাখিল এবং সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে মামলার এজাহারকারী ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেন।

ট্রাইব্যুনালের পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, ‘আদালতের ওই রায়ের ৯ দিন পর আজ (মঙ্গলবার) বিচারক ফেরদৌস আরা নিজেই বাদী হয়ে দুই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পেনাল কোডের ১৭৭,১৮১, ১৯৩,৫, ২১১ ধারায় এই মামলা হয়।’

আরিফুল আলম আরও বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের মামলা হয় না, এটা বিরল মামলা। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম আদালত অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। তাই আদালত ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা করেছেন।’

এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অভিযুক্ত শিশুর নিকটাত্মীয় এ এইচ এম সুমনের আনা শুল্কবিহীন দুটি সোনার বার বিমানবন্দরের ব্যাগেজ পরিদর্শক জব্দ করেন। পরে সুমন বিধিমোতাবেক শুল্ক পরিশোধ করে বার দুটি নিজের হেফাজতে নিয়ে অভিযুক্ত শিশুর কাছে হস্তান্তর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিশুকে আটক করে থানায় দেয়। পরে বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরও পুলিশ একটি সোনার বার দাবি করে। এ সময় রাজি না হওয়ায় শিশুটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, জব্দ সোনার বারের কাগজপত্র উপস্থাপন সত্ত্বেও তা আমলে না নিয়ে, রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করেই এজাহারকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করেছেন। এ ছাড়া মিথ্যা রিপোর্টের সাপেক্ষে শপথ গ্রহণপূর্বক মিথ্যা সাক্ষ্য দেন।

শিশুটি নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালে ২২ এপ্রিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১ মাস ৬ দিন জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত