Ajker Patrika

ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৩
Thumbnail image

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে বহিরাগতরা বিদ্যালয়ে ঢুকে হামলা-ভাঙচুরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মনোহরপুর অলুয়া চণ্ডপুর রেজাউল হক উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিসহ নানা অভিযোগ এনে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়। এ সময় বিদ্যালয়ের ল্যাব অপারেটর ফখরুল ইসলাম ও কয়েকজ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া আবু সুফিয়ান নামের একজন বিএসসি শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে আন্দোলনকারীরা। তাতে বহিরাগত ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিদ্যালয় চলাকালে কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বহিরাগত কিছু লোক আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করে বিদ্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে হামলা চালায়। এ সময় আমাদের ল্যাব সহকারী ফখরুল ইসলাম স্যারকে মারধর করা হয় এবং তারা ঘণ্টা বাজিয়ে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করে। এ সময় বিদ্যালয় থেকে আমরা যেতে না চাইলে তারা হামলা চালায়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলে, ‘আমরা মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে গেলে আমাদের বিএসসি শিক্ষক আবু সুফিয়ান স্যারকে হামলাকারীরা লাঞ্ছিত করে এবং আমাদেরসহ অন্য শিক্ষকদের বিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলে।’

সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে স্থানীয় কিছু লোক বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে হামলা চালায়। এ সময় তারা দপ্তরির কাছ থেকে বেল নিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শ্রেণিকক্ষে দরজা বন্ধ করে আশ্রয় নিই। এ সময় তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তাতে ল্যাব সহকারী ফখরুল ইসলাম ও দশম শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে মারধর করে।’

আন্দোলনকারীদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম নোমান ও মো. জাহিদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশিদ তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি মনগড়াভাবে বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেওয়া অভিযোগের আশানুরূপ কোনো সমাধান পাইনি।’

ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকাআরিফুল ইসলাম নোমান ও মো. জাহিদ বলেন, ‘আমরা মনোহরপুর অলুয়া চণ্ডীপুর রেজাউল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চাই। তাঁকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে হবে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফারহানা পৃথা বলেন, ‘খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, থানার পুলিশসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় আন্দোলনকারীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে স্থানীয় কিছু লোক ১০টি অভিযোগ এনে আগে অভিযোগ দেয়। তদন্ত করে পাঁচটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে। প্রমাণিত অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অভিযোগকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবারও অভিযোগ দাখিল করেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও আরও বলেন, তারা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে না। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রশাসন কখনোই মেনে নেবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত