Ajker Patrika

সাতকানিয়ায় সাইফুল বাহিনীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ বগা গ্রেপ্তার, খুশিতে মিষ্টি বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৪২
Thumbnail image

সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী দল ‘সাইফুল বাহিনীর’ সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার পশ্চিম আমিলাইশ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের খবরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে এলাকায়।  

গ্রেপ্তারকৃত বগা সাতকানিয়া থানার দক্ষিণ চরতী গ্রামের আলী চাঁন বাড়ির মৃত আহমেদ হোসেনের ছেলে। বগার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় ডাকাতি করতে গিয়ে শিশু হত্যা মামলা, বাকলিয়া থানায় অপহরণ মামলা, ইয়াবা মামলা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় সাতকানিয়ার সাবেক এমপির স্ত্রী ও শ্যালকের ওপর হামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, মাদক মামলার সাজা পরোয়ানার মূলে মো. দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ বগাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। সাইফুল বাহিনীর তাণ্ডবে দক্ষিণ চরতীর সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। 

এদিকে বগাকে গ্রেপ্তারের খবরে মিষ্টি বিতরণ করেছেন দক্ষিণ চরতী ৮ নম্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আমীন। তিনি বলেন, ‘চরতীতে ১৫ কেজি মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ব্যাপক উল্লাস প্রকাশ করেছেন।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে এই সাইফুল বাহিনী। গত তিন মাসে সাতকানিয়ায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে এই বাহিনী। থানা-পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যে ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলেনি। 

এর মধ্যে নির্বাচনের পরপরই সন্ধ্যায় দক্ষিণ চরতীতে নৌকার সমর্থকদের বাড়িঘর-দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় এম এ মোতাবেলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনী। এই সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়িসহ ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। 

নির্বাচনের পরের দিন সোমবার খতিরহাট এলাকায় নৌকার সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিনকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন সন্ত্রাসী সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন। এ ছাড়া নির্বাচনের পর থেকে চরতী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন সন্ত্রাসী সাইফুল। 

নির্বাচনের আগে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ চরতী কাটাখালী ব্রিজের পাশে নৌকার পথসভায় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান সাইফুল ও তাঁর বাহিনী। এই সময় নৌকার সমর্থক চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মিছদাকুল বেসারত চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফয়সালসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন। 

এর দুই দিন আগে ১৯ ডিসেম্বরও নৌকার পথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। ওই দিনও ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি ও দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুর হোসেনকেও মারধর করেন সাইফুল।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন কোনো দিন নেই যে সন্ত্রাসী সাইফুল ও তাঁর বাহিনী দ্বারা এলাকার মানুষের ওপর হামলার ঘটেনি। 

দক্ষিণ চরতী ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। একই দল থেকে দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমি ঈগলের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিলেও আমার ছোট ভাই ইলিয়াছ মেম্বার নৌকার হয়ে কাজ করে। কিন্তু দফায় দফায় তার ওপর হামলা ও দোকান ভাঙচুরে এলাকার সম্প্রীতি নষ্ট করছে।’ 

সন্ত্রাসী সাইফুল কোনো পদপদবিতে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এত দিন পর্যন্ত সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল। গত বছর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তখন থেকে এম এ মোতালেবের আশ্রয় নেন সাইফুল মেম্বার। মোতালেব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তার পর থেকে আরও হিংস্র হয়ে উঠে সাইফুল। 

এর আগে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে যায় দক্ষিণ চরতীর ১০ পরিবার। নারী, শিশুসহ এসব পরিবারের প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন দীর্ঘ এক বছর নিজেদের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর উদ্বাস্তুর মতো দিন যাপন করে। বাড়িভিটে ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন উদ্বাস্তু পরিবারসহ এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন। 

সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে এসব মারধর ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে অপর ইয়াবা কারবারি দেলোয়ার হোসেন (বগা)। যার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি ইয়াবা মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে দুই-তিনবার জেলেও গিয়েছে এই ইয়াবা কারবারি। 

সাতকানিয়ার পশ্চিম অঞ্চলসহ (চরতী, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, এওচিয়া ও নলুয়া) চন্দনাইশের বৈলতলী, আনোয়ারার হাইলধর ও বাঁশখালীর পুকুরিয়া অঞ্চলের অস্ত্র ও ইয়াবা কারবারের নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল ও তাঁর বাহিনী। এ ছাড়া রয়েছে খাল ও সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবসা। 

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার জানান, এই বাহিনীর অন্যদেরও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত